পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই
কিভাবে ই-পাসপোর্ট করবেন: নতুন নিয়ম, ধাপ, ফি ও সম্পূর্ণ
গাইড
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর পরে পুরো পাসপোর্ট
প্রক্রিয়াটি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক সহজ, দ্রুত এবং ডিজিটাল হয়েছে। বিশেষ
করে নতুন নীতিমালায় এমন একটি সুবিধা যুক্ত হয়েছে যা লাখো আবেদনকারীকে সবচেয়ে বেশি
উপকার করে—অনেক ক্ষেত্রেই আর পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হয় না।
আগে পাসপোর্ট করতে হলে পুলিশ সদস্যরা সরাসরি
বাড়িতে এসে ঠিকানা যাচাই করতেন, তাতে সময় লাগত, অনেক
ক্ষেত্রেই ঝামেলাও তৈরি হতো। কিন্তু এখন সেই প্রক্রিয়ার বড় অংশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে
যাচাই হয়ে যায় ডিজিটাল ডাটাবেইসের মাধ্যমে।
এখানে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো—
✔ কেন পুলিশ ভেরিফিকেশন অনেক ক্ষেত্রে আর
প্রয়োজন হয় না
✔ কীভাবে অনলাইনে আবেদন করতে হবে
✔ কোন কোন ডকুমেন্ট লাগবে
✔ কারা পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট পাবেন
✔ কিভাবে বাড়িতে বসেই পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক
করবেন
✔ ফি কত
✔ এবং ই-পাসপোর্টের সুবিধাসমূহ
চলুন বিষয়গুলো একে একে জেনে নেওয়া যাক।
▼ পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট—কেন এই
সুযোগ এল?
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং একীভূত ডাটাবেইস ব্যবহার শুরু
করেছে। ফলে একজন আবেদনকারীর পরিচয় ও ঠিকানা যাচাই করার জন্য আর পুলিশের বাড়িতে
গিয়ে রিপোর্ট তৈরি করার প্রয়োজন হয় না।
যেসব কারণে এখন অনেক আবেদনেই পুলিশ যাচাই লাগে না—
- NID ডাটাবেইস
স্বয়ংক্রিয় যাচাই করে তথ্য মিলিয়ে নেয়
— আপনার নাম, জন্মতারিখ, পিতামাতার তথ্য, ঠিকানা—সব NID এর সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। - মোবাইল নম্বর, জন্মনিবন্ধন
ও পরিবারভিত্তিক তথ্য একসঙ্গে যাচাই হয়
- আগে যদি
পাসপোর্ট থাকে এবং তথ্য অপরিবর্তিত থাকে—তবে হাতে যাচাইয়ের দরকার হয় না
- অনেক ক্ষেত্রে
ই-গভ. ডাটাবেইস থেকে নিরাপদ ঠিকানা নিশ্চিত হয়
ফলে আপনার তথ্য যদি সঠিক হয়—
👉 আপনার আবেদন “Enrollment
in Process → Passport Ready” এ চলে যাবে।
👉 মাঝের পুলিশ ভেরিফিকেশন ধাপটি
স্কিপ হয়ে যাবে।
▼ কিভাবে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই অনলাইনে
পাসপোর্ট করবেন? (Step by Step গাইড)
ই-পাসপোর্টের আবেদন সম্পূর্ণ অনলাইনে করা যায়। শুধু বায়োমেট্রিক দিতে পাসপোর্ট
অফিসে যেতে হয়।
Step–1: ই-পাসপোর্ট সাইটে প্রবেশ করুন
সরকারি সাইট: epassport.gov.bd
সেখানে গিয়ে
👉 Apply Online
এ ক্লিক করুন।
Step–2: আপনার পাসপোর্ট অফিস নির্বাচন করুন
আপনি কোন অফিস থেকে পাসপোর্ট নিতে চান—সেটি বেছে
নিন। যেমন: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ইত্যাদি।
Step–3: অনলাইন ফর্ম পূরণ করুন
এখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে—
- নাম
- জন্মতারিখ
- বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা
- NID নম্বর
- মোবাইল নম্বর
- পিতামাতা বা স্বামী/স্ত্রীর তথ্য
- পেশা
- জরুরি যোগাযোগের নম্বর
⚠️ সতর্কতা: সব তথ্য অবশ্যই NID-এর সঙ্গে হুবহু মিলতে হবে। একটি
বানান ভুলও পুলিশ ভেরিফিকেশনের কারণ হতে পারে।
Step–4: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করুন
ই-পাসপোর্টে সাধারণত কম কাগজপত্র লাগে—
- NID কার্ড
- জন্মসনদ (যদি NID না থাকে
বা বয়স কম হয়)
- আগের পাসপোর্ট (যদি রিনিউ করা হচ্ছে)
Step–5: অনলাইন ফি পরিশোধ করুন
আপনি দিতে পারবেন—
✔ bKash
✔ Nagad
✔ Rocket
✔ Visa/Mastercard
Step–6: অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করুন
আপনার সুবিধামতো একটি দিন নির্বাচন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হবে। এই দিন আপনি ছবি তুলবেন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেবেন।
Step–7: নির্ধারিত দিনে পাসপোর্ট অফিসে যান
বায়োমেট্রিক (ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, স্বাক্ষর) দেওয়ার পর আপনার আবেদন প্রক্রিয়াধীন হবে।
Step–8: স্বয়ংক্রিয় ভেরিফিকেশন (অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের দরকার
হবে না)
যদি—
✔ আপনার NID ও ঠিকানা
মিল থাকে
✔ পরিবারের সদস্যদের তথ্য যাচাইযোগ্য হয়
✔ আগে পাসপোর্ট ছিল এবং তথ্য অপরিবর্তিত থাকে
তবে আপনার আবেদন পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পরবর্তী ধাপে চলে যাবে।
▼ কারা পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই ই-পাসপোর্ট
পাবেন?
✔ যাদের সব তথ্য
NID-এর সঙ্গে মিল রয়েছে
✔ যারা দীর্ঘদিন একই ঠিকানায় বসবাস করছেন
✔ পরিবারের অন্য সদস্যদের NID একই ঠিকানায় রয়েছে
✔ সরকারি/প্রাইভেট চাকরিজীবী যারা
প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা স্থিতিশীল
✔ আগের পাসপোর্টধারী যাদের তথ্য অপরিবর্তিত
✔ আগে যাদের বায়োমেট্রিক ভেরিফাই করা ছিল
👉 অর্থাৎ,
যাদের তথ্য “Low Risk” ক্যাটাগরিতে পড়ে—তাদের
পুলিশ যাচাই লাগে না।
▼ পাসপোর্ট স্ট্যাটাস ঘরে বসেই জানতে পারবেন
আপনার পাসপোর্ট কোন অবস্থায় আছে জানতে পারবেন
এখান থেকে:
👉 epassport.gov.bd/authorization/application-status
স্ট্যাটাস দেখতে প্রয়োজন হবে—
- Application ID / Online Registration ID
- জন্মতারিখ
স্ট্যাটাসগুলো হতে পারে—
- Enrollment in Process
- Police Verification Not Required
- Passport Ready for Delivery
- Delivered
▼ ই-পাসপোর্টের ফি (২০২৫ অনুযায়ী)
📘 48-Pages (Regular)
- ৫ বছর মেয়াদ – ৩,৫০০ টাকা
- ১০ বছর মেয়াদ – ৫,০০০ টাকা
📙 48-Pages (Express)
- ৫ বছর – ৫,৫০০ টাকা
- ১০ বছর – ৭,০০০ টাকা
📗 48-Pages (Super Express)
- ৫ বছর – ৭,৫০০ টাকা
- ১০ বছর – ১০,০০০ টাকা
▼ ই-পাসপোর্ট কেন এত জনপ্রিয়? (বিশেষ সুবিধাসমূহ)
✨ ১০ বছরের
দীর্ঘ মেয়াদ
✨ ১৫৮+ দেশে ভিসা সুবিধা বৃদ্ধি
✨ বিমানবন্দরে eGate ব্যবহার
✨ উন্নত সিকিউরিটি ফিচার
✨ দ্রুত ডেলিভারি
✨ অনলাইন আবেদন ও স্ট্যাটাস ট্র্যাকিং
✨ সফল ডিজিটাল ভেরিফিকেশন হলে পুলিশ যাচাই
প্রয়োজন হয় না
▼ উপসংহার
বাংলাদেশের ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থা ডিজিটাল পাসপোর্ট
প্রক্রিয়ায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। আবেদনকারীদের তথ্য নিরাপদভাবে যাচাই হওয়ার
কারণে এখন আর আগের মতো বাড়িতে পুলিশ যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। অনলাইনে আবেদন, বায়োমেট্রিক
দেওয়া এবং বাসা থেকে স্ট্যাটাস চেক—সব মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়া হয়েছে দ্রুত, সহজ ও ঝামেলামুক্ত।
আপনার তথ্য যদি NID-এর সাথে সঠিকভাবে মিলে যায়,
তাহলে আপনি পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই অতি দ্রুত পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।
📝 ১০টি সাধারণ
প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
১. সকলের কি পুলিশ ভেরিফিকেশন
বাদ যায়?
না। শুধুমাত্র যাদের তথ্য সম্পূর্ণ মিল থাকে
তারাই এই সুবিধা পান।
২. ঠিকানায় সামান্য ভুল থাকলে
কি হবে?
ঠিকানার অমিল হলে আবেদন পুলিশের কাছে যাচাইয়ের
জন্য পাঠানো হয়।
৩. নামের বানানের ভুল কি
সমস্যা তৈরি করবে?
হ্যাঁ—এতে ভেরিফিকেশন বাধাগ্রস্ত হয় এবং হাতে
যাচাই লাগতে পারে।
৪. আগের পাসপোর্ট থাকলে কি
পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে?
তথ্য একই থাকলে সাধারণত লাগবে না।
৫. বায়োমেট্রিক না দিলে কি
আবেদন গ্রহণ হবে?
না, বায়োমেট্রিক ছাড়া আবেদন অসম্পূর্ণ।
৬. অনলাইনে ফি কিভাবে দিতে হয়?
bKash, Nagad, Rocket অথবা Visa/Mastercard
দিয়ে।
৭. অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পেলে
কী করবো?
সময় পরিবর্তন করে চেষ্টা করুন—সাধারণত স্লট পাওয়া
যায়।
৮. জন্মসনদ কি বাধ্যতামূলক?
NID থাকলে নয়। NID না
থাকলে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক।
৯. কত দিনে পাসপোর্ট ডেলিভারি
হয়?
Regular: ২১+ দিন, Express: ৭–১০ দিন, Super Express: ৩–৫ দিন।
১০. স্ট্যাটাস "Police Verification Not
Required" মানে কী?
আপনার কেস স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই হয়েছে এবং
পুলিশ আর ঘরে যাবে না।
পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট, ই-পাসপোর্ট
নতুন নিয়ম ২০২৫, বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট প্রক্রিয়া,
epassport.gov.bd apply, পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগে কি না পাসপোর্টে,
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন, ই-পাসপোর্ট
অ্যাপয়েন্টমেন্ট কিভাবে নেবেন, পাসপোর্ট করার নিয়ম বাংলাদেশ,
ই-পাসপোর্ট ফি ২০২৫, পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক
লিংক, epassport application status check, পুলিশ ভেরিফিকেশন
ছাড়াই পাসপোর্ট কিভাবে হয়, ePassport Bangladesh, biometric enrollment
epassport, ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি সময়, দ্রুত
পাসপোর্ট করার নিয়ম, super express passport fee Bangladesh, express
passport fee বাংলাদেশ, অনলাইনে পাসপোর্ট ফি
পরিশোধ, পাসপোর্ট ঠিকানা ভেরিফিকেশন, পাসপোর্ট
অনলাইন আবেদন গাইড, ePassport step by step guide, epassport police
verification not required.
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles
.png)
