ভাইরাল জ্বর: কারণ, লক্ষণ,
চিকিৎসা ও প্রতিরোধের সম্পূর্ণ গাইড
ভাইরাল জ্বর কী?
ভাইরাল জ্বর বলতে
বোঝায় শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট জ্বর। এটি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য
সমস্যা যা প্রায় সবাই জীবনে একবার হলেও সম্মুখীন হন। ভাইরাসগুলি আমাদের দেহে
প্রবেশ করে সংক্রমণ সৃষ্টি করে, যার ফলে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং
বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। ভাইরাল জ্বর সাধারণত সর্দি, কাশি,
গলাব্যথা, স্নায়ুবিষয়ক ব্যথা ও ক্লান্তি
ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত থাকে।
ভাইরাসের ধরন ও
সংক্রমণের কারণ
ভাইরাল জ্বর সাধারণত
বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়, যেমন:
- ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (সাধারণ সর্দি-জ্বর)
- ডেঙ্গু ভাইরাস (ডেঙ্গু জ্বর)
- চিকুনগুনিয়া ভাইরাস
- করোনা ভাইরাস (যেমন COVID-19)
- রোটা ভাইরাস (শিশুদের ডায়রিয়ার জন্য)
- নিউমোনিয়া ভাইরাস ইত্যাদি
ভাইরাস সাধারণত
বাতাসের মাধ্যমে, আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গেওড়ার মাধ্যমে, বা
দূষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায়।
ভাইরাল জ্বরের সাধারণ
লক্ষণ
ভাইরাল জ্বরের লক্ষণ
অনেক ধরনের হতে পারে, তবে সাধারণত নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখা যায়:
১. উচ্চ তাপমাত্রা
(জ্বর) হঠাৎ বা ধীরে ধীরে শরীরের তাপমাত্রা ১০০°F (৩৭.৮°C) বা তার বেশি বৃদ্ধি পায়।
২. শরীর ব্যথা ও
ক্লান্তি মাংসপেশি ও জয়েন্টে ব্যথা, শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত অনুভব করা।
৩. শ্বাসনালী
সংক্রান্ত সমস্যা সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, নাক
বন্ধ বা জল পড়া।
৪. হঠাৎ মাথা
ব্যথা প্রধানত মস্তিষ্ক ও নাকের আশেপাশের অংশে ব্যথা অনুভূত হয়।
৫. হজমের সমস্যা
কিছু ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হতে পারে।
৬. অন্যান্য লক্ষণ
ঠাণ্ডা লাগা, ঘাম হওয়া, চোখ লাল হওয়া, গলাব্যথা।
ভাইরাল জ্বরের
প্রকারভেদ
- সাধারণ ভাইরাল জ্বর: যেমন
সর্দি-কাশির সঙ্গে হওয়া জ্বর।
- ডেঙ্গু জ্বর: যেখানে
রক্তক্ষরণ, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুসকুড়ি দেখা দিতে
পারে।
- চিকুনগুনিয়া জ্বর: জয়েন্টে
প্রচণ্ড ব্যথার সঙ্গে জ্বর।
- করোনা ভাইরাস সংক্রমণ: যার
মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ভাইরাল জ্বরের
চিকিৎসা ও যত্ন
ভাইরাল জ্বরের জন্য
কোন নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক নেই কারণ এটি ব্যাকটেরিয়া নয়, ভাইরাসের
সংক্রমণ। তাই চিকিৎসা মূলত উপসর্গ নিরাময়ক এবং রোগীর শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ানোর উপর নির্ভর করে।
ঘরোয়া যত্ন:
১. পর্যাপ্ত
বিশ্রাম শরীরকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম দিন যাতে প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার হয়।
২. পানি ও তরল
জাতীয় পানীয় গ্রহণ বেশি করে পানি, লেবুর শরবত, তাজা
ফলের রস, নারকেল পানি পান করুন। এতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে।
৩. প্রয়োজনে জ্বর
কমানোর ওষুধ প্যারাসিটামল (Paracetamol) জাতীয় ওষুধ দিয়ে জ্বর কমানো
যেতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ ব্যবহার করবেন না।
৪. হালকা ও
পুষ্টিকর খাবার দেহ দুর্বল থাকে, তাই সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার যেমন দই,
সেদ্ধ খাবার, হালকা তরকারি ইত্যাদি খাওয়া
উচিত।
৫. শরীরের
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ হালকা গরম পানি দিয়ে সেঁক দেওয়া বা ঠাণ্ডা পট্টি ব্যবহার
করতে পারেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ
নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা:
- জ্বর ৩ দিন বা তার বেশি স্থায়ী হলে
- জ্বর খুব বেশি উচ্চ (১০৩°F বা তার বেশি) হলে
- শ্বাসকষ্ট, তীব্র মাথাব্যথা, অজ্ঞান হওয়া বা অন্য কোন গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে
- ডেঙ্গু বা অন্য গুরুতর ভাইরাল রোগের সম্ভাবনা থাকলে
ভাইরাল জ্বর প্রতিরোধ
ও সতর্কতা
- নিয়মিত হাত ধোয়া ও জীবাণুমুক্ত রাখা
- জনসমাগম এড়িয়ে চলা, বিশেষ করে যখন সংক্রমণ বেশি
থাকে
- ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা
- সঠিক ও সম্পূর্ণ টিকা গ্রহণ (যদি সংশ্লিষ্ট ভাইরাসের
জন্য টিকা থাকে)
- আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা এবং মাস্ক
পরিধান করা
কখন ডাক্তারের
সাহায্য নেবেন?
- জ্বর ৩-৪ দিন ধরে কমছে না
- জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা ঘন ঘন কাশি
দেখা দিলে
- বাচ্চা বা বয়স্ক ব্যক্তির জ্বর গুরুতর হলে
- শরীরে র্যাশ, রক্তক্ষরণ বা অন্য কোন অস্বাভাবিক
লক্ষণ দেখা দিলে
উপসংহার: ভাইরাল জ্বর সাধারণত
স্বাভাবিক শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে কয়েকদিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। তবে, সতর্কতা
অবলম্বন করা জরুরি কারণ কিছু ভাইরাস মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক
বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে ভাইরাল
জ্বর থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব।
সার্চ কী: ভাইরাল জ্বর, ভাইরাল জ্বরের লক্ষণ, ভাইরাল জ্বরের
কারণ, ভাইরাল জ্বরের চিকিৎসা, ভাইরাল
জ্বরের ঘরোয়া উপায়, ভাইরাল জ্বর থেকে দ্রুত আরোগ্য,
ভাইরাল জ্বরের প্রতিরোধ, ভাইরাল জ্বর কি,
ভাইরাল জ্বর কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন, ভাইরাল
জ্বরের জন্য কী খাবেন, ভাইরাল জ্বরের ঝুঁকি, ভাইরাল জ্বর কি সংক্রামক, ভাইরাল জ্বর ও জ্বর কমানোর
টিপস, ভাইরাল জ্বরের সময় কী করবেন, ভাইরাল
জ্বরের সতর্কতা।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles