গ্যাস্ট্রিক আলসার:
লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
গ্যাস্ট্রিক আলসার (Gastric ulcer) অর্থাৎ পাকস্থলীর আলসার হলো পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ দেয়ালে সৃষ্টি হওয়া
একধরনের ক্ষত বা ঘা। এটি "পেপটিক আলসার ডিজিজ" (Peptic Ulcer
Disease - PUD)-এর একটি ধরন।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের
প্রধান লক্ষণসমূহ:
১. পাকস্থলীর
মাঝামাঝি বা উপরের অংশে ব্যথা
- সাধারণত তীব্র জ্বালাপোড়া ধরনের ব্যথা হয়।
- খালি পেটে ব্যথা বেশি হয় এবং খাওয়ার পর কিছুটা কমে
যেতে পারে।
২. বমি বমি ভাব বা
বমি
- কখনো কখনো রক্ত মিশ্রিত বমিও হতে পারে (গভীর
ক্ষতের কারণে)।
৩. অতিরিক্ত গ্যাস
বা ঢেকুর
- খাবার হজমে সমস্যা হলে ঢেকুর, গ্যাস ও
অস্বস্তি দেখা যায়।
৪. ওজন কমে যাওয়া
- খাওয়া কমে যাওয়া বা দেহের পুষ্টির ঘাটতির কারণে ওজন
কমে যেতে পারে।
৫. অবিরত পেটের
গন্ধযুক্ত ঢেকুর
- পাকস্থলীর অ্যাসিড ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে মুখে দুর্গন্ধ
তৈরি হয়।
৬. কালো রঙের
পায়খানা (melena)
- পায়খানায় রক্তের উপস্থিতি নির্দেশ করে, যা
অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের লক্ষণ।
কারণসমূহ:
১. Helicobacter pylori (H.
pylori) ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
- এটি পাকস্থলীর দেয়াল ক্ষয় করে ঘা তৈরি করে।
২. নিয়মিত
ব্যথানাশক ওষুধ (NSAIDs) সেবন
- যেমন: ibuprofen, aspirin ইত্যাদি।
৩. অতিরিক্ত
চা/কফি, মদ্যপান বা ধূমপান
- পাকস্থলীর অ্যাসিড ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়।
৪. মানসিক চাপ ও
অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস
- এদের প্রভাবেও আলসার হতে পারে।
নির্ণয়ের পদ্ধতি:
- রক্ত পরীক্ষা ও স্টুল টেস্ট – H. pylori সংক্রমণ চিহ্নিত করতে
- Urea breath test – H. pylori শনাক্ত করার
আধুনিক পদ্ধতি
- এন্ডোস্কপি (Endoscopy) – পাকস্থলীর
অভ্যন্তরীণ ক্ষতের অবস্থান সরাসরি দেখা
- বায়োপসি – প্রয়োজনে ক্ষত থেকে টিস্যু
সংগ্রহ করে ক্যান্সারজাতীয় কোনো ঝুঁকি আছে কি না দেখা হয়
চিকিৎসা পদ্ধতি:
১. ঔষধের মাধ্যমে
চিকিৎসা:
- অ্যাসিড কমানোর ওষুধ:
- Proton Pump Inhibitors (PPI): Omeprazole,
Esomeprazole
- H2 Receptor Blockers: Ranitidine, Famotidine
- অ্যান্টিবায়োটিক (যদি H. pylori পাওয়া যায়):
- Amoxicillin + Clarithromycin + PPI (Triple therapy)
- একটানা ৭–১৪ দিন পর্যন্ত খেতে হতে পারে
- Antacid বা mucosal protective
agents:
- যেমন Sucralfate বা Bismuth
compounds, পাকস্থলীর আবরণ রক্ষা করে
২. খাদ্যাভ্যাস ও
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন:
- অতিরিক্ত ঝাল, টক, ভাজা
খাবার এড়িয়ে চলুন
- ধূমপান, অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে
বন্ধ করুন
- হালকা, সহজপাচ্য, সময়মতো
খাবার খান
- বেশি সময় খালি পেটে থাকা থেকে বিরত থাকুন
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন
৩. জটিলতা দেখা দিলে
অস্ত্রোপচার: যদি ওষুধে কাজ না হয়, ঘা বড় হয়, বা রক্তপাত/ছিদ্র দেখা দেয়,
তাহলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
কখন দ্রুত চিকিৎসকের
পরামর্শ নেবেন?
- যদি পেট ব্যথা সহ রক্তবমি হয়
- কালো রঙের পায়খানা হয়
- বারবার বমি হয়
- জ্ঞান হারানো বা মাথা ঘোরে
উপসংহার: গ্যাস্ট্রিক আলসার
একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা। নিয়মিত ওষুধ সেবন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং সঠিক
পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। যেকোনো উপসর্গ
দেখা দিলে দেরি না করে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
সার্চ কী: গ্যাস্ট্রিক আলসার, গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ, পাকস্থলীর
ঘা, গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা, হেলিকোব্যাক্টার
পাইলোরি সংক্রমণ, পেপটিক আলসার, গ্যাস্ট্রিকের
ঘরোয়া চিকিৎসা, পেটের ঘা কিভাবে ভালো হয়, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সমাধান, গ্যাস্ট্রিক ব্যথার কারণ,
পাকস্থলীর আলসার কী, পাকস্থলীর আলসার প্রতিকার,
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, হজমজনিত সমস্যা, গ্যাস্ট্রিকের ঘা, গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণের উপায়,
পাকস্থলীর ব্যথা কেন হয়, গ্যাস্ট্রিক
অ্যাসিডের লক্ষণ, গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায়, পেটের সমস্যা ও সমাধান
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক ও সম্পাদক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - সম্পাদক, Bangla Articles