গর্ভাবস্থায় বুক ও
গলা জ্বালাপোড়া: কারণ, প্রতিকার ও করণীয়
গর্ভাবস্থা একজন
নারীর জীবনে একটি পরিপূর্ণতা ও সৌন্দর্যের সময়, কিন্তু এ সময় শরীরে ঘটে প্রচুর
শারীরবৃত্তীয় ও হরমোনগত পরিবর্তন। এর ফলে অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে
অস্বস্তিকর কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। তার মধ্যে একটি খুব সাধারণ ও অস্বস্তিকর উপসর্গ
হলো বুক ও গলা জ্বালাপোড়া বা Heartburn।
এই উপসর্গটি সাধারণত
গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি বা শেষের দিকে বেশি দেখা দেয়, তবে কিছু নারী গর্ভাবস্থার
শুরুতেই এর সম্মুখীন হন। নিচে আমরা এই সমস্যাটির কারণ, প্রতিকার
এবং চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।
কেন হয় বুক ও গলা
জ্বালাপোড়া? (কারণ বিশ্লেষণ)
১. হরমোনজনিত
পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রোজেস্টেরন নামক হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে
যায়। এই হরমোনটি গর্ভাশয়ের পেশিকে শিথিল করার পাশাপাশি পাকস্থলীর ওপরের পেশি (Lower Esophageal Sphincter) কে দুর্বল করে দেয়। ফলে পেটে থাকা অ্যাসিড খাদ্যনালীর ওপরে উঠে এসে গলা বা
বুকের মাঝ বরাবর জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।
২. বর্ধিত গর্ভাশয়ের
চাপ: গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে শিশুর আকার বাড়ার ফলে গর্ভাশয় উপরের
দিকে চাপ দিতে থাকে। এতে পাকস্থলীর জায়গা সংকুচিত হয়ে যায় এবং খাবার ও অ্যাসিড
ওপরের দিকে ঠেলে ওঠে।
৩. খাদ্যাভ্যাস ও
জীবনযাপন: যেসব গর্ভবতী নারী অতিরিক্ত পরিমাণে ঝাল, ভাজাপোড়া বা তৈলাক্ত খাবার খান অথবা খাবার
খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়েন, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যার প্রবণতা
বেড়ে যায়।
প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া
প্রতিকার (যা সহজেই অনুসরণযোগ্য):
১. অল্প অল্প করে
বারবার খাওয়া: একবারে বেশি খাবার না খেয়ে দিনে ৫ থেকে ৬ বার হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।
এতে পাকস্থলী বেশি ভরে না, ফলে অ্যাসিড ওপরে ওঠে না।
২. খাওয়ার পরে শোবেন
না: খাওয়ার অন্তত ২ ঘণ্টার মধ্যে শুয়ে পড়া ঠিক নয়। দাঁড়িয়ে বা বসে সময় কাটান, এতে খাবার
সহজে হজম হবে এবং অ্যাসিড ওঠার ঝুঁকি কমবে।
৩. মাথা ও বুক উঁচু
করে ঘুমানো: বিছানার মাথা ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি উঁচু করে দিন বা অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহার করুন
যাতে বুক ও মাথা উঁচু থাকে। এতে করে অ্যাসিড নিচে থাকে।
৪. ঝাল ও ভাজাপোড়া
খাবার পরিহার করুন: মসলাযুক্ত, টক, চর্বিযুক্ত খাবার
যেমন লেবু, টক দই, সফট ড্রিংকস,
কফি, চকলেট, কেক বা
পিজ্জা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
৫. ঠাণ্ডা দুধ বা
দুধে চিরতা বা তুলসী পাতা মিশিয়ে খাওয়া: ঠাণ্ডা দুধ বা দুধের সাথে
তুলসী পাতা বা সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে এসিড নিরপেক্ষ হয়ে যায় এবং বুক জ্বালাপোড়া
অনেকটাই কমে যায়।
৬. আদা চা বা জিরা
পানি: আদা হজমে সাহায্য করে, গ্যাস কমায় এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্স রোধে কার্যকর। চাইলে এক
চিমটি জিরা ফুটিয়ে পানি পান করলেও উপকার পাওয়া যায়।
৭. হালকা হাঁটাহাঁটি:
খাওয়ার
পরে কিছুক্ষণ ধীরে হাঁটলে খাবার দ্রুত হজম হয় এবং অ্যাসিড কম তৈরি হয়।
ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি
(চিকিৎসকের পরামর্শে):
গর্ভাবস্থায় সব ধরনের
ওষুধ খাওয়া নিরাপদ নয়, তাই নিচের ওষুধগুলো কেবলমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ
করা উচিত:
- অ্যান্টাসিড (যেমন গ্যাভিসকন, রেনি
ইত্যাদি)
- H2 ব্লকার (যেমন র্যানিটিডিন, তবে অনেক দেশে নিষিদ্ধ)
- প্রোটন পাম্প ইনহিবিটার (যেমন ওমিপ্রাজল, তবে
অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে)
কখন চিকিৎসকের
শরণাপন্ন হবেন:
- বুক ও গলার জ্বালা খুব তীব্র হলে
- বারবার বমি হলে বা রক্ত উঠলে
- কোনো খাবার খেতেই সমস্যা হলে
- ওজন হ্রাস বা অতিরিক্ত দুর্বলতা দেখা দিলে
সতর্কতা ও সচেতনতা:
- ধূমপান ও অ্যালকোহল পুরোপুরি নিষিদ্ধ
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা (গর্ভকালীন স্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি
ছাড়া অতিরিক্ত না বাড়ানো)
- টাইট পোশাক পরা থেকে বিরত থাকা
উপসংহার: গর্ভাবস্থায় বুক ও
গলা জ্বালাপোড়া একটি স্বাভাবিক এবং সাময়িক সমস্যা হলেও এটি অবহেলা করলে মা ও
শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন এবং
প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণ করেই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রাকৃতিক উপায় ও কিছু
দৈনন্দিন অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় সহজেই।
সার্চ কী: গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালাপোড়া, গর্ভাবস্থায় গলা জ্বালা কেন হয়, প্রেগনেন্সিতে এসিডিটি থেকে মুক্তি, গর্ভাবস্থায়
বুক জ্বালা প্রতিকার, গর্ভকালীন অম্বল উপশম, প্রেগনেন্সির সময় বুক জ্বালার কারণ, প্রেগন্যান্সি
বুক গলা পুড়ছে কী করবেন, গর্ভাবস্থায় বুক ধরা গলা জ্বালার
কারণ ও সমাধান, গর্ভাবস্থার অম্বল রোধের ঘরোয়া উপায়,
গর্ভকালীন গলা জ্বালার ঘরোয়া চিকিৎসা
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles