ফুসফুস ক্যান্সার ও এর লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ, প্রতিকার,
করণীয়, চিকিৎসা, পরামর্শ
ও সতর্কতা
ফুসফুস ক্যান্সার কী? ফুসফুস ক্যান্সার হলো ফুসফুসের
কোষে অস্বাভাবিক এবং অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি, যা সময়ের সাথে সাথে
ক্যান্সারে পরিণত হয়। এটি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে:
- বড় সেল লাং ক্যান্সার (Small Cell Lung Cancer - SCLC): এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- ছোট সেল লাং ক্যান্সার (Non-Small Cell Lung Cancer - NSCLC): এটি অনেক বেশি সাধারণ এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ: ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ প্রাথমিকভাবে তেমন স্পষ্ট না
হলেও কিছু সাধারণ লক্ষণ হতে পারে:
- দীর্ঘমেয়াদি কাশি: বিশেষ করে এমন কাশি, যা সাধারণ সর্দি বা ফ্লু
থেকে বেশি সময় ধরে চলে।
- রক্তসহ কাশি: কাশির সাথে রক্ত বের হওয়া, যা ক্যান্সারের একটি
সাধারণ লক্ষণ।
- শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতেতে সমস্যা: ফুসফুসে ক্যান্সার হলে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
- বুকে ব্যথা: বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব হতে পারে।
- শক্তি হারানো এবং ক্লান্তি: অতিরিক্ত ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং
শরীরের শক্তি হ্রাস।
- ভুলে যাওয়া ও ওজন কমে যাওয়া: শরীরের অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস এবং খাবারের প্রতি আগ্রহ
কমে যাওয়া।
- শরীরের যেকোনো অংশে ফুলে যাওয়া: ফুসফুসের ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ফুলে যেতে পারে,
বিশেষ করে গলার কাছাকাছি বা মুখের আশপাশে।
ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ: ফুসফুস ক্যান্সারের মূল কারণ হলো ধূমপান এবং অন্যান্য
পরিবেশগত কারণসমূহ। তবে এর কিছু কারণ রয়েছে, যেগুলি
সাধারণত লংটার্ম এক্সপোজার থেকে ঘটে:
- ধূমপান: ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ। ধূমপানকারীরা ক্যান্সারে
আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
- প্যাসিভ স্মোকিং: যারা ধূমপান না করলেও, ধূমপায়ী ব্যক্তির
আশেপাশে থাকেন তারা প্যাসিভ স্মোকিংয়ের মাধ্যমে ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে
পারেন।
- বায়ু দূষণ: দূষিত বায়ু এবং রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি
বাড়ায়।
- রেডিয়েশন এক্সপোজার: যেমন, রেডন গ্যাস বা অতিরিক্ত এক্স-রে (যাদের
জন্য চিকিৎসা ব্যবহৃত হয়)।
- জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস: যাদের পরিবারের সদস্যরা ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত
হয়েছেন, তাদের মধ্যে ঝুঁকি বেশি।
- অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থের সংস্পর্শ: এসবেস্টস, আর্সেনিক, নাইট্রোসামিন, ভারী ধাতু ইত্যাদির সংস্পর্শে
আসলে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ফুসফুস ক্যান্সারের প্রতিরোধ:
- ধূমপান পরিহার: ধূমপান থেকে দূরে থাকা এবং ধূমপান ছেড়ে দেওয়া সবচেয়ে কার্যকর
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।
- প্যাসিভ স্মোকিং এড়িয়ে চলা: অন্যদের ধূমপান থেকে দূরে থাকা এবং পরিষ্কার পরিবেশে
থাকা।
- শুদ্ধ বায়ু: বায়ু দূষণ কমাতে কাজ করা এবং শুদ্ধ বাতাসে থাকা।
- সুস্থ জীবনযাপন: নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য এবং পর্যাপ্ত
বিশ্রাম নেওয়া, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
সাহায্য করে।
- অতিরিক্ত এক্স-রে বা রেডিয়েশন এড়িয়ে চলা: চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত এক্স-রে বা রেডিয়েশন গ্রহণ
কমানো।
- ফুসফুস ক্যান্সারের স্ক্রীনিং: যদি আপনার পরিবারে ফুসফুস ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে বা
আপনি ধূমপায়ী, তবে নিয়মিত স্ক্রীনিং করা উচিত।
ফুসফুস ক্যান্সারের প্রতিকার বা
করণীয়:
- ডায়েট ও পুষ্টি: পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, যেমন ফলমূল, সবজি, পূর্ণ শস্য, এবং
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।
- অবসাদ পরিহার: ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের সঠিক বিশ্রাম এবং মানসিক শান্তি
গুরুত্বপূর্ণ।
- আলাদা চিকিৎসা: ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যতিক্রমী হতে পারে, তাই
রোগীকে তার নিজস্ব শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা: ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা বিভিন্ন পদ্ধতিতে করা হয়, যা ক্যান্সারের স্টেজ এবং ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়:
- সার্জারি (অপারেশন): ক্যান্সারের প্রাথমিক স্তরে ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ অপসারণের জন্য
সার্জারি করা হতে পারে।
- রেডিয়েশন থেরাপি: ক্যান্সারের কোষগুলোকে ধ্বংস করার জন্য রেডিয়েশন ব্যবহৃত হয়, যা সঠিক চিকিৎসকের অধীনে নির্ধারিত হতে পারে।
- কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপি ক্যান্সারের কোষগুলিকে ধ্বংস করার জন্য রাসায়নিক ব্যবহার
করে, এটি সাধারণত ক্যান্সারের অতিরিক্ত স্তরে প্রয়োগ
করা হয়।
- টার্গেটেড থেরাপি: নির্দিষ্ট ক্যান্সার কোষগুলোকে লক্ষ্য করে চিকিৎসা করা হয়, এটি বিশেষ কিছু ক্যান্সারের জন্য কার্যকর হতে পারে।
- ইমিউনোথেরাপি: শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করার মাধ্যমে ক্যান্সারের কোষগুলো
ধ্বংস করা।
ফুসফুস ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির
জন্য পরামর্শ:
- চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন: ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর সঠিক চিকিৎসা ও পরিকল্পনার
জন্য একজন অভিজ্ঞ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- ভালো মানসিক অবস্থায় থাকুন: ক্যান্সারের চিকিৎসায় মানসিক স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তায় মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
- ওজন এবং পুষ্টি সচেতনতা: যথাযথ পুষ্টি গ্রহণ এবং নিয়মিত খাবার খাওয়া ক্যান্সারের
চিকিৎসায় সহায়ক।
- ব্যায়াম: যতটা সম্ভব হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা করা সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
- ধূমপান ত্যাগ: ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী এবং তার পরিবারকেও ধূমপান থেকে দূরে থাকতে
হবে।
ফুসফুস ক্যান্সার থেকে সুরক্ষার জন্য
সতর্কতা:
- দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ: যদি আপনি ফুসফুস ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ অনুভব করেন,
তবে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
- ক্যান্সার স্ক্রীনিং: নিয়মিত ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য স্ক্রীনিং করা, বিশেষত ধূমপায়ী এবং ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে এমন
ব্যক্তিদের জন্য।
- স্বাস্থ্যকর পরিবেশ: ধূমপান, বায়ু দূষণ বা ক্ষতিকারক রাসায়নিক
পদার্থ থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
ফুসফুস ক্যান্সার একটি গুরুতর কিন্তু
প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতা নিয়ে রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles