গর্ভাবস্থায় মাস ভিত্তিক সতর্কতা ও যত্ন: প্রতিটি মাসে করণীয় ও গুরুত্বপুর্ণ তথ্য

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0



গর্ভাবস্থায় মাস ভিত্তিক সতর্কতা ও যত্ন: প্রতিটি মাসে করণীয় ও গুরুত্বপুর্ণ তথ্য

 

গর্ভাবস্থা হলো নারীর জীবনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে মাতৃ ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য সঠিক যত্ন ও সচেতনতা অপরিহার্য। গর্ভধারণের প্রথম দিন থেকে শুরু করে প্রসব পর্যন্ত গর্ভকালীন প্রতিটি মাসেই বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক ও হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে, যার জন্য মাস ভিত্তিক আলাদা আলাদা যত্ন নেওয়া উচিত।

 

প্রথম মাস (১-৪ সপ্তাহ)

পরিবর্তন ও সতর্কতা:

  • গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে অনেক নারী হয়তো বুঝতে পারেন না যে গর্ভবতী হয়েছেন।
  • শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ক্লান্তি, মাথা ভারি লাগা, বমি বমি ভাব, বুকে ব্যথা হতে পারে।
  • কোন ধরনের ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • এই সময় গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এবং মানসিক চাপ এড়ানো জরুরি।
  • ধূমপান, মদ্যপান ও নেশাজাতীয় পদার্থ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।


করণীয়:

  • ফোলিক এসিড ও প্রেগন্যান্সি ভিটামিন শুরু করুন।
  • পুষ্টিকর খাবার খান এবং প্রচুর পানি পান করুন।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
  • গর্ভাবস্থার প্রথম পরীক্ষার জন্য ডাক্তার দেখান।

 

দ্বিতীয় মাস (৫-৮ সপ্তাহ)

পরিবর্তন ও সতর্কতা:

  • মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব বেশি দেখা যায়।
  • প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • সর্দি, কাশি বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা হতে পারে।
  • হঠাৎ রক্তপাত বা পেটে যন্ত্রণা হলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।


করণীয়:

  • হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খান।
  • বাড়তি মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত প্রেগন্যান্সি ভিটামিন ও ফোলিক এসিড খান।
  • জাঙ্ক ফুড বা অতিরিক্ত তেল-মশলা এড়িয়ে চলুন।

 

তৃতীয় মাস (৯-১২ সপ্তাহ)

পরিবর্তন ও সতর্কতা:

  • গর্ভপাতের ঝুঁকি কিছুটা কমে আসে, তবে এখনও সাবধান থাকা জরুরি।
  • স্তন বড় হওয়া এবং সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
  • বমি বমি ভাব ও ক্লান্তি কমে আসতে পারে।
  • পেট একটু বড় হতে শুরু করে কিন্তু খুব বেশি চোখে পড়ে না।


করণীয়:

  • ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন।
  • ধূমপান, ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন (ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী)।
  • প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষার জন্য ডাক্তার দেখান।

 

চতুর্থ মাস (১৩-১৬ সপ্তাহ)

পরিবর্তন ও সতর্কতা:

  • গর্ভের শিশু দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • অনেক নারীর মর্নিং সিকনেস কমে আসে।
  • শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়, মানসিক অবস্থাও ভাল থাকে।
  • পেটে শিশুর আন্দোলন অনুভব হওয়া শুরু হতে পারে।
  • যেকোনো রকম রক্তপাত হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।


করণীয়:

  • নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ চালিয়ে যান।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • মাঝারি ধরনের ব্যায়াম (হাঁটা, যোগব্যায়াম) করুন।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

 

পঞ্চম মাস (১৭-২০ সপ্তাহ)

পরিবর্তন ও সতর্কতা:

  • শিশুর গতি ও অবস্থান স্পষ্টভাবে অনুভব করা যায়।
  • পেটে গ্যাস বা বদহজম হতে পারে।
  • কিছু কিছু নারীর মধ্যে হেমোরয়েড বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
  • পিঠে ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া, ত্বকে শুষ্কতা ও চুল পড়া হতে পারে।


করণীয়:

  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান (সবজি, ফল, ওটস)।
  • পায়ে বা পিঠে ব্যথা থাকলে হালকা ম্যাসাজ করুন।
  • পর্যাপ্ত পানি পান ও নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করুন।
  • স্কিন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

 

ষষ্ঠ মাস (২১-২৪ সপ্তাহ)

পরিবর্তন ও সতর্কতা:

  • শিশুর আন্দোলন পরিষ্কার ও শক্তিশালী হতে থাকে।
  • মাঝে মাঝে হালকা পেটে টান বা ব্যথা অনুভব হতে পারে।
  • পেশিতে স্ট্রেচ মার্ক্স দেখা দিতে পারে।
  • ঘুমের সমস্যা হতে পারে।


করণীয়:

  • সঠিক ভঙ্গিতে ঘুমান, বিশেষ করে বাঁ পাশের দিকে।
  • কোমর ও পিঠে সাপোর্ট দেবার জন্য কুশন ব্যবহার করুন।
  • ব্যথা থাকলে হালকা স্ট্রেচিং করুন।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।

 

সপ্তম মাস (২৫-২৮ সপ্তাহ)

পরিবর্তন ও সতর্কতা:

  • প্রি-এক্লাম্পসিয়া (উচ্চ রক্তচাপ), গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • চোখে ঝাপসা, মাথা ঘোরা বা শরীরে ফুলে যাওয়া (সারা শরীরে অস্বাভাবিক ফোলা) হলে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।
  • গর্ভের শিশুর অবস্থান পরিবর্তিত হতে থাকে।


করণীয়:

  • নিয়মিত রক্তচাপ ও ইউরিন টেস্ট করান।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
  • যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ হলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

 

অষ্টম মাস (২৯-৩২ সপ্তাহ)

পরিবর্তন ও সতর্কতা:

  • শিশুর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের বৃদ্ধি চলছে।
  • বাচ্চার অবস্থান নিচে নামতে শুরু করে (লোয়ারিং)।
  • হঠাৎ রক্তপাত, প্রচণ্ড ব্যথা, বা প্রসব সংকেতের ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে যান।


করণীয়:

  • প্রসবের প্রস্তুতি নিন, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখুন।
  • হালকা হাঁটা বা যোগব্যায়াম চালিয়ে যান।
  • মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন।
  • চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।

 

নবম মাস (৩৩-৩৬ সপ্তাহ)

পরিবর্তন ও সতর্কতা:

  • প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসছে।
  • গর্ভের শিশুর ওজন বাড়ছে।
  • মাঝে মাঝে প্রচণ্ড পেটে টান ও কনট্রাকশন হতে পারে, তবে তা সঠিক প্রসবের সংকেত কিনা বুঝতে হবে।


করণীয়:

  • চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চেকআপ করান।
  • প্রসবের আগেই হাসপাতাল যাওয়ার প্রস্তুতি নিন।
  • মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম বা ধ্যান করুন।

 

দশম মাস (৩৭-৪০ সপ্তাহ)

পরিবর্তন ও সতর্কতা:

  • যখন প্রসব শুরু হয় তখন দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
  • প্রচণ্ড ব্যথা, ঝনঝনে শব্দ, জলপাত হলে সিগন্যাল ধরুন।
  • যেকোনো রকম রক্তপাত হলে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

করণীয়:

  • পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।
  • প্রসবের সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশ মেনে চলুন।
  • মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকুন।

 

সার্বিক গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা ও করণীয়

  • গর্ভাবস্থায় ধূমপান, মদ্যপান, ওষুধ না খাওয়া (ডাক্তার পরামর্শ ব্যতীত) এড়িয়ে চলুন।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন।
  • নিয়মিত ডাক্তারী পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং সময়মতো পরীক্ষাগুলো করান।
  • মনের অবস্থা ভালো রাখার চেষ্টা করুন, মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন।
  • পুষ্টিকর খাবার খান, যথেষ্ট পানি পান করুন।
  • শারীরিক পরিশ্রম সীমিত রাখুন, বিশেষ করে ভারি ও জটিল কাজ এড়িয়ে চলুন।
  • যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ যেমন: জ্বর, প্রচণ্ড বমি, রক্তপাত, প্রচণ্ড ব্যথা, গলায় ব্যথা, প্রচণ্ড পা ফুলে যাওয়া হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

 

সার্চ কী: গর্ভাবস্থায় সতর্কতা, গর্ভাবস্থায় মাস ভিত্তিক যত্ন, গর্ভাবস্থায় করণীয়, গর্ভাবস্থার লক্ষণ মাস অনুযায়ী, গর্ভাবস্থায় কি কি করবেন, গর্ভাবস্থার সময় সতর্কতা, গর্ভাবস্থায় খাবারের নিয়ম, গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা, গর্ভাবস্থায় সমস্যা ও সমাধান, প্রেগনেন্সি কেয়ার বাংলা, গর্ভাবস্থার মাসিক গাইড, গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ, গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম, গর্ভাবস্থায় কি খাবেন

 

ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top