নবজাতকের বিলিরুবিন কত হলে জন্ডিস হয়? কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা জানুন

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0


নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় ও জন্ডিস কেন হয়?

নবজাতকের জন্ডিস (Neonatal Jaundice) একটি সাধারণ অবস্থা, যা মূলত নবজাতক শিশুর রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়। বিলিরুবিন একটি বর্জ্য পদার্থ, যা শরীরে রক্তবর্ণ কোষ (রেড বøাড সেল) ভেঙে যাওয়ার ফলে উৎপন্ন হয়। এটি সাধারণত লিভারের মাধ্যমে পরিশোধিত হয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।


জন্ডিস হওয়ার কারণ:

  1. বিলিরুবিনের সৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়া: নবজাতকের শরীরে রক্তবর্ণ কোষের ভাঙন বেশি হয়, যার ফলে বিলিরুবিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। জন্মের পর প্রথম কয়েকদিনে, নবজাতকের লিভার পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকরী না থাকায় বিলিরুবিন প্রক্রিয়া করতে সঠিকভাবে সক্ষম হয় না, এবং এটি শরীরে জমতে থাকে।
  2. লিভারের পরিপূর্ণতা না থাকা: নবজাতকের লিভার খুবই তরুণ থাকে এবং এটি বিলিরুবিনকে পরিশোধন করতে অনেক সময় নেয়। সাধারণত ২-৩ দিনের মধ্যে লিভার যথেষ্ট পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং বিলিরুবিন সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে শুরু করে।
  3. বিলিরুবিনের প্রকারভেদ: বিলিরুবিন দুই ধরনের হতে পারে: ইন্ডিরেক্ট (অননুমোদিত) বিলিরুবিন এবং ডিরেক্ট (অনুমোদিত) বিলিরুবিননবজাতকরা সাধারণত প্রথম ধরনের বিলিরুবিনের বেশি উৎপাদন করে, যা কিছুদিন পর লিভারের মাধ্যমে পরিশোধিত হয়।


জন্ডিসের মাত্রা: নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা সাধারণত ৫-১৫ মাইক্রোমোল/লি হতে পারে, তবে ১৫ মাইক্রোমোল/লি এর উপরে বেড়ে গেলে সেটি জন্ডিস হিসাবে ধরা হয়। এই পর্যায়ে শিশুর ত্বকে ও চোখের সাদা অংশে হলুদ ভাব দেখা দেয়।


জন্ডিসের কারণে:

  1. ফিজিওলজিকাল জন্ডিস: এই ধরনের জন্ডিস নবজাতকের জন্মের পর সাধারণত ২-৩ দিনের মধ্যে শুরু হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া নিজে থেকেই সেরে যায়। এটি প্রধানত লিভারের পরিপূর্ণতা না থাকার কারণে ঘটে।
  2. প্যাথলজিকাল জন্ডিস: যদি বিলিরুবিনের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় বা ১০ দিনের বেশি সময় ধরে থাকে, তখন এটি একটি চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত অবস্থা হতে পারে, যেমন:
    • রক্তের গ্রুপের অমিল (যেমন, মায়ের রক্তের গ্রুপ O এবং শিশুর A বা B গ্রুপ)
    • কোনো সংক্রমণ বা ইনফেকশন
    • লিভার বা রক্তের কোনো সমস্যা
  3. ব্রেস্টফিডিং জন্ডিস: এটি কিছু সময়ের জন্য ঘটে এবং মূলত নবজাতক যথেষ্ট পরিমাণে দুধ পাচ্ছে না বা বুকের দুধে কোনো সমস্যা থাকার কারণে। এই কারণে শিশু পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না, ফলে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়।


জন্ডিসের চিকিৎসা:

  1. ব্লু লাইট থেরাপি (Phototherapy): এটি সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা। এখানে শিশুকে ব্লু বা ব্লু-গ্রিন লাইটের সামনে রাখা হয়, যা বিলিরুবিনকে পরিশোধিত করতে সাহায্য করে।
  2. ইনট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবুলিন (IVIg): যদি শিশুর জন্ডিস রক্তের গ্রুপ অমিল বা অন্য কোনো কারণে হয়ে থাকে, তবে এটি প্রয়োগ করা হতে পারে।
  3. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে রক্তদান বা রক্তবদল: যদি বিলিরুবিনের মাত্রা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় বা অন্যান্য চিকিৎসা কাজ না করে, তবে শিশুর রক্তবদল করা হতে পারে।


শেষ কথা: নবজাতকের জন্ডিস সাধারণত একটি অস্থায়ী সমস্যা হয়, তবে এটি যদি বেশিদিন স্থায়ী থাকে বা বাড়তে থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

সার্চ কী: নবজাতকের বিলিরুবিন কত হলে জন্ডিস হয়, নবজাতকের স্বাভাবিক বিলিরুবিন মাত্রা, জন্ডিস কেন হয়, নবজাতকের জন্ডিসের কারণ, শিশুর জন্ডিসের লক্ষণ, নবজাতকের জন্ডিস হলে করণীয়, বাচ্চার জন্ডিস কিভাবে বুঝবেন, বাচ্চার বিলিরুবিন স্বাভাবিক কত, বাচ্চার রক্তে বিলিরুবিন বাড়ার কারণ, বাচ্চার জন্ডিসের চিকিৎসা, জন্ডিস হলে কী করা উচিত, নবজাতকের জন্ডিস কতদিন থাকে, ফটোথেরাপি কি, শিশুর জন্ডিস কমানোর উপায়, বাচ্চার জন্ডিস প্রতিরোধ, জন্মের পর বাচ্চার জন্ডিসের কারণ, নবজাতকের বিলিরুবিন টেস্ট, শিশুর বিলিরুবিন কত হলে বিপদ, নবজাতকের জন্ডিস কতদিনে ভালো হয়, নবজাতকের জন্ডিসের চিকিৎসা কিভাবে হয়

 

ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top