শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর হলে যা করবেন, পরামর্শ ও সতর্কতা

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0


শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর রোগ পরিচিতি, লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ, প্রতিকার, চিকিৎসা, পরামর্শ ও সতর্কতা

শিশুদের ডেঙ্গু রোগ: পরিচিতি

ডেঙ্গু একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশা (Aedes mosquito) দ্বারা বাহিত হয়। এটি সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এবং দেশের কিছু অংশে বেশি দেখা যায়। ডেঙ্গু ভাইরাস মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং শিশুদের মধ্যে এটি দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে, কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। ডেঙ্গুর কারণে শরীরে রক্তের প্লেটলেট কমে যেতে পারে, যা গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ:

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সাধারণত ৪-৭ দিন পর দেখা দিতে শুরু করে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. তীব্র জ্বর:
    সাধারণত ১০১-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর হতে পারে। জ্বরের সাথে শীতল লাগা এবং ঘেমে যাওয়া হতে পারে।
  2. গা ব্যথা ও শরীরের অন্যান্য ব্যথা:
    ডেঙ্গুর কারণে পেশী ও জয়েন্টে তীব্র ব্যথা হতে পারে, যাকে "ডেঙ্গু ফিভার" বা "ব্রেকবোন ফিভার" বলা হয়।
  3. চামড়ায় র‍্যাশ:
    শরীরে লালচে র‍্যাশ বা চামড়ায় ছত্রাক দেখা দিতে পারে, যা সাধারণত জ্বরের ৩-৪ দিন পর শুরু হয়।
  4. মাথাব্যথা:
    মাথাব্যথা তীব্র হতে পারে, বিশেষত চোখের পেছনে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  5. অস্থিরতা বা ক্লান্তি:
    শিশু খুব ক্লান্ত বা দুর্বল অনুভব করতে পারে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমে আগ্রহ হারাতে পারে।
  6. বমি, ডায়রিয়া বা ক্ষুধামান্দা:
    কিছু শিশু বমি বা মলত্যাগে সমস্যা অনুভব করতে পারে এবং খাবারে আগ্রহ কমে যেতে পারে।
  7. রক্তক্ষরণ:
    বিশেষভাবে ডেঙ্গু হেমোরাজিক ফিভারে (DHF) রক্তপাত হতে পারে, যেমন মূত্রে রক্ত, রক্তনালীতে রক্ত জমা হওয়া, অথবা মিউকাস মেমব্রেন থেকে রক্তপাত।
  8. প্লেটলেট কমে যাওয়া:
    শরীরে প্লেটলেটের সংখ্যা কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা হতে পারে, যা পরবর্তীতে রক্তপাতের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

ডেঙ্গু রোগের কারণ:

ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায় এডিস মশা (Aedes aegypti এবং Aedes albopictus) দ্বারা। এই মশাগুলো সাধারণত সকালে এবং সন্ধ্যায় সক্রিয় থাকে এবং তারা ডেঙ্গু ভাইরাস ধারণ করে। মশা রক্ত পান করার সময় ভাইরাস শরীরে প্রবাহিত করে, যা পরবর্তীতে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ:

১. মশারি ব্যবহার:
শিশুদের জন্য মশারি ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে রাতের সময়, যাতে মশা তাদের কামড়াতে না পারে।

  1. জল জমে থাকা স্থান পরিষ্কার রাখা:
    মশা প্রজননস্থল সাধারণত জল জমে থাকা স্থানে হয়। তাই বালতি, ফুলের টব, কূপ ইত্যাদিতে জল জমে থাকা উচিত নয়। নিয়মিত জল পরিবর্তন করতে হবে।
  2. মশা প্রতিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার:
    শিশুদের ত্বকে মশা প্রতিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে শিশুর বয়সের উপযোগী পণ্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
  3. ফুলের টব, মাটি, বালতি ইত্যাদি সুরক্ষিত রাখা:
    মশা বাহিত রোগ ছড়ানোর জন্য যতটুকু সম্ভব জল জমতে না দেওয়ার চেষ্টা করুন।
  4. ফ্লাই স্ক্রীন বা মশার নেট ব্যবহার:
    বাসার জানালায় ফ্লাই স্ক্রীন ব্যবহার করলে মশা প্রবেশ করতে পারবে না।
  5. বিশেষ সতর্কতা:
    যেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি, সেখানে শিশুদের বাইরে খেলতে না দেওয়া উচিত বা মশা থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

ডেঙ্গু প্রতিকার ও চিকিৎসা:

  1. বিশ্রাম:
    শিশুদের পূর্ণ বিশ্রাম দেওয়া উচিত, যাতে তাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।
  2. জলীয় পদার্থ গ্রহণ:
    শরীরে জলীয় পদার্থের ঘাটতি হতে পারে, তাই শিশুকে পর্যাপ্ত পানি, স্যুপ, ইলেকট্রোলাইট ইত্যাদি খাওয়ানো প্রয়োজন।
  3. প্যারাসিটামল বা অ্যান্টি-পেইন মেডিসিন:
    জ্বর ও শরীরের ব্যথা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল বা অন্য অ্যান্টি-পেইন মেডিসিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এগুলি রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  4. প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন:
    যদি শিশুর প্লেটলেট সংখ্যা খুব কমে যায় এবং গুরুতর রক্তক্ষরণের সমস্যা হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন করা হতে পারে।
  5. চিকিৎসকের পরামর্শ:
    ডেঙ্গুর লক্ষণ শুরু হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল সমস্যা, রক্তক্ষরণ বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।

ডেঙ্গু রোগে সতর্কতা:

  1. মশাবাহিত রোগের দিকে লক্ষ্য রাখা:
    ডেঙ্গু ভাইরাস যে মশার মাধ্যমে ছড়ায়, তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময়ে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
  2. প্লেটলেটের সংখ্যা মনিটর করা:
    ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে প্লেটলেটের সংখ্যা পরীক্ষা করতে হবে, এবং তা যদি খুব কমে যায় তবে চিকিৎসক প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন করার পরামর্শ দিতে পারেন।
  3. জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ:
    ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের আশপাশে মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে, এবং যাতে ভাইরাসটি আরও ছড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
  4. মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে বাহিরে যাওয়ার সময় সতর্কতা:
    বাহিরে যাওয়ার সময় অবশ্যই মশাবিরোধী ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন, এবং ঘরের জানালা, দরজা বন্ধ রাখুন।

উপসংহার:

ডেঙ্গু একটি ভয়ানক মশাবাহিত রোগ, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসা, যত্ন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এটি থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং সঠিক চিকিৎসা দেওয়া উচিত। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top