শিশুকে বদ নজরের হাত
থেকে বাচানোর দোয়া ও অন্যান্য বিষয়
শিশুরা হলো আল্লাহর
প্রদত্ত অমূল্য সম্পদ। তাদের হাসি, আনন্দ এবং সুস্থতা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড়
আনন্দের উৎস। কিন্তু এই বয়সেই শিশুরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং অপ্রাকৃতিক সমস্যার
মুখোমুখি হয়। বিশেষত, “বদ নজর” বা “নজর দোষ” শিশুদের জন্য
একটি গুরুতর বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইসলামী ধ্যান-ধারণা এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী,
বিশেষ কিছু দোয়া, নিয়মনীতিমালা এবং সাবধানতা
অবলম্বন করে শিশুকে বদ নজরের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
১. বদ নজরের ধারণা
বদ নজর বলতে বোঝায়
অন্যের চোখের অজান্তে বা হিংসা বা ঈর্ষার কারণে শিশুর ওপর অপ্রত্যাশিত ক্ষতি বা
অসুখ হওয়া। এটি শুধুমাত্র বিশ্বাসের বিষয় নয়; বহু গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ বা হঠাৎ প্রশংসা কখনও কখনও তাদের আচরণ বা
শারীরিক অবস্থা প্রভাবিত করতে পারে। ইসলামে বদ নজরকে একটি বাস্তব বিষয় হিসেবে ধরা
হয়, এবং এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া ও সুরক্ষা ব্যবস্থার
উল্লেখ আছে।
২. শিশুর জন্য বদ নজর
প্রতিরোধের ইসলামী দোয়া
শিশুকে বদ নজরের হাত
থেকে বাঁচাতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া রয়েছে, যা মুমিন মা-বাবা নিয়মিত পড়তে
পারেন:
- সুরা ফালাক ও সুরা নাস – এই
দুটি সুরা শিশুর ওপর পড়ালে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়।
- প্রতিদিন শিশুকে ঘুমানোর আগে বা সকালে এই
দু’টি সুরা পড়লে তার ক্ষতি রোধে সাহায্য হয়।
- আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারা, আয়াত
২৫৫) – এটি দুনিয়ার সব ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে
সুপরিচিত। শিশুর আশেপাশে পড়লে তাকে দানব, বদ নজর ও
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষা দেয়।
- বিশেষ দোয়া – নবী
করিম (সা.) শিশুকে রক্ষা করার জন্য যা দোয়া করতেন, তা
হলো:
“أُعِيذُكَ
بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ
مِن كُلِّ شَيْطَانٍ
وَ هَامَّةٍ وَ مِن
كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ” অর্থাৎ: “আমি তোমাকে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ শব্দ
দ্বারা রক্ষা করি, প্রতিটি শয়তান, ক্ষতিকারক
প্রাণী ও ক্ষতিকারক চোখ থেকে।”
৩. শিশুর আশেপাশের
পরিবেশ সচেতনতা
শিশুর সুরক্ষা
শুধুমাত্র দোয়াতে নয়; তাদের আশেপাশের পরিবেশেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
- অতিরিক্ত প্রশংসা সীমিত করুন: শিশুর কোনো
অর্জন বা সৌন্দর্যের অতিরিক্ত প্রশংসা হঠাৎ করে নজরের হাত বাড়াতে পারে।
- খোলা পরিবেশে সাবধানতা: শিশুরা যেখানে
বেশি মানুষ সমাগম হয়, সেখানে বিশেষভাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
- পরিচিত ও অচেনা ব্যক্তির প্রতি সতর্কতা: অচেনা ব্যক্তি
যদি শিশুকে অতিরিক্ত প্রশংসা করে বা অস্বাভাবিক মনোযোগ দেয়, তাহলে
সতর্ক থাকা জরুরি।
৪. ঘরের সুরক্ষা
ব্যবস্থা
ঘরে শিশুর নিরাপত্তা
বাড়াতে কয়েকটি ছোট কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়:
- নেজর দোষ প্রতিরোধী লক বা প্রতীক ব্যবহার না করা: অনেক পরিবারের
অভ্যাসে নীল বা লাল সুতো, ছোট নেকলেস বা রিং শিশুর উপর ঝুলিয়ে
রাখেন। এগুলো কুসংস্কর। এটি ইসলামী সহিহ বিশ্বাস অনুযায়ী বদ নজর থেকে রক্ষা করে না।
- পরিচ্ছন্ন ও সুরক্ষিত পরিবেশ: ঘরের স্বাস্থ্য
ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা শিশুকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে এবং প্রতিকূল প্রভাব
কমায়।
- আলহামদুলিল্লাহ এবং দোয়ার অভ্যাস: শিশুর কাছে
আল্লাহর দোয়া ও কৃতজ্ঞতার শিক্ষা দিয়ে মানসিক সুরক্ষা দেওয়া যায়।
- তাবিজ ব্যবহার না করা: তাবিজ
ব্যবহার করা শিরক ও কবীরা গুনাহ। তাবিজ ব্যবহার না করে
শিশুদের রক্ষা করার সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর উপায় হলো আল্লাহর উপর ভরসা,
নিয়মিত দোয়া, কুরআনিক আয়াত পাঠ এবং সচেতন
মনোভাব। এটি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকে
সুরক্ষিত রাখে এবং ইসলামের নিয়মের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।
৫. মা-বাবার মনোযোগ
শিশুর প্রতি মা-বাবার
মনোযোগ ও স্নেহশীল আচরণ তার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। দুষ্টু বা
হিংসুক নজর থেকে রক্ষা করতে সন্তানকে নিয়মিত ভালোবাসা, শিক্ষা এবং
সংযমের মাধ্যমে সুরক্ষা দিতে হয়।
- ভালো অভ্যাস শেখানো: শিশুকে সৎ আচরণ, দোয়া
এবং আল্লাহর উপর ভরসা করার শিক্ষা দেওয়া।
- পরিপাটি জীবনযাপন: শিশুর ঘুম, খাওয়া-দাওয়া
এবং খেলাধুলার সময় সূচিপত্র অনুসরণ করা।
- মানসিক সুরক্ষা: শিশুর মানসিক চাপ
কমানোর জন্য পরিবারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা।
৬. সামাজিক সচেতনতা
শিশুর সুরক্ষা শুধু
পরিবারের মধ্যে সীমিত নয়; সমাজে সচেতনতা ও সচেতন মানুষ দরকার।
- সতর্ক নজরদারি: শিশুদের জন্য স্কুল, খেলার
মাঠ এবং পার্কে দায়িত্বশীল এবং সতর্ক ব্যক্তির উপস্থিতি।
- পরিচিতি যাচাই: শিশুকে অচেনা লোকের
সঙ্গে একা না রাখার নিয়ম।
- সচেতনতা প্রচার: পরিবার ও সমাজকে বদ নজর
থেকে রক্ষা করার বিষয়ে সচেতন করা।
৭. উপসংহার: শিশুরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে
মূল্যবান সম্পদ। তাদের বদ নজরের হাত থেকে সুরক্ষা দেওয়া শুধু দায়িত্ব নয়, এটি ইসলামের
নির্দেশিত কর্তব্য। নিয়মিত দোয়া, নিরাপদ পরিবেশ, মা-বাবার মনোযোগ এবং সামাজিক সচেতনতা শিশুদের সুস্থ ও নিরাপদ রাখে।
শিশুর সুরক্ষার
ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস এবং নিয়মিত দোয়া।
প্রতিদিন এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করলে শিশুর জীবন হয়ে ওঠে শান্তিপূর্ণ, সুস্থ এবং
আনন্দময়।
দোয়া করা যাক: “হে আল্লাহ,
আমাদের সন্তানদের সব দোষ, হিংসা ও ক্ষতিকর
চোখের হাত থেকে রক্ষা করুন। তাদের সুস্থ, সুখী এবং আল্লাহভরা
জীবন দিন। আমীন।”
শিশুকে বদ নজরের হাত
থেকে বাঁচানোর দোয়া, শিশুর জন্য নজর দোষ প্রতিরোধ, শিশুর
সুরক্ষা দোয়া, বদ নজর থেকে শিশু রক্ষা, শিশু সুস্থ রাখার দোয়া, নবী করিমের দোয়া শিশুর জন্য,
সুরা ফালাক সুরা নাস দোয়া, আয়াতুল কুরসি শিশুর
জন্য, শিশুর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, বদ
নজরের হাত থেকে শিশু রক্ষা, শিশুর জন্য ইসলামী দোয়া, মা-বাবার জন্য শিশুর সুরক্ষা কৌশল, শিশুর জন্য
নেগেটিভ এনার্জি প্রতিরোধ, শিশু সুস্থ রাখা ইসলামী শিক্ষা,
নজর দোষ প্রতিরোধের উপায়, শিশুর জন্য মানসিক
সুরক্ষা, শিশুর নিরাপত্তা পরামর্শ, পরিবারে
শিশুর সুরক্ষা, শিশুর জন্য হিফাজত দোয়া, ইসলামী কুরআনিক দোয়া শিশু রক্ষা
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles