হেনরি ফেয়ল এর ১৪ টি ব্যবস্থাপনা নীতি আলোচনা করুন
ভূমিকা: হেনরি ফেয়ল (Henri Fayol) ছিলেন একজন ফরাসি প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপনা
বিশেষজ্ঞ। তিনি আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হিসেবে পরিচিত। ১৯১৬ সালে তিনি "General
and Industrial Management" বইতে ১৪টি ব্যবস্থাপনা নীতির
কথা উল্লেখ করেন, যা আজও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে
গুরুত্বপূর্ণ।
- ফেয়লের ১৪টি ব্যবস্থাপনা নীতি:
- কাজের বিভাজন (Division of Work): দক্ষতা ও
উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কাজকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা হয়।
- কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব (Authority and Responsibility): ব্যবস্থাপকের অধিকার (কর্তৃত্ব) ও দায়িত্ব একসঙ্গে থাকতে হবে।
- নিয়মানুবর্তিতা (Discipline): প্রতিষ্ঠানের
নিয়মকানুন মেনে চলা কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক।
- একক আদেশ (Unity of Command): একজন কর্মী
শুধুমাত্র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুসরণ করবেন।
- একক দিকনির্দেশনা (Unity of Direction): একই লক্ষ্যের অধীনে সব কাজ পরিচালিত হবে।
- ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে
প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ (Subordination
of Individual Interest to General Interest): প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ।
- পারিশ্রমিক (Remuneration): কর্মীদের
ন্যায্য বেতন-ভাতা প্রদান করা উচিত।
- কেন্দ্রীয়করণ (Centralization): সিদ্ধান্ত
গ্রহণের ক্ষমতা শীর্ষ ব্যবস্থাপনার হাতে থাকবে, তবে
প্রয়োজনে বিকেন্দ্রীকরণ করা যেতে পারে।
- স্কেলার চেইন (Scalar Chain): আদেশের
আনুষ্ঠানিক ধাপ থাকা উচিত যাতে যোগাযোগ কার্যকর হয়।
- শৃঙ্খলা (Order): প্রতিটি সম্পদ ও
কর্মী নির্দিষ্ট স্থানে থাকলে সংগঠনের কার্যকারিতা বাড়ে।
- ন্যায়বিচার (Equity): কর্মীদের প্রতি
ন্যায় ও সদয় আচরণ করা উচিত।
- কর্মীদের চাকরির
স্থায়িত্ব (Stability of Tenure of
Personnel): বারবার কর্মী
পরিবর্তন প্রতিষ্ঠানকে অস্থিতিশীল করে তোলে।
- উদ্যম (Initiative): কর্মীদের
সৃজনশীলতা ও উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত।
- দলগত চেতনা (Esprit de Corps): একতা ও
সহযোগিতা বজায় রেখে দলীয়ভাবে কাজ করা উচিত।
উপসংহার: হেনরি ফেয়লের ১৪টি নীতি ব্যবস্থাপনার ভিত্তি স্থাপন করেছে। এসব নীতির যথাযথ প্রয়োগ প্রতিষ্ঠানকে সুসংগঠিত ও কার্যকরভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। আধুনিক ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে কিছু আপডেট করা হলেও ফেয়লের নীতিগুলো আজও ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিকল্প উত্তর:
ভূমিকা: হেনরি ফেয়ল (Henri Fayol) ছিলেন
একজন ফরাসি প্রকৌশলী এবং একজন বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, যাকে আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯১৬ সালে তিনি তার
বিখ্যাত বই "General and Industrial Management" প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি ১৪টি ব্যবস্থাপনা নীতির
কথা উল্লেখ করেন। ফেয়লের এই নীতিগুলো আজও ব্যবস্থাপনা শিক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ
স্থান অধিকার করে। তার নীতিগুলো কেবল প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কার্যক্রমে সহায়ক নয়,
বরং একটি সংগঠনের মূল কাঠামো ও উদ্দেশ্যকে সফলভাবে পরিচালনা করতে
একটি দিকনির্দেশনা প্রদান করে। ফেয়লের এই নীতিগুলো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা
প্রক্রিয়াকে সুসংগঠিত করতে সাহায্য করে, যার মাধ্যমে
কার্যকারিতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব হয়।
ফেয়লের ১৪টি ব্যবস্থাপনা নীতি:
কাজের বিভাজন (Division of Work): ফেয়ল অনুযায়ী, কাজের বিভাজন প্রতিষ্ঠানে দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
করতে সাহায্য করে। কর্মীদের বিশেষায়িত কাজ দেওয়া তাদের দক্ষতা বাড়ায়, এবং এই দক্ষতা তাদের কাজের মানও উন্নত করে। সুতরাং, কাজের বিভাজন প্রতিষ্ঠানে একত্রে কাজ করা কর্মীদের উপযোগিতা ও কর্মক্ষমতা
বৃদ্ধি করে।
কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব (Authority and
Responsibility): ফেয়লের মতে, একজন ব্যবস্থাপকের কর্তৃত্ব
(অধিকার) এবং দায়িত্ব একসাথে থাকা উচিত। ব্যবস্থাপক যদি সিদ্ধান্ত নেন, তবে তার কাছে সেই সিদ্ধান্তের জন্য যথাযথ ক্ষমতা এবং দায়িত্বও থাকা প্রয়োজন।
এই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠানে স্পষ্ট কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের ধারণা তৈরি করে, যা কার্যকরী নেতৃত্বের জন্য অপরিহার্য।
নিয়মানুবর্তিতা (Discipline): ফেয়ল বলেন যে প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্য কর্মীদের নিয়মকানুন মেনে চলা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠানে উন্নতি আনার পাশাপাশি কর্মীদের মধ্যে
দায়িত্ববোধ এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখে। এর মাধ্যমে কর্মীরা সঠিকভাবে তাদের কাজ
সম্পাদন করতে পারেন।
একক আদেশ (Unity of Command): ফেয়ল একক আদেশ নীতির মাধ্যমে বলেন যে, একজন কর্মীকে শুধুমাত্র একজন
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত। এতে বিভ্রান্তি ও দ্বন্দ্ব কমে
যায় এবং কর্মীদের কাজে মনোযোগী হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
একক দিকনির্দেশনা (Unity of Direction): ফেয়ল এই নীতি অনুযায়ী বলেন, একসঙ্গে কাজ করা সকল কর্মীদের
জন্য একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে। একক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে একই উদ্দেশ্য
অর্জনের জন্য সকল কার্যক্রম সংগঠিত এবং সমন্বিত থাকে।
ব্যক্তিগত স্বার্থের
চেয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ (Subordination of Individual Interest to General
Interest): ফেয়লের মতে, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ
ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যখন একটি প্রতিষ্ঠানে সকল কর্মী
প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর লক্ষ্যকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে, তখন সংগঠনের উদ্দেশ্য সফল হতে পারে।
পারিশ্রমিক (Remuneration): ফেয়ল বলেন, কর্মীদের জন্য ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা উচিত, যা তাদের কাজের প্রতি উৎসাহ ও নিষ্ঠা বজায় রাখে। ন্যায্য পারিশ্রমিক কর্মীদের
কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা ও সন্তুষ্টি সৃষ্টি করে।
কেন্দ্রীয়করণ (Centralization): ফেয়ল এই নীতিতে বলেন যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা
শীর্ষ ব্যবস্থাপনার হাতে থাকবে। তবে, প্রয়োজনে ব্যবস্থাপনার এই
ক্ষমতা কিছুটা বিকেন্দ্রীকরণ করা যেতে পারে, যাতে বিভিন্ন স্তরের
ব্যবস্থাপকরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন।
স্কেলার চেইন (Scalar Chain): ফেয়ল এই নীতিতে বলেন, আদেশের আনুষ্ঠানিক ধাপ থাকা উচিত যাতে যোগাযোগ কার্যকর এবং
স্পষ্ট হয়। একেকটি স্তরের মধ্যে একটি পরিষ্কার এবং কাঠামোবদ্ধ চেইন তৈরি করতে হবে, যা আদেশ এবং নির্দেশনা প্রেরণের প্রক্রিয়া সহজ এবং সুসংগঠিত রাখে।
শৃঙ্খলা (Order): ফেয়ল মতে, প্রতিটি কর্মী এবং সম্পদ যদি সঠিক জায়গায় থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠান আরও
সুসংগঠিত এবং কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে। শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠানকে সুশৃঙ্খলভাবে
পরিচালনা করতে সহায়তা করে এবং কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ায়।
ন্যায়বিচার (Equity): ফেয়ল বলেন, কর্মীদের প্রতি ন্যায্য এবং সদয় আচরণ করা উচিত। এর মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে
আস্থার পরিবেশ তৈরি হয় এবং তারা নিজেদের কাজে উৎসাহিত হয়।
কর্মীদের চাকরির
স্থায়িত্ব (Stability of Tenure of Personnel): ফেয়ল মনে করেন যে, বারবার কর্মী পরিবর্তন প্রতিষ্ঠানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই
প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করে
এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি দায়িত্বশীল হয়।
উদ্যম (Initiative): ফেয়ল বলেন, কর্মীদের সৃজনশীলতা ও উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত। কর্মীদের নিজের চিন্তা
ও ধারণা বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া তাদের কর্মক্ষমতা এবং উদ্যোম বৃদ্ধি করে।
দলগত চেতনা (Esprit de Corps): ফেয়ল মনে করেন, কর্মীদের মধ্যে একতা ও সহযোগিতা বজায় রাখতে হবে। দলগত চেতনা প্রতিষ্ঠানে একতা সৃষ্টি করে এবং কর্মীদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখে, যা দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার: হেনরি ফেয়লের ১৪টি
ব্যবস্থাপনা নীতি আধুনিক ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি স্থাপন করেছে। তার এসব নীতি
প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শৃঙ্খলা, কার্যকারিতা, এবং দক্ষতার উন্নতি ঘটাতে
সাহায্য করে। আজও, ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রের অনেক প্রতিষ্ঠান
ফেয়লের নীতিগুলো অনুসরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রযুক্তির বিকাশ এবং
সামাজিক পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে কিছু আপডেট প্রয়োজন হতে পারে, তবে ফেয়লের ১৪টি নীতির মৌলিক গুরুত্ব এখনও অব্যাহত রয়েছে। ব্যবস্থাপনায়
তার অবদান চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।
সার্চ কী: ব্যবস্থাপনার ১৪টি মূলনীতি কী কী? হেনরি ফায়োলের ব্যবস্থাপনার ৫টি নীতি কি কি? হেনরি
ফায়োলের ব্যবস্থাপনার ১৪ টি নীতি গুরুত্বপূর্ণ কেন? হেনরি
ফেয়ল এর মতে ব্যবস্থাপনা কি? বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার ৪ টি নীতি
কি কি, বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার নীতি কয়টি, ব্যবস্থাপনার নীতিমালা pdf, ব্যবস্থাপনার
নীতি কয়টি ও কি কি, হেনরি ফেয়ল প্রদত্ত ব্যবস্থাপনার শেষ নীতি
কোনটি, ব্যবস্থাপনা নীতিমালা খালেকুজ্জামান, হেনরি ফেয়ল এর ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা, জোড়া মই শিকল নীতি
কি
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles