“বিপণন ব্যবস্থাপনা হলো চাহিদার ব্যবস্থাপনা”- ব্যাখ্যা
“বিপণন ব্যবস্থাপনা
হলো চাহিদার ব্যবস্থাপনা” – এই উক্তিটি বিপণন ব্যবস্থাপনার মূল ধারণা এবং এর
কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত। বিপণন ব্যবস্থাপনা একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার
চাহিদা সৃষ্টি, বৃদ্ধি, এবং পরিচালনার প্রক্রিয়া। এটি শুধুমাত্র পণ্য বা সেবা
বিক্রি করার কাজ নয়, বরং গ্রাহকের চাহিদা
বোঝা, সেই চাহিদা পূরণ করার জন্য
সঠিক পণ্য বা সেবা প্রদান করা এবং বাজারের পরিবর্তনশীল চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায়ের
কৌশল তৈরি করা এর অন্তর্ভুক্ত।
চাহিদা কী এবং কেন এটি বিপণন
ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ?
চাহিদা হলো গ্রাহকদের পণ্য বা সেবা গ্রহণ করার ইচ্ছা এবং
প্রয়োজনীয়তা। বিপণন ব্যবস্থাপনায় চাহিদা ব্যবস্থাপনা হলো সেই প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো তার গ্রাহকদের চাহিদা অনুধাবন করে
এবং সেই চাহিদার উপযুক্ত পণ্য বা সেবা তৈরি করে বাজারে সরবরাহ করে।
বিপণন ব্যবস্থাপনায় চাহিদার
ব্যবস্থাপনা কিভাবে কাজ করে?
- চাহিদার সৃষ্টি (Creating Demand): বিপণন ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ হলো চাহিদার
সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের মধ্যে একটি পণ্যের বা সেবার
প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ,
নতুন
প্রযুক্তি পণ্যের বিপণন শুরু করার সময়,
প্রতিষ্ঠানটি
গ্রাহকদের কাছে পণ্যের উপকারিতা তুলে ধরে তাদের মধ্যে চাহিদা সৃষ্টি করে।
- চাহিদার বৃদ্ধি (Increasing Demand): একবার চাহিদা তৈরি হলে, পরবর্তী পদক্ষেপ হলো সেই চাহিদাকে আরো
বাড়ানো। এটি বিশেষ অফার, ছাড়, বা বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে করা যেতে
পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি নতুন
মোবাইল ফোনের জন্য বিশেষ ডিসকাউন্ট বা সীমিত সময়ের অফার চালু করা হতে পারে, যা গ্রাহকদের ক্রয়ের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলবে।
- চাহিদার মাপ অনুযায়ী সরবরাহ (Meeting Demand): চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পণ্য বা সেবা
সরবরাহ করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো পণ্য বা সেবা গ্রাহকের চাহিদার সঙ্গে মিলে
না, তবে বিপণন ব্যবস্থাপনা
ব্যর্থ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি গ্রাহকের
কাছে স্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা থাকে,
তবে
সেই চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠানের উচিত স্বাস্থ্যকর পণ্য বা সেবা সরবরাহ
করা।
- চাহিদার স্থিতিশীলতা (Stabilizing Demand): কোন কোন পণ্যের বা সেবার চাহিদা সময়ের
সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গরমকালে এয়ার কন্ডিশনারের চাহিদা বেড়ে যায়, আর শীতকালে তা কমে যায়। বিপণন ব্যবস্থাপনা
এমন কৌশল তৈরি করে যাতে চাহিদা সময়ের সঙ্গে স্থিতিশীল থাকে এবং একটি
নির্দিষ্ট সময় পর চাহিদা পুনরায় বৃদ্ধি পায়।
- চাহিদার পূর্বাভাস (Forecasting Demand): ভবিষ্যতে চাহিদা কেমন হতে পারে তা পূর্বাভাস
দিয়ে প্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এটি বিপণন পরিকল্পনার একটি
গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিপণন ব্যবস্থাপকরা বিভিন্ন পরিসংখ্যান এবং বাজারের গতিপথ
বিশ্লেষণ করে, ভবিষ্যতে কী
ধরনের পণ্য বা সেবার চাহিদা বাড়তে পারে তা পূর্বাভাস করেন।
বিপণন ব্যবস্থাপনা এবং চাহিদা
ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক:
বিপণন ব্যবস্থাপনা চাহিদার ব্যবস্থাপনার জন্য মূল
কৌশল তৈরি করে, এবং সেই কৌশলগুলির মাধ্যমে
প্রতিষ্ঠান তার পণ্য বা সেবা বিক্রির প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। চাহিদার স্বাভাবিক
ওঠানামা বা পরিবর্তনকে মোকাবেলা করতে,
একটি
প্রতিষ্ঠানের বিপণন দলকে চাহিদা পূর্বাভাস,
কৌশলগত
পরিকল্পনা, এবং বিজ্ঞাপন প্রচারণা
ব্যবহার করতে হয়।
উদাহরণ:
ধরা যাক,
একটি
প্রতিষ্ঠান নতুন একটি ফ্যাশনেবল জুতা বাজারে নিয়ে এসেছে। প্রথমে, প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের মধ্যে এই পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করতে
বিজ্ঞাপন চালু করবে এবং ফ্যাশনের দিক থেকে পণ্যের বিশেষত্ব তুলে ধরবে। এরপর, চাহিদা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন অফার বা ছাড় প্রদান করবে, যেমন "বিশেষ ছাড়ের মাধ্যমে আজই কিনুন!"। বাজারে
চাহিদা বৃদ্ধি হলে, তারা স্টক বৃদ্ধির
জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি করবে এবং সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করবে। পুরো
প্রক্রিয়াটি হলো বিপণন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চাহিদার দক্ষ ব্যবস্থাপনা।
উপসংহার:
“বিপণন ব্যবস্থাপনা
হলো চাহিদার ব্যবস্থাপনা” কথাটি সঠিকভাবে বোঝায় যে বিপণন কেবল পণ্য বা সেবা বিক্রি
করার একটি প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি গ্রাহকের
চাহিদার সৃষ্টি, পূর্ণতা, এবং পরিচালনার প্রক্রিয়া। সফল বিপণন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে
একটি প্রতিষ্ঠান তার পণ্য বা সেবার চাহিদা তৈরি করতে পারে, সেই চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারে এবং বাজারের পরিবর্তনশীল
চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে তার কৌশল প্রণয়ন করতে পারে।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles