আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের সংজ্ঞা ও এই চ্যানেল ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের প্রকারভেদ
আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ (Formal Communication) এর সংজ্ঞা
আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হলো সংগঠনের নির্ধারিত
নিয়ম-কানুন, কাঠামো ও চ্যানেল অনুসরণ করে পরিচালিত যোগাযোগ। এ ধরনের যোগাযোগ সাধারণত
ঊর্ধ্বতন থেকে অধস্তন বা বিপরীত দিকে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী হয়। অফিসিয়াল পত্র,
বিজ্ঞপ্তি, মেমো, রিপোর্ট,
সভা ইত্যাদি এর উদাহরণ।
মূল বৈশিষ্ট্য:
- নির্ধারিত চ্যানেল অনুসরণ করে
- দলিলভিত্তিক বা লিখিত হয়
- কর্তৃত্ব কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত
- তথ্য সংরক্ষণযোগ্য ও প্রতিযোগিতামূলক
অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ (Informal Communication) এর সংজ্ঞা
অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ হলো ব্যক্তিগত সম্পর্ক, বন্ধুত্ব বা
আস্থা ভিত্তিক যে যোগাযোগ সংগঠনের নির্ধারিত কাঠামোর বাইরে ঘটে। এটি বন্ধুর মতো,
অপ্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশে স্বাভাবিক কথাবার্তার মাধ্যমে হয়। যেমন:
ক্যান্টিনে আলাপ, করিডোরে কথা বলা, সামাজিক
মিডিয়া চ্যাট ইত্যাদি।
মূল বৈশিষ্ট্য:
- স্বাধীন ও অপ্রাতিষ্ঠানিক
- দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে
- বন্ধুত্ব বা পারস্পরিক সম্পর্কনির্ভর
- কখনো কখনো গুজবের রূপ নিতে পারে
একটি প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনার
জন্য কার্যকর যোগাযোগ অপরিহার্য। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক এই যোগাযোগ প্রধানত দুইভাবে
সম্পন্ন হয়—আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে। আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ
নির্ধারিত কাঠামো, নিয়ম ও কর্তৃত্ব অনুসরণ করে পরিচালিত হয়, যেখানে আদেশ, প্রতিবেদন, সিদ্ধান্ত
ও কর্মপন্থা আদান-প্রদান হয় সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। অপরদিকে, অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয় ব্যক্তিগত সম্পর্ক, বন্ধুত্ব
বা আস্থাভিত্তিক, যা অফিসিয়াল কাঠামোর বাইরে স্বাভাবিকভাবে
গড়ে ওঠে এবং অনেক সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলে।
আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের
প্রকারভেদ (Internal Communication Types)
অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বলতে প্রতিষ্ঠানের ভেতরের
বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে যে যোগাযোগ হয় তা বোঝায়। এটি
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়।
১. আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ
চ্যানেল ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের প্রকারভেদ:
১.১. ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ (Upward Communication): অধস্তন থেকে
ঊর্ধ্বতনের কাছে প্রতিবেদন, অভিযোগ, মতামত বা পরামর্শ পাঠানো। উদাহরণ:
মাসিক রিপোর্ট, অভিযোগপত্র, কর্মীদের
পরামর্শ ফর্ম।
১.২. নিম্নগামী যোগাযোগ (Downward Communication): ঊর্ধ্বতন থেকে
অধস্তনদের দিকে নির্দেশনা, আদেশ, নীতিমালা ইত্যাদি পাঠানো। উদাহরণ:
অফিস আদেশ, পরিপত্র, ট্রেনিং গাইডলাইন।
১.৩. আড়াআড়ি যোগাযোগ (Horizontal Communication): সমমর্যাদার বা
একই বিভাগের সহকর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ। উদাহরণ: বিভাগীয় বৈঠক, যৌথ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা।
১.৪. তির্যক যোগাযোগ (Diagonal Communication): বিভিন্ন স্তর এবং
বিভাগের কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ, যাঁরা সরাসরি রিপোর্টিং লাইনে নেই। উদাহরণ:
ফিন্যান্স বিভাগের কর্মকর্তা কোনো প্রকল্প ব্যবস্থাপককে বাজেট নিয়ে যোগাযোগ করেন।
২. অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ
চ্যানেল ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের প্রকারভেদ:
২.১. সামাজিক যোগাযোগ (Social Communication): কর্মীদের মধ্যে
বন্ধুত্ব বা আড্ডাভিত্তিক কথোপকথন। উদাহরণ: লাঞ্চে একসঙ্গে বসে আলোচনা করা।
২.২. গুজব চ্যানেল বা
গ্রেপভাইন (Grapevine Communication): অনানুষ্ঠানিক ও অপ্রমাণিত তথ্য একে অপরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া। উদাহরণ:
“শোনা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহে নতুন নিয়োগ হবে।”
২.৩. সহানুভূতিমূলক যোগাযোগ (Empathetic Communication): ব্যক্তিগত
সমর্থন, সহানুভূতি বা আবেগ ভাগাভাগির মাধ্যমে যোগাযোগ। উদাহরণ:
সহকর্মীর পারিবারিক সমস্যায় পাশে দাঁড়ানো।
২.৪. সামাজিক মাধ্যমভিত্তিক
যোগাযোগ:
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ,
মেসেঞ্জার ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে সহকর্মীদের মাঝে যোগাযোগ। উদাহরণ:
প্রকল্প বিষয়ক আলোচনা ফেসবুক গ্রুপে করা।
আভ্যন্তরীণ যোগাযোগে এই দুই ধরনের চ্যানেলই ভিন্ন
ভিন্ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একদিকে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ
প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত কার্যকারিতা নিশ্চিত করে, অপরদিকে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ
কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন, আস্থা বৃদ্ধি ও তথ্যের দ্রুত
প্রবাহ ঘটায়।
সার্চ কী: আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ, অনানুষ্ঠানিক
যোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ, যোগাযোগের
ধরন, অফিস যোগাযোগ, অফিসের যোগাযোগ
ব্যবস্থা, যোগাযোগের প্রকারভেদ, যোগাযোগ
চ্যানেল, দাপ্তরিক যোগাযোগ, গ্রেপভাইন
কমিউনিকেশন, প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা,
internal communication in Bengali, formal communication in Bengali, informal
communication in Bengali, organizational communication, organizational
communication types, যোগাযোগ শিক্ষা
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles