গর্ভকালীন সময়ে শিশুর হার্টবিট দুর্বল হয় যেসব কারণে

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0


গর্ভকালীন সময়ে শিশুর হার্টবিট দুর্বল হয় যেসব কারণে

গর্ভকালীন সময়ে শিশুর হার্টবিট দুর্বল হওয়া বা অস্বাভাবিক হার্টবিট (যেমন খুব ধীর বা খুব দ্রুত) একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত হতে পারে, যা মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। এর জন্য বিভিন্ন কারণে শিশুর হার্টবিট দুর্বল হতে পারে, এবং এটি বিভিন্ন চিকিৎসাগত পরিস্থিতির মধ্যে এক ধরনের সংকেত হতে পারে।

গর্ভকালীন সময়ে শিশুর হার্টবিট দুর্বল হওয়ার কারণসমূহ:

১. অমতৃক প্রচলন (Placental Insufficiency)

  • কারণ: গর্ভাশয়ের মধ্যে শিশুর হৃদপিণ্ডের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্লাসেন্টা (অথবা মায়ের গর্ভের পাপোশ) থেকে অক্সিজেন এবং পুষ্টির সরবরাহ প্রয়োজন। যদি প্লাসেন্টা পর্যাপ্ত অক্সিজেন বা পুষ্টি সরবরাহ করতে না পারে, তবে শিশুর হার্টবিট দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
  • ফলস্বরূপ: শিশুর হার্টবিট কমে গিয়ে স্ট্রেস সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে শিশুর বিকাশের উপর প্রভাব পড়তে পারে।

২. গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ (Preeclampsia)

  • কারণ: গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, বিশেষত প্রিক্লাম্পসিয়া, একটি শর্ত যেখানে গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ বাড়ে এবং এটি প্লাসেন্টার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে শিশুর জন্য রক্তপ্রবাহ সীমিত হতে পারে, যার ফলে শিশুর হার্টবিট দুর্বল হতে পারে।
  • ফলস্বরূপ: প্রিক্লাম্পসিয়ার কারণে শিশু অক্সিজেন বা পুষ্টি পাচ্ছে না, যার ফলে তার হার্টবিট দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

৩. মায়ের ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes)

  • কারণ: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস) হলে, মায়ের রক্তে অতিরিক্ত শর্করা শিশুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি শিশুর হার্টবিটের পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক অবস্থাও প্রভাবিত করতে পারে।
  • ফলস্বরূপ: এই পরিস্থিতি শিশুর হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য এবং কার্যকারিতা প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে হার্টবিট দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

৪. নাবালক (Prematurity)

  • কারণ: যদি শিশুর জন্ম সময়ের আগে (যেমন ৩৭ সপ্তাহের আগে) হয়ে থাকে, তবে শিশুর হৃদপিণ্ড যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারে না। প্রিম্যাচার বাচ্চার হার্টবিট দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, কারণ তাদের হার্ট এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়নি।
  • ফলস্বরূপ: প্রিম্যাচুরিটি হলে শিশুর শরীরের অঙ্গগুলোর বিকাশ অসম্পূর্ণ থাকতে পারে এবং তার হার্টবিট দুর্বল হতে পারে।

৫. শিশুর শারীরিক অস্বস্তি বা স্ট্রেস

  • কারণ: যদি শিশুর শারীরিক অস্বস্তি বা স্ট্রেসের কারণ (যেমন মা অতি উত্তেজিত, অতিরিক্ত কসরত, বা ঘনঘন পরিশ্রম) সৃষ্টি হয়, তবে শিশুর হার্টবিট দুর্বল বা দ্রুত হতে পারে।
  • ফলস্বরূপ: অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে শিশুর হার্টবিটের পরিবর্তন হতে পারে, যেমন শিশুর হার্টবিট কমে যেতে পারে বা দ্রুত হয়ে যেতে পারে।

৬. গর্ভকালীন সংক্রমণ (Infection)

  • কারণ: গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরে কোনো সংক্রমণ, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI), শিশুতে প্রভাব ফেলতে পারে। এই ধরনের সংক্রমণ শিশুর হার্টবিট দুর্বল করার কারণ হতে পারে।
  • ফলস্বরূপ: সংক্রমণ মায়ের শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে এবং সেই প্রভাব শিশুর হার্টবিটেও প্রকাশ পেতে পারে, যা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

৭. গর্ভকালীন স্লিপিং বা পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়া

  • কারণ: মায়ের ঘুম বা বিশ্রাম না নিলে তার শরীর এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়া শিশুর স্ট্রেস তৈরি করতে পারে, যার ফলে তার হার্টবিট দুর্বল হতে পারে।
  • ফলস্বরূপ: মায়ের শারীরিক অস্বস্তি, অতিরিক্ত চাপ এবং ঘুমের অভাব শিশুর হৃৎস্পন্দনে প্রভাব ফেলতে পারে।

৮. জন্মগত সমস্যা বা হৃদরোগ

  • কারণ: কিছু ক্ষেত্রে শিশুর জন্মগত হৃদরোগের কারণে তার হার্টবিট দুর্বল হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে শিশুর হার্টবিট অপর্যাপ্ত বা অস্বাভাবিক হতে পারে।
  • ফলস্বরূপ: জন্মগত হার্টের সমস্যা শিশুর স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন প্রভাবিত করতে পারে।

শিশুর হার্টবিট দুর্বল হওয়ার লক্ষণ এবং চিকিৎসা:

  • লক্ষণ: শিশুর হার্টবিট দুর্বল হলে এটি সাধারণত আলট্রাসনোগ্রাফি, ডপলার সাউন্ড, অথবা নন-স্ট্রেস টেস্ট (NST) দ্বারা চিহ্নিত হয়। মায়ের অতিরিক্ত অস্বস্তি, পেটের নিচে চাপ অনুভব করা, কিংবা বুকের ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • চিকিৎসা: গর্ভকালীন সময়ে শিশুর হার্টবিট দুর্বল হলে চিকিৎসকরা সাধারণত উঁচু স্তরের পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা পরিচালনা করতে পারেন। চিকিৎসক মা ও শিশুর অবস্থার ভিত্তিতে অ্যান্টেনেটাল কেয়ার, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিসের চিকিৎসা, এবং স্ট্রেস কমানোর পরামর্শ দিতে পারেন।

উপসংহার:

গর্ভকালীন সময়ে শিশুর হার্টবিট দুর্বল হওয়া একটি গুরুতর সতর্ক সংকেত হতে পারে, তবে এর পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। এটি অস্বাভাবিক হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। গর্ভাবস্থার নিয়মিত চেকআপ এবং পর্যবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ শিশুর স্বাস্থ্য এবং মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য।

 

বাচ্চার হার্টবিট কত হলে ছেলে সন্তান

সপ্তাহ অনুযায়ী বাচ্চার হার্টবিট

বাচ্চার হার্টবিট না আসার কারণ

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট কত থাকে

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট বেড়ে গেলে করণীয়

বাচ্চার হার্টবিট না আসলে করনীয়

বাচ্চার হার্টবিট না আসার লক্ষণ

শিশুদের স্বাভাবিক হার্টবিট কত?

কোন শিশুর হার্টবিট বেশি ছেলে না মেয়ে?

হার্টবিট কত হলে নরমাল হয়?

বাচ্চার হার্টবিট বেশি হলে কি সমস্যা হয়?


ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top