আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়ল:
অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার সহজ ধাপে ধাপে গাইড
বাংলাদেশে আয়ের উপর কর প্রদান প্রতিটি নাগরিকের
জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ব্যক্তিগত আয় হোক বা ব্যবসায়িক আয়, নিয়মিত আয়ের
ভিত্তিতে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ব্যস্ত জীবন, কাগজপত্র সংগ্রহের ঝামেলা বা প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে অনেক সময় করদাতা
সময়মতো রিটার্ন দিতে পারছেন না। এই সমস্যা বিবেচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)
প্রতি বছর আয়ের রিটার্ন জমাদানের সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়।
২০২৫ সালের এই সময়সীমা সম্প্রসারণের ফলে যাদের
এখনও রিটার্ন জমা দেওয়া হয়নি, তাদের জন্য এটি এক সুবর্ণ সুযোগ।
সময়সীমা বৃদ্ধি ও কারণ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্প্রতি জানিয়েছে, ব্যক্তিশ্রেণির
করদাতাদের জন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় ৩০ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা
হয়েছে। এছাড়া, যারা ই-রিটার্নে নিবন্ধন সমস্যার কারণে
অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে পারছেন না, তারা ১৫ ডিসেম্বর
পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়ে আবেদন করতে পারবেন।
সময়সীমা বৃদ্ধি মূলত করদাতাদের সুবিধার জন্য, যাতে তারা
বিনা জরিমানা রিটার্ন জমা দিতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পারেন।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা
দেওয়ার ধাপে ধাপে নির্দেশিকা
অনলাইন আয়কর রিটার্ন (eReturn) দেওয়া
এখন অত্যন্ত সহজ। NBR-এর ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করে মাত্র
কয়েক মিনিটে রিটার্ন জমা দেওয়া সম্ভব।
ধাপ ১: e-TIN অ্যাকাউন্ট
তৈরি বা লগইন
আপনার অনলাইন রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রথম ধাপ হলো
ই-টিআইএন (e-TIN)
অ্যাকাউন্ট তৈরি বা লগইন করা।
- ওয়েবসাইট: https://etaxnbr.gov.bd
- লগইন করতে প্রয়োজন: ই-টিআইএন নম্বর, মোবাইল
নম্বর এবং পাসওয়ার্ড।
- নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করার
অপশন রয়েছে।
ধাপ ২: করদাতা ড্যাশবোর্ডে
প্রবেশ
লগইন করার পর আপনার ব্যক্তিগত প্রোফাইল এবং
পূর্ববর্তী রিটার্ন, নোটিশ, এবং টিআইএন স্ট্যাটাস দেখা যাবে।
ধাপ ৩: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
প্রস্তুত করুন
অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার আগে নীচের কাগজপত্র
সংগ্রহ করুন:
ব্যক্তিগত কাগজপত্র:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- e-TIN সার্টিফিকেট
- মোবাইল নম্বর ও ইমেইল
আয় সংক্রান্ত কাগজপত্র:
- বেতনভিত্তিক আয় থাকলে বেতন সার্টিফিকেট
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- ব্যবসার আয় হিসাব
- ভাড়া আয় থাকলে তার বিস্তারিত
অব্যাহতি ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত
কাগজপত্র:
- সঞ্চয়পত্র ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত কাগজ
- জীবন বীমা বিনিয়োগ
- গৃহঋণ সংক্রান্ত নথি
- চিকিৎসা ব্যয়
- দান বা অনুদান
ধাপ ৪: ‘Prepare Return’ অপশনে ক্লিক
রিটার্ন তৈরি করার জন্য Prepare Return অপশন বেছে নিন এবং ধাপে ধাপে তথ্য পূরণ করুন:
- ব্যক্তিগত তথ্য
- আয়
- ব্যয়
- করছাড়
- পূর্ববর্তী বছরের অ্যাডভান্স ট্যাক্স
- করযোগ্য আয়
সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর হিসাব করে দেবে।
ধাপ ৫: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
আপলোড করুন
- বেতন সার্টিফিকেট
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- বিনিয়োগ/সঞ্চয়পত্র
- ভাড়া সম্পর্কিত তথ্য
ফাইলগুলো JPG অথবা PDF আকারে
আপলোড করা যাবে।
ধাপ ৬: রিটার্ন জমা দিন
সব তথ্য যাচাই করার পর Submit বাটনে
ক্লিক করুন। সঙ্গে সঙ্গে আপনার ইমেইলে বা ড্যাশবোর্ডে Acknowledgement
Receipt (রসিদ) চলে আসবে, যা রিটার্ন জমার
প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
সময়সীমা বাড়ানোর সুবিধা
- জরিমানা ছাড়া রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ
- ডকুমেন্ট সংগ্রহ ও যাচাইয়ের জন্য অতিরিক্ত সময়
- অনলাইন সিস্টেমে চাপ কম
- অফিসের ভিড় এড়িয়ে সহজে জমা
- সঠিক হিসাব করার সুযোগ
করদাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
তথ্য
- বয়স ১৮+ এবং নির্দিষ্ট আয় থাকলে রিটার্ন জমা
বাধ্যতামূলক
- টিআইএন থাকলেও আয় না থাকলে জিরো রিটার্ন দিতে হয়
- সময়মতো রিটার্ন না দিলে জরিমানা হতে পারে
- চাকরির ক্ষেত্রে রিটার্ন রসিদ প্রয়োজন, যেমন:
- পাসপোর্ট নবায়ন
- ব্যাংক ঋণ নেওয়া
- জমি/ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন
- ব্যবসায়িক লাইসেন্স নবায়ন
প্রশ্ন ও উত্তর
১) আয়কর রিটার্ন কি?
এটি সরকারকে প্রদত্ত একটি তথ্য, যা আপনার আয়ের
বিবরণ ও কর প্রদানের হিসাব দেখায়।
২) বাংলাদেশে রিটার্ন জমার সময়সীমা কত?
সাধারণত প্রতি বছর নভেম্বরের শেষে, তবে
বর্তমানে সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়েছে।
৩) অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য কী প্রয়োজন?
e-TIN, মোবাইল নম্বর, ইমেইল ও প্রয়োজনীয়
কাগজপত্র।
৪) রিটার্ন না দিলে কি জরিমানা হবে?
হ্যাঁ, নির্দিষ্ট সময়সীমার পর রিটার্ন না দিলে
জরিমানা প্রযোজ্য।
৫) কোন কাগজপত্র প্রয়োজন?
ব্যক্তিগত, আয় সংক্রান্ত এবং বিনিয়োগ/অব্যাহতি
সংক্রান্ত কাগজপত্র।
৬) জিরো রিটার্ন কি?
যদি কোনো আয় না থাকে, তবুও টিআইএন থাকা
অবস্থায় রিটার্ন জমা দিতে হয়।
৭) রিটার্ন জমার রসিদ কোথায় পাওয়া যাবে?
Submit করার পর ইমেইল বা ড্যাশবোর্ডে।
৮) ব্যবসায়ীরা কীভাবে রিটার্ন জমা দেবেন?
ব্যবসার আয় এবং খরচের তথ্য দিয়ে অনলাইনে রিটার্ন তৈরি ও জমা দিতে
হবে।
৯) সময় বাড়ানো কাদের জন্য প্রযোজ্য?
যারা অনলাইনে জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা ১৫
ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।
১০) ভবিষ্যতে রিটার্ন জমা সহজ করতে কী করা উচিত?
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগে থেকে প্রস্তুত রাখা, নিয়মিত
লেনদেন ট্র্যাক করা এবং e-TIN অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রাখা।
উপসংহার: অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা
দেওয়ার প্রক্রিয়া এখন অনেক সহজ ও ঝামেলামুক্ত। সময়সীমা বৃদ্ধি করদাতাদের জন্য একটি
বড় সুবিধা। তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে এখনই অনলাইনে রিটার্ন জমা দিন।
এটি ভবিষ্যতের বিভিন্ন প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমকে সহজ করবে এবং জরিমানা এড়াতে
সহায়তা করবে।
আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়ল, অনলাইনে
আয়কর রিটার্ন দেওয়ার নিয়ম, NBR eReturn সিস্টেম ব্যবহার,
বাংলাদেশে আয়কর রিটার্ন, ব্যক্তিগত আয়কর
রিটার্ন, প্রাতিষ্ঠানিক আয়কর রিটার্ন, ই-টিআইএন লগইন, রিটার্ন জমার সহজ ধাপ, আয়কর রিটার্ন কাগজপত্র, করদাতাদের জন্য গাইড,
আয়কর সময়সীমা বৃদ্ধি, জরিমানা ছাড়া রিটার্ন,
অনলাইন ট্যাক্স ফাইলিং বাংলাদেশ, e-TIN অ্যাকাউন্ট
তৈরি, NBR আয়কর গাইড, অনলাইনে ট্যাক্স
সাবমিশন, করদাতাদের জন্য সুবিধা, রিটার্ন
রসিদ পেতে কিভাবে, আয়কর বিনিয়োগ ও খরচ তথ্য, বাংলাদেশ NBR আপডেট।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles
.png)
