বংশগতি মানুষের ব্যক্তিত্বকে
প্রভাবিত করে, পরিবেশ নয়। আপনি একমত? আপনার মতের
পক্ষে যুক্তি দেখান
এটা একটি প্রচলিত বিতর্ক যে বংশগতি (genetics) এবং পরিবেশ (environment) ব্যক্তিত্বের উন্নয়নে কতটা
ভূমিকা রাখে। কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন যে, বংশগতিগত উপাদানগুলি মানুষের ব্যক্তিত্বের জন্য প্রধান কারণ, অন্যদিকে কেউ কেউ পরিবেশগত
উপাদানগুলির গুরুত্বের পক্ষে যুক্তি দেন। আমি মনে করি, ব্যক্তিত্বে বংশগতি এবং পরিবেশ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ, তবে যদি আমাকে একপক্ষকে সমর্থন করতে বলা হয়, তবে আমি বংশগতি এর প্রভাবের পক্ষে যুক্তি দেব।
বংশগতির প্রভাব: বংশগতি (জেনেটিক) হল
সেই বৈশিষ্ট্যগুলি যা আমরা আমাদের পিতামাতার থেকে পাই এবং এই উপাদানগুলি ব্যক্তির
শারীরিক গঠন, মানসিক অবস্থা, এবং আচরণের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা
বারবার দেখেছেন যে, কিছু মানুষের মধ্যে বিশেষ কিছু ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য জেনেটিকভাবে প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ, কিছু কিছু আচরণ এবং মনোভাব প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের মধ্যে থাকে, যা কেবলমাত্র পরিবেশ নয়, আমাদের জিনগত কাঠামোর দ্বারা নির্ধারিত হয়।
যুক্তি ১: গবেষণার ফলাফল: বিভিন্ন
গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, জোড়া সমীক্ষা (twin
studies) এবং গোত্রগত সমীক্ষা (adoptive
studies) দেখায় যে যমজ বা সাঙ্গঠনিক ভাইবোনদের
মধ্যে যাদের একে অপরের সাথে জিনগত সম্পর্ক বেশি, তাদের আচরণ এবং ব্যক্তিত্বের মধ্যে অনেকটা মিল পাওয়া যায়। এমনকি যদি তারা
আলাদা পরিবেশে বড় হয়, তবুও তাদের কিছু মৌলিক আচরণগত বৈশিষ্ট্য অনেকটা একরকম থাকে।
এটি প্রমাণ করে যে, বংশগতি একজন মানুষের আচরণ এবং
ব্যক্তিত্বের প্রধান এক উপাদান হতে পারে।
যুক্তি ২: জিনগত প্রভাবের
প্রমাণ: একটি বিশ্লেষণ এবং গবেষণার ফলাফল দেখিয়েছে যে, বংশগতির মাধ্যমে মানুষের মেজাজ, মানসিকতা এবং সামাজিক আচরণ অনেকটাই প্রভাবিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন ব্যক্তি জিনগতভাবে শান্ত, সহানুভূতিশীল, বা সৃজনশীল হন, তবে তার এই গুণগুলি তার পরিবেশের পরিবর্তনের মধ্যেও টিকে থাকতে পারে। এটাই
বোঝায় যে, কিছু জেনেটিক বৈশিষ্ট্য মানুষের ব্যক্তিত্বের মৌলিক রূপরেখা তৈরি করে।
যুক্তি ৩: ইন্টেলিজেন্স এবং
বংশগতির সম্পর্ক: বুদ্ধিমত্তা বা ইন্টেলিজেন্স (intelligence) একটি জেনেটিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বুদ্ধিমত্তা প্রায় ৫০%-৮০% বংশগত। এর মানে হল যে, বুদ্ধিমত্তার প্রভাব মূলত আমাদের জিনে নিহিত এবং এটি মানুষের চিন্তা, সমস্যা সমাধান এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দৃশ্যমান হয়। ফলে, বুদ্ধিমত্তা, যা এক ধরনের ব্যক্তিত্বের উপাদান, জেনেটিকভাবে নির্ধারিত হতে পারে।
পরিবেশের প্রভাব: তবে, আমি একে মানছি না যে পরিবেশের কোনো ভূমিকা নেই। পরিবেশও মানুষের ব্যক্তিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে, যেমন—পারিবারিক পরিবেশ, শিক্ষা, এবং সামাজিক অভিজ্ঞতা। কিন্তু বংশগতির ভূমিকা আরও
গভীর এবং মৌলিক হতে পারে। কিছু কিছু বয়সে, পারিপার্শ্বিক চাপের কারণে, মানুষের আচরণে কিছু পরিবর্তন
আসতে পারে, তবে জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলো অধিকাংশ সময় বেশি স্থির এবং অপরিবর্তনীয় থাকে।
বিকল্প উত্তর:
বংশগতি মানুষের ব্যক্তিত্বকে
প্রভাবিত করে, পরিবেশ নয়। আপনি একমত? আপনার মতের
পক্ষে যুক্তি দেখান
"বংশগতি (genetics) একাই মানুষের ব্যক্তিত্ব গঠন করে, পরিবেশ (environment)
কোনো প্রভাব ফেলে না।" বরং, বর্তমান
মনোবিজ্ঞান ও আচরণগত গবেষণা (behavioral science) বলছে:
বংশগতি এবং পরিবেশ — উভয়ই মিলে ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে। এখন
আমি আমার মতের পক্ষে বিশ্লেষণ ও যুক্তি দিচ্ছি:
যুক্তিসমৃদ্ধ ব্যাখ্যা:
বংশগতি এবং পরিবেশ উভয়ই ব্যক্তিত্বে ভূমিকা রাখে
১. বংশগতির (Genetics) প্রভাব
- বৈজ্ঞানিক গবেষণা: যমজদের (Twins) উপর
গবেষণা দেখিয়েছে, একই জেনেটিক কোড থাকা সত্ত্বেও
(বিশেষ করে monozygotic twins) যদি আলাদা পরিবেশে বড়
হয়, তাদের ব্যক্তিত্বে অনেক মিল থাকে।
তাই জিনগত প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। - বিশেষ বৈশিষ্ট্য: সংবেদনশীলতা, আত্মবিশ্বাস,
মেজাজ (temperament), উদ্বেগপ্রবণতা (anxiety
tendency) ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য অনেকাংশে জেনেটিক উপাদানের উপর
নির্ভর করে।
- যুক্তি: বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রায় ৪০%–৬০%
পর্যন্ত ব্যক্তিত্বের পার্থক্য বংশগতির কারণে হয় (Bouchard, 1990)।
২. পরিবেশের (Environment) প্রভাব
- শিক্ষা ও সমাজ: একটি শিশু যদি সহানুভূতিশীল, উৎসাহব্যঞ্জক
পরিবেশে বড় হয়, তার ব্যক্তিত্ব সাধারণত ইতিবাচক হয় —
যদিও তার জেনেটিক প্রবণতা যা-ই হোক।
- সংস্কৃতি ও জীবনপদ্ধতি: এক দেশ বা সংস্কৃতির মানুষের
সাথে অন্য দেশের মানুষের ব্যক্তিত্বগত বৈশিষ্ট্য আলাদা হয় — যদিও তাদের
জিনগত পার্থক্য খুব কম।
- জীবন অভিজ্ঞতা: একটি মানুষ শৈশবে যদি কোনো বড়
দুর্ঘটনা বা সাফল্যের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়, সেটি তার ব্যক্তিত্বে
স্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারে — যা শুধুমাত্র জিন ব্যাখ্যা করতে পারে না।
- যুক্তি: মাইকেল ল্যাম্ব (Michael Lamb)-এর গবেষণা অনুযায়ী, শিশুর লালন-পালনের ধরন (parenting
style) তার আত্মমর্যাদা (self-esteem) এবং
সামাজিক দক্ষতার (social competence) উপর গভীর প্রভাব
ফেলে।
৩. মিলিত মডেল (Interactionist Model): বর্তমান বৈজ্ঞানিক
মতামত: ব্যক্তিত্বের বিকাশে বংশগতি এবং পরিবেশ — দুটোই একসঙ্গে কাজ করে। জিন আমাদের সম্ভাবনা
(potential) তৈরি করে, আর পরিবেশ সেই সম্ভাবনাকে বিকশিত বা
সীমাবদ্ধ করে।
- উদাহরণ:
- একজন শিশু স্বভাবতই সংবেদনশীল (genetic temperament) হতে পারে, কিন্তু যদি তাকে সহানুভূতিশীল
পরিবেশে লালন করা হয়, সে আত্মবিশ্বাসী ও সামাজিকভাবে
সক্ষম হতে পারে।
- বিপরীতভাবে, কঠিন পরিবেশ একটি সহজ-প্রাণবন্ত (easygoing)
শিশুকেও চাপে ভেঙে দিতে পারে।
সারসংক্ষেপ (সংক্ষেপে)
দিক |
ভূমিকা |
বংশগতি |
ব্যক্তিত্বের
মূলে কিছু বৈশিষ্ট্যের জৈবিক ভিত্তি গঠন করে |
পরিবেশ |
সেই
বৈশিষ্ট্যগুলোর বিকাশ, পরিবর্তন বা সংহতিতে ভূমিকা রাখে |
অতএব, কেবলমাত্র বংশগতিকে ব্যক্তিত্বের একমাত্র
কারণ বলা ভুল; পরিবেশও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার: এমনকি পরিবেশ একজন মানুষের কিছু আচরণ বা সিদ্ধান্তে পরিবর্তন
আনতে সক্ষম, তবে ব্যক্তিত্বের মৌলিক এবং দীর্ঘস্থায়ী বৈশিষ্ট্য অনেকাংশেই বংশগতির মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। বিজ্ঞান
এবং গবেষণার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, মানুষের কিছু মৌলিক আচরণগত
বৈশিষ্ট্য জেনেটিকভাবে নির্ধারিত এবং এগুলি প্রাকৃতিকভাবেই তার
মধ্যে উপস্থিত থাকে। সুতরাং, আমি মনে করি, বংশগতি মানুষের ব্যক্তিত্বে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে।
সার্চ কী: সাংগঠনিক আচরণ বই pdf, সাংগঠনিক আচরণের বৈশিষ্ট্য, সাংগঠনিক আচরণের লক্ষ্য
ও উদ্দেশ্য, সাংগঠনিক আচরণের মডেল সমূহ, সাংগঠনিক আচরণের গুরুত্ব আলোচনা, সাংগঠনিক আচরণ
কেমন হওয়া উচিত, সাংগঠনিক আচরণের মৌলিক উপাদান কি কি,
সাংগঠনিক আচরণের জনক কে, শিশুর বিকাশে বংশগতি
ও পরিবেশের প্রভাব আলোচনা কর, শিশুর শিক্ষায় বংশগতি ও
পরিবেশের ভূমিকা, শিশুর বিকাশে পরিবেশের ভূমিকা আলোচনা
করো।, শিশুর বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব mcq, জীবের বংশগতি ও বিবর্তন pdf, বংশগতির
প্রভাব বুঝিয়ে লেখ, বংশগতি ও পরিবেশ mcq, বংশগতি নির্ধারণে ক্রোমোজোমের ভূমিকা, ব্যক্তিত্ব
বৈশিষ্ট্য, ভালো ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য, ব্যক্তিত্ব pdf, মানুষের
ব্যক্তিত্ব কিভাবে তার কর্মজীবনকে প্রভাবিত করে, ব্যক্তিত্ব
কত প্রকার ও কি কি, ব্যক্তিত্ব সংজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব বিকাশ pdf, ব্যক্তিত্ব
বিকাশের উপাদান
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles.