প্রবাসী কল্যাণ কার্ড:
প্রবাসীদের সুরক্ষা, মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিতের সরকারি উদ্যোগ
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। প্রবাসী কর্মীরা বিদেশে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের
উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রাখছেন। তাদের এই অবদানের প্রতি সম্মান জানাতে ও প্রবাসী
নাগরিকদের বিভিন্ন সরকারি সেবা সহজলভ্য করতে “প্রবাসী কল্যাণ কার্ড” চালু করেছে বাংলাদেশ
সরকার। এই কার্ড শুধু একটি পরিচয়পত্র নয় — এটি প্রবাসীদের জন্য সরকারি সুরক্ষা, আর্থিক
সুবিধা এবং সামাজিক মর্যাদার প্রতীক।
প্রবাসী কল্যাণ কার্ড কী?
প্রবাসী কল্যাণ কার্ড হলো একটি সরকার স্বীকৃত
ডিজিটাল পরিচয়পত্র যা বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (BMET) দ্বারা ইস্যু
করা হয়। এটি প্রমাণ করে যে কার্ডধারী একজন নিবন্ধিত প্রবাসী কর্মী, যিনি সরকার অনুমোদিত পথে বিদেশে গেছেন বা যাচ্ছেন।
কার্ডটিতে থাকে —
- প্রবাসীর নাম, ছবি, এনআইডি
নম্বর ও পাসপোর্ট তথ্য
- BMET নিবন্ধন নম্বর
- QR কোড যার মাধ্যমে অনলাইনে তথ্য যাচাই করা যায়
প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের প্রধান উদ্দেশ্য
- প্রবাসীদের
সরকারি সেবা নিশ্চিত করা
– বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে দূতাবাস বা কনস্যুলেটে দ্রুত সহায়তা পাওয়া। - অর্থনৈতিক
নিরাপত্তা প্রদান
– প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ, বিনিয়োগ সহায়তা ও পুনর্বাসন সুবিধা পাওয়া। - প্রতারণা
প্রতিরোধ
– কার্ডের মাধ্যমে ভুয়া এজেন্সি ও দালালচক্রের প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। - সামাজিক মর্যাদা
বৃদ্ধি
– সরকারি দপ্তর, বিমানবন্দর ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অগ্রাধিকারমূলক সেবা পাওয়া যায়।
কার্ডধারীদের জন্য প্রধান
সুবিধাসমূহ
১. বিদেশে অবস্থানকালে সহায়তা: যেমন – পাসপোর্ট হারানো, আইনি সহায়তা,
দেশে ফেরার টিকিট ইত্যাদি বিষয়ে কার্ডধারীরা অগ্রাধিকার পান।
২. দেশে ফেরার পর পুনর্বাসন
সুবিধা
বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর অনেক প্রবাসী নতুনভাবে
জীবিকা শুরু করতে সমস্যায় পড়েন।
এই কার্ডধারীদের জন্য রয়েছে –
- দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ
- ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সহায়তা
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের পুনর্বাসন ঋণ
৩. বিমানবন্দর ও সরকারি
দপ্তরে বিশেষ সেবা
ঢাকা বিমানবন্দরসহ প্রধান সরকারি দপ্তরগুলোতে
প্রবাসী কল্যাণ কার্ডধারীদের জন্য রয়েছে বিশেষ সার্ভিস ডেস্ক।
এর ফলে তারা দ্রুত ও সম্মানের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারেন।
৪. ডিজিটাল আইডেন্টিটি সুবিধা
কার্ডের QR কোড বা নম্বরের মাধ্যমে অনলাইনে একজন
প্রবাসীর তথ্য যাচাই করা যায়। এতে দালালচক্র বা ভুয়া এজেন্সির প্রতারণা থেকে
প্রবাসীরা অনেকটা সুরক্ষিত থাকেন।
প্রবাসী কল্যাণ কার্ড অনলাইনে
সংগ্রহের নিয়ম
ধাপ ১: ওয়েবসাইটে প্রবেশ: প্রথমে প্রবাসী কল্যাণ
মন্ত্রণালয়ের অধীন BMET এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান: https://www.bmet.gov.bd
ধাপ ২: প্রবাসী নিবন্ধন: ওয়েবসাইটে গিয়ে “Expatriate Registration” বা “প্রবাসী নিবন্ধন” অপশন সিলেক্ট করুন। এখানে আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্র
নম্বর (NID), পাসপোর্ট নম্বর, মোবাইল
নম্বর, এবং বিদেশের কর্মস্থল সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে।
ধাপ ৩: তথ্য যাচাই ও ফর্ম
পূরণ: সব তথ্য সঠিকভাবে
পূরণ করার পর আপনি একটি BMET Registration Number পাবেন। এই নম্বরটি ভবিষ্যতে সব ধরনের
সরকারি প্রবাসী সেবার জন্য প্রয়োজন হবে।
ধাপ ৪: প্রবাসী কল্যাণ কার্ড
আবেদন: BMET নিবন্ধন
সম্পন্ন করার পর প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের আবেদন করতে পারবেন। এখানে পাসপোর্ট সাইজ
ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র স্ক্যান কপি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড
করতে হয়।
ধাপ ৫: ফি পরিশোধ ও কার্ড
সংগ্রহ: একটি নির্ধারিত ফি
(সাধারণত ৫০০–৭০০ টাকা) পরিশোধ করতে হয়।
এরপর নির্ধারিত সময়ে BMET অফিস বা স্থানীয়
জেলা কর্মসংস্থান অফিস থেকে কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। অনেক সময় কার্ডটি ডাকযোগেও
প্রেরণ করা হয়।
মেয়াদ ও নবায়ন প্রক্রিয়া: এই কার্ড সাধারণত ৫ বছর
মেয়াদী হয়। মেয়াদ শেষে অনলাইনে বা জেলা কর্মসংস্থান অফিসে আবেদন করে সহজেই নবায়ন
করা যায়।
প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের
সুবিধা এক নজরে
|
সুবিধা |
বর্ণনা |
|
🧾 অফিসিয়াল
আইডেন্টিটি |
BMET ডাটাবেজে
নিবন্ধিত সরকার স্বীকৃত পরিচয় |
|
💰 সহজ ঋণ
সুবিধা |
প্রবাসী
কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্পসুদে ঋণ |
|
🩺 বীমা
ও চিকিৎসা সহায়তা |
প্রবাসী ও পরিবারের জন্য |
|
🎓 শিক্ষাবৃত্তি |
প্রবাসী
সন্তানদের জন্য স্কলারশিপ |
|
🛂 দূতাবাস
সেবা |
বিদেশে দ্রুত ও অগ্রাধিকার সহ
সেবা |
|
🏠 পুনর্বাসন
সহায়তা |
দেশে
ফিরে কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণ সুবিধা |
|
✈️ সার্ভিস
ডেস্ক |
বিমানবন্দরে বিশেষ কাউন্টার
সেবা |
|
💻 অনলাইন
যাচাই |
ভুয়া
দালাল প্রতিরোধ ও তথ্য নিরাপত্তা |
প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের
সীমাবদ্ধতা
- সব দেশেই কার্ডটি এখনো সমানভাবে কার্যকর নয়।
- কিছু দূতাবাসে সার্ভিস ডেস্ক পুরোপুরি চালু হয়নি।
- অনলাইন সার্ভারে মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দেয়।
- কার্ড হারালে পুনরায় ইস্যু পেতে সময় লাগে।
কেন প্রবাসী কল্যাণ কার্ড
জরুরি?
বাংলাদেশের প্রবাসীরা বছরে প্রায় ২,০০০ কোটি
মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠান, যা দেশের
অর্থনীতির রক্তস্রোত বলা চলে। তাদের নিরাপত্তা, অধিকার ও
মর্যাদা রক্ষার জন্যই সরকার এই কার্ড চালু করেছে। এটি কেবল একটি পরিচয় নয় — এটি
প্রবাসীদের অধিকার, সম্মান ও সরকারি সুরক্ষার
প্রতীক।
অফিসিয়াল তথ্য
🌐 ওয়েবসাইট: https://www.bmet.gov.bd
📞 হেল্পলাইন: ০৯৬০২-৬৬৬৬৩৩
📍 ঠিকানা: প্রবাসী কল্যাণ ভবন,
ইস্কাটন গার্ডেন, ঢাকা
উপসংহার: প্রবাসীরা দেশের গর্ব, দেশের শক্তি।
“প্রবাসী কল্যাণ কার্ড” তাদের প্রতি সরকারের দায়িত্ববোধের
প্রতিফলন। এই কার্ডের মাধ্যমে প্রবাসীরা বিদেশে যেমন নিরাপত্তা ও সম্মান পান,
দেশে ফিরে তেমনি পান পুনর্বাসন ও আর্থিক সহায়তা। তাই এখনই প্রবাসী
কল্যাণ কার্ড সংগ্রহ করুন — নিরাপদ, সম্মানিত ও সুরক্ষিত
প্রবাসী নাগরিক হিসেবে পরিচিত হোন।
প্রবাসী কল্যাণ কার্ড
সম্পর্কিত ১০টি প্রশ্ন ও উত্তর
১. প্রবাসী কল্যাণ কার্ড কী?
👉 এটি একটি সরকার স্বীকৃত
আইডেন্টিটি কার্ড যা BMET কর্তৃক ইস্যু করা হয় প্রবাসী
নাগরিকদের পরিচয় ও সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য।
২. কারা এই কার্ড পেতে পারেন?
👉 যারা বৈধভাবে বিদেশে কর্মরত বা
সরকার অনুমোদিত পথে বিদেশে যাচ্ছেন।
৩. কার্ডের মেয়াদ কতদিন?
👉 সাধারণত ৫ বছর, নবায়নযোগ্য।
৪. কোথায় আবেদন করতে হয়?
👉 BMET-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.bmet.gov.bd-এ অনলাইনে
আবেদন করতে হয়।
৫. কার্ড পেতে কত ফি দিতে হয়?
👉 প্রায় ৫০০–৭০০ টাকা (নির্ভর করে
সময় ও স্থানের ওপর)।
৬. এই কার্ডের মাধ্যমে কী কী সুবিধা পাওয়া যায়?
👉 পুনর্বাসন ঋণ, দূতাবাস সেবা, চিকিৎসা সহায়তা, স্কলারশিপ, সার্ভিস ডেস্ক ইত্যাদি।
৭. কার্ড হারালে কী করতে হবে?
👉 BMET অফিসে গিয়ে পুনঃইস্যুর আবেদন
করতে হবে।
৮. বিদেশে কার্ডটি কীভাবে কাজে লাগে?
👉 দূতাবাস বা কনস্যুলেটে পরিচয়
যাচাই, আইনি সহায়তা, টিকিট বা পাসপোর্ট
ইস্যুতে অগ্রাধিকার সুবিধা পাওয়া যায়।
৯. কার্ড যাচাইয়ের উপায় কী?
👉 কার্ডের QR কোড
স্ক্যান করে অনলাইনে প্রবাসীর তথ্য দেখা যায়।
১০. কেন এই কার্ড প্রবাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
👉 এটি প্রবাসীদের সরকারি স্বীকৃতি,
সুরক্ষা ও সম্মান প্রদান করে; যা ভবিষ্যতের
নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দেয়।
প্রবাসী কল্যাণ কার্ড, প্রবাসী
কল্যাণ কার্ড আবেদন, প্রবাসী কল্যাণ কার্ড অনলাইনে আবেদন,
BMET প্রবাসী কল্যাণ কার্ড, প্রবাসী কল্যাণ
কার্ড কিভাবে পাব, প্রবাসী কল্যাণ কার্ড সুবিধা, প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের উপকারিতা, প্রবাসী কল্যাণ
কার্ড নবায়ন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ঋণ, প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের যোগ্যতা, প্রবাসী নিবন্ধন BMET,
প্রবাসী কল্যাণ কার্ড ফি, প্রবাসী কল্যাণ
কার্ড আবেদন লিংক, প্রবাসী কল্যাণ কার্ড সংগ্রহের নিয়ম,
প্রবাসী কার্ড অনলাইনে আবেদন, প্রবাসীদের জন্য
সরকারি কার্ড, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান
মন্ত্রণালয়, বিদেশে প্রবাসী সহায়তা, BMET নিবন্ধন প্রক্রিয়া, প্রবাসী কল্যাণ কার্ড
সুবিধাসমূহ।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles
.png)
