পরিবর্তনযোগ্য বন্ড কী? পরিবর্তনযোগ্য বন্ডের সুবিধা ও অসুবিধা
পরিবর্তনযোগ্য বন্ড (Convertible Bond) হলো একটি ধরনের বন্ড, যা ধারককে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বন্ডটি শেয়ারে রূপান্তর করার (convert)
অধিকার প্রদান করে। এই বন্ডের মাধ্যমে ধারক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ
শেয়ার কিনতে পারেন, সাধারণত পূর্বনির্ধারিত মূল্য বা
স্ট্রাইক প্রাইস দিয়ে। পরিবর্তনযোগ্য বন্ডের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এটি একটি ঋণপত্র হলেও এটি শেয়ারে পরিণত হতে পারে, যা
একটি অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে।
পরিবর্তনযোগ্য বন্ডের সুবিধাসমূহ
- ধারককে শেয়ার
ক্রয়ের সুযোগ: পরিবর্তনযোগ্য বন্ডের মাধ্যমে বন্ডধারক একটি নির্দিষ্ট
সময়ের মধ্যে সেই বন্ডটি শেয়ারে রূপান্তর করতে পারেন। এটি যদি শেয়ারের মূল্য
বৃদ্ধি পায়, তবে ধারক মুনাফা অর্জন করতে পারেন। এটি
বন্ডধারীকে শেয়ারহোল্ডারের সুবিধা প্রদান করে।
- নিম্ন সুদের হার: পরিবর্তনযোগ্য
বন্ড সাধারণত সাধারণ বন্ডের তুলনায় কম সুদ প্রদান করে। কারণ, বন্ডধারকরা জানেন যে, তারা শেয়ারহোল্ডার হতে
পারলে তারা ভবিষ্যতে শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি থেকে লাভ নিতে পারবেন। এর ফলে
কোম্পানি তাদের বন্ডের জন্য কম সুদ দিতে পারে।
- বিনিয়োগকারীর
জন্য ঝুঁকি হ্রাস: যদি শেয়ার বাজারে দাম কমে যায় বা বন্ডের মার্কেট মূল্য
কমে যায়, তবে বন্ডধারকরা তাদের বন্ড ধরে রেখে সুদ অর্জন
করতে পারেন। কিন্তু যদি শেয়ার মূল্য বাড়ে, তবে তারা
বন্ডকে শেয়ারে রূপান্তর করতে পারেন, যা তাদের জন্য
লাভজনক হতে পারে। এটি বন্ডধারককে কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করে।
- কোম্পানির জন্য
অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহের সুযোগ: পরিবর্তনযোগ্য বন্ডের মাধ্যমে
কোম্পানিগুলি তাদের তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। কেননা, এটি
একটি আকর্ষণীয় উপকরণ হিসেবে কাজ করে, যা বিনিয়োগকারীদের
জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে। এর ফলে কোম্পানি কম সুদ দিয়ে তহবিল সংগ্রহ করতে
সক্ষম হয়।
- বাণিজ্যিক
সুবিধা: যখন পরিবর্তনযোগ্য বন্ড শেয়ারহাতে রূপান্তরিত হয়,
তখন কোম্পানির শেয়ারবাজারে নতুন শেয়ার ইস্যু হতে থাকে, যা প্রতিষ্ঠানটির ইক্যুইটি স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে। এটি
কোম্পানির ঋণের পরিমাণ কমাতে পারে, এবং প্রতিষ্ঠানের
শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে পুঁজি সংযোজন করতে সাহায্য করে।
পরিবর্তনযোগ্য বন্ডের অসুবিধাসমূহ
- শেয়ারধারীদের
জন্য ইস্যু সংখ্যা বাড়ানো: যখন বন্ডধারকরা তাদের বন্ডকে শেয়ারে
রূপান্তর করে, তখন নতুন শেয়ার ইস্যু করা হয়। এর ফলে,
প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার সংখ্যা কমে যেতে
পারে (ডিলিউশন)। এতে তারা তাদের মালিকানা হারাতে পারেন।
- দীর্ঘমেয়াদী
ঝুঁকি:
যদি কোম্পানি আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বা শেয়ারমূল্য বৃদ্ধি
না পায়, তবে পরিবর্তনযোগ্য বন্ডের আকর্ষণীয়তা কমে যেতে
পারে। এর ফলে কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদে বন্ডধারকদের থেকে আর্থিক ঝুঁকির মুখোমুখি
হতে পারে।
- কোম্পানির
শেয়ারের মূল্য কমে গেলে ক্ষতি: যদি শেয়ারমূল্য কমে যায়, তবে বন্ডধারকরা তাদের বন্ড পরিবর্তন না করেই সাধারণ বন্ড হিসেবে
রাখতে পারে। তবে, তারা শেয়ার রূপান্তরের সুযোগ হারায়
এবং কোম্পানি উল্লিখিত শেয়ারগুলো বিনা মূল্যে বাজারে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে
বিতরণ করতে পারে। এটি কোম্পানির ভবিষ্যত লাভজনকতা এবং তহবিলের উপর চাপ ফেলতে
পারে।
- শেয়ারের মূল্য
বৃদ্ধির কারণে লাভের সীমাবদ্ধতা: পরিবর্তনযোগ্য বন্ডের মাধ্যমে
বন্ডধারকরা শেয়ার রূপান্তর করে লাভ করতে পারেন, কিন্তু
তাদের লাভ একটি নির্দিষ্ট স্ট্রাইক প্রাইসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। যদি শেয়ার
মূল্য বেশি বেড়ে যায়, তবে তাদের লাভ সীমিত থাকে। এটি
বন্ডধারকের জন্য কিছুটা অসুবিধা হতে পারে।
- কোম্পানির শেয়ার
মূল্য বৃদ্ধি হলে কোম্পানি নিজের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আরও কম তহবিল সংগ্রহ
করতে পারে: যখন শেয়ার মূল্য বাড়ে এবং বন্ডধারকরা তাদের বন্ড শেয়ারে
রূপান্তর করে, তখন কোম্পানি নতুন শেয়ার ইস্যু করে আর
তেমন তহবিল সংগ্রহ করতে পারে না। ফলে, প্রতিষ্ঠানটি
বাজারে এক নতুন শেয়ার বাজারে আনতে পারে না, যা
বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক নয়।
উপসংহার
পরিবর্তনযোগ্য বন্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক যন্ত্র, যা কোম্পানিগুলির জন্য তহবিল সংগ্রহের একটি সুবিধাজনক উপায় এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভের সম্ভাবনা তৈরি করে। তবে, এর সঙ্গে কিছু ঝুঁকিও থাকে, যেমন শেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা কমে যাওয়া এবং সুদের হার কম হওয়া। এগুলোর মধ্যে কোনটি গুরুত্ব পাচ্ছে, তা নির্ভর করে কোম্পানির অর্থনৈতিক অবস্থার উপর এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য কতটা লাভজনক তা পর্যবেক্ষণ করার ওপর।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles