শিশুদের চিকেনপক্স রোগ পরিচিতি, লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ,
প্রতিকার, চিকিৎসা, পরামর্শ
ও সতর্কতা
শিশুদের চিকেনপক্স (Chickenpox) রোগ: পরিচিতি
চিকেনপক্স একটি highly contagious ভাইরাল রোগ,
যা ভ্যারিসেলা-জোস্টার ভাইরাস (Varicella-Zoster
Virus) দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি প্রধানত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়,
যদিও এটি প্রাপ্তবয়স্কদেরও আক্রান্ত করতে পারে। চিকেনপক্স সাধারণত
গায়ের ত্বকে ছোট লাল ফোসকার মত গুটি (পিম্পল) তৈরি হয়, যা
পরে ফাটে এবং ফোঁটা দিয়ে শুকিয়ে যায়। এই রোগ সাধারণত একটি বিশেষ ভাইরাসের মাধ্যমে
ছড়িয়ে পড়ে এবং সঠিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধের মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হতে পারে।
চিকেনপক্সের লক্ষণ:
- গায়ে লাল ফোসকা বা গুটি:
চিকেনপক্সের প্রধান লক্ষণ হল ত্বকে লাল, চুলকানো গুটি বা ফোসকা তৈরি হওয়া। প্রথমে সেগুলি ছোট এবং লালচে হয়ে ওঠে এবং কিছু দিন পর ফাটে এবং কনক্রিট হয়ে শুকিয়ে যায়। - জ্বর:
চিকেনপক্সের আগে শিশুর জ্বর আসতে পারে, যা সাধারণত মাঝারি ধরনের হয়। জ্বরের সাথে গলা ব্যথা বা শরীরব্যথাও থাকতে পারে। - খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া:
শিশুদের খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে এবং তারা খেতে চাইতে পারে না। - চুলকানি বা চুলকানির অনুভূতি:
গুটি বা ফোসকা গুলির কারণে ত্বকে চুলকানি হতে পারে, যা শিশুকে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। - শরীরে অস্বস্তি বা ক্লান্তি:
শিশু কিছুটা দুর্বল, ক্লান্ত বা অস্বস্তি অনুভব করতে পারে, বিশেষত জ্বরের কারণে। - সর্দি ও কাশি:
কিছু ক্ষেত্রে, চিকেনপক্সের সাথে সর্দি বা কাশি থাকতে পারে, যদিও এটি মূলত ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা।
চিকেনপক্সের কারণ:
চিকেনপক্স ভ্যারিসেলা-জোস্টার
ভাইরাস (Varicella-Zoster Virus) দ্বারা
হয়। এটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে ছড়ায়।
চিকেনপক্স আক্রান্ত শিশু বা প্রাপ্তবয়স্করা যখন কাশি, হাঁচি
দেয় বা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাস বাতাসে ছেড়ে দেয়, তখন
অন্যরা আক্রান্ত হতে পারে।
এছাড়া, আক্রান্ত শিশুর ত্বকে যে ফোসকার মতো গুটি তৈরি হয়, তার
সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায়। তাই চিকেনপক্সের রোগীকে অন্যদের থেকে আলাদা
রাখা প্রয়োজন।
চিকেনপক্সের প্রতিরোধ:
- ভ্যাকসিনেশন (Varicella
Vaccine):
চিকেনপক্স প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল ভ্যারিসেলা টিকা (Varicella Vaccine)। এই টিকা সাধারণত ১২-১৫ মাস বয়সে প্রথম ডোজ এবং ৪-৬ বছর বয়সে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়। যারা আগে কখনও চিকেনপক্স হয়নি বা টিকা নেয়নি, তাদের জন্য এই টিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। - স্বাস্থ্যকর হাইজিন বজায় রাখা:
শিশুকে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, বিশেষত টয়লেট ব্যবহারের পর এবং খাবার খাওয়ার আগে। গুটি বা ফোসকার সংস্পর্শে আসা এড়িয়ে চলুন। - অন্যদের থেকে দূরে রাখা:
চিকেনপক্স খুবই সংক্রামক রোগ, তাই রোগীকে অন্য শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে দূরে রাখা উচিত, বিশেষত যখন তাদের গুটিগুলি ফাটে না। সাধারণত ৫-৭ দিন পর আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের কাছে ছড়াতে পারে না। - শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা:
পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিয়ে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করুন, যাতে ভাইরাস সংক্রমণ সহজে শরীরে প্রবেশ করতে না পারে।
চিকেনপক্সের প্রতিকার:
- গুটি গুলির সুরক্ষা:
গুটি বা ফোসকার ওপর খোঁচা বা আঁচড় না দেওয়ার জন্য শিশুকে সচেতন করুন। এটি স্কার বা দাগের সৃষ্টি করতে পারে এবং ভাইরাস আরও ছড়াতে পারে। - চুলকানি উপশম:
গুটি বা ফোসকা গুলির কারণে চুলকানি হলে, শিশুকে কলোনি বা সোডিয়াম বাইকার্বনেট (বেকিং সোডা) দিয়ে ঠান্ডা পানিতে স্নান করাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া, শিশুর ত্বক মসৃণ রাখার জন্য ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। - জ্বর কমানো:
যদি শিশুর জ্বর থাকে, তবে প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে (তবে অবশ্যই ডোজ এবং পরিমাণের বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে)। - তরল খাবার ও বিশ্রাম:
শিশুকে প্রচুর পানি, স্যুপ, বা ইলেকট্রোলাইট সলিউশন দিতে হবে, যাতে শরীরে পানির অভাব না হয়। বিশ্রামের সাথে সাথে তাকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। - চোখের যত্ন:
যদি চিকেনপক্সের কারণে চোখে জ্বালা বা লালচে হয়ে যায়, তবে শিশুকে নরম কাপড় দিয়ে চোখ ধুতে দিন।
চিকেনপক্সের চিকিৎসা:
চিকেনপক্সের জন্য বিশেষ কোনো
অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই। তবে, ডাক্তার কিছুটা
অ্যান্টিহিস্টামিন বা কালামাইন লোশন দিয়ে চুলকানি কমাতে সাহায্য
করতে পারেন। এছাড়া, শিশুদের সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও
তরল খাবারের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
বেশি গুরুতর ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ (যেমন অ্যাকিক্লোভির) দেওয়া যেতে পারে। তবে এই ধরনের চিকিৎসা শুধুমাত্র ডাক্তারই প্রদান করবেন।
চিকেনপক্সের পরামর্শ:
- ভ্যাকসিন নেওয়া:
শিশুকে নির্ধারিত সময়ে ভ্যাকসিন দিতে হবে যাতে চিকেনপক্স প্রতিরোধ করা যায়। - কিছু দিন স্কুল বা পাবলিক প্লেসে না পাঠানো:
চিকেনপক্স খুবই সংক্রামক, তাই আক্রান্ত শিশুকে ৫-৭ দিন বাড়িতে রাখতে হবে এবং অন্যান্য শিশুদের থেকে দূরে রাখতে হবে। - বিশ্রাম এবং খাবার:
শিশুকে বিশ্রাম করতে বলুন এবং সহজ খাবার যেমন সুপ, ফলমূল, ও তরল খাবার দিয়ে তাকে শক্তিশালী করুন। - চুলকানি নিয়ন্ত্রণ:
শিশুকে চুলকানি না করতে সচেতন করুন। গুটি বা ফোসকা গুলি আঁচড়ানো একদমই উচিত নয়, কারণ এটি ইনফেকশন ছড়াতে পারে এবং দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
চিকেনপক্সের সতর্কতা:
- গুটি ফাটানো বা আঁচড়ানো থেকে বিরত রাখা:
শিশুকে গুটি বা ফোসকা আঁচড়াতে নিষেধ করুন, কারণ এটি ইনফেকশন তৈরি করতে পারে এবং দাগের কারণ হতে পারে। - এমএমআর টিকা নিতে ভুলবেন না:
শিশুকে এমএমআর টিকা দেওয়া উচিত, কারণ এটি হাম, মাম্পস এবং চিকেনপক্স প্রতিরোধে কার্যকর। - সুস্থ হওয়ার পরও বিশ্রাম দেওয়া:
শিশুকে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তার শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত রাখুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে। - গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
যদি শিশুর জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বা ত্বকে ফোসকা বেশি বৃদ্ধি পায়, বা কোনো ধরনের গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
উপসংহার:
চিকেনপক্স একটি সাধারণ, কিন্তু সংক্রামক ভাইরাল রোগ যা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
সঠিক ভ্যাকসিনেশন, স্বাস্থ্যকর হাইজিন বজায় রাখা এবং
চিকেনপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলির প্রতি সচেতনতা শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে
সাহায্য করবে। চিকেনপক্স আক্রান্ত হলে, সঠিক চিকিৎসা,
বিশ্রাম এবং পরামর্শ মেনে চললে এটি দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles