টিবি (যক্ষ্মা) ও এর লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ, প্রতিকার,
করণীয়, চিকিৎসা, পরামর্শ
ও সতর্কতা
টিবি (যক্ষ্মা) কী? টিবি বা যক্ষ্মা একটি সংক্রামক
রোগ, যা মূলত Mycobacterium tuberculosis নামে একটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি প্রধানত ফুসফুসের সংক্রমণ
ঘটায়, তবে অন্যান্য অঙ্গ যেমন কিডনি, মস্তিষ্ক
এবং হাড়েও ছড়িয়ে পড়তে পারে। টিবি বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যখন একজন আক্রান্ত ব্যক্তি কাশে বা হাঁচি দেয়।
টিবির লক্ষণ: টিবির লক্ষণ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে পারে এবং বেশিরভাগ
ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। এর সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
- দীর্ঘমেয়াদি কাশি: সাধারণত দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে কাশি থাকে, যা শুকনো হতে পারে অথবা রক্তাক্ত হতে পারে।
- জ্বর: বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে জ্বর আসে, যা
স্বাভাবিক থেকে একটু বেশি তীব্র হতে পারে।
- রাতের ঘাম: রাতের বেলায় অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বিশেষ করে
ঘুমানোর সময়।
- শক্তি হারানো এবং ক্লান্তি: শরীর দুর্বল অনুভূত হওয়া এবং দ্রুত ক্লান্তি আসা।
- ওজন কমে যাওয়া: অজ্ঞান বা অনাহারে ওজন কমে যাওয়া।
- শ্বাসকষ্ট: ফুসফুসে সংক্রমণ থাকলে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
- বুকে ব্যথা: ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে বুকের মাঝে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- রক্তাক্ত কাশি: কাশির সাথে রক্ত বের হওয়া, যা গুরুতর
পরিস্থিতির আলামত হতে পারে।
টিবির কারণ: টিবির প্রধান কারণ হলো Mycobacterium
tuberculosis নামক ব্যাকটেরিয়া,
যা বাতাসের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে ছড়ায়।
সাধারণত কাশি, হাঁচি, বা শ্বাসের
মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে। এর কিছু সাধারণ কারণ হলো:
- অসংক্রামক বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়া: টিবি আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি, হাঁচি
বা কথা বলার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ছেড়ে দেয়, যা
অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- দুর্বল শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা: যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল (যেমন HIV আক্রান্ত ব্যক্তি বা অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি),
তাদের মধ্যে যক্ষ্মা হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
- পুষ্টির অভাব: খারাপ পুষ্টি এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন টিবি হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে
পারে।
- ধূমপান ও মদ্যপান: এই অভ্যাসগুলোও টিবি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়, কারণ
এগুলো শ্বাসযন্ত্রের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
টিবি প্রতিরোধ:
- টিকা (BCG): যক্ষ্মার বিরুদ্ধে BCG (Bacillus
Calmette-Guerin) টিকা শিশুরা সাধারণত জন্মের পর নেয়, যা টিবির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাদ্য খাওয়া, নিয়মিত
শরীরচর্চা করা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ টিবি প্রতিরোধে সহায়ক।
- স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ: যারা টিবি আক্রান্ত তাদের আলাদা ঘরে থাকা এবং সঠিক
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা উচিত (যেমন, মাস্ক পরা,
কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করা)।
- কিশোর এবং বয়স্কদের সতর্কতা: যারা আগে টিবি আক্রান্ত হয়েছেন বা কিশোর বয়সী, তাদের দ্রুত সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
টিবি প্রতিকার ও করণীয়:
- টিবি শনাক্তকরণ: টিবি শনাক্ত করার জন্য একাধিক পরীক্ষা করা হয়, যেমন
সারা শরীরের এক্স-রে, স্খলিত শ্লেষ্মা পরীক্ষা (sputum
test) এবং টিবি স্কিন টেস্ট।
- দীর্ঘ মেয়াদি ওষুধ: টিবির চিকিৎসায় একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের সংমিশ্রণ ব্যবহার করা
হয়, সাধারণত ৬-৯ মাস ধরে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে,
রোগী পুরো চিকিৎসা কোর্স শেষ না করা পর্যন্ত ওষুধ খাওয়া বন্ধ
না করে।
- রেগুলার মেডিক্যাল ফলোআপ: চিকিৎসার পর রোগীর নিয়মিত পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ
গ্রহণ করা জরুরি।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: রোগী যদি বাড়িতে থাকে, তবে বাড়ির
পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, বিশেষ করে বাতাস চলাচল ভালো রাখা
এবং রোগীকে আলাদা করা উচিত।
চিকিৎসা: টিবির চিকিৎসার জন্য ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত, চিকিৎসকরা এই রোগের জন্য একাধিক
অ্যান্টিবায়োটিকের সংমিশ্রণ দেন:
- রিপ্রামপিসিন (Rifampicin): এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক, যা টিবির ব্যাকটেরিয়া মারতে সহায়ক।
- আইসোনিয়াজিড (Isoniazid): এই অ্যান্টিবায়োটিকও টিবির জীবাণু ধ্বংস করতে সহায়তা
করে।
- পিরাজিনামাইড (Pyrazinamide): এটি টিবির ব্যাকটেরিয়া শিকল ভাঙতে সাহায্য করে।
- ইথামবুটল (Ethambutol): এটি টিবির জীবাণুর কার্যকলাপকে বাধা দেয়।
টিবি আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য
পরামর্শ:
- ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ: টিবির চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ পুরো কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।
- বিশ্রাম নেয়া: আক্রান্ত ব্যক্তিকে যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হবে এবং শরীরের শক্তি ফেরাতে
সহায়ক খাবার খেতে হবে।
- স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ: কাশি, হাঁচি দেওয়ার সময় টিস্যু বা
মাস্ক ব্যবহার করা এবং হাত নিয়মিত ধোয়া।
- পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা: টিবি আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি না আসা, বিশেষ করে ছোট শিশুরা এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা।
টিবি থেকে সুরক্ষার জন্য সতর্কতা:
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: বিশেষ করে যাদের টিবির ঝুঁকি বেশি (যেমন HIV আক্রান্ত বা দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের মানুষ), তাদের
নিয়মিত টিবির জন্য পরীক্ষা করানো উচিত।
- বয়স্ক এবং শিশুর জন্য সতর্কতা: বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুদের মধ্যে টিবির ঝুঁকি বেশি,
তাদের দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
- পুষ্টির অভাব এড়িয়ে চলা: সঠিক পুষ্টি গ্রহণ এবং সুস্থ জীবনযাপন টিবি প্রতিরোধে
সহায়তা করে।
- ভ্রমণ ও বিদেশী পরিবেশে সতর্কতা: যেসব এলাকা টিবি আক্রান্ত, সেখানে
ভ্রমণের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
টিবি একটি গুরুতর রোগ হলেও সঠিক
চিকিৎসা ও সচেতনতা বাড়ালে এটি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles