ছোঁয়াচে স্ক্যাবিস রোগের সংক্রমণ বাড়ছে, জানুন বিস্তারিত

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0


১. স্ক্যাবিস কী?

স্ক্যাবিস একটি সংক্রামক চর্মরোগ, যা Sarcoptes scabiei নামে একটি অতিক্ষুদ্র চর্মজীবাণু পরজীবী উকুন (mite) দ্বারা হয়ে থাকে। এই উকুন মানুষের ত্বকে সুড়ঙ্গ তৈরি করে ডিম পাড়ে এবং এর বিষাক্ত পদার্থের প্রতিক্রিয়ায় তীব্র চুলকানি, লালচে গুটি, ফুসকুড়ি ও প্রদাহ দেখা দেয়। এটি সাধারণত সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে বা ব্যবহৃত জিনিসের মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়।

 

২. স্ক্যাবিসের কারণ

স্ক্যাবিসের প্রধান কারণ হলো Sarcoptes scabiei পরজীবীর সংক্রমণ। এটি নিম্নলিখিত উপায়ে ছড়ায়:

  •  সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসা (যেমন: ঘনিষ্ঠভাবে ঘুমানো, আলিঙ্গন, হাত ধরা)
  •  ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন: তোয়ালে, কাপড়, বিছানা, চাদর ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রমণ
  •  গাদাগাদি অবস্থায় বসবাস (যেমন: হোস্টেল, বোর্ডিং, জেলখানা, শরণার্থী শিবির ইত্যাদি)
  •  অপরিষ্কার কাপড়-চোপড় বা শরীরের নিয়মিত যত্নের অভাব

 

৩. লক্ষণসমূহ

স্ক্যাবিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়:

  1. তীব্র চুলকানিবিশেষ করে রাতে অনেক বেড়ে যায়
  2. লালচে গুটি বা ফুসকুড়ি আঙুলের ফাঁকে, কব্জি, কনুই, নাভি, কোমর, স্তনের নিচে, যৌনাঙ্গের আশপাশে
  3. ত্বকে সরু সুড়ঙ্গের মতো দাগযেখান দিয়ে উকুন ত্বকের নিচে প্রবেশ করে
  4. চুলকাতে চুলকাতে ক্ষতমাঝে মাঝে ইনফেকশনও হতে পারে
  5. পরিবার বা আশেপাশের অনেকের একই রকম চুলকানিসাধারণত একসাথে সংক্রমণ ঘটে

 

৪. চিকিৎসা

স্ক্যাবিসের চিকিৎসা বেশ কার্যকর এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে করা হলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব:

ঔষধ ও মলম:

  • পারমেথ্রিন ৫% ক্রিম (Permethrin 5%):
    • সারা শরীরে (গলা থেকে পা পর্যন্ত) রাত্রে লাগিয়ে সকালে ধুয়ে ফেলতে হয়
    • ৭ দিন পর আবার প্রয়োগ করা যেতে পারে
  • সালফার অয়েন্টমেন্ট (6%–10%):
    • শিশু, গর্ভবতী ও নবজাতকের জন্য নিরাপদ
    • ৩–৫ দিন নিয়মিত ব্যবহার করতে হয়
  • ইভারমেকটিন ট্যাবলেট (Ivermectin):
    • গুরুতর বা জটিল ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় (শুধুমাত্র চিকিৎসকের নির্দেশে)
  • অ্যান্টিহিস্টামিন (চুলকানি কমানোর জন্য):
    • যেমন: সিটিরিজিন, লোরাটাডিন
  • অ্যান্টিবায়োটিক:
    • ইনফেকশন হলে প্রয়োগ করা হয়

পরিবারের সবাইকে একসাথে চিকিৎসা করতে হবে, যাতে পুনঃসংক্রমণ না হয়।

 

৫. প্রতিরোধ ও প্রতিকার

স্ক্যাবিস প্রতিরোধে সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত জরুরি:

  •  আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়, তোয়ালে, বিছানার চাদর গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানো প্রয়োজন
  •  ব্যবহৃত জিনিসপত্র ৩–৪ দিন আলাদা রেখে দিনউকুন নিজের থেকেই মারা যাবে
  •  ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
  •  কাপড়, বালিশ, কম্বল প্রভৃতি আলাদা করে ব্যবহার করা
  •  একই বাড়ির সব সদস্যকে একসাথে চিকিৎসা করানো উচিত
  •  আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শ এড়ানো

 

৬. পরামর্শ ও সতর্কতা

  •  লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
  •  নিজের থেকে ওষুধ শুরু না করে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ব্যবহার করুন
  •  চিকিৎসা শুরু করলে তা পুরো কোর্স সম্পূর্ণ করুন, চুলকানি কমে গেলেও বন্ধ করা উচিত নয়
  •  শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা মেনে চলুন এবং শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
  •  ঘরের সব সদস্য আক্রান্ত না হলেও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত

 

উপসংহার: স্ক্যাবিস একটি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত সংক্রামক চর্মরোগএটি দ্রুত ছড়াতে পারে, তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। আক্রান্ত ব্যক্তিকে লজ্জা না পেয়ে অবশ্যই চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে, এবং ঘরোয়া সচেতনতা বাড়াতে হবে।


সার্চ কী: স্ক্যাবিস রোগ কেন হয়? স্ক্যাবিস নিরাময়ের উপায় কী? স্ক্যাবিস কত দিন থাকে? রাতে শরীর চুলকায় কেন? স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায়, স্ক্যাবিস এর হোমিও ঔষধ, স্ক্যাবিস এর লোশন দাম, স্ক্যাবিস রোগের ঔষধের নাম, স্ক্যাবিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না, স্ক্যাবিস প্রতিরোধের উপায়, স্ক্যাবিস দূর করার ঔষধ, স্ক্যাবিস চুলকানি দূর করার উপায়


ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top