শিশুদের টনসিল হলে যা যা করবেন, পরামর্শ ও সতর্কতা

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0


শিশুদের টনসিলাইটিস রোগ পরিচিতি, লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ, প্রতিকার, চিকিৎসা, পরামর্শ ও সতর্কতা

শিশুদের টনসিলাইটিস রোগ: পরিচিতি

টনসিলাইটিস হলো টনসিল নামক গলবিলির (throat) দুইটি ক্ষুদ্র অঙ্গের প্রদাহ। টনসিল গলার পিছনে অবস্থিত এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে সেগুলির প্রদাহ হয়ে টনসিলাইটিস সৃষ্টি হয়। এটি শিশুদের মধ্যে সাধারণত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। টনসিলাইটিস, যদিও সাধারণত স্বল্প সময়ের মধ্যে সেরে যায়, তবে এটি যদি গুরুতর হয়, তবে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

টনসিলাইটিস (Tonsillitis) রোগের লক্ষণ:

টনসিলাইটিসের লক্ষণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. গলা ব্যথা
    • এটি টনসিলাইটিসের প্রধান লক্ষণ, যেখানে শিশু গলার পিছনে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারে।
  2. যত্ন নেওয়ার জন্য সমস্যা (Swollen Tonsils)
    • টনসিল বড় হয়ে যাওয়ার কারণে গলায় অস্বস্তি এবং গলার ভিতরে বা বাইরের দিকে ফুলে যেতে পারে।
  3. জ্বর
    • টনসিলাইটিসে আক্রান্ত শিশুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা একটি সাধারণ লক্ষণ।
  4. খাবার গেলার সমস্যা
    • গলা ব্যথার কারণে খাবার গেলা কঠিন হতে পারে, এবং শিশু খেতে বা পান করতে অসুবিধা অনুভব করতে পারে।
  5. শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নেওয়ার সমস্যা
    • টনসিল বড় হয়ে গেলে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে, বিশেষত যখন টনসিলগুলি গলার পথকে আচ্ছাদিত করে ফেলে।
  6. মাথাব্যথা
    • টনসিলাইটিসের কারণে শিশু মাথাব্যথায় ভুগতে পারে।
  7. বমি বা মলের পরিবর্তন
    • কিছু ক্ষেত্রে শিশু বমি বা খাদ্য নিষ্কাশনেও পরিবর্তন অনুভব করতে পারে।
  8. শরীরের দুর্বলতা
    • ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত শিশুর শরীরে ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
  9. খাঁখাঁ কাশি এবং সর্দি
    • কিছু ক্ষেত্রে টনসিলাইটিসের সঙ্গে সর্দি, কাশি এবং গলাব্যথা যুক্ত হতে পারে।

টনসিলাইটিস (Tonsillitis) রোগের কারণ:

টনসিলাইটিস সাধারণত দুটি প্রধান কারণের জন্য হতে পারে:

  1. ভাইরাস
    • অ্যাডেনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, রাইনোভাইরাস, এবং এনটেরোভাইরাস সহ অন্যান্য ভাইরাসের কারণে টনসিলাইটিস হতে পারে। ভাইরাসজনিত টনসিলাইটিস সাধারণত স্বল্পস্থায়ী এবং সহজে সেরে যায়।
  2. ব্যাকটেরিয়া
    • স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া (যেমন স্ট্রেপ থ্রোট) হল ব্যাকটেরিয়াজনিত টনসিলাইটিসের অন্যতম প্রধান কারণ। ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে টনসিলাইটিস সাধারণত বেশি গুরুতর হয় এবং চিকিৎসা নিতে হয়।
  3. অ্যালার্জি বা পরিবেশগত কারণ:
    • কখনও কখনও পরিবেশের অ্যালার্জি, ধোঁয়া বা গরম বাতাস টনসিলের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা টনসিলাইটিসের কারণ হতে পারে।

টনসিলাইটিস (Tonsillitis) প্রতিরোধ:

১. হাত ধোয়ার অভ্যাস:

  • টনসিলাইটিসের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া অন্যান্য শিশুদের কাছে ছড়িয়ে যেতে পারে, তাই হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং ব্যক্তিগত হাইজিন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

২. সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ এড়ানো:

  • যাদের টনসিলাইটিস বা গলা ব্যথা রয়েছে, তাদের সাথে শিশুদের যোগাযোগ সীমিত রাখা উচিত।

৩. পরিষ্কার পরিবেশ বজায় রাখা:

  • শিশুদের খেলা বা বাসস্থানে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং নির্দিষ্ট জায়গায় হাঁচি বা কাশি দেয়া উচিত যাতে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে না পারে।

৪. শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যেতে পারে, তাই মাস্ক পরা বা কাশি ঢাকার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

৫. টিকা:

  • সঠিক সময়ে ফ্লু টিকা এবং অন্যান্য উপকারী টিকা দিয়ে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

টনসিলাইটিস (Tonsillitis) প্রতিকার ও চিকিৎসা:

১. ভাইরাসজনিত টনসিলাইটিস:

  • সাধারণত ভাইরাসজনিত টনসিলাইটিসের জন্য বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে, শিশুর গলা ব্যথা এবং জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল বা অন্য ধরনের অ্যান্টি-ফিভার ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
  • অনেক সময় গরম পানি বা গরম স্যুপ বা পানীয় দেওয়া শিশুর গলা আরাম দিতে সহায়ক হতে পারে।

২. ব্যাকটেরিয়াজনিত টনসিলাইটিস:

  • যদি টনসিলাইটিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে, তবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা প্রয়োজন।

৩. গলা পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা:

  • গলাব্যথা বা প্রদাহ কমানোর জন্য গরম পানি বা গারগল করার পরামর্শ দেয়া হয়।

৪. জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য:

  • প্যারাসিটামল বা অন্য উপযুক্ত ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫. পানি ও তরল খাবার:

  • পর্যাপ্ত পানি বা স্যুপ, জলপান ইত্যাদি শিশুকে গলা ব্যথা থেকে আরাম দিতে সাহায্য করে।

৬. বিপজ্জনক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার:

  • কখনও কখনও, যদি টনসিলাইটিস খুব গুরুতর বা পুনরাবৃত্ত হয়, চিকিৎসকরা টনসিল অপসারণের (টনসিলেকটমি) পরামর্শ দিতে পারেন।

টনসিলাইটিস (Tonsillitis) পরামর্শ ও সতর্কতা:

১. হোম রেমেডি ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম:

  • শিশু যাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয় এবং গলা আরামদায়ক থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। গরম পানি বা গরম স্যুপ খাওয়ানো গলা আরামদায়ক করতে সাহায্য করতে পারে।

২. অ্যান্টিবায়োটিক সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার:

  • ব্যাকটেরিয়া জনিত টনসিলাইটিসে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে পুরো কোর্স শেষ করতে হবে। এতে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সঠিক প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।

৩. বিকৃত গলা বা গলার অস্বস্তি এড়ানো:

  • পেপারটাউন, অতিরিক্ত তীব্র খাবার, ধূমপান বা ধোঁয়া থেকে শিশুদের দূরে রাখা উচিত, যাতে গলার আরো অস্বস্তি বা সংক্রমণ না হয়।

৪. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

  • টনসিলাইটিসের প্রতিরোধে পরিবারের সদস্যদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে তাদের গলা পরিষ্কার রাখা উচিত এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে দূরে রাখা উচিত।

উপসংহার:

টনসিলাইটিস একটি সাধারণ রোগ, যা শিশুর গলা ও শ্বাসনালীকে প্রভাবিত করে। এটি সাধারণত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে এবং শিশুদের মাঝে এটি খুবই সাধারণ। তবে, দ্রুত চিকিৎসা এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে টনসিলাইটিস সহজেই নিরাময় সম্ভব। শিশুদের সুরক্ষায় যথাযথ সতর্কতা, হাইজিন এবং টিকা প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top