শিশুদের
ব্রঙ্কাইটিস রোগ পরিচিতি, লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ,
প্রতিকার, চিকিৎসা, পরামর্শ
ও সতর্কতা
শিশুদের ব্রঙ্কাইটিস রোগ: পরিচিতি
ব্রঙ্কাইটিস একটি শ্বাসযন্ত্রের রোগ, যেখানে ব্রঙ্কিয়াল টিউব (শ্বাসনালী) প্রদাহিত হয়ে যায়। শিশুদের মধ্যে এটি
সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণ, বিশেষ করে সাধারণ ঠান্ডা বা
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে হতে পারে। ব্রঙ্কাইটিস মূলত দুই ধরনের হতে পারে—অ্যাকিউট
ব্রঙ্কাইটিস (যা সাধারণত হালকা এবং স্বল্পমেয়াদি হয়) এবং
ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস (যা দীর্ঘস্থায়ী এবং মূলত
ধূমপানকারী বা দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্তদের মধ্যে দেখা যায়)।
শিশুদের মধ্যে সাধারণত অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিস দেখা যায়।
ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণ:
শিশুদের ব্রঙ্কাইটিসের উপসর্গগুলি
সাধারণত ঠান্ডা বা সর্দির সঙ্গে মিল থাকে, কিন্তু
এটি শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে। কিছু সাধারণ
লক্ষণ হল:
- কাশি:
এটি সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। কাশি সাধারণত শুকনো হতে পারে, তবে পরে কফ সহ কাশি হতে পারে। - শ্বাসকষ্ট:
শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হতে পারে এবং শিশুর শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। - নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা সর্দি:
ব্রঙ্কাইটিসের কারণে শিশুর নাক বন্ধ হতে পারে এবং সর্দি হতে পারে। - জ্বর:
সাধারণত ১০১°F (৩৮.৩°C) পর্যন্ত হালকা জ্বর হতে পারে। - শরীরের ব্যথা বা ক্লান্তি:
শিশুর শরীরে ব্যথা অনুভব হতে পারে এবং সে ক্লান্ত থাকতে পারে। - গলা ব্যথা:
শিশুর গলা ব্যথা এবং গলা শুষ্ক হতে পারে। - হুইজিং (wheezing):
শ্বাস নেওয়ার সময় একটি শব্দ হতে পারে, যা শ্বাসনালীর সংকোচন বা প্রদাহের কারণে ঘটে।
ব্রঙ্কাইটিসের কারণ:
- ভাইরাল সংক্রমণ: সাধারণত ভাইরাস, বিশেষ করে রাইনোভাইরাস,
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, এবং রেস্পিরেটরি
সিনসাইটিয়াল ভাইরাস (RSV) এর কারণে
ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে।
- বায়ু দূষণ বা ধূমপান: ধূমপান বা দূষিত পরিবেশে থাকার কারণে শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি হতে
পারে।
- অ্যালার্জি: কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যেসব
শিশুর অ্যালার্জি আছে, তাদের ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার ঝুঁকি
বেশি থাকে।
- জীবাণু সংক্রমণ: ভাইরাস ছাড়াও, কখনও কখনও
ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণও ব্রঙ্কাইটিস সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিরোধ (Prevention):
- ভ্যাকসিনেশন:
ব্রঙ্কাইটিসের অনেক কারণ, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা RSV, প্রতিরোধে ভ্যাকসিন গ্রহণ সহায়ক হতে পারে। প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দেওয়া উচিত। - ভাল হাইজিন বজায় রাখা:
শিশুকে নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, বিশেষ করে টয়লেট ব্যবহারের পরে এবং খাবার খাওয়ার আগে। টিস্যু বা রুমাল দিয়ে কাশি বা হাঁচি দেওয়ার পর তা ফেলে দিতে হবে। - ধূমপান ও দূষিত পরিবেশ এড়িয়ে চলা:
শিশুদের ধূমপান থেকে দূরে রাখুন এবং দূষিত পরিবেশে না নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। পরিবেশে ধূমপান শিশুর শ্বাসতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। - বায়ু আর্দ্র রাখা:
শুষ্ক বাতাস শ্বাসতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই শিশুর ঘর আর্দ্র রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন।
প্রতিকার (Remedies):
- পানি ও তরল খাবারের গ্রহণ:
শিশুকে প্রচুর পানি, স্যুপ বা ফলের রস দিতে হবে। তরল শরীরে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমায়। - গরম পানি দিয়ে স্টিম:
শিশুকে গরম পানির স্টিম বা বাষ্প দেওয়া যেতে পারে, যা শ্বাসনালীকে আরাম দেয় এবং শ্লেষ্মা (কফ) কমায়। - মধু:
১ বছরের উপরের শিশুদের মধু খাওয়ানো যেতে পারে, যা গলা ব্যথা এবং কাশি কমাতে সাহায্য করে। - স্যানিটাইজার বা স্যালাইন ড্রপ:
শিশুর নাক পরিষ্কার করতে স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে এবং শ্বাসনালী মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
চিকিৎসা (Treatment):
- বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত ঘুম:
ব্রঙ্কাইটিস আক্রান্ত শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম দিতে হবে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। - অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ:
ব্রঙ্কাইটিস সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণ হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকরী নয়। তবে, যদি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ঘটে, তবে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। - শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার:
শ্বাসকষ্ট বা হুইজিং থাকলে চিকিৎসক শ্বাস প্রশ্বাস সহজ করতে ইনহেলার বা ব্রঙ্কোডায়ালেটর প্রেসক্রাইব করতে পারেন। - জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল:
শিশুর জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে।
পরামর্শ (Advice):
- চিকিৎসকের পরামর্শ:
যদি শিশু ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণ দেখায়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। শ্বাসকষ্ট বা হুইজিং বাড়লে চিকিৎসকের সাহায্য জরুরি। - বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুম:
শিশু যেন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়, যাতে তার শরীর দ্রুত সুস্থ হতে পারে। ঘুমের মাধ্যমে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। - জ্বরের সতর্কতা:
শিশু যদি দীর্ঘসময় ধরে জ্বরে ভোগে বা তার শ্বাসকষ্ট বাড়ে, তবে তা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
সতর্কতা:
- তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নেওয়া:
ব্রঙ্কাইটিস যদি ভাইরাল সংক্রমণ থেকে শুরু হয়, তা দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত। এছাড়া, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট বা গুরুতর শ্বাসনালীর সংকোচন হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হতে পারে। - শিশুকে অসুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে রাখা:
যারা ব্রঙ্কাইটিস বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত, তাদের কাছ থেকে শিশুকে দূরে রাখা উচিত, যেন ভাইরাস না ছড়ায়। - ওষুধের সঠিক ব্যবহারে সতর্ক থাকা:
যেকোনো ধরনের ওষুধ, বিশেষ করে ইনহেলার বা অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার:
শিশুদের ব্রঙ্কাইটিস একটি সাধারণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, যা ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। যথাযথ প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং পরামর্শ মেনে চললে শিশু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। তবে যদি শিশুর শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায় বা লক্ষণগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়, তখন অবিলম্বে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles