টিসিবি ৩৬ জেলায় নতুন ডিলার
নিয়োগ শুরু: যোগ্যতা, শর্ত, আবেদন প্রক্রিয়া ও সম্পূর্ণ গাইড
(২০২৬)
বাংলাদেশের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য
নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ
বা টিসিবি বহু বছর ধরেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে
বা বিশেষ প্রয়োজন তৈরি হলে টিসিবি দ্রুত জনগণের কাছে পণ্য পৌঁছে দেয়।
বিশেষ করে অর্থনৈতিক চাপ, দামের উর্ধ্বগতি বা
বৈশ্বিক সংকটের সময় টিসিবি দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে সামনে থেকে ভূমিকা পালন
করে।
২০২৫ সালের শেষ দিকে সংস্থাটি দেশের মোট ৩৬টি
জেলায় নতুন ডিলার নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে এবং এই নিয়োগই মূলত ২০২৬ সালের কার্যক্রমে
গুরুত্ব পাবে। সম্প্রতি প্রকাশিত নোটিশে জানানো হয়েছে যে, এই উদ্যোগের
মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে আরও দ্রুত, নিয়মিত ও স্বচ্ছভাবে
পণ্য পৌঁছে দেওয়া হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্যও এটি একটি
বড় সুযোগ।
যারা টিসিবির ডিলার হতে চান বা এ বিষয়ে পরিষ্কার
ধারণা পেতে চান,
তাদের জন্য আজকের এই বিস্তৃত রিপোর্টে আবেদন পদ্ধতি, যোগ্যতা, শর্ত, দায়িত্ব,
সুবিধা এবং প্রয়োজনীয় সকল নিয়ম একত্রে তুলে ধরা হলো।
টিসিবি ডিলারশিপ কেন এখন আরও
গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশে ভর্তুকিমূল্যে নিত্যপণ্য বিতরণ এখন
একটি বড় সরকারি কার্যক্রম। নগর, পৌরসভা, গ্রাম—সব
জায়গায়ই এই সেবাকে আরও শক্তিশালী করতে হচ্ছে। এ কারণে টিসিবির সক্ষমতা নিচের
দিকগুলোতে বাড়ানো হচ্ছে—
১. ভর্তুকি কার্যক্রমকে আরও
গতিশীল করা
সরকার জনগণের জন্য যে বিশেষ মূল্যহার নির্ধারণ
করে, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে টিসিবির ডিলার নেটওয়ার্ক অত্যন্ত জরুরি। নতুন
ডিলার যুক্ত হলে কাজের গতি বাড়বে।
২. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে
সেবা বিস্তার
অনেক এলাকায় এখনও পর্যাপ্ত ডিলার নেই। ফলে পণ্য
বিতরণে বিঘ্ন ঘটে। নতুন নিয়োগ দিলে সেবা পেতে আর অসুবিধা হবে না।
৩. স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য
সম্ভাবনাময় সুযোগ
একজন টিসিবি ডিলার হয়ে নির্দিষ্ট কমিশন এবং একটি
নিয়মিত আয়ের উৎস পাওয়া যায়। সরকারি ব্যানারে কাজের কারণে এটি নিরাপদ ব্যবসার মতোই।
৪. বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের
প্রচেষ্টা আরও শক্তিশালী হবে
টিসিবির নেটওয়ার্ক যত বড় হবে, বাজারে
পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণেও সরকারি সংস্থার ভূমিকা তত কার্যকর হবে।
যে ৩৬টি জেলায় টিসিবি ডিলার
নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে
সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যে জেলার নাগরিকরা
আবেদন করতে পারবেন, সেগুলো হলো: সাতক্ষীরা, নড়াইল, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফরিদপুর,
শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী,
বাগেরহাট, যশোর, পিরোজপুর,
বগুড়া, পাবনা, গাইবান্ধা,
নওগাঁ, জয়পুরহাট, নীলফামারী,
কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও,
দিনাজপুর, রংপুর, বরিশাল,
রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি,
চাঁদপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ,
নেত্রকোনা, টাঙ্গাইলসহ আরও কয়েকটি জেলা। এ
তালিকা টিসিবির অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী। অঞ্চলভেদে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন ডিলার
যুক্ত করা হবে।
কোথা থেকে এবং কীভাবে টিসিবির
ডিলারশিপের জন্য আবেদন করতে হবে?
টিসিবির আবেদনপদ্ধতি এখন ডিজিটাল। সরাসরি অনলাইনে
ফর্ম পূরণ করে আবেদন করা যাবে।
আবেদনের ওয়েবসাইট: www.tcb.gov.bd এই ওয়েবসাইটে গিয়ে
“Dealer Recruitment” বা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করলে
ফর্ম পাওয়া যাবে।
আবেদন করার সময়সীমা: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ২২
ডিসেম্বর ২০২৫ এই সময়ের মধ্যেই অনলাইনে আবেদন জমা দিতে হবে। সময়সীমা শেষ হওয়ার পর
আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
টিসিবি ডিলার হওয়ার জন্য যেসব
যোগ্যতা থাকতে হবে
টিসিবি ডিলার হতে হলে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে।
সাধারণত নিম্নোক্ত যোগ্যতাগুলো অবশ্যই থাকা প্রয়োজন—
১. নাগরিকত্ব ও বয়স
– আবেদনকারী অবশ্যই বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
– বয়স ২১ বছরের বেশি হতে হবে।
২. আর্থিক সক্ষমতা
ডিলারদের টিসিবির পণ্য উত্তোলন ও বিক্রির জন্য ন্যূনতম আর্থিক সামর্থ্য থাকা
প্রয়োজন।
সাধারণত ৩–৫ লাখ টাকা মূলধন থাকলে পরিচালনা করা সহজ হয়।
৩. ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা (অতিরিক্ত সুবিধা)
যদি কারও মুদিখানা, পাইকারি, খুচরা, FMCG কিংবা গুদামজাত ব্যবসায় অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে তাকে
অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
৪. নিজস্ব দোকান বা গুদামঘর
পণ্য সংরক্ষণ ও নিরাপদে রাখার জন্য একটি ছোট বা মধ্যম সাইজের গুদাম বা স্টোর
থাকতে হবে।
নিজস্ব না হলে ভাড়ার গুদাম চুক্তিপত্র দেখাতে হবে।
৫. পরিচ্ছন্ন রেকর্ড
– কোনো অপরাধমূলক মামলায় জড়িত থাকা যাবে না।
– ব্যাংক লোন ডিফল্ট বা আর্থিক অনিয়ম থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
৬. সঠিক তথ্য প্রদান
জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রয়োজনীয় ছবি, ট্রেড লাইসেন্স ও
অন্যান্য কাগজের সত্যতা নিশ্চিত করা জরুরি।
টিসিবি ডিলারদের দায়িত্ব কী
কী?
একজন ডিলারের ওপর বেশ কিছু দায়িত্ব আরোপ করা হয়।
এগুলো সঠিকভাবে পালন করা আবশ্যক—
১. নির্দিষ্ট উপকারভোগীদের
কাছে ন্যায্যমূল্যে পণ্য পৌঁছে দেওয়া
সরকার যে দামে পণ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই দামেই
বিতরণ করতে হবে।
২. প্রতিদিনের বা নির্দিষ্ট
সময়ের বিক্রির তথ্য রিপোর্ট করা
টিসিবি নিয়মিত তথ্য চায়, ডিলারদের তা
জমা দিতে হয়।
৩. স্টক ম্যানেজমেন্ট
ভাণ্ডার এবং বিক্রয় ফাইলে কোনো অসঙ্গতি থাকা যাবে
না।
৪. ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে বিক্রয়
কার্যক্রম
অনেক এলাকায় মোবাইল ট্রাকে বিক্রি করতে হয়। এটি
ডিলারের দায়িত্বের অংশ।
৫. স্বচ্ছ ও নৈতিক ব্যবসায়িক
আচরণ
অতিরিক্ত দাম নেওয়া, জালিয়াতি,
তথ্য গোপন করা বা অনিয়ম প্রমাণিত হলে ডিলারশিপ বাতিল করা হয়।
টিসিবি ডিলার হয়ে যে
সুবিধাগুলো পাওয়া যায়
টিসিবির ডিলারশিপ বর্তমানে অনেকের জন্য আকর্ষণীয়
ব্যবসায়িক সুযোগ। কারণ—
১. স্বল্প বিনিয়োগে সরকারি
অনুমোদন নিয়ে ব্যবসা
নিজস্ব ব্র্যান্ডিং ছাড়াই সরকারি ব্যানারে
প্রতিষ্ঠিতভাবে কাজ করা যায়।
২. নির্দিষ্ট কমিশন বা লাভ
প্রতিটি পণ্যে নির্দিষ্ট হারে লাভ নির্ধারিত
থাকে।
৩. দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী আয়ের
সম্ভাবনা
ভর্তুকিমূল্যের পণ্য বিতরণ একটি ধারাবাহিক কাজ; তাই নিয়মিত
আয় হয়।
৪. সমাজে মর্যাদাপূর্ণ
অবস্থান
একজন ডিলারের পরিচয় সমাজে সম্মানজনক হিসাবে
বিবেচিত হয়।
৫. সরকারি নজরদারির মধ্যে
নিরাপদ ব্যবসা
স্বচ্ছ ও ঝুঁকিমুক্তভাবে কাজ করা যায়।
যারা আবেদন করতে চান তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
– আবেদন করার আগে বিজ্ঞপ্তিটি পুরোপুরি পড়ে নিন।
– প্রয়োজনীয় সব কাগজ স্ক্যান করে আগে থেকেই প্রস্তুত করুন।
– অনলাইনে আবেদন ফর্ম সাবমিট করার পর জমার রসিদ সংরক্ষণ করুন।
– গুদাম ও ব্যবসার তথ্য সঠিকভাবে দিন; ভুল
তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হবে।
উপসংহার: টিসিবির ৩৬ জেলায় নতুন ডিলার
নিয়োগ ২০২৬ জনগণের সেবা আরও উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি
স্থানীয় তরুণ ও উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি দারুণ সুযোগ। যারা নিজের এলাকায়
দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে চান এবং সরকারি কার্যক্রমে অংশ নিতে আগ্রহী, তারা অবশ্যই
এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন। নির্ধারিত সময়ে অনলাইনে আবেদন করুন এবং
প্রয়োজনীয় কাগজ প্রস্তুত রাখুন।
টিসিবি ডিলার নিয়োগ ২০২৬:
গুরুত্বপূর্ণ ১০টি প্রশ্ন ও উত্তর
১. টিসিবি ডিলার হতে অনলাইনে
আবেদন বাধ্যতামূলক কি?
হ্যাঁ, সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অনলাইনে
নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করেই আবেদন করতে হবে।
২. ডিলার হতে কত টাকা লাগবে?
পণ্য উত্তোলন, পরিবহন ও স্টক ম্যানেজমেন্টের
জন্য সাধারণত ৩–৫ লাখ টাকা মূলধন প্রয়োজন হয়।
৩. গুদাম কী বাধ্যতামূলক?
হ্যাঁ, নিজস্ব বা ভাড়া করা যেকোনো গুদাম থাকতে হবে
এবং কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
৪. ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা না
থাকলেও কি আবেদন করা যাবে?
জায়গা অনুযায়ী গ্রহণ করা হতে পারে, তবে অভিজ্ঞতা
থাকলে বেশি সুযোগ পাওয়া যায়।
৫. টিসিবি ডিলার কত লাভ পায়?
প্রতিটি পণ্যের কমিশন সরকার নির্ধারণ করে। পণ্যের
ধরন অনুযায়ী লাভ ভিন্ন হতে পারে।
৬. আবেদন করার পর কিভাবে জানা
যাবে যে ডিলারশিপ পাওয়া গেছে?
টিসিবি বা স্থানীয় প্রশাসন তালিকা প্রকাশ করে।
এছাড়া মোবাইলে এসএমএসও পাওয়া যেতে পারে।
৭. কোনো অপরাধমূলক মামলা
থাকলে কি আবেদন করা যাবে?
না, পরিচ্ছন্ন রেকর্ড না থাকলে আবেদন বাতিল করা
হবে।
৮. নারী উদ্যোক্তারা আবেদন
করতে পারবেন কি?
অবশ্যই, নারী ও প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তারাও সমানভাবে
আবেদন করতে পারেন।
৯. ডিলারশিপ কত বছরের জন্য
দেওয়া হয়?
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া হয়, এবং আচরণ ও
কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে তা নবায়ন করা হতে পারে।
১০. একসাথে একাধিক এলাকায়
ডিলারশিপ নেওয়া যাবে কি?
না, একজন ব্যক্তি কেবল একটি এলাকা বা নির্ধারিত
ইউনিটে ডিলার হতে পারেন।
টিসিবি নতুন ডিলার নিয়োগ ২০২৬, টিসিবি ডিলারশিপ আবেদন, টিসিবি ডিলার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, TCB dealer application 2026, টিসিবি ডিলার হওয়ার নিয়ম, টিসিবি ডিলারশিপ যোগ্যতা, টিসিবি ডিলার শর্তাবলী, টিসিবি ডিলার হতে কত টাকা লাগে, টিসিবি আবেদন ফর্ম, টিসিবি ডিলার নিয়োগ ২০২৫-২০২৬, টিসিবি ডিলার হওয়ার যোগ্যতা, টিসিবি ডিলারশিপ পেতে করণীয়, টিসিবি ডিলার লাভ কত, টিসিবি ডিলার গাইডলাইন, টিসিবির নতুন ডিলার আবেদন, Trading Corporation of Bangladesh dealer recruitment, টিসিবির ডিলার কিভাবে হবেন, টিসিবি ডিলারদের দায়িত্ব, টিসিবি পণ্য বিক্রির নিয়ম, টিসিবি গুদামের শর্ত, বাংলাদেশ টিসিবি ডিলারশিপ আবেদন, টিসিবি ডিলার সার্কুলার, টিসিবি ডিলারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, টিসিবির অফিসিয়াল ডিলার নিয়োগ নোটিশ।
.png)
.png)