কাশ্মীরের পেহেলগাম সম্পর্কে অজানা ও চমকপ্রদ তথ্য
কাশ্মীরের পেহেলগাম (Pahalgam) শুধু একটি সুন্দর পাহাড়ি শহরই নয়, এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ধর্মীয় ঐতিহ্য ও রহস্যঘেরা ইতিহাসে ভরপুর একটি স্থান। নিচে পেহেলগাম সম্পর্কে
কিছু অজানা ও চমকপ্রদ তথ্য বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হলো:
১. পেহেলগাম নামের গভীর অর্থ
‘পেহেলগাম’ শব্দের
অর্থ “প্রথম গ্রাম” — এটি এসেছে কাশ্মীরি শব্দ “Pehal” (প্রথম) ও “Gam”
(গ্রাম)
থেকে। এই নামটি এসেছে
ঐতিহাসিক অমরনাথ যাত্রার সূচনাস্থল হিসেবে এর গুরুত্বকে ঘিরে, যেখান থেকে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী যাত্রা শুরু
করেন।
২. অমরনাথ যাত্রার প্রাণকেন্দ্র
পেহেলগাম থেকে শুরু হয় অমরনাথ গুহা অভিমুখে বিখ্যাত হিন্দু ধর্মীয় তীর্থযাত্রা। এই যাত্রাপথে হিন্দু ভক্তরা বরফে তৈরি "শিবলিঙ্গ"
দর্শনের উদ্দেশ্যে প্রায় ৪৮ কিমি পথ অতিক্রম করেন। এটি সারা ভারতে ধর্মপ্রাণ
মানুষের জন্য এক পবিত্র অভিযাত্রা।
৩. বলিউডের প্রিয় শুটিং লোকেশন
পেহেলগামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য বহু বলিউড ছবির
পছন্দের শুটিং লোকেশন ছিল। ‘বেটা’,
‘রোযা’, ‘জব তাক হ্যায় জান’ সহ
বহু চলচ্চিত্র এখানকার হিমশীতল নদী,
ঘাসে ঢাকা উপত্যকা ও পাইনবনের মধ্যে শুট করা হয়েছে।
৪. লিডার নদীর শান্ত ও রহস্যময়
সৌন্দর্য
পেহেলগামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত লিডার (Lidder) নদী এখানকার প্রাণ। এই নদীর হিমবাহ থেকে সৃষ্ট জল অত্যন্ত স্বচ্ছ ও শীতল। এই নদী ট্রাউট মাছের
জন্য বিখ্যাত এবং মাছ ধরার শখ পূরণের জন্য বহু পর্যটক এখানে আসেন।
৫. আনন্তনাগ অঞ্চলের ঐতিহাসিক
অংশ
পেহেলগাম ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত
অঞ্চলের আনন্তনাগ জেলায় অবস্থিত। এই অঞ্চল প্রাচীনকালে কাশ্মীরের বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও কাশ্মীরি শৈব দর্শনের
গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। পেহেলগাম তার প্রাকৃতিক সম্পদ ও ইতিহাসের জন্য চিরকালই
গর্বিত।
৬. অপূর্ব ‘বেতাব ভ্যালি’ –
সিনেমার নামেই নামকরণ
পেহেলগাম থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত
বিখ্যাত ‘বেতাব ভ্যালি’, যার নামকরণ হয়েছে সানি দেওল ও অমৃতা সিং অভিনীত ‘বেতাব’ ছবির নাম অনুসারে। এই ছবির দৃশ্য ধারণ এখানে
হয়েছিল, এবং তখন থেকেই এটি
জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
৭. বন্যপ্রাণে ভরপুর আরু ভ্যালি
পেহেলগামের নিকটেই অবস্থিত অরু ভ্যালি (Aru
Valley), যা ট্রেকিং, হর্স রাইডিং ও হিমালয়ের গা ছোঁয়া দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। এই এলাকাটি একাধিক বিপন্ন
প্রাণীর আবাসস্থল, যেমন হিমালয়ান মস্ক
ডিয়ার ও হিমালয়ান মনাল (রাজধনুশি রঙের পাখি)।
৮. বরফে ঢাকা গ্লেসিয়ার: কোলাহয়
গ্লেসিয়ার
পেহেলগাম থেকে ট্রেক করে যাওয়া যায় কোলাহয় গ্লেসিয়ারে, যেটিকে ‘কাশ্মীরের Matterhorn’
বলা হয়। এটি কাশ্মীরের অন্যতম বড়
হিমবাহ এবং লিডার নদীর উৎস। উচ্চতাঃ প্রায় ৫,৪২৫ মিটার। হিমালয় অভিযাত্রীদের জন্য এটি আকর্ষণের কেন্দ্র।
৯. বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন রূপ
পেহেলগামের সৌন্দর্য ঋতুভেদে ভিন্ন রূপে ধরা দেয়
—
- বসন্তে ফুলে-ফুলে ঢেকে যায় উপত্যকা
- গ্রীষ্মে নদীর পাড়ে সবুজ বনভূমি
- শরতে রঙিন পাতা আর শান্ত প্রকৃতি
- শীতে বরফে ঢেকে যায় পুরো অঞ্চল, হয়ে ওঠে স্কিয়িং-এর স্বর্গ এই বৈচিত্র্যই একে
ভারতের অন্যতম চমকপ্রদ গন্তব্যে পরিণত করেছে।
১০. স্থানীয় সংস্কৃতি ও
হস্তশিল্পের বৈচিত্র্য
এখানকার লোকেরা মূলত গুজর ও বাকারওয়াল সম্প্রদায়ের, যারা পশুপালন ও
মৌসুমি যাযাবর জীবনযাপন করে। তাদের রঙিন পোশাক, কাঠের হস্তশিল্প, পশমি কাপড় এবং স্থানীয় খাবার যেমন “গোশতবা” ও
“কাহওয়া” পর্যটকদের ভীষণ আকর্ষণ করে।
১১. ধর্মীয় সহাবস্থান ও
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান
হিন্দু,
মুসলিম
ও বৌদ্ধ ঐতিহ্যের মিলনস্থল এই অঞ্চল। পেহেলগামে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, যা কাশ্মীরি আতিথেয়তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
সার্চ কী: কাশ্মীরের নদী, শ্রীনগর থেকে পেহেলগাম, জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর, কাশ্মীরের গুলমার্গ, কাশ্মীরের বরফ, কাশ্মীর ম্যাপ, কাশ্মীর বর্ডার, জম্মু কাশ্মীর যুদ্ধ, পাহেলগাম কি হিল স্টেশন? চন্দনওয়ারি উচ্চতা কত ফুট? পাহেলগামের কোন স্থানকে মিনি
সুইজারল্যান্ড বলা হয়?
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles