টিকটক এবং চীনের সম্পর্ক
টিকটক এবং চীনের
সম্পর্ক একটি জটিল ও বিতর্কিত বিষয়, যা অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির সাথে জড়িত। যদিও টিকটক একটি
আন্তর্জাতিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, এটি মূলত চীনা
প্রযুক্তি কোম্পানি ByteDance দ্বারা তৈরি এবং
পরিচালিত হয়। এই কারণে, টিকটক এবং চীনের সম্পর্কের মধ্যে
কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে যা বিশ্বব্যাপী নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে। নিচে
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
১. ByteDance এবং
চীনের মালিকানা সম্পর্ক:
টিকটক এর মালিক ByteDance, যা ২০১২ সালে
চীনে প্রতিষ্ঠিত হয়। ByteDance একটি চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি,
এবং এটি চীনের অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থা। চীনের সরকারের প্রতি ByteDance-র কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে, কারণ এটি একটি চীনা
কোম্পানি, কিন্তু এটি চীনের বাইরে পরিচালিত হয় এবং বিভিন্ন
দেশে ভিন্ন আইন ও নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়।
চীনে টিকটক এর সংস্করণ Douyin নামে পরিচিত,
যা চীনা ব্যবহারকারীদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। Douyin এবং TikTok একে অপর থেকে আলাদা হলেও, তাদের প্রযুক্তি এবং কার্যক্রমের মধ্যে অনেক কিছু মিল রয়েছে। তবে,
Douyin শুধুমাত্র চীনেই উপলব্ধ, যেখানে TikTok
আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করে।
২. ডেটা সুরক্ষা এবং
নিরাপত্তা উদ্বেগ:
টিকটক এবং চীনের সম্পর্ক নিয়ে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের
বিষয় হলো ডেটা সুরক্ষা এবং ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা। বিভিন্ন দেশের সরকার
এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, টিকটক ব্যবহারকারীদের ডেটা চীনে
চলে যেতে পারে বা চীনা সরকার টিকটকের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের তথ্য অ্যাক্সেস করতে
পারে। বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত,
অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশগুলো এই বিষয়ে চরম উদ্বেগ
প্রকাশ করেছে।
চীন, আইনগতভাবে, তথ্যের
উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চায়, এবং কিছু ক্ষেত্রে
চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারী এজেন্সির কাছে তথ্য সরবরাহ করার জন্য বাধ্য করা হয়।
এর ফলে, টিকটক এর ডেটা সুরক্ষা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক
সন্দেহ এবং প্রশ্ন উঠেছে। যদিও টিকটক দাবি করেছে যে, তারা
ইউরোপ এবং অন্যান্য অঞ্চলে ইউজার ডেটা স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করে এবং চীনা সরকারের
কাছে তা সরবরাহ করার কোনো পরিকল্পনা নেই, তারপরেও অনেক দেশের
মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকে।
৩. চীনা সরকার ও টিকটকের
আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ:
চীনে, Douyin এর মাধ্যমে, চীনা সরকারকে তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়, কারণ
এই অ্যাপটি চীনের সরকারী আইন এবং নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করে। চীনে Douyin এর কন্টেন্ট নিয়মিত সেন্সর করা হয়, এবং সরকার অনলাইন
কনটেন্টের উপর শক্ত নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। এমনকি, চীনের আইন
অনুযায়ী, Douyin এ বিতর্কিত বা সরকারের নীতির বিপরীত কনটেন্ট
থাকলে তা সরিয়ে ফেলা হয়।
তবে, TikTok এর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক
বাজারে সরকারী নিয়ন্ত্রণ সরাসরি চীনা সরকারের নেই, কারণ TikTok
এর পরিচালনা ByteDance এর মাধ্যমে
আন্তর্জাতিকভাবে হয়। তবে, গোপনীয়তা এবং সেন্সরশিপের বিষয়গুলো
এখনও অনেক দেশের সরকারের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে থাকে।
৪. চীনা সেন্সরশিপ এবং
আন্তর্জাতিক নীতি:
চীনের সরকারের কঠোর সেন্সরশিপ নীতির কারণে, TikTok কখনো কখনো আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখোমুখি হয়। বিশেষত, চীন থেকে আসা অ্যাপগুলোর ক্ষেত্রে যে সেন্সরশিপ ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে,
তা প্রায়ই আন্তর্জাতিক সমাজের জন্য একটি সমস্যা হিসেবে দেখা হয়।
যদিও TikTok আন্তর্জাতিকভাবে সেন্সরশিপে খুব কম অংশীদার,
তবে বিভিন্ন দেশে এটি বিভিন্ন বিধিনিষেধের আওতায় আসে এবং কিছু দেশে
নির্দিষ্ট কনটেন্ট বা ব্যবহারকারীকে নিষিদ্ধ করা হয়।
৫. ভিন্ন আইনি কাঠামো এবং
আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ:
চীনের বাইরের দেশে TikTok একটি বৈশ্বিক
প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করার সময়, বিভিন্ন দেশের আইন ও
নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হয়। তবে, টিকটক এবং চীনের
সংযোগের কারণে, এটি কিছু দেশে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। যেমন,
যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত টিকটকের
বিরুদ্ধে নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা চিন্তা করেছে,
এবং ভারতের মতো কিছু দেশে ইতোমধ্যে টিকটক নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড
ট্রাম্প প্রশাসনও টিকটকের বিরুদ্ধে তার নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে নিষেধাজ্ঞার
প্রস্তাব দিয়েছিল, তবে বাইডেন প্রশাসন আরও তদন্তের সিদ্ধান্ত
নিয়েছে।
৬. টিকটক এবং চীনা প্রযুক্তি
প্রতিষ্ঠানগুলির বৈশ্বিক প্রভাব:
চীন থেকে বের হয়ে আসা অন্যান্য প্রযুক্তি
প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো, টিকটকও একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে
উঠেছে, যা চীনের প্রযুক্তি শক্তির একটি চিহ্ন হিসেবে কাজ
করছে। তবে, টিকটক এবং ByteDance এর
আন্তর্জাতিক বৃদ্ধি এবং জনপ্রিয়তা চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ বড় এক
কৌশলিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এটি চীন থেকে বের
হয়ে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারছে।
উপসংহার:
টিকটক এবং চীনের
সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। যদিও
এটি একটি চীনা কোম্পানি, টিকটক এর আন্তর্জাতিক কার্যক্রম এবং গোপনীয়তার প্রশ্ন বিভিন্ন
দেশের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। চীনের সরকারের কাছে তথ্য প্রবাহ এবং
সেন্সরশিপের ধারণা বিশ্বের অনেক দেশের মধ্যে নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন
তৈরি করেছে। তবে, টিকটক তার ডেটা সুরক্ষা নীতির মাধ্যমে এই
উদ্বেগগুলো দূর করার চেষ্টা করছে, এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক
বাজারে এটি কীভাবে পরিচালিত হবে, তা দেখে যাওয়ার বিষয়।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles