বাংলাদেশ থেকে নির্মূল হলেও জেনে রাখুন শিশুর পোলিও রোগ নিয়ে চমৎকার তথ্য
শিশুদের পোলিও রোগ পরিচিতি: পোলিও (Poliomyelitis) একটি সংক্রামক রোগ, যা পোলিও ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং এটি মূলত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। পোলিও একটি গুরুতর রোগ, যা বিশেষভাবে শিরদাঁড়া ও মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে, যার ফলে পঙ্গুত্ব (paralysis) হতে পারে। তবে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পোলিও টিকার মাধ্যমে এ রোগের প্রায় পুরোপুরি প্রতিরোধ সম্ভব।
পোলিও রোগের লক্ষণ:
পোলিওের লক্ষণ সাধারণত ভাইরাসের সংক্রমণের পর ৭-১৪ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। লক্ষণগুলি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, এবং কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাসের সংক্রমণ তেমন লক্ষণীয় হতে পারে না। তবে প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
- জ্বর
- পোলিও আক্রান্ত শিশুর প্রথম লক্ষণ হতে পারে হালকা জ্বর, যা তীব্র হতে পারে।
- মাংসপেশীতে ব্যথা
- শরীরের বিভিন্ন অংশে মাংসপেশীর ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
- পোলিও আক্রান্ত শিশু ক্লান্তি অনুভব করতে পারে এবং শক্তিহীন হতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট বা গলাব্যথা
- শ্বাস নিতে সমস্যা বা গলাব্যথা হতে পারে।
- তীব্র ব্যথা এবং প্যারালাইসিস (পঙ্গুত্ব):
- গুরুতর ক্ষেত্রে পোলিও শরীরের বিভিন্ন অংশে প্যারালাইসিস (পঙ্গুত্ব) সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে পা বা হাতের পেশিতে। এটি প্রাথমিকভাবে পায়ের পেশি বা শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে এবং স্নায়ুতন্ত্রের গুরুতর ক্ষতি হতে পারে।
- মাথাব্যথা এবং মস্তিষ্কের প্রদাহ
- পোলিও কখনও কখনও মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনসেফালাইটিস) সৃষ্টি করে, যা মাথাব্যথা এবং বমির মতো উপসর্গ তৈরি করতে পারে।
পোলিও রোগের কারণ:
পোলিও ভাইরাস, যা পোলিও ভাইরাস ১, ২ এবং ৩ নামে পরিচিত, এক ধরনের এনভেলোপড ভাইরাস (enveloped virus)। এটি মূলত ফিক্সড (fecal-oral) রুটে ছড়ায়, অর্থাৎ মলমূত্রের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে এটি ছড়িয়ে পড়ে। মলমূত্রের মাধ্যমে ভাইরাসটি জল, খাবার বা পরিবেশে প্রবাহিত হয় এবং যদি তা সুস্থ ব্যক্তি খায় বা স্পর্শ করে, তবে ভাইরাসটি তাদের শরীরে প্রবাহিত হয়।
পোলিও ভাইরাস সংক্রমণের উপায়:
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ: যেখানে স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব থাকে এবং পানি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হয় না, সেখানে পোলিও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- সংক্রামিত ব্যক্তি: আক্রান্ত ব্যক্তির কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পোলিও প্রতিরোধ:
পোলিও একটি 100% প্রতিরোধযোগ্য রোগ, এবং বর্তমানে পোলিও টিকা এর মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব। পোলিও ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পেতে পোলিও টিকা অত্যন্ত কার্যকর।
- পোলিও টিকা:
- ওপিভি (OPV - Oral Polio Vaccine) এবং আইপিভি (IPV - Inactivated Polio Vaccine) টিকা দুটি পোলিও থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে ব্যবহৃত হয়।
- শিশুকে পোলিও টিকা ২, ৪, ৬ মাস বয়সে এবং ১৮ মাস বয়সে প্রদান করতে হয়।
- জাতীয় পোলিও টিকাদান কর্মসূচি (National Immunization Days - NID) বিভিন্ন দেশে পরিচালিত হয়, যেখানে শিশুদের বিনামূল্যে পোলিও টিকা দেওয়া হয়।
- হাত ধোয়ার অভ্যাস:
- শিশুদের নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত, বিশেষ করে খাবার খাওয়ার আগে এবং বাথরুম ব্যবহারের পরে। এটি পোলিও এবং অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- স্বাস্থ্যকর পরিবেশ:
- বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, মলমূত্র দূষণমুক্ত রাখা এবং নিরাপদ পানির উৎস ব্যবহার করা উচিত।
- টিকা দেওয়ার পরও সতর্কতা:
- যেসব অঞ্চলে পোলিও এখনও রয়েছে, সেখানকার শিশুদের নিয়মিত টিকা নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে টিকা প্রয়োগে সহযোগিতা করতে হবে।
পোলিও প্রতিকার: পোলিও সাধারণত প্রতিকারযোগ্য নয়, কারণ একবার সংক্রমণ হয়ে গেলে এর ফলে পঙ্গুত্ব (paralysis) হয়ে যেতে পারে। তবে, চিকিৎসকরা রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে প্যারালাইসিস বা পঙ্গুত্ব থেকে সেরেও যাওয়ার জন্য কিছু চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে পারেন:
- প্যারালাইসিসের চিকিৎসা:
- পোলিও আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে শারীরিক থেরাপি (Physical therapy) এবং অর্থোথেরাপি (Orthopedic therapy) গুরুত্বপূর্ণ। এটি পঙ্গুত্বের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং সুস্থতা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
- শ্বাসনালী সহায়তা:
- কিছু ক্ষেত্রে পোলিও আক্রান্ত শিশুদের শ্বাস নেয়ার সমস্যা হতে পারে, এবং তাদের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের সহায়তা (Ventilatory support) প্রয়োজন হতে পারে।
- স্বাস্থ্যসম্মত যত্ন:
- পোলিও আক্রান্ত রোগীর শরীরের সঠিক যত্ন এবং পুষ্টির মাধ্যমে তাকে শক্তিশালী করা উচিত।
- ব্যথা ব্যবস্থাপনা:
- যদি পোলিও সংক্রমণ মাংসপেশীতে ব্যথা বা আঘাত সৃষ্টি করে, তাহলে ব্যথা কমানোর জন্য সঠিক ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
পোলিও চিকিৎসা: পোলিও সংক্রমণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই। তবে, চিকিৎসকরা রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি সাধনে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন, যেমন:
- শরীরের শক্তি বজায় রাখা:
- শিশুদের পর্যাপ্ত পুষ্টি, বিশ্রাম এবং শক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।
- পঙ্গুত্ব নিরাময়:
- যদি পোলিও পঙ্গুত্ব সৃষ্টি করে, তবে শারীরিক থেরাপি এবং পেশী শক্তি বৃদ্ধির জন্য চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
পোলিও রোগের পরামর্শ ও সতর্কতা:
- টিকা দেওয়ার জন্য নিয়মিত সময়সূচি মেনে চলুন:
- শিশুকে পোলিও টিকা দেয়ার সময়সূচি মেনে চলতে হবে। পোলিও টিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি শিশুর জীবনের জন্য সুরক্ষা প্রদান করে।
- স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখুন:
- ঘরবাড়ি, বিদ্যালয়, এবং আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে।
- হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন:
- শিশুকে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে খাবার খাওয়ার আগে, এবং বাথরুম ব্যবহারের পরে হাত ধুতে হবে।
- স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করুন:
- পোলিওের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে, যদি জ্বর, ক্লান্তি বা পঙ্গুত্বের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
উপসংহার: পোলিও একটি গুরুতর রোগ, যা পঙ্গুত্বের কারণ হতে পারে, তবে বর্তমানে সঠিক টিকার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধযোগ্য। শিশুকে যথাসময়ে পোলিও টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব। পরিবার এবং সমাজে সচেতনতা গড়ে তোলা, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা, এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা পোলিও মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সার্চ কী: শিশুদের পোলিও রোগ, পোলিও রোগের লক্ষণ, পোলিও রোগের কারণ,
পোলিও প্রতিরোধের উপায়, পোলিও টিকা কবে দিতে
হয়, পোলিও টিকাদান কর্মসূচি বাংলাদেশ, পোলিও কিভাবে ছড়ায়, পোলিও রোগ নির্মূল হয়েছে কি
না, পোলিও রোগের ইতিহাস, পোলিও
প্রতিরোধ টিকা, পোলিও ভাইরাস কী, পোলিও
সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়, শিশুর পোলিও টিকা নেওয়ার নিয়ম,
পোলিও রোগ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য, পোলিও টিকার
গুরুত্ব, পোলিও রোগের শেষ পরিস্থিতি বাংলাদেশ, পোলিও টিকা না দিলে কী হয়, বিশ্ব পোলিও দিবস,
শিশুদের পোলিও টিকাদান কর্মসূচি, বাংলাদেশে
পোলিও নির্মূলের ইতিহাস, পোলিও রোগ সম্পর্কে সচেতনতা
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles