এইচএমপিভি (HMPV) ভাইরাসে মৃত্যুঝুঁকি
এইচএমপিভি (HMPV) বা হিউম্যান
মাইক্রোভাইরাল প্যানক্রিয়েটিক ভাইরাস একটি ভাইরাস যা মানব শরীরে শ্বাসতন্ত্রের
রোগ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসের
সংক্রমণ। এটি মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়, যা সাধারণত
হালকা থেকে মাঝারি ধরনের থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর
শ্বাসকষ্ট এবং মৃত্যুও হতে পারে। এই ভাইরাসটি সাধারণত শীতকালীন সময়ে বেশি দেখা যায়
এবং সাধারণ সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ নিয়ে শুরু হয়।
যদিও HMPV সাধারণত একটি স্বল্পমেয়াদী ভাইরাস এবং
অধিকাংশ রোগী সাধারণত ভালো হয়ে যান, তবে কিছু উচ্চ
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি বা রোগীর ক্ষেত্রে এটি গুরুতর শ্বাসকষ্ট এবং মৃত্যুর কারণ হয়ে
উঠতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা, বয়স্করা এবং কিছু অন্যান্য
স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত মানুষদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে।
১. এইচএমপিভি ভাইরাসের
সংক্রমণ এবং উপসর্গ
এইচএমপিভি (HMPV) একটি RNA ভাইরাস যা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়। এটি মূলত
সংক্রামিত ব্যক্তির কাশির থুতু, জলীয় বাষ্প বা হাঁচির
মাধ্যমে ছড়ায়। এই ভাইরাসের সাধারণ উপসর্গগুলি হলো:
- সর্দি এবং কাশি: সাধারণ সর্দি-কাশির মতো
উপসর্গ শুরু হয়।
- জ্বর এবং ঠাণ্ডা: উচ্চ তাপমাত্রা ও ঠাণ্ডা
অনুভূতি হতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানি: শ্বাসকষ্ট
বাড়তে পারে, বিশেষত যাদের আগে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ছিল
(যেমন হাঁপানি বা হাঁপানি জনিত সমস্যা)।
- গলা ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা এবং
মাথাব্যথা: সাধারণ শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণ।
এই ভাইরাসটি সাধারণত শীতকালীন সময়ে বেশি সক্রিয়
থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়।
২. এইচএমপিভি ভাইরাসের মৃত্যু
ঝুঁকি
এটি মূলত শিশুদের এবং বয়স্কদের জন্য একটি বেশি
বিপজ্জনক ভাইরাস হতে পারে, কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল থাকে।
কিছু ক্ষেত্রে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ গুরুতর শ্বাসকষ্ট,
ফুসফুসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
গুরুতর উপসর্গ
- গুরুতর শ্বাসকষ্ট: বিশেষ করে শিশু এবং
বয়স্কদের ক্ষেত্রে, এইচএমপিভি আক্রান্ত হলে শ্বাসনালিতে
ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। শ্বাসনালীতে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হতে পারে যে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় এবং
ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (ICU) চিকিৎসা নিতে হয়।
- এলার্জিক রিঅ্যাকশন: কিছু রোগী যারা অতিরিক্ত
সংবেদনশীল, তাদের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ হাঁপানি এবং
অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এটি যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা
না করা হয়, তবে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যাদের জন্য গুরুতর ঝুঁকি
এইচএমপিভি ভাইরাসের গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে যারা
উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন, তাদের মধ্যে:
- শিশুরা: শিশুদের শ্বাসনালী সংকীর্ণ থাকে,
যা তাদের শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বাড়ায়।
- বয়স্করা: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, এবং তারা এই ভাইরাসের প্রতি
বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে।
- দ্বিতীয় রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা: যেমন
যারা হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যা, ডায়াবেটিস বা দূর্বল রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা নিয়ে বেঁচে আছেন (যেমন HIV আক্রান্ত
ব্যক্তি), তাদের জন্য এই ভাইরাস বিপজ্জনক হতে পারে।
৩. ফুসফুসের সংক্রমণ ও গুরুতর
পরিস্থিতি
এইচএমপিভি ভাইরাসে ফুসফুসের সংক্রমণ খুব গুরুতর
হতে পারে, এবং যদি এর চিকিৎসা যথাসময়ে না করা হয়, তবে এটি পনিোমোনিয়া
বা ফুসফুসের ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে অক্সিজেনের অভাব হতে পারে এবং রোগীর
জীবনযাপন সংকটপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
৪. এইচএমপিভি ভাইরাসের
চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনা
এই ভাইরাসের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল
চিকিৎসা নেই, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস সংক্রমণের
মতো চিকিৎসা করা হয়। এতে রোগীর আরাম এবং উপসর্গের তীব্রতা কমানোর জন্য পেইন
রিলিভারস, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগস, এবং অক্সিজেন থেরাপি ব্যবহার করা হয়।
চিকিৎসার মাধ্যমগুলো:
- ওষুধ এবং পেইন রিলিভারস: সর্দি,
কাশি এবং গলা ব্যথা কমাতে সাধারণত পেইন রিলিভারস যেমন প্যারাসিটামল
বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা হতে পারে।
- অক্সিজেন থেরাপি: গুরুতর শ্বাসকষ্ট হলে
রোগীদের অক্সিজেন থেরাপি প্রদান করা হয়।
- হাসপাতালে ভর্তি: গুরুতর শ্বাসকষ্ট বা
প্যানক্রিয়েটিক ইনফেকশনের ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হতে পারে।
এখানে তাদের পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (ICU) এর সাহায্য নেওয়া হয়।
৫. এটা কিভাবে প্রতিরোধ করা
যায়?
এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কিছু
সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে:
- হাত ধোয়া: নিয়মিত হাত ধোয়া এবং হাঁচি বা কাশি
দেওয়ার সময় মুখ ঢাকার মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
- মাস্ক ব্যবহার: সাধারণ সর্দি-কাশি বা
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা থাকলে মাস্ক পরা উচিত, যাতে
ভাইরাস অন্যদের মধ্যে না ছড়ায়।
- হোম আইসোলেশন: ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির
কাছাকাছি না গিয়ে তাদের হোম আইসোলেশনে থাকতে সাহায্য করা উচিত।
৬. উপসংহার
এইচএমপিভি ভাইরাস সাধারণত একটি হালকা সংক্রমণ হতে পারে, তবে কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসের ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে, যা মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির জন্য এই ভাইরাস অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে, এবং তাদের জন্য যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা অপরিহার্য। দ্রুত চিকিৎসা, পর্যবেক্ষণ এবং সতর্কতার মাধ্যমে এই ভাইরাসের গুরুতর প্রভাব এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles