দুটি ফোনে একই কল পাওয়ার
সেরা ও বৈধ উপায়: মাল্টি–রিং, VoIP এবং কল ফরওয়ার্ডিং নিয়ে পূর্ণাঙ্গ
নির্দেশিকা
বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে যোগাযোগ রক্ষা করা
আগের তুলনায় অনেক বেশি সহজ হলেও অনেক সময় একই নম্বরকে দুইটি ফোনে একসঙ্গে ব্যবহার
করার প্রয়োজন দেখা দেয়। কেউ একাধিক মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করেন, কেউ ব্যবসার
কারণে একই নম্বরকে পরিবারের বা অফিসের আরও কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান, আবার কেউ একই নম্বরকে দুটি ফোনে সক্রিয় রাখতে চান যাতে কোন গুরুত্বপূর্ণ
কল যেন বাদ না পড়ে। এটি এখন অত্যন্ত পরিচিত একটি প্রয়োজন, বিশেষ
করে উদ্যোক্তা, অনলাইন ব্যবসায়ী, কর্পোরেট
কর্মী কিংবা দুইটি ফোনবাহী ব্যবহারকারীদের কাছে।
বাংলাদেশে বৈধভাবে এবং নিরাপদ পদ্ধতিতে কীভাবে
একটি নম্বরে আসা কল একই সময়ে দুটি মোবাইলে গ্রহণ করা যায়—তা নিয়ে অনেকের মনেই
প্রশ্ন থাকে। অনেকেই জানেন না কোন উপায়টি আইনসম্মত, কোনটি সহজ, এবং কোনটি ব্যবসার জন্য উপযোগী।
এই নিবন্ধে আমরা পর্যায়ক্রমে আলোচনা করব—
১. মাল্টি–রিং ও কল ফরওয়ার্ডিং ব্যবস্থার কার্যপদ্ধতি
২. ইন্টারনেট নির্ভর কল গ্রহণ (VoIP)
৩. ব্যবসায়িক ব্যবহারের জন্য ক্লাউড–PBX সমাধান
৪. অবৈধ বা গোপন নজরদারিমূলক পদ্ধতির ঝুঁকি
৫. এবং সবশেষে এই সমাধানগুলোর মধ্য থেকে আপনার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি
কোনটি হতে পারে
পুরো লেখাটি সম্পূর্ণ মৌলিক, বিস্তারিত ও সহজবোধ্যভাবে সাজানো হয়েছে
যাতে একজন সাধারণ ব্যবহারকারীও সহজেই কাঙ্খিত পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন।
প্রথম পদ্ধতি: মোবাইল
অপারেটরের মাল্টি–রিং / সিম রিং গ্রুপ
বাংলাদেশের প্রধান মোবাইল অপারেটরগুলো—গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল এবং বাংলালিংক—তাদের কিছু নির্দিষ্ট প্ল্যানে ‘Multi-Ring’
বা ‘SIM Ring Group’ নামে পরিচিত একটি সুবিধা
দিয়ে থাকে। এই পরিষেবা চালু করলে একটি নম্বরে কল এলে তা একই সঙ্গে অন্য একটি
নির্দিষ্ট নম্বরে রিং করবে। এতে একজন ব্যবহারকারী একাধিক লাইন বা ফোনে একই সময়ে
কল গ্রহণ করতে পারেন।
কীভাবে মাল্টি–রিং কাজ করে?
এটি মূলত অপারেটর-নিয়ন্ত্রিত একটি নেটওয়ার্ক
সার্ভিস। অর্থাৎ, কল আপনার নম্বরে সংযোগ হওয়ার আগেই নেটওয়ার্ক সেটিকে আরেকটি
ফোনে একযোগে পাঠায়। ফলে:
- উভয় ফোন একই সময়ে রিং করে
- যে ফোনটি আগে রিসিভ করবে, কল
সেটিই পায়
- অন্য ফোনে রিং বন্ধ হয়ে যায়
এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং অপারেটরের অনুমোদিত
সুবিধা হওয়ায় ব্যবহারকারীরা নিশ্চিন্তে এটি চালু করতে পারেন।
কোন অপারেটরে কোথায় সার্ভিসটি
পাওয়া যায়?
- গ্রামীণফোন: *121# অথবা MyGP অ্যাপ
- রবি / এয়ারটেল: *123# অথবা Robi অ্যাপ
- বাংলালিংক: *121# অথবা MyBL অ্যাপ
হেল্পলাইনে যোগাযোগ করে সহজেই বলা যেতে পারে—“আমি Multi-Ring
অথবা SIM Ring Group সুবিধা সক্রিয় করতে
চাই।”
অনেক ক্ষেত্রে অপারেটরের প্ল্যানভেদে বা অঞ্চলের
ওপর নির্ভর করে এই পরিষেবা সক্রিয় করা হয়।
মাল্টি–রিংয়ের সুবিধা
- এক নম্বরে কল এলেই দুটি ফোনে একযোগে রিং
- ব্যস্ত অফিস বা ঘরে কল মিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে
- পরিবারের সদস্য বা সহকারীও প্রয়োজনে কল রিসিভ করতে
পারে
- অতিরিক্ত কোনো অ্যাপ বা সফটওয়্যার প্রয়োজন হয় না
কারা এটি ব্যবহার করলে বেশি
উপকৃত হবেন?
- দুইটি ফোন ব্যবহারকারী
- ছোট ব্যবসায়ীরা
- এক নম্বরকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান
এমন ব্যবহারকারী
- একই নম্বর অফিস–হোম দুই স্থানে রাখতে চান
দ্বিতীয় পদ্ধতি: VoIP ভিত্তিক
ইন্টারনেট কলিং অ্যাপ
ইন্টারনেট কলিং অ্যাপগুলোতে একটি বড় সুবিধা
হলো—একটি অ্যাকাউন্টে দুই বা ততোধিক ডিভাইসে লগইন করা যায়। ফলে কেউ কল করলেই
বিভিন্ন ফোনে একই সঙ্গে রিং বাজে।
কোন VoIP অ্যাপগুলো
ব্যবহার করা যায়?
- WhatsApp (এখন একই নম্বর দিয়ে দুই ফোনে লগইন করা সুবিধা
রয়েছে)
- Facebook Messenger
- IMO
- Skype
- Google Duo / Meet
ব্যবহার পদ্ধতি
১. দুইটি ফোনেই অ্যাপ ইনস্টল করুন
২. একই নম্বর বা অ্যাকাউন্ট তথ্য ব্যবহার করে লগইন করুন
৩. কেউ কল দিলে দুই ফোনেই রিং হবে
কেন এই পদ্ধতি জনপ্রিয়?
- সেটআপ অত্যন্ত সহজ
- বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়
- ভিডিওকল ও ভয়েসকল উভয় সুবিধাই পাওয়া যায়
- ব্যক্তিগত যোগাযোগে অত্যন্ত কার্যকর
কোন ক্ষেত্রে VoIP পদ্ধতি
বেশি উপযোগী?
- পরিবারে এক নম্বরকে দুই ডিভাইসে ব্যবহার করতে চাইলে
- দুই ফোন বহনকারী ব্যবহারকারীর জন্য
- বিদেশে অবস্থানকারী স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগে
- ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত অনলাইন মিটিংয়ে
তৃতীয় পদ্ধতি: ব্যবসায়িক
ব্যবহারের জন্য ক্লাউড–PBX বা কল সেন্টার সমাধান
যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসা আরও সংগঠিতভাবে কল
ব্যবস্থাপনা করতে চায়, তাদের জন্য Cloud PBX বা Call
Center সলিউশন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়।
এগুলোতে—
- একটি নম্বরে কল এলেই
- অফিসের একাধিক ফোনে একসাথে রিং বাজে
- যে এজেন্ট আগে গ্রহণ করবে, সে কল
পায়
- প্রয়োজন হলে কল কিউ তৈরি হয়
বাংলাদেশে ব্যবহৃত জনপ্রিয়
সিস্টেমগুলো
- REVE Systems Cloud PBX
- Banglalink Enterprise Call
- GP Business Call Center Solution
- কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্য bKash PBX (অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে)
ক্লাউড–PBX কেন
ব্যবহার করা হয়?
- বড় প্রতিষ্ঠানের কল ভলিউম সামলানোর জন্য
- কাস্টমার সাপোর্ট টিমের জন্য
- একই নম্বরে একাধিক এজেন্টকে যুক্ত করতে
- স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল ফরওয়ার্ড, রেকর্ডিং
ও রিপোর্টিং সুবিধা দিতে
কোন ব্যবসায়গুলোর জন্য বেশি
কার্যকর?
- ই–কমার্স
- কর্পোরেট হটলাইন
- ব্যাংকিং বা সাপোর্ট সার্ভিস
- কল সেন্টার ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান
অবৈধ বা গোপন নজরদারি পদ্ধতি
সম্পর্কে সতর্কতা
অনেকে ভুলভাবে মনে করেন—অন্যের ফোনে আসা কল গোপনে
অন্য ফোনে নেওয়া যায়। এ ধরনের চেষ্টা:
- আইনগতভাবে অপরাধ
- ব্যক্তিগত গোপনীয়তার চরম লঙ্ঘন
- সাইবার অপরাধের আওতায় পড়ে
- শাস্তিযোগ্য এবং জেল–জরিমানার কারণ হতে পারে
এই নিবন্ধে যেসব উপায় উল্লেখ করা হয়েছে—এসব
সম্পূর্ণ বৈধ, অনুমোদিত এবং নিরাপদ পদ্ধতি। গোপনে কল মনিটরিং বা ফরওয়ার্ড করার পদ্ধতি
ব্যবহার করা কখনোই উচিত নয়।
উপসংহার: একটি কল একই সময়ে দুইটি ফোনে গ্রহণ করা এখন আর কঠিন কাজ নয়। বাংলাদেশে
বর্তমানে তিন ধরনের বৈধ ও কার্যকর সমাধান ব্যবহার করা যায়—
১. মোবাইল অপারেটরের মাল্টি–রিং বা সিম রিং গ্রুপ
২. ইন্টারনেটভিত্তিক কলিং অ্যাপ বা VoIP
৩. ব্যবসায়িক ব্যবহারের জন্য ক্লাউড–PBX বা কল
সেন্টার সিস্টেম
ব্যক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাল্টি–রিং বা WhatsApp/Messenger সবচেয়ে সহজ ও
সাশ্রয়ী। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চাইলে ক্লাউড–PBX বেছে নিতে পারে,
যাতে কল ব্যবস্থাপনা আরও পেশাদার ও স্বয়ংক্রিয় হয়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও
উত্তর (FAQ)
১. এক নম্বরে আসা কল কি
সত্যিই দুটি ফোনে একসাথে পাওয়া যায়?
হ্যাঁ, মাল্টি–রিং, VoIP অ্যাপ
বা ক্লাউড–PBX ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি করা সম্ভব এবং
বাংলাদেশে বৈধ।
২. মাল্টি–রিং কি সব
অপারেটরেই পাওয়া যায়?
গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল এবং
বাংলালিংকের নির্দিষ্ট প্যাকেজে পাওয়া যায়; হেল্পলাইনে
যোগাযোগ করলেই বিস্তারিত জানায়।
৩. মাল্টি–রিং চালু করতে কি
অতিরিক্ত খরচ লাগে?
কখনো কখনো অপারেটরভেদে সামান্য চার্জ প্রযোজ্য
হতে পারে; আবার কিছু প্যাকেজে বিনামূল্যেও দেওয়া হয়।
৪. WhatsApp কি
সত্যিই এক নম্বর দুই ফোনে ব্যবহার করা যায়?
হ্যাঁ, বর্তমানে WhatsApp “Linked Devices”
সুবিধায় একই নম্বর দিয়ে দুই ফোনে লগইন করা যায়।
৫. VoIP অ্যাপের
জন্য কি ইন্টারনেট প্রয়োজন?
হ্যাঁ, ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া VoIP কল কাজ করবে না।
৬. ক্লাউড–PBX কি শুধুই
বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য?
না, ছোট ব্যবসায়ীরাও এটি ব্যবহার করতে পারেন;
অনেক প্রতিষ্ঠান ছোট প্যাকেজও দেয়।
৭. মাল্টি–রিং চালু করলে কি
অন্যান্য কল সেটিংস নষ্ট হয়?
সাধারণত না। তবে কল ফরওয়ার্ডিং আগেই সক্রিয়
থাকলে সেটি সামঞ্জস্য করতে হতে পারে।
৮. মাল্টি–রিং কি আন্তর্জাতিক
কলেও কাজ করে?
হ্যাঁ, নেটওয়ার্ক অনুযায়ী বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক
কলেও মাল্টি–রিং কাজ করে।
৯. কল গোপনে শোনার কোনো
ব্যবস্থা কি আছে?
আইনানুগভাবে নেই, এবং গোপনে কল ফরওয়ার্ড করার
সমস্ত পদ্ধতি অবৈধ।
১০. কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে সহজ?
ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য WhatsApp বা Messenger—কারণ এতে বাড়তি সেটিংস প্রয়োজন হয় না।
একটি নম্বরে দুটি ফোনে কল আসার উপায়, এক ফোন
নম্বরে দুইটি ফোনে কল রিসিভ, multi ring bangladesh, call forwarding bd, দুই ফোনে একই কল নেওয়ার পদ্ধতি, কল ফরোয়ার্ডিং
কিভাবে চালু করবেন, গ্রামীণফোন মাল্টি রিং, robi
multi ring service, airtel multi ring activation, banglalink call forwarding, দুটি ফোনে একই নম্বর ব্যবহার, একই নম্বরে দুই ফোনে
রিং বাজানো, mobile multi ring settings, দুটি মোবাইলে একই
নম্বর চালানোর উপায়, নিরাপদ কল ট্রান্সফার পদ্ধতি,
voip multi device calling, whatsapp দুই ফোনে লগইন,
messenger two device login, cloud pbx bangladesh, call center multi ring
solution, ব্যবসায়িক কল ব্যবস্থাপনা, call routing bd, অফিস কল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, একই নম্বরে অফিসে
একাধিক ফোনে কল রিং, বাংলাদেশে ক্লাউড পিবিএক্স সেবা।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles
.png)
