আয়কর
রিটার্ন জমার সময় আরও এক মাস বাড়ল: অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সম্পূর্ণ গাইড
(২০২৫–২৬)
বাংলাদেশের সাধারণ করদাতাদের
জন্য একটি বড় স্বস্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতি বছর
আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা ঘিরে করদাতাদের মধ্যে যে চাপ, দুশ্চিন্তা ও ভোগান্তি তৈরি হয়—তা বিবেচনায় নিয়ে এবারও আয়কর রিটার্ন
দাখিলের সময়সীমা আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছে।
এনবিআরের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত
অনুযায়ী, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য ব্যক্তি করদাতা ও হিন্দু অবিভক্ত
পরিবার (HUF) কোনো ধরনের জরিমানা ছাড়াই ৩১ জানুয়ারি
২০২৬ পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে যেসব
করদাতা এখনো রিটার্ন জমা দিতে পারেননি, তারা বাড়তি সময় পেয়ে
স্বস্তি পেয়েছেন। বিশেষ করে নতুন করদাতা, চাকরিজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও অনলাইন রিটার্ন পদ্ধতিতে অনভিজ্ঞদের জন্য এটি অত্যন্ত
সহায়ক হবে।
এই বিস্তারিত ব্লগ পোস্টে সহজ
ও প্রাঞ্জল ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে—
- আয়কর রিটার্ন জমার সময় কেন বাড়ানো হলো
- কারা আয়কর রিটার্ন দিতে বাধ্য
- অনলাইনে রিটার্ন দাখিল কেন বাধ্যতামূলক করা
হচ্ছে
- ধাপে ধাপে ই-রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম
- ঘরে বসে কর পরিশোধের পদ্ধতি
- আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাস্তব সুবিধা
- সাধারণ করদাতাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও
উত্তর
আয়কর
রিটার্ন জমার সময়সীমা বাড়ানোর কারণ কী?
বাংলাদেশে প্রচলিত নিয়ম
অনুযায়ী, প্রতি বছর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার
সময় নির্ধারিত থাকে। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, এই
সময়সীমা করদাতাদের জন্য প্রায়ই অপ্রতুল হয়ে পড়ে।
এনবিআর যে বিষয়গুলো বিবেচনায়
নেয়—
- অধিকাংশ করদাতা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা
করেন
- অনলাইনে রিটার্ন জমার সময় সার্ভারে অতিরিক্ত
চাপ তৈরি হয়
- নতুন করদাতারা নিয়মকানুন বুঝতে সময় নেন
- অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক ও কর অফিসে ভিড় বেড়ে
যায়
- পেশাজীবী ও হিসাবরক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ
পড়ে
এই বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা
করেই এনবিআর প্রায় প্রতি অর্থবছরেই এক বা একাধিকবার আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়িয়ে
থাকে।
চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরেও
প্রথমে এক দফা সময় বাড়ানো হয়েছিল। এরপর
করদাতাদের সুবিধার্থে আবারও সময় বাড়িয়ে ৩১ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত নির্ধারণ
করা হয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
হলো—
এই সময়ের
মধ্যে রিটার্ন দাখিল করলে কোনো ধরনের বিলম্ব জরিমানা বা অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে
না।
কারা আয়কর
রিটার্ন দাখিল করতে বাধ্য?
বর্তমানে বাংলাদেশে এক
কোটির বেশি টিআইএন (TIN) নম্বরধারী ব্যক্তি রয়েছেন।
তবে অনেকেই মনে করেন, টিআইএন থাকলেই রিটার্ন দেওয়া
বাধ্যতামূলক—যা পুরোপুরি সঠিক নয়।
আইন অনুযায়ী সাধারণত যেসব
ব্যক্তিকে আয়কর রিটার্ন দিতে হয়—
- যাদের বার্ষিক করযোগ্য আয় রয়েছে
- যাদের টিআইএন নম্বর রয়েছে এবং আয় হয়েছে
- সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী (যোগ্যতা
সাপেক্ষে)
- বেসরকারি চাকরিজীবী
- ব্যবসায়ী ও স্বনিয়োজিত পেশাজীবী
- ডাক্তার, আইনজীবী,
প্রকৌশলী, পরামর্শক
- ঠিকাদার, ফ্রিল্যান্সার
ও অনলাইন আয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা
- যেসব ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল
বাধ্যতামূলক
করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও
রিটার্ন দাখিল না করলে ভবিষ্যতে কর অফিস থেকে নোটিশ, জরিমানা
এমনকি আইনি জটিলতার মুখে পড়তে হতে পারে।
অনলাইনে
আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হলো কেন?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ধীরে ধীরে
দেশের কর ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ
হিসেবেই ই-রিটার্ন ব্যবস্থা চালু ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এর প্রধান উদ্দেশ্য—
- কাগজপত্রের ঝামেলা কমানো
- কর অফিসে সরাসরি উপস্থিতির প্রয়োজন কমানো
- দুর্নীতি ও হয়রানি হ্রাস করা
- কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
- করদাতাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় করা
বর্তমানে কিছু সীমিত
ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সকল ব্যক্তি করদাতাকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
অনলাইনে
আয়কর রিটার্ন দাখিলের ধাপে ধাপে নিয়ম
অনেক করদাতার ধারণা, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়া খুব কঠিন। বাস্তবে বিষয়টি মোটেও জটিল নয়। সঠিক
ধাপ অনুসরণ করলে যে কেউ সহজেই রিটার্ন জমা দিতে পারেন।
ধাপ ১:
ই-রিটার্ন পোর্টালে নিবন্ধন
প্রথমে এনবিআরের নির্ধারিত
ই-রিটার্ন ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
নিবন্ধনের সময় সাধারণত
প্রয়োজন হয়—
- টিআইএন নম্বর
- জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য
- সক্রিয় মোবাইল নম্বর
- ই-মেইল ঠিকানা
ধাপ ২:
ইউজার আইডি দিয়ে লগইন
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে
ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সিস্টেমে লগইন করতে হবে।
ধাপ ৩: আয়কর
রিটার্ন ফর্ম পূরণ
লগইন করার পর নির্ধারিত ফর্মে
ধাপে ধাপে তথ্য দিতে হবে—
- চাকরি, ব্যবসা বা পেশা
থেকে আয়
- বাড়িভাড়া, কৃষি,
অন্যান্য উৎসের আয়
- ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যয়
- বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য
- কর রেয়াত ও কর ছাড়ের তথ্য
সব তথ্য সতর্কতার সঙ্গে
সঠিকভাবে পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
ধাপ ৪:
কাগজপত্র আপলোড করতে হবে কি?
অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে
সাধারণত কোনো কাগজপত্র আপলোড করতে হয় না।
তবে—
- আয় ও ব্যয়ের প্রমাণ
- বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
এসব কাগজ নিজের কাছে সংরক্ষণ
করে রাখা বাধ্যতামূলক, কারণ ভবিষ্যতে যাচাই বা নিরীক্ষার সময় কর
অফিস চাইতে পারে।
ঘরে বসে
আয়কর পরিশোধের সুবিধা
ই-রিটার্ন ব্যবস্থার অন্যতম
বড় সুবিধা হলো ঘরে বসেই কর পরিশোধের সুযোগ।
বর্তমানে কর পরিশোধ করা যায়—
- ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে
- ডেবিট কার্ড
- ক্রেডিট কার্ড
- বিকাশ
- রকেট
- নগদ
- অন্যান্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS)
আলাদা করে ব্যাংক বা কর অফিসে
লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই।
আয়কর
রিটার্ন দাখিলের বাস্তব সুবিধা
অনেকে মনে করেন আয়কর রিটার্ন
শুধু বাড়তি ঝামেলা। বাস্তবে এর বহু দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা রয়েছে—
- ব্যাংক ঋণ ও লোন পেতে সহজ হয়
- বিদেশ ভ্রমণ বা ভিসা আবেদনে প্রয়োজন হয়
- সরকারি সেবা ও সুযোগ গ্রহণে সহায়ক
- ব্যক্তিগত আর্থিক স্বচ্ছতা তৈরি হয়
- ভবিষ্যতে কর সংক্রান্ত জটিলতা কমে
- পেশাগত ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে
সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (১০টি)
প্রশ্ন ১: আয়কর রিটার্ন জমার শেষ তারিখ কত?
উত্তর: জরিমানা ছাড়া শেষ তারিখ ৩১
জানুয়ারি ২০২৬।
প্রশ্ন ২: অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া কি
বাধ্যতামূলক?
উত্তর: হ্যাঁ, কিছু
ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ করদাতার জন্য বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন ৩: আয় না থাকলেও কি রিটার্ন দিতে হবে?
উত্তর: অনেক ক্ষেত্রে শূন্য রিটার্ন (Nil
Return) দাখিল করতে হয়।
প্রশ্ন ৪: রিটার্ন না দিলে কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর: জরিমানা, নোটিশ
ও আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
প্রশ্ন ৫: অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া কি নিরাপদ?
উত্তর: হ্যাঁ, এনবিআরের
ই-রিটার্ন সিস্টেম নিরাপদ।
প্রশ্ন ৬: রিটার্ন জমার পর কি সংশোধন করা যায়?
উত্তর: নির্দিষ্ট শর্তে সংশোধনের সুযোগ
থাকে।
প্রশ্ন ৭: কর পরিশোধ না করলে রিটার্ন জমা
দেওয়া যাবে?
উত্তর: কর থাকলে পরিশোধ না করলে
রিটার্ন সম্পূর্ণ হয় না।
প্রশ্ন ৮: ব্যবসায়ী ছাড়া চাকরিজীবীদের রিটার্ন
লাগবে?
উত্তর: হ্যাঁ, করযোগ্য
আয় থাকলে লাগবে।
প্রশ্ন ৯: অনলাইনে রিটার্ন জমার রসিদ পাওয়া
যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, সাবমিট
করার পর স্বয়ংক্রিয় রসিদ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ১০: ভবিষ্যতে রিটার্ন না দিলে কী প্রভাব
পড়বে?
উত্তর: আর্থিক ও আইনি ঝুঁকি বাড়বে।
উপসংহার: আয়কর
রিটার্ন জমার সময়সীমা আরও এক মাস বাড়ানো সাধারণ করদাতাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড়
সুযোগ। যারা এখনো রিটার্ন দাখিল করেননি, তারা এই বাড়তি সময়
কাজে লাগিয়ে সঠিক তথ্য দিয়ে ৩১ জানুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে অনলাইনে আয়কর
রিটার্ন জমা দিতে পারেন।
সময় থাকতে নিয়ম মেনে আয়কর
রিটার্ন দাখিল করা মানেই ভবিষ্যতের জটিলতা ও হয়রানি থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখা। তাই
দেরি না করে আজই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন সম্পন্ন করুন।
আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়ল, আয়কর রিটার্ন ২০২৫–২৬, আয়কর রিটার্ন জমার শেষ তারিখ ২০২৬, আয়কর রিটার্ন সময় বৃদ্ধি, NBR আয়কর রিটার্ন বিজ্ঞপ্তি, আয়কর রিটার্ন অনলাইনে জমা দেওয়ার নিয়ম, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন কিভাবে দেবো, আয়কর রিটার্ন ই-ফাইলিং বাংলাদেশ, e-return bangladesh, আয়কর রিটার্ন জমা ৩১ জানুয়ারি ২০২৬, টিআইএন থাকলে কি রিটার্ন দিতে হবে, আয়কর রিটার্ন না দিলে জরিমানা, শূন্য আয়কর রিটার্ন কিভাবে দেবো, আয়কর রিটার্ন ফর্ম পূরণ পদ্ধতি, আয়কর রিটার্ন অনলাইন পেমেন্ট, আয়কর রিটার্ন বিকাশ দিয়ে, আয়কর রিটার্ন মোবাইল ব্যাংকিং, আয়কর রিটার্ন সরকারি সিদ্ধান্ত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়কর নোটিশ, আয়কর রিটার্ন সুবিধা, চাকরিজীবীর আয়কর রিটার্ন, ব্যবসায়ীর আয়কর রিটার্ন, ফ্রিল্যান্সার আয়কর রিটার্ন বাংলাদেশ, আয়কর রিটার্ন ব্লগ বাংলা, আয়কর রিটার্ন গাইড ২০২৬
.png)
