পদ মূল্যায়ন কাকে বলে, পদ মূল্যায়নের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করুন

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0



পদ মূল্যায়ন কাকে বলে, পদ মূল্যায়নের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করুন।

পদ মূল্যায়ন কাকে বলে?

পদ মূল্যায়ন (Job Evaluation) হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদ বা চাকরির আপেক্ষিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো প্রতিটি পদের দায়িত্ব, জটিলতা, প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অবদান বিবেচনায় নিয়ে ন্যায্য ও তুলনামূলক পারিশ্রমিক কাঠামো তৈরি করাএর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান কর্মীদের মধ্যে পারিশ্রমিকের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারে এবং অসন্তোষ ও বৈষম্য কমাতে পারে।

 

পদ মূল্যায়নের পদ্ধতিসমূহ:

পদ মূল্যায়নের পদ্ধতিগুলো প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় –
১. অপরিকল্পিত বা অ-বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি (Non-analytical methods)
২. পরিকল্পিত বা বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি (Analytical methods)

 

১. অপরিকল্পিত বা অ-বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি:

এই পদ্ধতিতে প্রতিটি পদের সামগ্রিক গুরুত্ব বা মান বিচার করা হয়। এতে বিস্তারিত দায়িত্ব বা দক্ষতার পৃথক বিশ্লেষণ করা হয় না।

 

ক) র‍্যাংকিং পদ্ধতি (Ranking Method):

  • সব পদের গুরুত্ব ও দায়িত্ব বিবেচনায় একটিকে অপরটির সাথে তুলনা করে একটি ক্রম (র‌্যাংক) নির্ধারণ করা হয়।
  • সহজ ও খরচ কম, তবে বড় প্রতিষ্ঠানে এটি অকার্যকর হতে পারে।

 

খ) গ্রেডিং বা শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতি (Classification Method):

  • প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান বিভিন্ন পদের জন্য একাধিক গ্রেড তৈরি করা হয় (যেমন: Grade A, B, C)
  • প্রতিটি গ্রেডের জন্য কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয় এবং পদসমূহকে সেই অনুযায়ী শ্রেণীভুক্ত করা হয়।

 

২. পরিকল্পিত বা বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি:

এই পদ্ধতিতে প্রতিটি পদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, ঝুঁকি, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ইত্যাদি উপাদান বিশ্লেষণ করে পদ মূল্যায়ন করা হয়।

 

ক) পয়েন্ট ফ্যাক্টর পদ্ধতি (Point Factor Method):

  • বিভিন্ন মূল্যায়ন উপাদান (যেমন: শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব, শারীরিক/মানসিক পরিশ্রম ইত্যাদি) নির্ধারণ করে প্রতিটির জন্য নির্দিষ্ট পয়েন্ট বরাদ্দ করা হয়।
  • সব উপাদানের মোট পয়েন্ট যোগ করে পদের মান নির্ধারণ করা হয়।
  • সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও জনপ্রিয় পদ্ধতি।

 

খ) ফ্যাক্টর কম্পারেশন পদ্ধতি (Factor Comparison Method):

  • প্রতিটি পদকে নির্দিষ্ট কিছু ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করা হয় (যেমন: দক্ষতা, দায়িত্ব, ঝুঁকি) এবং প্রতিটি ফ্যাক্টরের জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়।
  • পদ্ধতিটি জটিল কিন্তু মজুরি কাঠামো নির্ধারণে খুব কার্যকর।

 

উপসংহার: পদ মূল্যায়ন একটি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কর্মীদের মেধা, দক্ষতা ও দায়িত্ব অনুযায়ী ন্যায্য বেতন নির্ধারণে সহায়তা করে। উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান কর্মী অসন্তোষ কমাতে, নৈতিকতা বাড়াতে এবং সংগঠনের সামগ্রিক কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে।

 

বিকল্প উত্তর:

পদ মূল্যায়ন কাকে বলে, পদ মূল্যায়নের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করুন

পদ মূল্যায়ন কাকে বলে: পদ মূল্যায়ন (Job Evaluation) হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদের আপেক্ষিক গুরুত্বদায়িত্বও কাজের প্রকৃতি বিবেচনা করে তাদের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিভিন্ন পদের জন্য উপযুক্ত এবং ন্যায্য বেতন কাঠামো নির্ধারণ করাযাতে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি না হয় এবং কাজের গুণমান বজায় থাকে।

 

এটি একটি বৈজ্ঞানিক ও পদ্ধতিগত প্রক্রিয়াযার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পদের কাজদায়িত্বজটিলতাশারীরিক ও মানসিক শ্রম ইত্যাদি বিষয় বিশ্লেষণ করে পদগুলোর মধ্যে তুলনামূলক গুরুত্ব নির্ধারণ করা হয়। এটি ব্যক্তির পারফরমেন্স মূল্যায়ন নয়বরং পদের মূল্যায়ন।


পদ মূল্যায়নের পদ্ধতিসমূহ (Methods of Job Evaluation):

পদ মূল্যায়নের প্রধানত দুটি পদ্ধতি রয়েছে:

১. অপ্রাতিষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতি (Non-Analytical Methods):

এই পদ্ধতিগুলো অপেক্ষাকৃত সহজ এবং দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়। তবে এগুলোর মধ্যে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ সীমিত।

 

ক. র‍্যাংকিং পদ্ধতি (Ranking Method):

  • প্রতিটি পদকে গুরুত্ব বা দায়িত্ব অনুসারে একে অপরের সঙ্গে তুলনা করে একটি ক্রমানুসারে সাজানো হয়।
  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রথমে, এরপর অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পরে আসে।
  • এই পদ্ধতিতে সময় কম লাগে, তবে বিশ্লেষণমূলক নয় বলে নির্ভুলতা কম হতে পারে।

 

খ. শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি (Classification or Grading Method):

  • এই পদ্ধতিতে পদের ধরন ও দায়িত্ব অনুসারে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণি বা গ্রেড তৈরি করা হয়, যেমন: উচ্চ, মধ্যম, নিম্ন।
  • প্রতিটি পদকে তার কাজের ধরন ও দায়িত্ব অনুযায়ী কোনো একটি গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
  • সরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

 

২. প্রাতিষ্ঠানিক বা বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি (Analytical Methods):

এই পদ্ধতিগুলো অধিকতর বৈজ্ঞানিক এবং নির্ভরযোগ্য। এতে কাজের বিভিন্ন উপাদান বিশ্লেষণ করে মূল্যায়ন করা হয়।

 

ক. পয়েন্ট রেটিং পদ্ধতি (Point Rating Method):

  • পদে ব্যবহৃত দক্ষতা, দায়িত্ব, পরিশ্রম, কাজের পরিবেশ ইত্যাদি মানদণ্ড অনুযায়ী পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়।
  • প্রতিটি পদের উপাদান অনুযায়ী নির্দিষ্ট পয়েন্ট বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং শেষে মোট পয়েন্টের ভিত্তিতে পদের মান নির্ধারণ করা হয়।
  • এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নির্ভুল পদ্ধতিগুলোর একটি।

 

খ. ফ্যাক্টর কম্পারেশন পদ্ধতি (Factor Comparison Method):

  • এই পদ্ধতিতে কিছু নির্দিষ্ট ফ্যাক্টর বা উপাদান যেমন: দক্ষতা, দায়িত্ব, কাজের অবস্থান, মানসিক চাপ ইত্যাদি বিবেচনা করে প্রতিটি পদের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
  • প্রতিটি উপাদানের জন্য নির্দিষ্ট আর্থিক মূল্য বরাদ্দ করা হয়।
  • এটি বিশ্লেষণমূলক হলেও জটিল এবং সময়সাপেক্ষ।

 

উপসংহার: পদ মূল্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া, যা প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠু ও ন্যায্য বেতন কাঠামো তৈরি করতে সাহায্য করে। এটি কর্মীদের মধ্যে ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা এবং কর্মউদ্দীপনা বৃদ্ধি করে। তবে প্রতিটি পদ্ধতির নিজস্ব সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা আছে, তাই প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ও কাঠামো অনুযায়ী উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নেওয়া উচিত।



সার্চ কী: পদ বিশ্লেষণের ধাপ কয়টি ও কি কি, কার্য মূল্যায়ন কাকে বলে, পদ বিশ্লেষণ কি, কর্মীর দক্ষতা উন্নয়ন পদ্ধতি, কার্য বর্ণনা ও কার্য নির্দিষ্টকরণের মধ্যে পার্থক্য, পদ মূল্যায়ন কি, পেশা পরিকল্পনা কাকে বলে, তুল্য মূল্যায়ন বর্ণনা কর, পদ বিশ্লেষণের ধাপ কয়টি ও কি কি, কার্য মূল্যায়ন কাকে বলে, কাজের মূল্যায়ন, কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন, কার্য বর্ণনা ও কার্য নির্দিষ্টকরণের মধ্যে পার্থক্য, কর্মীর দক্ষতা উন্নয়ন পদ্ধতি, কর্মকালীন প্রশিক্ষণ কি, তুল্য মূল্যায়ন বর্ণনা কর


ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top