যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট কিভাবে কাজ করে?
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট ধারণাটি সাধারণত
এমন এক গোপন এবং অপ্রকাশিত শক্তি গোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা সরকারী এবং রাজনৈতিক
ব্যবস্থার বাইরে থেকে দেশের নীতি, সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রম
প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রণ করে। যুক্তরাষ্ট্রে ডিপ স্টেটের ধারণাটি বেশ বিতর্কিত,
এবং এটি বেশিরভাগ সময় গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনী, বড় কর্পোরেট গোষ্ঠী,
ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, এবং বিশ্বস্ত
উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী কাঠামো হিসেবে
বর্ণিত হয়। যদিও এর সঠিক প্রমাণ বা কার্যক্রম সবসময় স্পষ্ট নয়, তবে এই ধারণা বেশ কিছু কারণে জনপ্রিয় হয়েছে, বিশেষ
করে গত দশকগুলোতে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট
কিভাবে কাজ করে?
ডিপ স্টেটের কাজের পদ্ধতি বিভিন্ন উপায়ে হতে
পারে, তবে এটি মূলত দেশের নির্বাচিত সরকার এবং জনগণের মতামতের বাইরে থেকে প্রভাব
বিস্তার করে। নিচে এই প্রভাবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় আলোচনা করা হলো:
১. গোয়েন্দা সংস্থা এবং
নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি
(CIA), এফবিআই (FBI),
ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (NSA), ডিপার্টমেন্ট
অফ ডিফেন্স (DoD) এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলি
ঐতিহাসিকভাবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সংবিধানিক সুসংগঠনের রক্ষক হিসেবে কাজ করে
এসেছে। তবে, ডিপ স্টেটের ধারণা মতে, এই
সংস্থাগুলি শুধুমাত্র দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে না, বরং তারা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সরকারের সিদ্ধান্তগুলিতে গভীর প্রভাব
বিস্তার করতে পারে।
- গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব: অনেক
সময় এই সংস্থাগুলি নির্বাচিত সরকার বা প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে
কাজ করতে পারে, বা তাদের প্রভাবিত করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মাধ্যমে প্রাপ্ত
গোপন তথ্য, আভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং বৈদেশিক নীতির উপর
কৌশলগতভাবে প্রভাব ফেলা হতে পারে।
- পোলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্স: গোয়েন্দা
সংস্থা বা নিরাপত্তা বাহিনী রাষ্ট্রের নীতিগত সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারবে,
যা সরকারি নেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
২. মার্কিন সেনাবাহিনী এবং
মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স
যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল
কমপ্লেক্স
(Military-Industrial Complex) হল একটি ধারণা যেখানে সামরিক
সংস্থাগুলি, সেনাবাহিনী, এবং বেসরকারি
সংস্থা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত থাকে এবং বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি গঠন করে।
সেনাবাহিনী এবং এর সাথে সম্পর্কিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে গভীর সম্পর্ক থাকার
কারণে তারা সরকারী নীতিতে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হতে পারে।
- সেনাবাহিনীর প্রভাব: যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী
একটি বিশাল শক্তি, এবং অনেক সময় তারা রাষ্ট্রীয় নীতির
ওপর প্রভাব ফেলতে চেষ্টা করতে পারে, বিশেষ করে সামরিক
বাজেট, যুদ্ধ নীতি এবং বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে।
সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং অভ্যন্তরীণ শক্তি সরকারের
সাথে সমন্বিত হয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেয় যা নির্বাচিত সরকারের পরিকল্পনার
বাইরে হতে পারে।
- মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স: সামরিক
সরঞ্জাম তৈরির বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলি (যেমন লকহিড মার্টিন, বোয়িং) সরকারের নিরাপত্তা নীতির মাধ্যমে উপকৃত হয় এবং সরকারকে
তাদের স্বার্থে প্রভাবিত করতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রভাবের কারণে সরকারের
সিদ্ধান্ত নিতেও তারা প্রভাবিত হতে পারে।
৩. বড় কর্পোরেট এবং ব্যাংকিং
গোষ্ঠীর প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট গোষ্ঠী এবং ব্যাংকিং
সেক্টর (বিশেষত, বৃহৎ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলি, যেমন জেপি মরগান চেজ, গোল্ডম্যান স্যাক্স,
সিটিগ্রুপ) রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতি,
আইন এবং বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তে বিশাল প্রভাব রাখে। ডিপ স্টেটের ধারণা
অনুযায়ী, এই গোষ্ঠীগুলি অপ্রকাশিতভাবে সরকারের সিদ্ধান্তে
প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষত যখন সরকারী নীতি ও অর্থনৈতিক
সুবিধা তাদের লাভের জন্য কাজ করে।
- কর্পোরেট প্রভাব: বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারকে
নীতিগতভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন ট্যাক্স নীতি,
বাণিজ্য চুক্তি, বা পরিবেশগত
নিয়ম-কানুনের ক্ষেত্রে। তাদের প্রভাবের মাধ্যমে তারা দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক
লাভ নিশ্চিত করে।
- ব্যাংকিং সেক্টর: ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের
মাধ্যমে, তারা অর্থনৈতিক সংকট বা দেশীয় অর্থনীতি
সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো প্রভাবিত করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে,
যেমন ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সঙ্কট, দেখা
গেছে যে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা
রেখেছিল।
৪. রাজনৈতিক এলিট এবং লবিস্ট
গোষ্ঠী
যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্টরা (lobbyists) একটি
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষত তারা নির্বাচিত
কর্মকর্তাদের সাথে কাজ করে এবং কর্পোরেট এবং রাজনৈতিক নীতি তৈরিতে প্রভাব ফেলে।
রাজনৈতিক এলিট এবং লবিস্টরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্তগুলিতে গভীর
প্রভাব বিস্তার করতে পারে, যা "ডিপ স্টেট"-এর একটি
অংশ হিসেবে দেখা যায়।
- লবিস্টদের প্রভাব: বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে,
নির্বাচনীভাবে নির্বাচিত সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নেয়, তাতে লবিস্টরা তাদের স্বার্থ অনুসারে প্রভাব ফেলতে পারে, যা জনগণের ইচ্ছার সাথে একমত নাও হতে পারে।
৫. মিডিয়া এবং তথ্যের
নিয়ন্ত্রণ
ডিপ স্টেটের একটি আরেকটি প্রভাব হল মিডিয়া ও
তথ্যের নিয়ন্ত্রণ। কিছু ক্ষেত্রে, সরকারী সংস্থাগুলি বা বৃহৎ কর্পোরেট মিডিয়া
প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক বার্তা প্রচারে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
- মিডিয়ার ভূমিকা: মডার্ন মিডিয়া (টেলিভিশন,
খবরের চ্যানেল, এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম)
সরকারী নীতি এবং জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে, এবং অনেক
সময়, মিডিয়াও অপ্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের
সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করতে পারে।
উপসংহার:
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট ধারণা অনুযায়ী, এটি একটি
অপ্রকাশিত, কিন্তু শক্তিশালী প্রভাবশালী গোষ্ঠী যা সরকারী
সিদ্ধান্ত, নীতি, এবং কার্যক্রমে গভীর
প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এই গোষ্ঠীটি সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা
সংস্থা, বড় কর্পোরেট গোষ্ঠী, ব্যাংকিং
প্রতিষ্ঠান, এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত
হতে পারে। যদিও ডিপ স্টেটের কার্যক্রম সবসময় পরিষ্কার বা প্রমাণিত হয় না, তবে এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এবং সরকারের ক্ষমতার
বাইরে থেকে দেশটির নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
ডিপ স্টেট কি
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অর্থ কি
ষড়যন্ত্র কি
Deep
state
ষড়যন্ত্র in
english
ষড়যন্ত্রের অবস্থান কোথায়
ষড়যন্ত্র নিয়ে উক্তি
ষড়যন্ত্র এর সমার্থক শব্দ
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে (Bangla Articles) প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles