লিপিড প্রোফাইল টেস্ট কেন জরুরি? হৃদরোগ ও স্ট্রোক থেকে বাঁচার করণীয় জানুন

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0



লিপিড প্রোফাইল টেস্ট কেন জরুরি? হৃদরোগ ও স্ট্রোক থেকে বাঁচার করণীয় জানুন

 

লিপিড প্রোফাইল টেস্ট (Lipid Profile Test) একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষা যা রক্তে বিভিন্ন ধরনের চর্বি বা লিপিড এর পরিমাণ নির্ধারণ করে। এটি মূলত হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (রক্তনালীতে চর্বি জমা) এর ঝুঁকি মূল্যায়নে সহায়তা করে।

 

লিপিড প্রোফাইল টেস্টে যা পরিমাপ করা হয়

১. টোটাল কোলেস্টেরল (Total Cholesterol): রক্তে মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ। এটি শরীরের কোষ গঠনে ও হরমোন তৈরিতে সহায়তা করে, তবে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ক্ষতিকর।

২. এইচডিএল (HDL - High Density Lipoprotein): এটিকে “ভালো কোলেস্টেরল” বলা হয়। এটি অতিরিক্ত কোলেস্টেরল লিভারে নিয়ে গিয়ে ক্ষতিকর জমা হওয়া রোধ করে। উচ্চ HDL মানে হৃদরোগের ঝুঁকি কম।

৩. এলডিএল (LDL - Low Density Lipoprotein): এটিকে “খারাপ কোলেস্টেরল” বলা হয়। এটি রক্তনালীতে জমা হয়ে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করতে পারে। উচ্চ LDL মানে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি।

  1. ট্রাইগ্লিসারাইড (Triglycerides): এটি শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে যে চর্বিতে পরিণত হয়, তার একটি রূপ। বেশি খাওয়া ও কম শারীরিক কাজ করলে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ে।
  2. ভিএলডিএল (VLDL - Very Low Density Lipoprotein): এটি ট্রাইগ্লিসারাইড পরিবহনে সহায়ক। উচ্চ VLDL মানেও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।

 

পরীক্ষার উদ্দেশ্য

  • হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি নির্ধারণ
  • উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকি মূল্যায়ন
  • জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন
  • কোলেস্টেরল-নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ কার্যকর কিনা তা পর্যবেক্ষণ

 

পরীক্ষার প্রস্তুতি

  • খালি পেটে থাকতে হয়: সাধারণত পরীক্ষার আগে ৯-১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে বলা হয়। শুধু পানি খাওয়া যায়।
  • ওষুধ ও খাদ্যাভ্যাস: কিছু ওষুধ বা ফ্যাটযুক্ত খাবার পরীক্ষার ফলকে প্রভাবিত করতে পারে।

 

স্বাভাবিক রেফারেন্স মান (সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য):

উপাদান

আদর্শ মান (mg/dL)

টোটাল কোলেস্টেরল

কম ২০০

HDL কোলেস্টেরল

৪০-এর বেশি (পুরুষ); ৫০-এর বেশি (নারী)

LDL কোলেস্টেরল

১০০-এর কম (সর্বোত্তম)

ট্রাইগ্লিসারাইড

১৫০-এর কম

VLDL

৩০-এর কম

নোট: রেফারেন্স মান বয়স, লিঙ্গ ও স্বাস্থ্যের ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন হতে পারে

 

লিপিড প্রোফাইল টেস্ট একজন ব্যক্তির হৃদ্‌স্বাস্থ্যের অবস্থা নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষা। সময়মতো এই টেস্ট করিয়ে ফলাফল অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে হৃদরোগসহ নানা জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 

লিপিড প্রোফাইল টেস্টে নেতিবাচক রিপোর্ট (যেমন: উচ্চ LDL, ট্রাইগ্লিসারাইড, কম HDL) আসলে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও অন্যান্য বিপজ্জনক অসুখের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা জরুরি।

 

নিচে বিশ্লেষণসহ দেওয়া হলো—

স্বাস্থ্যবিধি ও জীবনযাপন কেমন হবে?

১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

  • সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন, দিনে ৩০–৪৫ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার বা দৌড়ানো করুন।
  • এটি HDL বাড়ায় ও LDL/ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়।

 

২. ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করুন

  • ধূমপান HDL কমিয়ে দেয়।
  • অ্যালকোহল ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায়।

 

৩. পর্যাপ্ত ঘুম

  • দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হৃদ্‌স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।

 

খাদ্যাভ্যাস কেমন হবে?

১. খেতে হবে যেসব খাবার:

খাদ্য

উপকারিতা

ওটস / লাল আটার রুটি

সলিউবল ফাইবার LDL কমায়

সয়াবিন / মসুর ডাল

ভালো প্রোটিন ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ

সবুজ শাকসবজি ও ফল (আপেল, মাল্টা)

ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ

বাদাম (আখরোট, আমন্ড)

HDL বাড়ায়, ওমেগা-৩ দেয়

ফ্যাটি ফিশ (স্যালমন, ম্যাকারেল, সারডিন)

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ

অলিভ অয়েল

হার্ট-সেবিং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট

 

২. বর্জনীয় খাবার:

খাবার

কারণ

লাল মাংস (গরু/খাসি)

স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি

ঘি, মাখন, বন স্প্রেড

কোলেস্টেরল বাড়ায়

ফাস্টফুড / ভাজাপোড়া

ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট

ডিমের কুসুম

বেশি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ

চিপস, বিস্কুট, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস

লুকানো ট্রান্স ফ্যাট

 

পানীয় সম্পর্কে নির্দেশনা

  • প্রচুর পানি খানরক্তে ফ্যাট জমা কমাতে সহায়ক
  • চিনি ও কার্বোনেটেড পানীয় বাদ দিনট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায়

 

রোগনির্ণয়ের পর করণীয় সংক্ষেপে:

করণীয়

উদ্দেশ্য

খাদ্যতালিকা পরিবর্তন

চর্বি নিয়ন্ত্রণে আনা

ব্যায়াম

কোলেস্টেরল ও ওজন কমানো

ওজন কমানো

হৃৎপিণ্ডের চাপ কমানো

চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ গ্রহণ

স্ট্যাটিন বা কোলেস্টেরল-নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ

 

চিকিৎসকের কাছে কখন যাবেন?

  • রিপোর্টে LDL > 160 mg/dL, বা
  • ট্রাইগ্লিসারাইড > 200 mg/dL, বা
  • HDL < 40 mg/dL (পুরুষ) / < 50 mg/dL (নারী)

এক্ষেত্রে চিকিৎসক ওষুধ (যেমন: স্ট্যাটিন) দিতে পারেন।

 

সার্চ কী: লিপিড প্রোফাইল টেস্ট, কোলেস্টেরল টেস্ট কেন জরুরি, হৃদরোগ থেকে বাঁচার উপায়, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর উপায়, চর্বি নিয়ন্ত্রণ করার উপায়, কোলেস্টেরল কমানোর খাবার, হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখার উপায়, উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ, কোলেস্টেরল কমাতে খাদ্যতালিকা, লিপিড টেস্ট রিপোর্ট ব্যাখ্যা, ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর উপায়, HDL বাড়ানোর উপায়, LDL কমানোর টিপস, স্ট্রোক প্রতিরোধের স্বাস্থ্যবিধি, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে করণীয়, হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়, হৃদরোগ প্রতিরোধে খাদ্য, কোলেস্টেরল চিকিৎসা, ফ্যাট কন্ট্রোল করার নিয়ম, লিপিড প্রোফাইল রিপোর্ট ব্যাখ্যা বাংলায়

 

ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top