অনলাইনে পুরাতন বিদ্যুৎ মিটার
পরিবর্তনের আবেদন করার নিয়ম (মাত্র ২৭৬ টাকা)
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সেবাখাতে ডিজিটালাইজেশন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান
সময়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার, রিডিং, বিলিং, লাইন
মেইনটেন্যান্সসহ প্রায় সব কার্যক্রমই ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এরই
ধারাবাহিকতায় পুরাতন বা অকার্যকর বিদ্যুৎ মিটার অনলাইনে পরিবর্তনের আবেদন করার
সুযোগ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুৎ (BREB), NESCO,
DESCO, DPDC সহ বিভিন্ন বিতরণ সংস্থা তাদের গ্রাহকদের জন্য অনলাইন
মিটার বদলের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করেছে।
অনেক গ্রাহক বছরের পর বছর অ্যানালগ মিটার ব্যবহার করেন, ফলে রিডিং
ভুল, বিল বেশি আসা, টেম্পার বা মিটার
ঘুরে না—এমনি সমস্যায় ভুগতে হয়। এসব সমস্যা দূর করতে ডিজিটাল ও প্রিপেইড মিটার এখন
অধিকতর নির্ভুল, নিরাপদ এবং গ্রাহকবান্ধব বলে বিবেচিত।
এই বিস্তারিত রিপোর্টে থাকবে—
✔ কেন মিটার পরিবর্তন করবেন
✔ সেবা পেতে কী কী লাগবে
✔ অনলাইনে আবেদন করার ধাপ
✔ আবেদন ফি
✔ সময়সীমা
✔ স্ট্যাটাস চেক
✔ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
✔ শেষাংশে ১০টি প্রশ্ন ও উত্তর
কেন মিটার পরিবর্তন করা
প্রয়োজন?
পুরানো অ্যানালগ মিটারগুলো অনেক ক্ষেত্রে সময়ের
সঙ্গে সঙ্গে রিডিংয়ে ত্রুটি তৈরি করে। পাশাপাশি কিছু মিটারে টেম্পারিং, ভোল্টেজ
অস্থিতিশীলতা, রিডিং লাফিয়ে ওঠা—এমন সমস্যা দেখা যায়। আধুনিক
ডিজিটাল ও প্রিপেইড মিটার এসব ঝুঁকি কমিয়ে আনে।
ডিজিটাল/প্রিপেইড মিটারের
সুবিধা সমূহ:
১. নির্ভুল রিডিং ও বিলিং
ডিজিটাল মিটার একই ইউনিট ব্যবহারের উপর ভিত্তি
করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঠিক রিডিং দেখায়। ফলে ভুল বিলের সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।
২. টেম্পার–প্রুফ নিরাপত্তা
নতুন মিটারগুলো Anti-Tamper সিস্টেমের মাধ্যমে
যেকোনো ধরনের বাহ্যিক হস্তক্ষেপ শনাক্ত করতে পারে।
৩. বিদ্যুৎ ব্যবহারের সহজ
নিয়ন্ত্রণ
গ্রাহক হোম ডিসপ্লেতে (HED) বা
মিটারের স্ক্রিনে কত ইউনিট ব্যবহার হচ্ছে তা রিয়েল-টাইমে দেখতে পারেন।
৪. প্রিপেইড হলে অতিরিক্ত
বিলের ঝামেলা নেই
টাকার পরিমাণ শেষ হলেই বিদ্যুৎ বন্ধ হয়—ফলে বিল
বকেয়া জমা হওয়ার সুযোগ নেই।
৫. এনার্জি লস কম এবং লোড
ব্যবস্থাপনা সহজ
ডিজিটালাইজড সিস্টেমে বিদ্যুৎ ক্ষতি (Line Loss) কম
হয়, যা পুরো এলাকাতে সেবা উন্নত করে।
অনলাইনে মিটার পরিবর্তনের
আবেদন করার আগে যেসব কাগজপত্র লাগবে
অনলাইনে আবেদন করতে আপনাকে কিছু ডকুমেন্ট
প্রস্তুত রাখতে হবে—
- গ্রাহক নম্বর (Consumer Number)
- মোবাইল নম্বর (অ্যাকটিভ)
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- সর্বশেষ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের রসিদ
- বর্তমান মিটারের পরিষ্কার ছবি
- বাড়ির ঠিকানা ও সংযোগের তথ্য
যেসব ক্ষেত্রে মিটার কাজ না করলে বা ঘুরে
না—সেক্ষেত্রে ওই সমস্যার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিতে হতে পারে।
অনলাইনে মিটার পরিবর্তনের
আবেদন করার নিয়ম (Step-by-Step)
এখানে পল্লী বিদ্যুৎ (BREB) উদাহরণ
হিসেবে দেখানো হলো। অন্যান্য বিতরণ সংস্থার পদ্ধতিও প্রায় একই।
1.
ধাপ: অনলাইন সেবা ওয়েবসাইটে প্রবেশ
প্রথমে আপনার জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির
অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান।
গুগলে লিখুন: “আপনার জেলার নাম + Palli
Bidyut Samity Online Service”
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর মেনু থেকে—
- Online Application
- অথবা
- Meter Replacement /
Meter Change
অপশন নির্বাচন করুন।
2. ধাপ: গ্রাহকের তথ্য পূরণ করুন
এখানে আপনাকে নিচের তথ্য দিতে হবে—
- গ্রাহক নম্বর
- নাম
- মোবাইল নম্বর
- NID নম্বর
- সাপোর্টিং ঠিকানা
- লোডের ধরন (Single Phase/Three Phase)
- পুরাতন মিটারের ধরন (Analog, Digital)
- মিটার বদলের কারণ (Old/Faulty/Upgrade)
এগুলো অবশ্যই সঠিকভাবে লিখতে হবে। ভুল তথ্য দিলে
আবেদন বাতিল হবে।
3. ধাপ: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড
সাধারণত নিচের নথিপত্র চাওয়া হয়—
- সর্বশেষ বিদ্যুৎ বিল
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি/স্ক্যান
- পুরানো মিটারের ছবি (মিটার নম্বর দৃশ্যমান থাকতে হবে)
- প্রয়োজন হলে বাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র
সব ডকুমেন্ট PDF বা JPG হলে
ভালো।
4. ধাপ: মিটার পরিবর্তনের আবেদন ফি পরিশোধ করুন
বাংলাদেশে মিটার পরিবর্তনের আবেদন করার ফি হলো—
✔ মাত্র ২৭৬
টাকা
আপনি পেমেন্ট করতে পারবেন:
- বিকাশ
- নগদ
- রকেট
- Sonali Bank ePayment
- অন্যান্য ব্যাংক গেটওয়ে
পেমেন্ট সফল হলে আপনাকে একটি ডিজিটাল রসিদ দেওয়া
হবে।
5. ধাপ: আবেদন সাবমিট ও ট্র্যাকিং নম্বর গ্রহণ:
ফর্ম
পূরণ এবং পেমেন্ট শেষে “Submit” বাটনে ক্লিক করুন।
অল্পক্ষণের মধ্যেই আপনার মোবাইলে SMS হিসেবে
একটি Tracking ID পাঠানো হবে। এটি দিয়ে আপনি যেকোনো
সময় আবেদন স্ট্যাটাস দেখতে পারবেন।
6. ধাপ: মিটার পরিবর্তনের সময়সীমা
সাধারণত—
- ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে লাইনম্যান/ইঞ্জিনিয়ার
সরেজমিনে এসে মিটার পরিবর্তন করে দেয়।
- আবেদনের চাপ বেশি হলে সময় ৭–১০ দিন হতে পারে।
- মিটার স্টকে কম থাকলে সময় বর্ধিত হতে পারে।
পরিদর্শনের সময় লাইনম্যান আপনার উপস্থিতি চাইতে
পারেন।
আবেদন স্ট্যাটাস চেক করার নিয়ম
পল্লী বিদ্যুৎ ওয়েবসাইটে গিয়ে—
Application Status / Track Application
অপশনে ক্লিক করুন।
- Tracking ID প্রদান করুন
- Verify বাটনে
চাপুন
আপনি দেখতে পারবেন আপনার আবেদনের বর্তমান অবস্থা:
- Pending
- Under Review
- Approved
- Meter Ready
- Installation Scheduled
- Completed
মিটার পরিবর্তনের পর যা যা
খেয়াল রাখবেন
- নতুন মিটারের রিডিং অবশ্যই দেখে নিন
- পুরাতন মিটার গ্রহণ–বহির্গমন রিপোর্ট সংগ্রহ করুন
- নতুন মিটারে কোনো ত্রুটি থাকলে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে
- মিটার স্থাপনকালে ছবি তুলে রাখুন (ভবিষ্যতের প্রয়োজনে)
উপকারিতা এক নজরে
- সঠিক রিডিং পাওয়ার নিশ্চয়তা
- বকেয়া ছাড়া বিল তৈরি
- বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঠিক নিয়ন্ত্রণ
- দ্রুত লোড ম্যানেজমেন্ট
- ঘরে বসে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন
- অতিরিক্ত খরচ নেই
উপসংহার: পুরাতন মিটার পরিবর্তন করা
এখন আর ঝামেলার বিষয় নয়। মাত্র ২৭৬ টাকা ফি দিয়ে আপনি চান তো ঘরে বসেই
পুরাতন অ্যানালগ বা ত্রুটিযুক্ত মিটার বদলে নতুন ডিজিটাল/প্রিপেইড মিটার নিয়ে নিতে
পারেন। সরকারের ডিজিটালাইজেশন উদ্যোগের কারণে পুরো সিস্টেমটি এখন সহজ, দ্রুত এবং
স্বচ্ছ হয়েছে।
যথাযথ ডকুমেন্ট, সঠিক তথ্য ও পরিশোধিত বিদ্যুৎ
বিল থাকলে আবেদনটি খুব সহজেই অনুমোদিত হবে।
এটি শুধুমাত্র গ্রাহকের সুবিধাই বৃদ্ধি করে না—বিদ্যুৎ সেবার
উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs — মোট
১০টি)
১. অনলাইনে মিটার পরিবর্তনের
আবেদন করতে কত টাকা লাগে?
মাত্র ২৭৬ টাকা আবেদন ফি লাগবে। এটি সকল
বিতরণ সংস্থার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
২. কোন কোন ক্ষেত্রে মিটার
পরিবর্তন করা প্রয়োজন হয়?
অ্যানালগ মিটার পুরনো হলে, ঘুরে না,
রিডিং ভুল দেয়, ভোল্টেজ সমস্যায় পড়ে—এমন
ক্ষেত্রে মিটার পরিবর্তন দরকার।
৩. কোন ডকুমেন্ট লাগবে?
NID, সর্বশেষ বিল রসিদ, পুরাতন মিটারের ছবি, গ্রাহক নম্বর।
৪. আবেদন স্ট্যাটাস কিভাবে
চেক করব?
ওয়েবসাইটের Application Status অপশন থেকে Tracking
ID দিয়ে চেক করতে পারবেন।
৫. আবেদন করার আগে বিদ্যুৎ
বিল পরিশোধ করা কি বাধ্যতামূলক?
হ্যাঁ, বকেয়া থাকলে আবেদন অনুমোদন হয় না।
৬. ডিজিটাল মিটার ও প্রিপেইড
মিটারের মধ্যে পার্থক্য কী?
ডিজিটাল মিটার পোস্টপেইড বিলিং করে, কিন্তু
প্রিপেইড মিটারে আগে টাকা রিচার্জ করে ব্যবহার করতে হয়।
৭. মিটার বদলাতে কত সময় লাগে?
সাধারণত ৩–৭ দিন, খুব ব্যস্ত
সময়ে ১০ দিন।
৮. মিটার বদলের সময় কি বাড়িতে
থাকা জরুরি?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে হ্যাঁ, কারণ
লাইনম্যান নতুন রিডিং নিশ্চিত করতে চান।
৯. আবেদন বাতিল হলে কী করতে
হবে?
নতুন করে সঠিক তথ্য দিয়ে আবার আবেদন করতে হবে।
১০. মিটার বদলের পর কি আলাদা
চার্জ লাগে?
সাধারণত ইনস্টলেশন ফি নেই; শুধুমাত্র
আবেদন ফি ২৭৬ টাকা প্রযোজ্য।
অনলাইনে মিটার পরিবর্তনের আবেদন, মিটার
পরিবর্তনের নিয়ম, পল্লী বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তন, BREB
মিটার চেঞ্জ আবেদন, বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের
ফরম, ২৭৬ টাকা মিটার পরিবর্তন, ডিজিটাল
মিটার নেওয়ার নিয়ম, প্রিপেইড মিটার আবেদন, বিদ্যুৎ মিটার অনলাইনে বদল, পুরাতন মিটার বদলের নিয়ম,
পল্লী বিদ্যুৎ অনলাইন সেবা, মিটার
রিপ্লেসমেন্ট আবেদন, electric meter change online bd, Bangladesh meter
replacement fee, মিটার পরিবর্তনের আবেদন ফি, অনলাইনে
digital meter নেওয়ার নিয়ম, electricity meter change
application bd, meter change status check, পল্লী বিদ্যুৎ meter
replacement, নষ্ট মিটার পরিবর্তনের নিয়ম, মিটার
বদলের সময়সীমা, electricity prepaid meter apply, meter change online form
Bangladesh।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles
.png)
