যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের জন্য জরুরী স্বাস্থ্য সতর্কতা
করোনা (COVID-19) সংক্রমণের পর অনেকেই সুস্থ হয়ে
উঠেছেন, কিন্তু তাদের শরীরের কিছু অংশে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
থাকতে পারে, যা সাধারণত পোস্ট-কোভিড সিন্ড্রোম বা লং
কোভিড হিসাবে পরিচিত। যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন,
তাদের জন্য স্বাস্থ্য সতর্কতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে
দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এড়ানোর জন্য কিছু সতর্কতা ও
পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত।
নিচে করোনা আক্রান্তদের জন্য স্বাস্থ্য সতর্কতা ও
সুস্থ থাকার উপায় বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হলো:
১. শরীরের স্বাভাবিক
কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা
করোনা সংক্রমণ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের
কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন শ্বাসপ্রশ্বাস, হৃৎপিণ্ডের
গতি, এবং শক্তির স্তর। সুস্থ হওয়ার পরেও শরীরের শক্তি
পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম: বিশ্রাম নেওয়া খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। রোগমুক্ত হওয়ার পর শরীরকে পুনরায় শক্তি অর্জন করার জন্য
পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন।
- ধীরে ধীরে শারীরিক কার্যক্রম শুরু করা: একেবারে
ভারী ব্যায়াম না করে ধীরে ধীরে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা শুরু করুন। অতিরিক্ত
চাপ দিলে আবার শরীরের ক্লান্তি বাড়তে পারে।
- হালকা শারীরিক কসরত: নিয়মিত হাঁটা, স্ট্রেচিং, বা যোগব্যায়াম শরীরের শক্তি বাড়ানোর
জন্য সহায়ক।
২. শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যার
জন্য সতর্কতা
অনেক করোনা আক্রান্ত রোগী শ্বাস-প্রশ্বাসের
সমস্যায় ভুগে থাকেন, যেমন হাঁচি, কাশি, অথবা শ্বাস নিতে অসুবিধা। এই সমস্যা গুলি কাটিয়ে উঠতে কিছু পরামর্শ দেওয়া
হচ্ছে:
- শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম: দৈনিক
শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম যেমন প্রাণায়াম বা ডায়াফ্রামাটিক ব্রেথিং
(diaphragmatic breathing) প্র্যাকটিস করুন। এতে
শ্বাসপ্রশ্বাসের সক্ষমতা বাড়ে।
- মিষ্টি বা তীক্ষ্ণ গন্ধ এড়িয়ে চলা: অনেক
রোগী কোভিড পরবর্তী সময়ে তীক্ষ্ণ গন্ধ বা মিষ্টি গন্ধে অস্বস্তি অনুভব করেন।
এটি দূর করতে ধীরে ধীরে নরম গন্ধের সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়া উচিত।
- হাইড্রেশন: পানি এবং অন্যান্য তরল গ্রহণে মনোযোগ
দিন। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য হয়।
৩. মানসিক স্বাস্থ্য এবং
মানসিক চাপ কমানো
করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং
অবসাদ অনেক বেশি দেখা দেয়। এটি মোকাবেলা করার জন্য:
- মাইন্ডফুলনেস বা মেডিটেশন: প্রতি
দিন কয়েক মিনিটের জন্য মেডিটেশন বা মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস করা মানসিক
শান্তি এবং অভ্যন্তরীণ প্রশান্তি বাড়াতে সহায়ক।
- নিজের অনুভূতি শেয়ার করা: পরিবারের
সদস্যদের বা বন্ধুর সঙ্গে আপনার অনুভূতি শেয়ার করুন। তাদের সহানুভূতি ও
সমর্থন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
- পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা: যদি
দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ অনুভব করেন, তবে
একজন থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া উচিত।
৪. সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায়
রাখা
করোনা পরবর্তী সময়ে শরীরের সঠিক পুষ্টি খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পুনরুদ্ধারের জন্য সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা
উচিত:
- পুষ্টিকর খাবার: প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল, প্রোটিন (মাছ, মাংস,
ডাল) এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ভিটামিন C এবং D, জিঙ্ক, এবং
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার শরীরের শক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ায়।
- পানি পান করা: শরীরকে পর্যাপ্ত হাইড্রেটেড
রাখতে দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন।
- শর্করা ও চর্বি নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত
চর্বি, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনির পরিমাণ কমিয়ে
খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৫. ঘুমের অভ্যাস সঠিক রাখা
করোনা পরবর্তী সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে। কিছু
পরামর্শ:
- ঘুমের সময় নির্দিষ্ট করুন: প্রতিদিন
একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং সকাল বা বিকেল সময় ঘুমাতে গেলে তা
খুব তাড়াতাড়ি না করার চেষ্টা করুন।
- ঘুমের পরিবেশ উন্নত করুন: শয়নকক্ষে
একটানা অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে ভাল ঘুমের জন্য।
- ঘুমের আগে ভারী খাবার এড়িয়ে চলা: ভারী
খাবার খাওয়ার পর ঘুমানোর আগে অন্তত ২-৩ ঘণ্টা বিরতি দিন।
৬. মেডিক্যাল চেকআপ এবং
পরামর্শ
কোভিড পরবর্তী সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত:
- ডাক্তারের পরামর্শ: যেকোনো শারীরিক অস্বস্তি বা
অসুস্থতা অনুভব হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- স্টেথোস্কোপ পরীক্ষা: হৃদপিণ্ড
এবং ফুসফুসের সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত পরীক্ষা করান।
- রক্তচাপ এবং চিনির স্তর পরীক্ষা করা: করোনা
পরবর্তী সময়ে হাইপারটেনশন বা ডায়াবেটিসের মতো রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে, তাই এসব নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।
৭. সামাজিক যোগাযোগ এবং
মানসিক পুনর্বাসন
করোনা পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ এবং সামাজিক
জীবনও গুরুত্বপূর্ণ:
- বন্ধু ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ: সুস্থ
হওয়া পরে বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে বের হওয়া, তবে
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন এবং পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ: কোভিড
পরবর্তী সময়ে সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা
যেতে পারে, যেমন স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ।
৮. দীর্ঘমেয়াদী কোভিড (Long COVID) লক্ষণগুলি
নজরে রাখা
করোনার কিছু রোগী দীর্ঘমেয়াদী কোভিডের লক্ষণ
অনুভব করেন, যেমন ক্লান্তি, মাংসপেশির ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা এবং স্মৃতিভ্রম। এসব লক্ষণ
দেখা দিলে:
- ডাক্তারের পরামর্শ: যদি দীর্ঘমেয়াদী কোভিডের
লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ
নিতে হবে।
- অনুশীলন এবং ধীরে ধীরে সুস্থতা: ধীরে
ধীরে শক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণ অনুসরণ করা
উচিত।
উপসংহার:
করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও
তাদের শরীর এবং মনকে পুনরুদ্ধারের জন্য সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক পুষ্টি,
মানসিক শান্তি বজায় রাখা এবং নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা এসবই সুস্থ
থাকার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে, দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা বা
কোভিড পরবর্তী লক্ষণগুলো অনুভব করলে অবশ্যই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া
উচিত।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles