অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন:
পূর্ণ গাইড
জন্ম নিবন্ধন হল প্রতিটি নাগরিকের জীবনের একটি
গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি। এটি ব্যক্তির পরিচয়, বয়স, নাগরিক
অধিকার এবং সরকারি সেবার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে অনেক সময় জন্ম নিবন্ধনের
তথ্য পূরণ করার সময় ভুল নাম, ভুল জন্ম তারিখ, ভুল ঠিকানা বা অন্যান্য তথ্য প্রবেশ করা হয়। পূর্বে এই ভুল সংশোধন করতে
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন অফিসে গিয়ে
দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হতো।
কিন্তু এখন আর এত ঝামেলা নেই। বাংলাদেশ সরকার
চালু করেছে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সংশোধন সেবা, যা নাগরিকদের ঘরে বসে সহজে জন্ম
নিবন্ধনের যেকোনো তথ্য সংশোধনের সুযোগ দিচ্ছে।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন
করার ধাপসমূহ
ধাপ ১: সরকারি ওয়েবসাইটে
প্রবেশ করুন
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য প্রথমে অফিসিয়াল
ওয়েবসাইটে যান:
👉 https://bdris.gov.bd/br/correction
ওপেন হওয়া পৃষ্ঠায় “জন্ম তথ্য সংশোধনের জন্য
আবেদন” অপশন দেখতে পাবেন।
ধাপ ২: জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও
জন্ম তারিখ লিখুন
- জন্ম নিবন্ধন নম্বর
- জন্ম তারিখ (Date of Birth)
এই দুইটি তথ্য যথাযথভাবে লিখুন এবং ক্যাপচা কোড
পূরণ করে “অনুসন্ধান” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩: জন্ম নিবন্ধন যাচাই
সফল অনুসন্ধানের পর আপনার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য
স্ক্রীনে প্রদর্শিত হবে।
- নাম
- পিতার নাম
- মাতার নাম
- জন্ম তারিখ
- ঠিকানা
আপনার সংশোধন প্রয়োজন অংশে “নির্বাচন করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪: সংশোধনের নিশ্চিতকরণ
“আপনি কি নিশ্চিত?” একটি
পপ-আপ আসবে। যদি আপনি সংশোধন করতে চান, হ্যাঁ নির্বাচন করুন।
ধাপ ৫: সংশোধনের ধরন নির্বাচন
নিম্নলিখিত তথ্যগুলোর মধ্যে যেকোনো বা একাধিক
তথ্য সংশোধন করতে পারবেন:
- নাম
- পিতার নাম
- মাতার নাম
- জন্ম তারিখ
- ঠিকানা
- অন্যান্য তথ্য
সঠিক তথ্য লিখুন এবং যাচাই করুন।
ধাপ ৬: প্রমাণপত্র আপলোড
সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় বৈধ প্রমাণপত্র আপলোড
করুন:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- শিক্ষাগত সনদ (স্কুল/এসএসসি সার্টিফিকেট)
- পিতা-মাতার NID বা জন্ম নিবন্ধন
- হাসপাতালের জন্ম সনদ (যদি প্রযোজ্য)
মন্তব্য: জন্ম তারিখ সংশোধনের
ক্ষেত্রে স্কুল সার্টিফিকেট বা হাসপাতালের জন্ম সনদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ধাপ ৭: আবেদন করার কারণ লিখুন
সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করুন কেন সংশোধনের প্রয়োজন।
উদাহরণ:
“আমার নাম জন্ম নিবন্ধনে ভুলভাবে মোঃ আরিফ
লেখা হয়েছে। সঠিক নাম মোঃ আরিফ হোসেন। তাই সংশোধনের আবেদন করছি।”
ধাপ ৮: আবেদন জমা দিন
সব তথ্য যাচাই করার পর Submit বাটনে ক্লিক
করুন।
- আবেদন জমা দেওয়ার পর একটি ট্র্যাকিং নম্বর SMS বা
ইমেইলে পাবেন।
- এই নম্বর ব্যবহার করে আপনার আবেদন স্ট্যাটাস অনলাইনে
চেক করতে পারবেন।
ধাপ ৯: আবেদন ফরম ডাউনলোড
- আবেদন জমা দেওয়ার পর পোর্টাল থেকে PDF ফরম
ডাউনলোড করুন।
- এই ফরমটি পরবর্তীতে যাচাই বা ইউনিয়ন পরিষদ/সিটি
করপোরেশনে জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন।
ধাপ ১০: সংশোধন অনুমোদন ও
কার্ড/ডকুমেন্ট সংগ্রহ
- সংশোধন অনুমোদিত হলে, অনলাইনে অথবা স্থানীয় অফিস
থেকে আপনার সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন কপি সংগ্রহ করুন।
- সাধারণত সংশোধন প্রক্রিয়া ৭–১৫ কার্যদিবসের মধ্যে
সম্পন্ন হয়।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
- জন্ম তারিখ ০১/০১/২০০১ সালের পূর্বে হলে অনলাইনে
পিতা-মাতার নাম পরিবর্তন করা যাবে না।
- সব তথ্য সঠিক ও সত্য লিখুন, অন্যথায়
আবেদন বাতিল হতে পারে।
- সংশোধনের জন্য প্রমাণপত্র সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক।
অনলাইন স্ট্যাটাস চেক করার
নিয়ম
আপনার আবেদন প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় স্ট্যাটাস
জানতে চাইলে যান:
👉 https://bdris.gov.bd/br/application/status
- ট্র্যাকিং নম্বর ব্যবহার করে “Received”, “Under
Process”, “Approved” বা “Rejected” অবস্থা
জানতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি
- নাম বা ঠিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে: ৫০–১০০ টাকা
- জন্ম তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে: ১০০–২০০ টাকা
- ফি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা অনুযায়ী পরিবর্তিত
হতে পারে।
- ফি প্রদানের রসিদ সংরক্ষণ করুন।
প্রশ্ন ও উত্তর (১০টি)
১. জন্ম নিবন্ধন সংশোধনে কত সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণত ৭–১৫ কার্যদিবস,
জটিল ক্ষেত্রে ২০ কার্যদিবস পর্যন্ত লাগতে পারে।
২. জন্ম নিবন্ধনের নাম পরিবর্তন করা যাবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে
সঠিক প্রমাণপত্র থাকলে।
৩. জন্ম তারিখ পরিবর্তনের জন্য কোন ডকুমেন্ট লাগবে?
উত্তর: হাসপাতাল সনদ, স্কুল সার্টিফিকেট বা পিতা-মাতার NID।
৪. অনলাইনে আবেদন করার পর কোথাও যেতে হবে কি?
উত্তর: কিছু ক্ষেত্রে যাচাইয়ের জন্য
স্থানীয় অফিসে যেতে হতে পারে।
৫. সংশোধনের জন্য কোন প্রমাণপত্র আপলোড করতে হবে?
উত্তর: NID, শিক্ষাগত সনদ, জন্ম সনদ বা হাসপাতালের সনদ।
৬. আবেদন জমা দেওয়ার পর কী হবে?
উত্তর: একটি ট্র্যাকিং নম্বর পাবেন,
যার মাধ্যমে অনলাইনে স্ট্যাটাস চেক করা যাবে।
৭. অনলাইনে আবেদন করলে কি প্রিন্ট করা ফরম প্রয়োজন?
উত্তর: হ্যাঁ, যাচাই
বা ইউনিয়ন/সিটি করপোরেশনে জমা দেওয়ার জন্য।
৮. আবেদন বাতিল হওয়ার কারণ কী হতে পারে?
উত্তর: তথ্য ভুল বা প্রমাণপত্র
অনুপস্থিত থাকলে।
৯. সংশোধনের ফি কত?
উত্তর: নাম/ঠিকানা: ৫০–১০০ টাকা,
জন্ম তারিখ: ১০০–২০০ টাকা।
১০. অনলাইনে সংশোধন করা কি নিরাপদ?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি
সরকারের নিরাপদ সার্ভারে পরিচালিত হয় এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে।
উপসংহার: অনলাইন জন্ম নিবন্ধন
সংশোধন সেবা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ঘরে বসে, নিরাপদ ও
সহজভাবে জন্ম নিবন্ধনের যেকোনো তথ্য সংশোধন করা সম্ভব। সঠিক তথ্য এবং প্রমাণপত্র
সংযুক্ত করলেই প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।
অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সংশোধন, জন্ম নিবন্ধন
পরিবর্তন, BDRIS জন্ম নিবন্ধন, জন্ম
নিবন্ধন নাম পরিবর্তন, জন্ম নিবন্ধন ঠিকানা পরিবর্তন,
জন্ম নিবন্ধন তারিখ পরিবর্তন, বাংলাদেশ জন্ম
নিবন্ধন আবেদন, জন্ম নিবন্ধন সংশোধন প্রক্রিয়া, জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদন, জন্ম নিবন্ধন ফরম
ডাউনলোড, জন্ম নিবন্ধন স্ট্যাটাস চেক, জন্ম
নিবন্ধন NID যাচাই, জন্ম নিবন্ধন
সংশোধন ফি, জন্ম নিবন্ধন সরকারি সেবা, BDRIS
Correction Portal
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles
.png)
