ব্যবস্থাপনা পরিবেশ, ব্যবস্থাপনার উপর আইনগত ও রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাব

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0



ব্যবস্থাপনা পরিবেশ বলতে কি বুঝায়?

ব্যবস্থাপনা পরিবেশ: ব্যবস্থাপনা পরিবেশ (Management Environment) বলতে এমন সকল অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উপাদানকে বোঝায়যা কোনো প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণপরিকল্পনাসিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কার্যক্রম পরিচালনাকে প্রভাবিত করে। এটি একটি গতিশীল প্রক্রিয়াযা সময় ও পরিস্থিতির সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।

 

উদাহরণস্বরূপঅর্থনৈতিক অবস্থারাজনৈতিক পরিস্থিতিপ্রযুক্তির উন্নয়নপ্রতিযোগিতা এবং সামাজিক পরিবর্তন— এগুলো ব্যবস্থাপনার পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে।

 

ব্যবস্থাপনা পরিবেশকে প্রধানত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়: অভ্যন্তরীণ পরিবেশ (Internal Environment) ও বাহ্যিক পরিবেশ (External Environment)


ব্যবস্থাপনা পরিবেশ বা সাংগঠনিক পরিবেশ বলতে কি বুঝ?

ব্যবস্থাপনা পরিবেশ বা সাংগঠনিক পরিবেশ বলতে সেই সকল অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উপাদানের সমষ্টিকে বোঝায়যা একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমনীতিসিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সামগ্রিক কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এটি ব্যবসার টিকে থাকাবৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 

সাংগঠনিক পরিবেশ একটি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এটি মূলত দুটি অংশে বিভক্ত—অভ্যন্তরীণ পরিবেশ (যেমন: কর্মসংস্কৃতিসম্পদব্যবস্থাপনা কাঠামো) এবং বাহ্যিক পরিবেশ (যেমন: অর্থনৈতিক অবস্থাপ্রযুক্তিগত পরিবর্তনসরকারি নীতিমালাপ্রতিযোগিতা ইত্যাদি)।

 

সঠিকভাবে পরিবেশ বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানের জন্য কার্যকর কৌশল নির্ধারণ করা গেলেএটি উন্নতির জন্য সহায়ক হয়।

 

উপসংহার: ব্যবস্থাপনা বা সাংগঠনিক পরিবেশের সঠিক মূল্যায়ন ও ব্যবস্থাপনা একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় উপাদান বুঝে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে একটি সংস্থা টিকে থাকতে পারে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারে।


ব্যবস্থাপনার উপর আইনগত ও রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাব আলোচনা করুন।

ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উপাদানের দ্বারা প্রভাবিত হয়যার মধ্যে আইনগত ও রাজনৈতিক পরিবেশ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের আইন ও রাজনৈতিক অবস্থা সরাসরি ভূমিকা রাখে।

 

আইনগত পরিবেশের প্রভাব: আইনগত পরিবেশ বলতে বোঝায় সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন আইনবিধি-বিধান ও নীতিমালাযা ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনার ওপর প্রভাব ফেলে।

  1. শ্রম আইন: শ্রমিকদের অধিকারবেতন কাঠামোকর্মঘণ্টাছুটিক্ষতিপূরণ ইত্যাদি নিশ্চিত করতে শ্রম আইন ব্যবস্থাপনার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে।
  2. কর নীতি: সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কর কাঠামো ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।
  3. বাণিজ্য আইন: দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক কৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
  4. ভোক্তা সুরক্ষা আইন: ব্যবস্থাপকদের অবশ্যই পণ্য ও পরিষেবার মান নিশ্চিত করতে হবেযাতে ভোক্তারা প্রতারিত না হয়।
  5. পরিবেশ সংরক্ষণ আইন: কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব কিনাতা নির্ধারণ করে আইনগত বিধান।

 

রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাব: রাজনৈতিক পরিবেশ বলতে বোঝায় সরকারব্যবস্থারাজনৈতিক স্থিতিশীলতানীতিমালা ও কূটনৈতিক সম্পর্কযা ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

  1. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: একটি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা যেমন—বিক্ষোভধর্মঘটনীতির অনিশ্চয়তা—ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে।
  2. সরকারের নীতি: শাসক দলের ব্যবসাবান্ধব নীতি থাকলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়আর ব্যবসা-বিরোধী নীতি থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  3. বৈদেশিক নীতি: আমদানি-রপ্তানি আইনআন্তর্জাতিক চুক্তি ও শুল্কনীতির পরিবর্তন আন্তর্জাতিক ব্যবসার উপর প্রভাব ফেলে।
  4. বাজারে হস্তক্ষেপ: সরকার যদি মূল্য নির্ধারণভর্তুকি বা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেতবে ব্যবস্থাপনা কৌশল পরিবর্তন করতে হয়।
  5. সরকারি অনুদান ও প্রণোদনা: কোনো শিল্প বা খাতকে উৎসাহিত করতে সরকার যদি বিশেষ সুবিধা দেয়তবে সেখানকার ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা সে অনুযায়ী গঠন করা হয়।

 

উপসংহার: আইনগত ও রাজনৈতিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। আইন ব্যবসার দায়িত্ব ও সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করেআর রাজনৈতিক পরিবেশ বিনিয়োগ ও পরিচালন কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই একজন দক্ষ ব্যবস্থাপককে অবশ্যই আইনগত ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে নিজ প্রতিষ্ঠানকে মানিয়ে নেওয়ার কৌশল গ্রহণ করতে হবে।


বিকল্প উত্তর:

ভূমিকাব্যবস্থাপনা হলো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার লক্ষ্য পূরণের জন্য পরিকল্পনাসংগঠননির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কার্য সম্পাদনের প্রক্রিয়া। একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ বিষয় দিয়ে পরিচালিত হয় নাবরং বহির্বিশ্বের বিভিন্ন পরিবেশ—বিশেষ করে আইনগত (Legal)  রাজনৈতিক (Political) পরিবেশ—ব্যবস্থাপনার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই দুটি বাহ্যিক উপাদান প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণপরিচালনা ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

আইনগত পরিবেশের প্রভাব

১. কর্মসংস্থান আইন ও শ্রমনীতি: সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শ্রম আইনন্যূনতম মজুরিকর্মঘণ্টাছুটিকর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ইত্যাদি নিয়ম মেনে প্রতিষ্ঠানকে কর্মীদের ব্যবস্থাপনা করতে হয়। এর ফলে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্পষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়।

 

২. কর নীতি ও আর্থিক আইন: সরকারের করনীতি যেমন আয়করভ্যাট বা শুল্ক আইন—প্রতিষ্ঠানের আর্থিক পরিকল্পনাবাজেট প্রণয়ন ও মূলধন ব্যবস্থাপনায় প্রভাব ফেলে। ব্যবস্থাপককে কর সংক্রান্ত আইনের জ্ঞান রাখতে হয়।

 

৩. ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন: পণ্যের মানসেবামূল্য ও বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের অধিকার রক্ষা করতে প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক থাকতে হয়। এটি মার্কেটিং ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

 

৪. পরিবেশ সংরক্ষণ আইন: উৎপাদন বা অন্যান্য কার্যক্রমে পরিবেশ দুষণের বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশবান্ধব নীতিমালা গ্রহণ করতে হয়।

 

৫. চুক্তি ও বাণিজ্য আইন: ব্যবসায়িক চুক্তিপণ্য সরবরাহঅর্থপ্রদান বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আইনি দিকগুলোর যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে প্রতিষ্ঠান আইনি জটিলতায় পড়তে পারে।

 

রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাব

১. সরকারের ধরণ ও স্থিতিশীলতা: একটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ব্যবসার ঝুঁকি বাড়ায়।

 

২. নীতি পরিবর্তন ও সরকার পরিবর্তন: সরকার পরিবর্তনের ফলে অর্থনীতিশিল্পনীতিবিনিয়োগনীতি ইত্যাদিতে পরিবর্তন আসতে পারেযা ব্যবস্থাপনার কৌশলে প্রভাব ফেলে।

 

৩. উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও সরকারি সহায়তা: সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পভর্তুকি বা কর ছাড় দিলে ব্যবস্থাপকেরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানকে বাড়াতে পারে।

 

৪. বিদেশি বিনিয়োগ নীতি: সরকারের বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা (FDI policy) ব্যবস্থাপনার আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণে সুযোগ বা বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

 

৫. রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাব: অনেক সময় রাজনৈতিক সংযোগ বা চাপ ব্যবস্থাপনায় পক্ষপাতদুর্নীতি কিংবা অদক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।

 

উপসংহারআইনগত ও রাজনৈতিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উপর বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলে। একটি সফল ও দক্ষ ব্যবস্থাপককে অবশ্যই এই দুইটি বাহ্যিক পরিবেশ সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সচেতন হতে হবে। সরকারের নীতিমালা ও আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা একটি প্রতিষ্ঠানের টেকসই উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সুতরাংআইনগত ও রাজনৈতিক পরিবেশের সাথে সমন্বয় সাধন করে চলাই একটি দক্ষ ব্যবস্থাপনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


সার্চ কী: পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বলতে কী বোঝো পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য গুলি লেখব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের উপাদানসমূহ আলোচনা করআন্তর্জাতিক ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহপরিবেশ ব্যবস্থাপনা বলতে কী বোঝো class 12, পরিবেশ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপরিবেশ ও উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্কব্যবসায়ের আইনগত পরিবেশ বই pdf, সাধারণ পরিবেশের রাজনৈতিক আইনগত অংশ কোনটি?, আইনগত পরিবেশ কাকে বলে?, ব্যবসায় পরিবেশের ৫টি মাত্রা কি কি?, প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ কী?, ব্যবসায়ের আইনগত পরিবেশ বই pdf, ব্যবসায় আইনগত পরিবেশ সাজেশনব্যবসায় আইনগত পরিবেশ প্রয়োজন কেনআইনগত পরিবেশ কাকে বলেব্যবসায়ের আইনগত পরিবেশ বলতে কি বুঝায়উত্তম রাজনৈতিক পরিবেশ ব্যবসায়ের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কেনআইনগত পরিবেশের উপাদান কোনটিপ্রযুক্তিগত পরিবেশ কাকে বলে


ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top