শিশুদের চিকুনগুনিয়া চিকিৎসা ও সতর্কতা

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0


শিশুদের চিকুনগুনিয়া রোগ পরিচিতিলক্ষণকারণপ্রতিরোধপ্রতিকারচিকিৎসাপরামর্শ ও সতর্কতা

শিশুদের চিকুনগুনিয়া রোগ: পরিচিতি

চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশা (Aedes mosquito) দ্বারা ছড়ায়। এই রোগটির নাম "চিকুনগুনিয়া" শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো "কুঁজো হয়ে যাওয়া" বা "ঝুঁকে পড়া"। কারণ এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি শারীরিক অস্বস্তি এবং জয়েন্টে তীব্র ব্যথা অনুভব করে, যা তাকে কুঁজো হয়ে যেতে বাধ্য করতে পারে। সাধারণত চিকুনগুনিয়া একটি স্বল্পস্থায়ী রোগ, তবে কখনো কখনো এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, বিশেষত শিশুদের মধ্যে।

চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ:

চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ সাধারণত ৪-৮ দিন পর শুরু হয়। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. তীব্র জ্বর:
    চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির তীব্র জ্বর হতে পারে, যা ১০১-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে।
  2. গোড়ালিতে, হাঁটুতে এবং অন্যান্য জয়েন্টে ব্যথা:
    জয়েন্টে তীব্র ব্যথা, বিশেষত হাত-পা, হাঁটু এবং গোড়ালিতে ব্যথা হয়। এটি অনেক সময় কুঁজো হয়ে যাওয়ার অনুভূতি তৈরি করে, এবং ব্যথা অনেকদিন স্থায়ী হতে পারে।
  3. মাথাব্যথা ও ক্লান্তি:
    আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করে।
  4. চামড়ায় র‍্যাশ:
    শিশুর শরীরে বা গায়ের চামড়ায় লাল র‍্যাশ বা লালচে দানা দেখা দিতে পারে, যা সাধারণত জ্বরের কয়েক দিন পর শুরু হয়।
  5. শরীরের অন্যান্য ব্যথা:
    শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যথা এবং অস্থিরতা অনুভূত হতে পারে।
  6. অপেটাইটের অভাব:
    শিশুদের মধ্যে খাবারে আগ্রহ কমে যেতে পারে এবং তারা খাবার খেতে ইচ্ছুক নাও থাকতে পারে।
  7. বমি ও ডায়রিয়া:
    কিছু ক্ষেত্রে বমি বা পেটে সমস্যা (ডায়রিয়া) হতে পারে।

চিকুনগুনিয়া রোগের কারণ:

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস একটি আর্বোভাইরাস (Arbovirus), যা এডিস মশা (Aedes aegypti এবং Aedes albopictus) দ্বারা বাহিত হয়। এই মশাগুলো সাধারণত দিনে সক্রিয় থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত পান করে, তারপর তারা ভাইরাসের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যক্তিকে সংক্রমিত করে।

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ:

১. মশারি ব্যবহার:
শিশুদের রাতে মশারি ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, দিনে বাড়ির মধ্যে বা বাইরে যেখানেই সম্ভব, সেখানে মশারি বা মশাবিরোধী নেট ব্যবহার করা উচিত।

  1. মশা প্রতিরোধী স্প্রে ও ক্রিম ব্যবহার:
    শিশুর শরীরে মশা প্রতিরোধী স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করলে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে, শিশুদের জন্য উপযুক্ত ও নিরাপদ পণ্য ব্যবহার করতে হবে।
  2. জল জমে থাকা স্থান পরিষ্কার রাখা:
    মশা প্রজননস্থল জল জমে থাকা স্থানে হয়। তাই বালতি, ফুলের টব, কূপ বা জলাশয়গুলোতে পানি জমতে না দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
  3. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
    যখন মশার প্রকোপ বেশি থাকে, তখন বাহিরে যাওয়ার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যেমন, শিশুকে মশা প্রতিরোধী ক্রিম বা স্প্রে দেওয়া, এবং মশার কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
  4. বাইরে বের হলে যথাযথ পরিধান:
    শিশুদের বাইরের পরিবেশে মশার আক্রান্ত স্থান থেকে দূরে রাখা এবং দীর্ঘ হাত-পা ঢাকার পোশাক পরানো।

চিকুনগুনিয়া প্রতিকার ও চিকিৎসা:

চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, তাই এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই। তবে কিছু উপসর্গের চিকিৎসা দেওয়া যায়:

  1. বিশ্রাম:
    শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি তার শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।
  2. জ্বর ও ব্যথা কমানো:
    চিকুনগুনিয়ার কারণে তীব্র জ্বর এবং শরীরের ব্যথা হয়। প্যারাসিটামল (Paracetamol) বা অন্যান্য উপযুক্ত ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়, তবে অ্যাসপিরিন (Aspirin) বা ন্যাপ্রোক্সেন (Naproxen) ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।
  3. পানি ও তরল খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি:
    শরীরে জলীয় পদার্থের ঘাটতি পূরণের জন্য পর্যাপ্ত পানি, স্যুপ বা অন্যান্য তরল খাবার দেওয়া উচিত। এটি শরীরের ডিহাইড্রেশন রোধ করে এবং রোগ থেকে দ্রুত সেরে ওঠার সহায়ক।
  4. অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি চিকিৎসা:
    যদি জয়েন্ট ব্যথা বেশি হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ ব্যবহার করা হতে পারে।
  5. শরীরের তাপমাত্রা মনিটর করা:
    শিশুদের তাপমাত্রা নিয়মিত পরিমাপ করা উচিত এবং যেকোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে পরামর্শ ও সতর্কতা:

  1. মশা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা:
    শিশুদের মশার কামড় থেকে রক্ষা করা এবং প্রজননস্থল পরিষ্কার রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ঘরের জানালা ও দরজা বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন যাতে মশা প্রবেশ না করতে পারে।
  2. রক্তক্ষরণ বা শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান:
    যদি শিশুতে তীব্র শ্বাসকষ্ট, রক্তপাত, বা অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করা উচিত।
  3. ফুলের টব ও পানির সঞ্চয়স্থল নিয়মিত পরিস্কার রাখা:
    মশা কোথায় প্রজনন করতে পারে, সে জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে মশা ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা যায়।
  4. বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের সতর্কতা:
    গর্ভবতী মহিলা, যাদের শিশু জন্মের ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়া নিয়ে উদ্বেগ থাকে, তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে এবং মশার কামড় থেকে নিরাপদ থাকতে হবে।
  5. চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা:
    চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত এবং কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য কোনো ওষুধ নেওয়ার আগে চিকিৎসকের অনুমতি নেওয়া উচিত।

উপসংহার:

চিকুনগুনিয়া একটি মশাবাহিত রোগ, যা সাধারণত স্বল্পস্থায়ী হলেও এটি শিশুদের মধ্যে তীব্র অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সচেতনতা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে চিকুনগুনিয়া থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top