শিশুর ঘুমের মধ্যে
খিঁচুনি: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
শিশুর ঘুমের মধ্যে
খিঁচুনি (Sleep
Seizures বা Nighttime Seizures) হলো এমন একটি
অবস্থা যেখানে শিশু ঘুমের সময় হঠাৎ অস্বাভাবিক শারীরিক বা স্নায়ুতন্ত্রের
ক্রিয়াশীলতা প্রদর্শন করে। এটি শুধু ছোট্ট দেহকাঁপানি নয়, বরং
মস্তিষ্কের কার্যক্রমে কোনো অস্থিরতার ইঙ্গিত হতে পারে। শিশুর ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি
বিভিন্ন রোগ বা শারীরিক অসঙ্গতির লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
নিচে বিস্তারিতভাবে
বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা হলো।
১. জেনেটিক বা বংশগত
কারণ: কিছু শিশুর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোষ বা নিউরনের অস্বাভাবিক কার্যক্রম জন্মগত
বা পারিবারিক কারণের জন্য ঘটে। পরিবারে যদি আগে থেকে এপিলেপসি বা খিঁচুনির ইতিহাস
থাকে, তাহলে শিশুর ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। এটি প্রায়শই বংশগত
বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং কিছু ক্ষেত্রে শিশুর মস্তিষ্কের ইলেকট্রোলাইট
ব্যালান্সে পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
২. মস্তিষ্কের
বিকাশজনিত সমস্যা: শিশুর মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ যদি অপর্যাপ্তভাবে বিকশিত
হয় বা জন্মের সময় অক্সিজেনের অভাব ঘটে, তবে এটি ঘুমের সময় খিঁচুনির কারণ হতে
পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রিম্যাচিউর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে
স্নায়ুতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিকাশ না হওয়ায় ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ খিঁচুনি দেখা দিতে
পারে।
৩. মস্তিষ্কে সংক্রমণ
বা প্রদাহ: মেনিনজাইটিস বা এনসেফালাইটিসের মতো সংক্রমণ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত
করে। সংক্রমণের ফলে মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা ঘুমের সময় খিঁচুনির আকারে
প্রকাশ পেতে পারে। এমন ক্ষেত্রে শিশুর সাথে হঠাৎ জ্বর, অজ্ঞান
হওয়া বা অস্বাভাবিক দেহকাঁপানি যুক্ত হতে পারে।
৪. জ্বর বা ফিবারি
খিঁচুনি (Febrile Seizure): ৬ মাস থেকে ৫ বছরের শিশুদের মধ্যে উচ্চ জ্বরের কারণে ঘুমের
সময় খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। সাধারণত ফিবারি খিঁচুনি ক্ষণস্থায়ী হয়, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি বারবার হতে পারে। জ্বরের সাথে খিঁচুনি দেখা দিলে
শিশুর শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমানো ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
৫. ইলেক্ট্রোলাইট বা
রক্তের শর্করার ভারসাম্যহীনতা: শরীরের সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম
বা গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিক হলে শিশু ঘুমের মধ্যে হঠাৎ খিঁচুনি প্রদর্শন করতে
পারে। যেমন, হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার ঘাটতি) বা
ডিহাইড্রেশন এসব খিঁচুনির কারণ হতে পারে।
৬. নিউরোলজিকাল বা
স্নায়ুতন্ত্রের রোগ: এপিলেপসি বা অন্যান্য স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার কারণে শিশুর
ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। এপিলেপসির ক্ষেত্রে ঘুমের সময় হঠাৎ হাত-পা
কাঁপা, চোখ ঘুরানো বা দেহের অপ্রাকৃতিক অঙ্গভঙ্গি লক্ষ্য করা যায়। শিশুর সঠিক
নির্ণয়ের জন্য নিউরোলজিস্টের পরীক্ষা অপরিহার্য।
৭. পরিবেশগত ও আচরণগত
কারণ: শিশুর ঘুমের সময় হঠাৎ তীব্র আলো, জোরে শব্দ বা অস্বাভাবিক উত্তেজনা ঘুমের
মধ্যে খিঁচুনি বাড়াতে পারে। যদিও এটি স্থায়ী নয়, তবে শিশু
বা পিতামাতার জন্য সতর্ক থাকার কারণ হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও
সতর্কতা:
- ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি দেখা দিলে অবিলম্বে শিশুকে
পেডিয়াট্রিশিয়ান বা নিউরোলজিস্টের কাছে দেখানো উচিত।
- চিকিৎসা পদ্ধতি শিশুর বয়স, খিঁচুনির
প্রকার ও কারণ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
- সাধারণ ঘুমের অস্বাভাবিকতা ও খিঁচুনি মাঝে মাঝে মিলিত
হতে পারে, তাই সঠিক নির্ণয় জরুরি।
- শিশুর ঘুম পর্যবেক্ষণ, খিঁচুনির সময় লেন্থ এবং
উপস্থিতি লিখে রাখা ডাক্তারকে নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
সার্চ কী: শিশুর ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি, শিশুর রাতে খিঁচুনি, শিশু
ঘুমে হাত-পা কাঁপা, febrile seizure শিশু, শিশুতে জ্বরের খিঁচুনি, শিশু neurological সমস্যা, ঘুমের সময় convulsion, শিশুর স্নায়ুতন্ত্র সমস্যা, শিশু health
tips, শিশুর ঘুমের সমস্যা, শিশুর অস্বাভাবিক
ঘুম, pediatric seizure, ঘুমে convulsion প্রতিরোধ, শিশু ডাক্তার পরামর্শ
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles