গর্ভবতী অবস্থায় পায়ে পানি আসা এবং পা ফুলে যাওয়া

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0



গর্ভবতী অবস্থায় পায়ে পানি আসা এবং পা ফুলে যাওয়া

 

গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা (পা ফুলে যাওয়া) কী?

গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা বা পা ফুলে যাওয়া বলতে বোঝায় পায়ের নখ, গোড়ালি, পায়ের পাতা বা গোড়ালির চারপাশে অতিরিক্ত তরল জমে ফোলা হওয়া। মেডিক্যাল টার্মে এটাকে বলা হয় এডিমা (Edema)
গর্ভাবস্থার শেষ দিকে বা বিশেষ করে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলাদের এই সমস্যা দেখা দেয়।

 

কেন গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসে?

১. শরীরের তরল বৃদ্ধি: গর্ভাবস্থায় শরীরের রক্ত ও তরলের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়, যা নবজাতকের বিকাশের জন্য জরুরি। এই অতিরিক্ত তরল শরীরের টিস্যুতে জমে ফোলাভাব সৃষ্টি করে।

২. রক্ত সঞ্চালনে পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় প্রসারিত জরায়ু (uterus) পেছনের বড় শিরা (ভেনা কেভা) চাপ দেয়, যার ফলে রক্ত পায়ের দিকে সঠিকভাবে ফিরতে পারে না। রক্তের সঞ্চালন ধীরগতি হওয়ায় পায়ের টিস্যুতে তরল জমে ফোলা হয়।

৩. হরমোনের প্রভাব: গর্ভাবস্থার সময় হরমোন (বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন) শ্বাসনালীর নালী ও রক্তনালীর দেওয়ালে প্রভাব ফেলে, যার ফলে শরীর তরল ধরে রাখে।

৪. লবণের অতিরিক্ত সেবন: খাবারে অতিরিক্ত লবণ (সোডিয়াম) গ্রহণ করলে শরীরের কোষগুলো তরল ধরে রাখে, ফলে ফোলা বৃদ্ধি পায়।

৫. দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকা: দীর্ঘসময় ধরে এক অবস্থানে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ের রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, তরল জমা হয়।

৬. অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি: গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি পেলে পায়ের উপর চাপ বাড়ে, যা ফোলাভাব বাড়ায়।

 

গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসার লক্ষণসমূহ

  • পায়ের গোড়ালি, পায়ের পাতা ও আঙুল ফুলে যাওয়া
  • জুতো বা মোজা চাপ দিলে চিহ্ন পড়ে যাওয়া
  • পায়ে ভারী ভাব ও ব্যথা
  • ত্বক টানটান হয়ে যাওয়া এবং স্পর্শে কোমলতা কমে যাওয়া
  • সকালে তুলনায় বিকেলবেলা বেশি ফোলা
  • গর্ভবতী মহিলার হাত, মুখ বা চোখের চারপাশেও ফোলা দেখা দিতে পারে (যা কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর লক্ষণ হতে পারে)

 

কখন গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা ঝুঁকিপূর্ণ?

সাধারণত গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা স্বাভাবিক হলেও নিচের ক্ষেত্রে তা গুরুতর অবস্থার লক্ষণ হতে পারে:

  • পায়ে হঠাৎ ও দ্রুত ফোলা
  • পায়ের একটি পাশে বেশি ফোলা এবং সঙ্গে ব্যথা, লালচে ভাব বা গরম লাগা
  • চোখ, মুখ, হাতের অতিরিক্ত ফোলা
  • মাথা ভারি হওয়া, চোখ ঝাপসা পড়া, চাপে পড়া
  • উচ্চ রক্তচাপ (প্রি-ইক্ল্যাম্পসিয়া) এর লক্ষণ
  • বুক ধড়ফড়ানো বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করা

এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

 

গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা কমানোর উপায়

১. পা উঁচু করে বিশ্রাম নিন: দিনে কয়েকবার পা একটু উঁচু করে (যেমন পিলো বা বালিশের উপর রেখে) বিশ্রাম নিন। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং তরল কম জমতে দেয়।

 

২. সঠিক মোজা ও জুতো ব্যবহার: অতি শক্ত বা আঁটসাঁট মোজা এবং জুতো পরা এড়িয়ে চলুন। আরামদায়ক ও ঢিলা জুতো পরলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়।

 

৩. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম: হাঁটাহাটি, পায়ের পেশি টানা-ছোঁড়া (stretching) করুন। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে মাঝে মাঝে উঠে হাঁটুন।

 

৪. পর্যাপ্ত পানি পান করুন: প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন। পানি পান করলে শরীরের অতিরিক্ত লবণ বের হতে সাহায্য করে।

 

৫. লবণের পরিমাণ কমান: খাবারে লবণ কম ব্যবহার করুন। লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে, যা ফোলা বাড়ায়।

 

৬. চাপযুক্ত বসার পদ্ধতি পরিবর্তন: দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে পায়ে চাপে কমানো পজিশন পরিবর্তন করুন, যেমন পায়ের নিচে ছোট বালিশ দিতে পারেন।

 

৭. কম্প্রেশন স্টকিংস ব্যবহার: গর্ভকালীন স্টকিংস বা কম্প্রেশন স্টকিংস পরলে পায়ের রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং ফোলা কমে।

 

৮. ঠান্ডা সেঁক: গরম লাগলে ঠান্ডা তোয়ালে বা আইস প্যাক পায়ের গোড়ালি বা ফুলে যাওয়া স্থানে দিতে পারেন।

 

গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসার চিকিৎসা

  • হালকা ফোলাভাব সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
  • তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে ডায়ুরেটিক (মূত্রবর্ধক) ঔষধ দেয়া হতে পারে, কিন্তু গর্ভবতীদের এ ধরনের ঔষধ শুধুমাত্র চিকিৎসকের নির্দেশে নেওয়া উচিত।
  • প্রি-ইক্ল্যাম্পসিয়া বা ডিপ ভেন থ্রোম্বোসিস (DVT) এর মতো গুরুতর অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা প্রয়োজন।

 

গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা থেকে সতর্ক থাকার কারণ

১. প্রি-ইক্ল্যাম্পসিয়া: এটি গর্ভাবস্থার একটি জটিলতা যেখানে উচ্চ রক্তচাপ এবং পায়ে/মুখে ফোলা দেখা যায়। এটি মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

 

২. ডিপ ভেন থ্রোম্বোসিস (DVT): পায়ের গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা, যা ফোলা ও ব্যথার সাথে হয়। এটি ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার (পালমোনারি এম্বোলিজম) ঝুঁকি বাড়ায়।

 

পুষ্টি ও খাদ্য পরামর্শ

  • পানি বেশি খান: শরীরের সঠিক হাইড্রেশন বজায় রাখুন।
  • ফলমূল ও শাকসবজি: পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন কলা, কমলা, টমেটো) ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
  • লবণ ও প্রসেসড ফুড কম খান: লবণ কমানোর মাধ্যমে শরীরে অতিরিক্ত পানি জমা রোধ হয়।
  • প্রোটিন যথেষ্ট পরিমাণে নিন: যা শরীরের কোষে তরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

 

গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা প্রতিরোধের জন্য টিপস

  • বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন, যেমন হাঁটা বা পায়ের হালকা স্ট্রেচ।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, বিশেষ করে পা উঁচু করে বিশ্রাম দিন।
  • বেশি ওজন বৃদ্ধি রোধ করার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।
  • গর্ভাবস্থার নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করান, বিশেষ করে রক্তচাপ ও প্রস্রাব পরীক্ষা।

 

উপসংহার: গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা সাধারণত স্বাভাবিক হলেও এর মাত্রা, সময় এবং সাথে অন্য লক্ষণ দেখে সতর্ক হওয়া জরুরি। হঠাৎ ফোলা, ব্যথা, লালচে ভাব, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য জটিলতা থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও সঠিক জীবনযাত্রায় এই সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।


সার্চ কী: গর্ভাবস্থায় পা ফুলে যাওয়া, গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা, গর্ভাবস্থায় পা ফুলে যাওয়ার কারণ, গর্ভাবস্থায় পা ফোলা কমানোর উপায়, গর্ভাবস্থায় এডিমা, গর্ভাবস্থায় পা ফোলা সমস্যা, গর্ভাবস্থায় পায়ে ফোলা ও ব্যথা, গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসার চিকিৎসা, গর্ভাবস্থায় পা ফুলে যাওয়া কী স্বাভাবিক, গর্ভাবস্থায় পা ফোলা প্রতিরোধ, গর্ভাবস্থায় পা ফুলে গেলে কী করবেন, গর্ভাবস্থায় পা ফুলে যাওয়া ডাক্তারের পরামর্শ, গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা লক্ষণ, গর্ভাবস্থায় পা ফোলা স্বাস্থ্য সমস্যা, গর্ভাবস্থায় পা ফোলা রকমারি, গর্ভাবস্থায় পায়ে ফোলা ও ওজন বৃদ্ধি, গর্ভাবস্থায় পা ফোলা ডিপ ভেন থ্রোম্বোসিস, গর্ভাবস্থায় পা ফোলা এবং প্রি-ইক্ল্যাম্পসিয়া, গর্ভাবস্থায় ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায়, গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য সচেতনতা

 

ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top