শিশুদের জিকা ভাইরাস হলে করনীয় ও এ রোগের বিস্তারিত

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
5 minute read
0


শিশুদের জিকা ভাইরাস রোগ পরিচিতি, লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ, প্রতিকার, চিকিৎসা, পরামর্শ ও সতর্কতা

শিশুদের জিকা ভাইরাস রোগ: পরিচিতি

জিকা ভাইরাস একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশা (Aedes mosquito) দ্বারা ছড়ায়। এটি বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য গুরুতর হতে পারে কারণ এই ভাইরাসের কারণে গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকৃতি (microcephaly) হতে পারে, যার ফলে শিশুর জন্মগত সমস্যা হতে পারে। যদিও জিকা ভাইরাস সাধারণত শিশুদের মধ্যে তেমন গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করে না, তবে এর কিছু লক্ষণ এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হতে পারে। জিকা ভাইরাস সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এবং মশাবাহিত রোগের প্রকোপে আক্রান্ত এলাকাগুলিতে বেশি দেখা যায়।

জিকা ভাইরাস রোগের লক্ষণ:

জিকা ভাইরাসের লক্ষণ সাধারণত ২-৭ দিন পর শুরু হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হালকা ও সাময়িক হয়। শিশুদের মধ্যে এর কিছু লক্ষণ হতে পারে:

  1. তীব্র জ্বর:
    জ্বর একটি সাধারণ লক্ষণ হতে পারে, যদিও তা সাধারণত তীব্র হয় না। সাধারণত ১০১-১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর হতে পারে।
  2. র‍্যাশ বা চামড়ায় লালচে দানা:
    জিকা ভাইরাস আক্রান্ত শিশুর শরীরে লালচে র‍্যাশ বা চামড়ায় দানা দেখা দিতে পারে, যা সাধারণত মুখ, গলা, বাহু, হাত-পায়ে ছড়িয়ে পড়ে।
  3. চোখের লাল হওয়া (Conjunctivitis):
    শিশুর চোখে লালভাব বা চোখের প্রদাহ (Conjunctivitis) দেখা দিতে পারে, যা অনেক সময় সর্দির মতো অনুভূতি দেয়।
  4. মাথাব্যথা:
    মাথাব্যথা হতে পারে, যা কিছুদিন স্থায়ী হতে পারে।
  5. অস্থিরতা ও ক্লান্তি:
    শিশুর মধ্যে অস্থিরতা, দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
  6. জয়েন্ট ব্যথা ও মাংসপেশীর ব্যথা:
    মাংসপেশী ও জয়েন্টে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, যা চিকুনগুনিয়া রোগের সাথে মিল থাকতে পারে।
  7. বমি বা ডায়রিয়া (কম ক্ষেত্রে):
    কিছু ক্ষেত্রে বমি বা ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে, তবে এটি সব ক্ষেত্রে হয় না।

জিকা ভাইরাসের কারণ:

জিকা ভাইরাস এডিস মশা (Aedes aegypti Aedes albopictus) দ্বারা বাহিত হয়, যা ভাইরাস সংক্রমিত রক্ত পান করার পর তা অন্য ব্যক্তি বা শিশুর শরীরে প্রবাহিত করে। এই মশাগুলো দিনের বেলা সক্রিয় থাকে, বিশেষত সকাল এবং সন্ধ্যা সময়ে। ভাইরাসটি মশার কামড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়, তবে সংক্রমণ মা থেকে সন্তানের মাধ্যমে গর্ভাবস্থায়ও হতে পারে।

জিকা ভাইরাসের প্রতিরোধ:

১. মশারি ব্যবহার:
শিশুর জন্য মশারি ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে মশারি ব্যবহৃত হওয়া উচিত।

  1. মশাবিরোধী স্প্রে ও ক্রিম ব্যবহার:
    শিশুর ত্বকে মশাবিরোধী ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করলে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে, শিশুদের জন্য উপযুক্ত ও নিরাপদ পণ্য ব্যবহার করা নিশ্চিত করতে হবে।
  2. জল জমে থাকা স্থান পরিষ্কার রাখা:
    মশা প্রজননস্থল সাধারণত জল জমে থাকা স্থানে হয়। তাই, বালতি, টব, কূপ, এবং যেকোনো স্থানে পানি জমে থাকার সুযোগ না দিতে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
  3. বাইরে বের হওয়ার সময় সুরক্ষা:
    শিশুকে বাইরে যাওয়া বা খেলা করার সময় যথাযথ মশাবিরোধী ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন এবং মশার কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
  4. ফুলের টব বা পানি সংরক্ষণস্থল পরিষ্কার রাখা:
    ফুলের টব, পানির বাটি, পিপে বা অন্য যেকোনো জায়গায় জল জমে থাকা উচিত নয়, কারণ এই স্থানগুলো মশার প্রজননস্থল হয়ে থাকে।

জিকা ভাইরাসের প্রতিকার ও চিকিৎসা:

বর্তমানে জিকা ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই, তবে লক্ষণগত চিকিৎসা দেওয়া হয়:

  1. বিশ্রাম:
    জিকা ভাইরাস আক্রান্ত শিশুদের যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া উচিত, যাতে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হতে পারে।
  2. জ্বর ও ব্যথা কমানো:
    শিশুদের জ্বর এবং শরীরের ব্যথা কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল (Paracetamol) বা অন্য উপযুক্ত ব্যথানাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, অ্যাসপিরিন (Aspirin) বা আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  3. পানি ও তরল খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি:
    শরীরে জলীয় পদার্থের ঘাটতি হতে পারে, তাই শিশুকে পর্যাপ্ত পানি, স্যুপ, ইলেকট্রোলাইট সলিউশন ইত্যাদি খাওয়ানো উচিত।
  4. চোখের প্রদাহের চিকিৎসা:
    যদি চোখে প্রদাহ বা চোখ লাল হয়ে থাকে, তাহলে সঠিক চিকিৎসা এবং ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  5. নিরাময়ী পদক্ষেপ:
    সাধারণত জিকা ভাইরাসের পরিসমাপ্তি ঘটে ৭-১০ দিনের মধ্যে, তবে যেসব ক্ষেত্রে শিশুদের র‍্যাশ বা জয়েন্ট ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা বা পদক্ষেপ প্রয়োজন হতে পারে।

জিকা ভাইরাস সম্পর্কে পরামর্শ ও সতর্কতা:

  1. গর্ভবতী মহিলাদের সতর্কতা:
    গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে জিকা ভাইরাস অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এটি গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকৃতি (microcephaly) সৃষ্টি করতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলাদের মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে হবে এবং মশা থেকে দূরে থাকতে হবে।
  2. বিশেষভাবে শিশুদের জন্য সতর্কতা:
    শিশুদের যদি জিকা ভাইরাসের লক্ষণ দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। সঠিক পরামর্শ ও চিকিৎসা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  3. বাইরে গমন করার সময় সতর্কতা:
    যখন মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেশি থাকে, তখন বাইরে বের হওয়ার সময় শিশুদের জন্য যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
  4. মশার কামড় থেকে দূরে থাকা:
    শিশুদের সবসময় মশার কামড় থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন এবং তাদের আশপাশে জল জমে থাকা স্থান পরিষ্কার রাখুন।

উপসংহার:

জিকা ভাইরাস একটি মশাবাহিত রোগ, যা শিশুদের জন্য তেমন গুরুতর না হলেও গর্ভবতী মহিলার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। মশার কামড় থেকে সুরক্ষা নেওয়া এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করলে এই রোগটি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। যদি জিকা ভাইরাসের লক্ষণ দেখা যায়, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top