সাংগঠনিক আচরণ অধ্যয়নের
গুরুত্ব
সাংগঠনিক আচরণ (Organizational Behavior বা OB) হল মানুষের আচরণ এবং তাদের
অন্তর্গত মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক এবং সাংগঠনিক প্রেক্ষাপটে তা কীভাবে প্রভাবিত হয় তা
অধ্যয়ন। একটি প্রতিষ্ঠানের সফলতা তার কর্মীদের কার্যকলাপের ওপর অনেকাংশে নির্ভর
করে। তাই, সাংগঠনিক আচরণ অধ্যয়ন প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের কার্যকারিতা ও মনোভাব উন্নত করার
জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরলে আমরা বুঝতে পারব এর
গুরুত্ব কীভাবে প্রতিষ্ঠানে প্রভাব ফেলতে পারে।
১. কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা
বৃদ্ধি: সাংগঠনিক আচরণ অধ্যয়ন কর্মীদের আচরণ, মনোভাব, উদ্দেশ্য এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি প্রতিষ্ঠানের
কর্মীদের মধ্যে উন্নত সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় মনস্তাত্ত্বিক এবং
সামাজিক দিকগুলির ওপর গুরুত্ব দেয়। কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি, দলগত কাজের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান এবং কাজের চাপ মোকাবেলা করার ক্ষমতা বাড়ানো
যায়, যা প্রতিষ্ঠানকে আরো কার্যকর করে।
২. নেতৃত্বের উন্নয়ন: সাংগঠনিক আচরণ অধ্যয়নের মাধ্যমে নেতাদের কর্মীদের মধ্যে প্রভাব তৈরি এবং
সিদ্ধান্ত গ্রহণের কৌশল শেখানো হয়। এটি প্রতিষ্ঠানের সফল নেতৃত্ব বিকাশে সহায়তা
করে। নেতৃত্বের স্টাইল, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কীভাবে নেতৃত্ব প্রদান করতে হয় এবং
কর্মীদের মনোভাব কীভাবে পরিচালনা করা যায়, এসব বিষয় শেখানো হয়। এতে
নেতৃত্বের দক্ষতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা উন্নত হয়।
৩. দলগত সম্পর্ক উন্নয়ন: সাংগঠনিক আচরণ অধ্যয়ন দলগত সম্পর্কের উন্নতির জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
এটি দলগত কাজের প্রক্রিয়া এবং সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কর্মীরা কীভাবে একে অপরের সঙ্গে কাজ করবে, একে অপরের মতামত ও সহানুভূতির
প্রতি শ্রদ্ধা রাখবে, এবং দলের লক্ষ্য পূরণের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করবে, এসব বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৪. কাজের পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক
উন্নয়ন: সাংগঠনিক আচরণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মপরিবেশ
এবং কর্মসংস্কৃতির উন্নয়নেও সহায়ক। একটি ইতিবাচক কর্ম পরিবেশ গঠন করা, যেখানে কর্মীরা নিজেদের গুরুত্ব অনুভব করে এবং তাদের মতামত শোনা হয়, এটি কর্মী সন্তুষ্টি এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। প্রতিষ্ঠানে
ভালো সাংস্কৃতিক মান প্রতিষ্ঠা করে এর কর্মীরা নিজেদের কাজের প্রতি আরও নিবেদিত
হয়।
৫. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা: সাংগঠনিক আচরণ অধ্যয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাকারীরা কর্মীদের
মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা ও তাদের প্রয়োজনের প্রতি সজাগ থাকতে পারেন। এই মনোযোগ কর্মী
ব্যবস্থাপনা এবং বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। কর্মীদের সুখী ও
ফলপ্রসূ রাখতে পারলে তাদের উৎপাদনশীলতা এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে, যা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৬. কাজের প্রতি মনোভাব এবং
প্রবণতা: প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যদি তাদের কাজ এবং
সহকর্মীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে, তাহলে তারা নিজেদের কর্মজীবনে
বেশি প্রেরণা এবং আগ্রহ অনুভব করে। কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে এবং
তাদের উত্সাহিত করতে সাংগঠনিক আচরণ অধ্যয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি
কর্মীদের আস্থাবোধ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি বাড়াতে সহায়তা করে।
৭. সাংস্কৃতিক পরিবর্তন: যত বেশি একটি প্রতিষ্ঠান বৈচিত্র্যময় এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে, ততই কর্মীরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ
নিতে পারবে। সাংগঠনিক আচরণ অধ্যয়ন কর্মীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমি, অভ্যাস এবং আচরণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে, যা প্রতিষ্ঠানে বৈচিত্র্যকে
সফলভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে।
উপসংহার: সাংগঠনিক আচরণ অধ্যয়নের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠানগুলির উন্নয়ন, কর্মী দক্ষতা, নেতৃত্ব এবং সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর মাধ্যমে কর্মীদের মনোভাব ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লক্ষ্য
অর্জন করতে পারে, কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানের
দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য নিশ্চিত করতে পারে।
বিকল্প উত্তর:
সাংগঠনিক আচরণ অধ্যয়নের
গুরুত্ব
সাংগঠনিক আচরণ (Organizational Behavior) অধ্যয়নের
গুরুত্ব বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এটি কেবল প্রতিষ্ঠান
পরিচালনাই নয়, বরং কর্মীদের দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা
এবং সামগ্রিক প্রতিষ্ঠানের সফলতা বাড়াতে অপরিহার্য। নিচে আমি বিস্তারিতভাবে
ব্যাখ্যা করছি:
সাংগঠনিক আচরণ (Organizational Behavior) অধ্যয়নের গুরুত্ব
১. কর্মীদের মনোবিজ্ঞান ও
আচরণ বোঝা: প্রত্যেক কর্মী আলাদা চিন্তাভাবনা, চাহিদা ও আবেগ নিয়ে কাজ করেন। সাংগঠনিক
আচরণ শেখালে ম্যানেজার ও নেতারা কর্মীদের আচরণ ও মনোভাব (attitude) বোঝার দক্ষতা অর্জন করে। এর মাধ্যমে কর্মীদের প্রেরণা (motivation)
বাড়ানো সহজ হয় এবং কাজের প্রতি তাদের উৎসাহ টেকসই হয়।
২. দলগত কাজ (Teamwork) ও
সহযোগিতা বৃদ্ধি: দল (team) গঠন, দলের মধ্যকার ভূমিকা বণ্টন এবং
দলের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন — এগুলো সাংগঠনিক আচরণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভালো দলগত
সহযোগিতা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
৩. দ্বন্দ্ব (Conflict) পরিচালনা
ও সমাধান: একাধিক ব্যক্তি একত্রে কাজ করলে মতবিরোধ বা দ্বন্দ্ব
স্বাভাবিক। সাংগঠনিক আচরণ শেখালে দ্বন্দ্বের কারণ বোঝা ও তা কার্যকরভাবে সমাধান
করার কৌশল শেখা যায়। এটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সুস্থ কর্মপরিবেশ বজায় রাখে এবং
নেতিবাচক প্রভাব কমায়।
৪. নেতৃত্ব উন্নয়ন (Leadership Development): সাংগঠনিক আচরণ
বিভিন্ন ধরণের নেতৃত্বের শৈলী (leadership styles) এবং কীভাবে মানুষকে
নেতৃত্ব দেওয়া যায় তা বিশ্লেষণ করে। এর ফলে ভালো নেতৃত্ব গড়ে উঠে, যা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিভঙ্গি (vision) ও লক্ষ্য (mission)
বাস্তবায়নে সহায়ক হয়।
৫. পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা (Change Management): আজকের দুনিয়ায়
প্রযুক্তি, বাজার ও কৌশলে দ্রুত পরিবর্তন আসে। সাংগঠনিক আচরণ শেখালে পরিবর্তনের
প্রয়োজনীয়তা বোঝা ও কর্মীদের সেই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে সহায়তা করা
যায়। পরিবর্তনের সময় কর্মীদের প্রতিরোধ (resistance) কমিয়ে
প্রতিষ্ঠানে ইতিবাচক রূপান্তর সম্ভব হয়।
৬. কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্টি ও
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: কর্মীদের চাহিদা, প্রত্যাশা ও কাজের সাথে তাদের মানসিক সংযোগ বোঝার মাধ্যমে
তাদের সন্তুষ্টি (job satisfaction) বাড়ানো যায়। সন্তুষ্ট
কর্মী বেশি মনোযোগী, উদ্যমী এবং কম অনুপস্থিত থাকে, ফলে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক সাফল্য বৃদ্ধি পায়।
তাই, একটি সংগঠন যদি সফল ও প্রতিযোগিতামূলক হতে
চায়, তাহলে সাংগঠনিক আচরণ অধ্যয়ন অপরিহার্য।
সার্চ কী: সাংগঠনিক আচরণে উপলব্ধি কি? সাংগঠনিক আচরণের জনক কে? সাংগঠনিক আচরণের ইতিহাস কি? সাংগঠনিক আচরণের চারটি উপাদান
কি কি? সাংগঠনিক আচরণ বই pdf, সাংগঠনিক আচরণের বৈশিষ্ট্য, সাংগঠনিক আচরণের গুরুত্ব আলোচনা, সাংগঠনিক আচরণের লক্ষ্য ও
উদ্দেশ্য, সাংগঠনিক আচরণের মৌলিক উপাদান কি কি, সাংগঠনিক আচরণ কেমন হওয়া
উচিত, সাংগঠনিক আচরণের মডেল সমূহ, সাংগঠনিক আচরণের সীমাবদ্ধতা
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles