বাচ্চাদের চোখে অঞ্জনি ওঠা একটি সাধারণ সমস্যা, যা সাধারণত এক ধরনের প্রদাহ বা সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। এটি
যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি আরও গুরুতর
পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। তাই অঞ্জনি উঠলে দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এখানে আমরা বাচ্চাদের চোখে অঞ্জনি ওঠা,
তার
লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ, প্রতিকার, চিকিৎসা, পরামর্শ ও সতর্কতা
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
১. অঞ্জনি ওঠার কারণ:
বাচ্চাদের চোখে অঞ্জনি উঠার বেশ কয়েকটি কারণ
থাকতে পারে:
- চোখের সংক্রমণ (Conjunctivitis):
এটি
ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা
অ্যালার্জি থেকে হতে পারে। ভাইরাল কনজাঙ্কটিভাইটিস বেশি হলে চোখে অঞ্জনি, চোখ লাল হওয়া, এবং স্রাব হতে পারে।
- স্টাই (Stye): এটি চোখের পাপড়ির ভিতরে বা বাইরের দিকের
গ্রন্থিতে ইনফেকশন (ব্যাকটেরিয়া) ঘটলে হয়। এতে ছোট ধরনের ফোঁড়া বা পুঁজের দাগ
হতে পারে।
- হোর্সফেল (Hordeolum): এটি স্টাইর
মতোই কিন্তু অনেক সময় এটি বড় আকার ধারণ করতে পারে এবং বেশি প্রদাহ সৃষ্টি
করতে পারে।
- অ্যালার্জি: ধূলা,
পেট
বা ফুলের পরাগের কারণে চোখে অঞ্জনি হতে পারে। এতে চোখে চুলকানি, লালচে ভাব এবং অঞ্জনি দেখা যায়।
- কোনো আঘাত বা আঘাতজনিত ক্ষত: চোখে কোনো কিছু পড়লে বা আঘাত পেলে অঞ্জনি
উঠতে পারে।
২. লক্ষণ:
বাচ্চাদের চোখে অঞ্জনি ওঠার কিছু সাধারণ লক্ষণ:
- চোখ লাল হওয়া: চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যায়।
- চোখে জল ঝরা বা স্রাব: চোখ থেকে অতিরিক্ত পানি বা পুঁজ বের হওয়া।
- চোখে ব্যথা বা অস্বস্তি: চোখের চারপাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- চোখ ফোলা বা বুজে যাওয়া: চোখের আশেপাশে ফুলে যাওয়া বা ফোলা দেখা যায়।
- চোখের কোনে হলুদ বা সাদা দাগ: স্টাই বা হোর্সফেলের
কারণে এ ধরনের দাগ হতে পারে।
- চোখের নিচে সাদা দাগ দেখা: যদি কোনো সংক্রমণ বা প্রদাহ গুরুতর হয়ে যায়।
৩. প্রতিরোধ:
বাচ্চাদের চোখে অঞ্জনি ওঠা প্রতিরোধ করতে কিছু
সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করা উচিত:
- হাত ধোয়ার অভ্যাস: বাচ্চাকে নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে দিন, বিশেষত চোখে হাত দেওয়ার আগে।
- পরিষ্কার পরিবেশ: বাচ্চার পোশাক, তোয়ালে ও বাচ্চার ব্যবহৃত সমস্ত জিনিস
পরিষ্কার রাখুন।
- অ্যালার্জি থেকে দূরে রাখা: যদি বাচ্চার কোনো অ্যালার্জি থাকে, তবে তাকে সেই উপাদান বা পরিবেশ থেকে দূরে
রাখুন।
- চোখে হাত না দেওয়ার জন্য সতর্কতা: বাচ্চাকে চোখে হাত না
দিতে শেখান, যাতে সংক্রমণ না
হয়।
- চোখের সুরক্ষা: যেকোনো আঘাত বা রগরগে পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন, যাতে চোখে কোনো ধরণের আঘাত না লাগে।
৪. প্রতিকার:
বাচ্চার চোখে অঞ্জনি হলে কিছু প্রাথমিক প্রতিকার
নেওয়া যেতে পারে:
- গরম কমপ্রেস: গরম পানিতে ভেজানো তুলো দিয়ে চোখে কমপ্রেস
দেওয়া যেতে পারে। এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
- চোখ পরিষ্কার রাখা: চোখের চারপাশে জমে থাকা ময়লা বা স্রাব
পরিষ্কার করুন, তবে নরম কাপড় বা
তুলো দিয়ে খুব সাবধানে পরিষ্কার করুন।
- অ্যান্টি-বায়োটিক ড্রপ: যদি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী
অ্যান্টি-বায়োটিক চোখের ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- অ্যালার্জির চিকিৎসা: অ্যালার্জির কারণে যদি অঞ্জনি ওঠে, তবে অ্যালার্জি প্রতিরোধক ওষুধ বা চোখের
ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. চিকিৎসা:
- ডাক্তারের পরামর্শ: যদি চোখে অঞ্জনি বেশি সময় থাকে, লাল হয়, বা স্রাব বেশি হয়, তখন ডাক্তারকে
দেখানো জরুরি।
- অ্যান্টি-বায়োটিক ড্রপ বা মলম: ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ
থাকলে অ্যান্টি-বায়োটিক ড্রপ বা মলম দেওয়া যেতে পারে।
- অপারেশন: কিছু ক্ষেত্রে যদি স্টাই বা হোর্সফেল বড় হয়ে গিয়ে অপারেশনের প্রয়োজন হয়ে
থাকে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
৬. পরামর্শ ও সতর্কতা:
- চোখের ব্যথা বা অসুবিধা থাকলে তত্ক্ষণাত্ চিকিৎসককে
দেখান।
- বাচ্চাকে চোখে হাত না দিতে সতর্ক করুন।
- অতিরিক্ত স্রাব বা চোখে প্রচন্ড লালভাব থাকলে অবহেলা
করবেন না।
- শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করুন, নিজে থেকে চিকিৎসা করবেন
না।
- বাচ্চার তোয়ালে, রুম,
বিছানা এবং অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিস সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখুন।
বাচ্চাদের চোখে অঞ্জনি বা সংক্রমণ হতে পারে, তবে সঠিক চিকিৎসা ও সতর্কতা অবলম্বন করলে এই সমস্যা সহজেই সমাধান করা সম্ভব।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles