ডিপ স্টেট (Deep State) কি জানেন আপনি?
ডিপ স্টেট (Deep
State) হল এমন একটি ধারণা বা তত্ত্ব, যা কিছু দেশের
রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে প্রভাবিত এমন এক গোষ্ঠী বা শক্তি সংস্থার
অস্তিত্বের কথা বর্ণনা করে, যারা সরকারী ক্ষমতা ও
নীতি নির্ধারণের বাইরে থেকে দেশটির সরকারের কার্যক্রমকে প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রণ
করতে পারে। ডিপ স্টেট সাধারণত সরকারি কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, ব্যাংকিং বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা, এবং কিছু ক্ষেত্রে শিল্প বা কর্পোরেট বিশ্বের শক্তিশালী
ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে।
ডিপ স্টেটের ধারণা মতে, এই শক্তিগুলি নির্বাচিত সরকার বা জনগণের ভোটে নির্বাচিত
প্রতিনিধিদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং তারা অপ্রকাশিতভাবে রাষ্ট্রের নীতি, সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি এক ধরনের পটেনশিয়াল গোপন ক্ষমতার
কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়, যা অনেক সময় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতার বাইরে থেকে
কাজ করে।
ডিপ স্টেটের মূল বৈশিষ্ট্য:
- গোপন কার্যকলাপ: ডিপ স্টেটের সদস্যরা তাদের কার্যকলাপ সাধারণ জনগণের কাছে গোপন রাখে এবং
সরকারের বাইরে থাকা সত্ত্বেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম।
- অনুমোদিত প্রভাব: নির্বাচিত সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি আনুগত্য বা সহানুভূতির
পরিবর্তে, তারা তাদের নিজের
স্বার্থে বা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে দেশের নীতি নির্ধারণ করতে পারে।
- প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি: সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, বিচার বিভাগ, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, কর্পোরেট ক্ষেত্র ইত্যাদির মাধ্যমে শক্তি
অর্জন এবং ব্যবহার করা হয়।
- বহুমাত্রিক প্রভাব: ডিপ স্টেটের প্রভাব শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে না; এটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রেও বিস্তৃত হতে পারে।
উদাহরণ:
১.
তুরস্কের
ডিপ স্টেট: তুরস্কে "ডিপ
স্টেট" একটি ব্যাপকভাবে আলোচিত বিষয়। বিশেষত, দেশটির সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ঐতিহাসিকভাবে রাজনৈতিক প্রভাব
প্রতিষ্ঠার জন্য পরিচিত। একসময় তুরস্কের সেনাবাহিনী দেশটির রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে
সরাসরি প্রভাব ফেলত, এবং অনেক সময় সরকারের
সিদ্ধান্তের বিপরীতে কাজ করত। তুরস্কে "ডিপ স্টেট" ধারণাটি মূলত ওই সময়ে
জনপ্রিয় হয়েছিল যখন সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি দেশের সরকারকে অপসারণের বা
শক্তি বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছিল, এমনকি বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলকে দুর্বল করতে বিভিন্ন অস্থিরতা তৈরি করেছিল।
২.
মিশরের
ডিপ স্টেট: মিশরে, বিশেষ করে ২০১১ সালের "আরব বসন্ত" আন্দোলন এবং এর
পরবর্তী সময়ে, মিশরের সেনাবাহিনী এবং
গোয়েন্দা সংস্থাগুলির একটি শক্তিশালী প্রভাব ছিল। মিশরের সেনাবাহিনী দেশের বৃহত্তম
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিল,
যা এক
ধরনের রাষ্ট্রীয় "ডিপ স্টেট"-এর ধারণা তৈরি করে। সেনাবাহিনী দেশের
রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে থেকেও অনেকটা প্রভাব খাটিয়েছিল।
৩.
যুক্তরাষ্ট্রের
ডিপ স্টেট: যুক্তরাষ্ট্রেও ডিপ স্টেটের
ধারণা নিয়ে আলোচনা রয়েছে, বিশেষ করে যখন কিছু
বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, সরকারের বাইরে কিছু
শক্তিশালী গোষ্ঠী (যেমন, বড় কর্পোরেট গোষ্ঠী, গোয়েন্দা সংস্থা,
অথবা
ব্যাংকিং এলিট) দেশের রাজনৈতিক নীতিতে অপ্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। ২০১৬
সালের নির্বাচনে ডিপ স্টেটের ধারণা আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, যখন অনেকেই দাবি করেছিলেন যে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গভীরভাবে প্রভাবিত এবং পেছনে গোপন শক্তি কাজ করছে।
ডিপ স্টেটের সুবিধা এবং
অসুবিধা:
- সুবিধা:
- স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মাঝে মাঝে সরকারী
সিদ্ধান্তের সমর্থন প্রদান।
- জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি
শক্তিশালী অবস্থান।
- দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং নীতির ধারাবাহিকতা বজায়
রাখা।
- অসুবিধা:
- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি অসম্মান ও জনমতের প্রতি
অগ্রহণযোগ্য মনোভাব।
- স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতার অভাব, যার কারণে দুর্নীতি বৃদ্ধি পেতে পারে।
- জনগণের অধিকারের প্রতি খর্বতা সৃষ্টি হতে পারে, যেহেতু নির্বাচিত সরকার সাধারণত ডিপ
স্টেটের প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে।
উপসংহার:
"ডিপ স্টেট" এমন
একটি ধারণা যা বিভিন্ন দেশে সরকারী এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরে এক ধরনের
গোপন শক্তির উপস্থিতি এবং এর প্রভাবের কথা বলে। তবে, এটি একটি বিতর্কিত এবং বিতর্কিত ধারণা,
এবং এর
অস্তিত্ব বা পরিধি সবসময় স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই এটি একটি
রাজনৈতিক তত্ত্ব হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকে,
যেখানে
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে কিছু গোষ্ঠী সরকারের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে
মনে করা হয়।
ডিপ স্টেট কি
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অর্থ কি
ষড়যন্ত্র কি
Deep
state
ষড়যন্ত্র in
english
ষড়যন্ত্রের অবস্থান কোথায়
ষড়যন্ত্র নিয়ে উক্তি
ষড়যন্ত্র এর সমার্থক শব্দ
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles