গর্ভাবস্থায় মাস
ভিত্তিক সতর্কতা ও যত্ন: প্রতিটি মাসে করণীয় ও গুরুত্বপুর্ণ তথ্য
গর্ভাবস্থা হলো নারীর
জীবনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে মাতৃ ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত
করার জন্য সঠিক যত্ন ও সচেতনতা অপরিহার্য। গর্ভধারণের প্রথম দিন থেকে শুরু করে
প্রসব পর্যন্ত গর্ভকালীন প্রতিটি মাসেই বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক ও
হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে, যার জন্য মাস ভিত্তিক আলাদা আলাদা
যত্ন নেওয়া উচিত।
প্রথম মাস (১-৪
সপ্তাহ)
পরিবর্তন ও সতর্কতা:
- গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে অনেক নারী হয়তো
বুঝতে পারেন না যে গর্ভবতী হয়েছেন।
- শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ক্লান্তি, মাথা
ভারি লাগা, বমি বমি ভাব, বুকে
ব্যথা হতে পারে।
- কোন ধরনের ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই
ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- এই সময় গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই
অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এবং মানসিক চাপ এড়ানো জরুরি।
- ধূমপান, মদ্যপান ও নেশাজাতীয়
পদার্থ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
করণীয়:
- ফোলিক এসিড ও প্রেগন্যান্সি ভিটামিন শুরু
করুন।
- পুষ্টিকর খাবার খান এবং প্রচুর পানি পান
করুন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
- গর্ভাবস্থার প্রথম পরীক্ষার জন্য ডাক্তার
দেখান।
দ্বিতীয় মাস (৫-৮
সপ্তাহ)
পরিবর্তন ও সতর্কতা:
- মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব বেশি দেখা
যায়।
- প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
- সর্দি, কাশি বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা হতে পারে।
- হঠাৎ রক্তপাত বা পেটে যন্ত্রণা হলে
ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
করণীয়:
- হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খান।
- বাড়তি মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত প্রেগন্যান্সি ভিটামিন ও ফোলিক এসিড
খান।
- জাঙ্ক ফুড বা অতিরিক্ত তেল-মশলা এড়িয়ে
চলুন।
তৃতীয় মাস (৯-১২
সপ্তাহ)
পরিবর্তন ও সতর্কতা:
- গর্ভপাতের ঝুঁকি কিছুটা কমে আসে, তবে
এখনও সাবধান থাকা জরুরি।
- স্তন বড় হওয়া এবং সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
- বমি বমি ভাব ও ক্লান্তি কমে আসতে পারে।
- পেট একটু বড় হতে শুরু করে কিন্তু খুব বেশি চোখে পড়ে
না।
করণীয়:
- ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন।
- ধূমপান, ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন (ডাক্তার
পরামর্শ অনুযায়ী)।
- প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষার জন্য ডাক্তার দেখান।
চতুর্থ মাস (১৩-১৬
সপ্তাহ)
পরিবর্তন ও সতর্কতা:
- গর্ভের শিশু দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- অনেক নারীর মর্নিং সিকনেস কমে আসে।
- শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়, মানসিক
অবস্থাও ভাল থাকে।
- পেটে শিশুর আন্দোলন অনুভব হওয়া শুরু হতে
পারে।
- যেকোনো রকম রক্তপাত হলে দ্রুত চিকিৎসকের
কাছে যান।
করণীয়:
- নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ চালিয়ে যান।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- মাঝারি ধরনের ব্যায়াম (হাঁটা, যোগব্যায়াম)
করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
পঞ্চম মাস (১৭-২০
সপ্তাহ)
পরিবর্তন ও সতর্কতা:
- শিশুর গতি ও অবস্থান স্পষ্টভাবে অনুভব করা
যায়।
- পেটে গ্যাস বা বদহজম হতে পারে।
- কিছু কিছু নারীর মধ্যে হেমোরয়েড বা
কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
- পিঠে ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া, ত্বকে শুষ্কতা ও চুল পড়া হতে পারে।
করণীয়:
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান (সবজি, ফল,
ওটস)।
- পায়ে বা পিঠে ব্যথা থাকলে হালকা ম্যাসাজ
করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান ও নিয়মিত হাঁটাহাঁটি
করুন।
- স্কিন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
ষষ্ঠ মাস (২১-২৪
সপ্তাহ)
পরিবর্তন ও সতর্কতা:
- শিশুর আন্দোলন পরিষ্কার ও শক্তিশালী হতে
থাকে।
- মাঝে মাঝে হালকা পেটে টান বা ব্যথা অনুভব
হতে পারে।
- পেশিতে স্ট্রেচ মার্ক্স দেখা দিতে পারে।
- ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
করণীয়:
- সঠিক ভঙ্গিতে ঘুমান, বিশেষ
করে বাঁ পাশের দিকে।
- কোমর ও পিঠে সাপোর্ট দেবার জন্য কুশন
ব্যবহার করুন।
- ব্যথা থাকলে হালকা স্ট্রেচিং করুন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
সপ্তম মাস (২৫-২৮
সপ্তাহ)
পরিবর্তন ও সতর্কতা:
- প্রি-এক্লাম্পসিয়া (উচ্চ রক্তচাপ), গর্ভকালীন
ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- চোখে ঝাপসা, মাথা ঘোরা বা শরীরে ফুলে
যাওয়া (সারা শরীরে অস্বাভাবিক ফোলা) হলে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।
- গর্ভের শিশুর অবস্থান পরিবর্তিত হতে থাকে।
করণীয়:
- নিয়মিত রক্তচাপ ও ইউরিন টেস্ট করান।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস
বজায় রাখুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ হলে ডাক্তারের
সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
অষ্টম মাস (২৯-৩২
সপ্তাহ)
পরিবর্তন ও সতর্কতা:
- শিশুর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের বৃদ্ধি চলছে।
- বাচ্চার অবস্থান নিচে নামতে শুরু করে
(লোয়ারিং)।
- হঠাৎ রক্তপাত, প্রচণ্ড ব্যথা, বা প্রসব সংকেতের ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে যান।
করণীয়:
- প্রসবের প্রস্তুতি নিন, প্রয়োজনীয়
জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখুন।
- হালকা হাঁটা বা যোগব্যায়াম চালিয়ে যান।
- মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন।
- চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।
নবম মাস (৩৩-৩৬
সপ্তাহ)
পরিবর্তন ও সতর্কতা:
- প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসছে।
- গর্ভের শিশুর ওজন বাড়ছে।
- মাঝে মাঝে প্রচণ্ড পেটে টান ও কনট্রাকশন হতে
পারে, তবে তা সঠিক প্রসবের সংকেত কিনা বুঝতে হবে।
করণীয়:
- চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চেকআপ করান।
- প্রসবের আগেই হাসপাতাল যাওয়ার প্রস্তুতি
নিন।
- মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম বা ধ্যান
করুন।
দশম মাস (৩৭-৪০
সপ্তাহ)
পরিবর্তন ও সতর্কতা:
- যখন প্রসব শুরু হয় তখন দ্রুত হাসপাতালে যেতে
হবে।
- প্রচণ্ড ব্যথা, ঝনঝনে
শব্দ, জলপাত হলে সিগন্যাল ধরুন।
- যেকোনো রকম রক্তপাত হলে জরুরি চিকিৎসার
ব্যবস্থা নিতে হবে।
করণীয়:
- পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।
- প্রসবের সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশ মেনে
চলুন।
- মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকুন।
সার্বিক গুরুত্বপূর্ণ
সতর্কতা ও করণীয়
- গর্ভাবস্থায় ধূমপান, মদ্যপান,
ওষুধ না খাওয়া (ডাক্তার পরামর্শ ব্যতীত) এড়িয়ে চলুন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন।
- নিয়মিত ডাক্তারী পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং
সময়মতো পরীক্ষাগুলো করান।
- মনের অবস্থা ভালো রাখার চেষ্টা করুন, মানসিক
চাপ এড়িয়ে চলুন।
- পুষ্টিকর খাবার খান, যথেষ্ট
পানি পান করুন।
- শারীরিক পরিশ্রম সীমিত রাখুন, বিশেষ
করে ভারি ও জটিল কাজ এড়িয়ে চলুন।
- যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ যেমন: জ্বর, প্রচণ্ড
বমি, রক্তপাত, প্রচণ্ড ব্যথা,
গলায় ব্যথা, প্রচণ্ড পা ফুলে যাওয়া হলে
অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
সার্চ কী: গর্ভাবস্থায় সতর্কতা, গর্ভাবস্থায় মাস ভিত্তিক যত্ন, গর্ভাবস্থায়
করণীয়, গর্ভাবস্থার লক্ষণ মাস অনুযায়ী, গর্ভাবস্থায় কি কি করবেন, গর্ভাবস্থার সময় সতর্কতা,
গর্ভাবস্থায় খাবারের নিয়ম, গর্ভাবস্থায়
চিকিৎসা, গর্ভাবস্থায় সমস্যা ও সমাধান, প্রেগনেন্সি কেয়ার বাংলা, গর্ভাবস্থার মাসিক গাইড,
গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, গর্ভাবস্থায়
ডাক্তারের পরামর্শ, গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম, গর্ভাবস্থায় কি খাবেন
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles