নিউমোনিয়া ও এর লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ, প্রতিকার বা করণীয়, চিকিৎসা, পরামর্শ ও সতর্কতা
নিউমোনিয়া কী? নিউমোনিয়া হল একটি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, যেখানে ফুসফুসের শ্বাসকোষ বা অ্যালভিওলি (air sacs) প্রদাহিত হয়ে যায়। এই রোগটি সাধারণত জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস বা
প্যারাসাইট) দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা ফুসফুসের ভিতরে
প্রবেশ করে। নিউমোনিয়া হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে এবং চিকিৎসা না করা হলে
জীবনসংকটকর হতে পারে।
নিউমোনিয়ার লক্ষণ: নিউমোনিয়া সাধারণত তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করে, এর লক্ষণগুলো হল:
- শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, দ্রুত শ্বাস
নেয়া।
- জ্বর: সাধারণত ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (৩৭.৮°C) উপরে জ্বর
থাকে।
- কাশি: কাশি হতে পারে, যা সাধারণত
শুকনো অথবা শ্লেষ্মাযুক্ত (মিউকাস) হতে পারে।
- বুকে ব্যথা: শ্বাসনালী বা ফুসফুসে প্রদাহের কারণে বুকের মধ্যে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে
পারে।
- শক্তি হারানো ও ক্লান্তি: শরীর দুর্বল এবং ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
- শরীরের অবস্থা খারাপ হওয়া: শ্বাস নিতে গিয়ে গা ঘুরানো, ঘাম হওয়া এবং তীব্র অসুস্থতা অনুভূত হওয়া।
- রক্তাক্ত কাশির সমস্যা: কখনও কখনও কাশির সাথে রক্ত বের হতে পারে, যা গুরুতর পরিস্থিতি নির্দেশ করে।
- বাচ্চাদের মধ্যে সমস্যা: শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত নিঃশ্বাসের সমস্যা এবং ঘুমাতে
সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নিউমোনিয়ার কারণ: নিউমোনিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হলো:
- ব্যাকটেরিয়া: Streptococcus pneumoniae,
Haemophilus influenzae, এবং Mycoplasma
pneumoniae এই ব্যাকটেরিয়া নিউমোনিয়া
সৃষ্টি করতে পারে।
- ভাইরাস: ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, রাইনোভাইরাস, RSV
(Respiratory Syncytial Virus), এবং COVID-১৯ এই ভাইরাসগুলি নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে।
- ফাঙ্গাস: কিছু ফাঙ্গাসের সংক্রমণও নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত যারা দূষিত পরিবেশে কাজ করেন।
- অক্সিজেনের অভাব: বয়স্ক ব্যক্তি বা কম শক্তিশালী রোগীদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়া
বা ভাইরাসের দ্বারা সৃষ্টি হতে পারে।
- অ্যালকোহল বা ধূমপান: অ্যালকোহল বা ধূমপান নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়, কারণ এটি শ্বাসনালীর প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
- অন্যান্য রোগ: শর্করা বা ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ, অটোইমিউন ডিজিজ বা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের অসুখের রোগীরা নিউমোনিয়ায়
আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
নিউমোনিয়া প্রতিরোধ ও করণীয়:
- টিকা: নিউমোনিয়া প্রতিরোধের জন্য Pneumococcal vaccine এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নেয়া যেতে পারে, যা কিছু ধরনের নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিউমোনিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- হাত ধোয়া: হাত ধোয়া এবং ভালো শৌচ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, বিশেষ করে ঠাণ্ডা বা ভাইরাল ইনফেকশন এড়িয়ে চলা।
- ধূমপান থেকে বিরত থাকা: ধূমপান শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, তাই এটি পরিহার করা উচিত।
- বিশেষ সতর্কতা গ্রহনের পরামর্শ: বয়স্ক এবং দুর্বল রোগীদের জন্য চিকিৎসক পরামর্শ দিতে
পারেন যাতে তারা কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারেন।
- বাচ্চাদের যত্ন নেয়া: শিশুদের সর্দি, কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
নিউমোনিয়ার চিকিৎসা:
- অ্যান্টিবায়োটিকস: যদি নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়।
- ভাইরাল নিউমোনিয়ার জন্য অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা: ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্যান্য ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়ার জন্য
অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্রয়োগ করা হতে পারে।
- অক্সিজেন থেরাপি: গুরুতর নিউমোনিয়া হলে রোগীর অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে।
- ব্রঙ্কোডাইলেটর ওষুধ: শ্বাসকষ্ট কমাতে ব্রঙ্কোডাইলেটর ওষুধ ব্যবহৃত হয়।
- ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকস: যদি রোগীর নিউমোনিয়ার সঠিক কারণ না জানা যায়, তবে ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকস দেয়া হয়।
- পেইন কন্ট্রোল: বুকের ব্যথা কমানোর জন্য পেইন রিলিভার ব্যবহৃত হতে পারে।
নিউমোনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য
পরামর্শ:
- বেড রেস্ট: নিউমোনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং শ্বাস নিতে সহজ
করার জন্য বিছানায় বিশ্রাম করতে বলা হয়।
- পানি পান করা: শরীরের তরল শোষণ ও শ্বাসযন্ত্র পরিষ্কার রাখার জন্য প্রচুর পানি পান করা
উচিত।
- হালকা খাবার: হালকা এবং সহজে পাচ্য খাবার খাওয়া উচিত, যেন শরীরের শক্তি কম না হয়।
- মেডিক্যাল চেকআপ: নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ এবং রেকমেন্ডেড ওষুধ গ্রহণ করা জরুরি।
নিউমোনিয়ার জন্য সতর্কতা:
- টিকা গ্রহণ: বিশেষ করে বয়স্ক, শিশুরা এবং
যারা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত তাদের জন্য নিউমোনিয়ার টিকা গ্রহণ করা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসক দেখানো: শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, এবং অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ
নেয়া উচিত।
- আন্তর্জাতিক যাত্রা এবং পরিবেশগত ঝুঁকি: যারা বিদেশ ভ্রমণ করেন বা জীবাণু প্রবণ এলাকায় থাকেন
তাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকা উচিত।
- ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ এড়িয়ে চলা: ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি, কাশি ইত্যাদির বিরুদ্ধে
নিয়মিত সতর্কতা অবলম্বন করা।
এই পদক্ষেপগুলি নিউমোনিয়ার প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং সার্বিক সুস্থতায় সহায়ক হতে পারে।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles