বিপদে পড়ে সুদ নেওয়া কি বৈধ? ধর্মীয় ও নৈতিক দিক বিশ্লেষণ

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0


বিপদে পড়ে সুদ নেওয়া কি বৈধ? ধর্মীয় ও নৈতিক দিক বিশ্লেষণ


প্রিয় পাঠক, আপনিও আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনার প্রশ্ন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে শতভাগ সঠিক উত্তর প্রদান করার চেষ্টা করা হবে। উত্তর প্রদানে আমি ইসলামিক শরিয়া, মেডিকেল সাইন্স এবং বাস্তবতার মুখোমুখি হই। কাজেই আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার প্রশ্নের শতভাগ সঠিক উত্তর আমার এখানে রয়েছে। তাই দেরি না করে এখনই আপনার দেহ, মন ও জীবন নিয়ে যেকোনো প্রশ্ন আমাকে করুন। ধন্যবাদ!


পাঠকের প্রশ্ন ৪: আপনি প্রশ্ন করেছেন- আর্থিক সংকট ও বিপদগ্রস্ত হয়ে সুদে জড়ানো যাবে কি? একই সাথে আপনি সুধী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে আগ্রহ একই সাথে আপনি সুধী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া যাবে কিনা জানতে চেয়েছেন।


প্রশ্নকারী: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রশ্ন করেছেন। প্রশ্নকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে তার নাম ও বিস্তারিত পরিচয় গোপন রাখা হয়।


প্রশ্নোত্তর ও সমাধান: আপনার প্রশ্ন থেকে বোঝা যায় যে আপনি নিজেই জানেন সুদি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া জায়েজ না। ইসলামী শরীয়তে সুদ গ্রহণ সম্পূর্ণ নিষেধ, এটাও আপনার অজানা নয়। মুসলিম হিসেবে আমরা সবাই জানি যে শুধু ইসলামে নিষিদ্ধ। প্রশ্নে আপনি লিখেছেন যে আপনি আর্থিক সংকটে পড়েছেন, বিপদগ্রস্ত হয়েছেন। সুদ গ্রহণ করার পিছনে আপনার সংকটকে দায়ী করে সুদি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়ানোর ইচ্ছা পোষণ করেছেন। আপনি বোঝাতে চাচ্ছেন যে আপনি বিপদে পড়ে সুদ খাবেন। বিপদের অজুহাত দাঁড় করিয়ে সুদের দায় থেকে বাঁচার চেষ্টা আপনার প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে। আপনার মনস্তত্বকে বোঝাটা আমার জন্য প্রথমত জরুরি ছিল যাতে করে সুন্দর উত্তর তৈরি করতে পারি। প্রিয় প্রশ্নকারী ও পাঠক আপনি কষ্ট নিবেন না।


আপনি ভালো করে জানেন পবিত্র কুরআনে স্বয়ং আল্লাহ সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, "হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যে অংশ বাকি আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও। যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে রাখো’ (সূরা বাকারাহ ২/২৭৮-৭৯)। প্রিয় প্রশ্নকারী আপনি মুসলিম, আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, ভয় করেন নিশ্চয়ই। তারপরও কিভাবে কোরআনের ওই সুস্পষ্ট বাক্য আপনি অস্বীকার করতে পারেন? আপনি সুদ গ্রহণের পেছনে আপনার অভাব ও বিপদগ্রস্ততাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে পারেন না। আল্লাহর রাসূল বলেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত (অভিসম্পাত) করেন সুদের সাথে সংশ্লিষ্ট চার ব্যক্তিকে। তারা হচ্ছে: সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও সুদের সাক্ষীদ্বয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: তারা সবাই সমপর্যায়ের দোষী’’। (মুসলিম ১৫৯৮; তিরমিযী ১২০৬; আবূ দাউদ ৩৩৩৩; ইব্নু মাজাহ্ ২৩০৭। রসুলের এই হাদিস থেকে বোঝা গেল সুদি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা, সুদের সাক্ষী হওয়া যেখানে যাবে না সেখানে সুদ গ্রহণ, সুদ দেয়ার কথা চিন্তা করাও ভুল। আর্থিক সংকট ও বিপদ আপনাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিলেও আপনি সুদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হলো, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৫)। অর্থাৎ সুদের সাথে জড়ালে আপনাকে আমাকে জাহান্নামে যেতে হবে। আর বিপরীতে আল্লাহ ব্যবসা কে হালাল করেছেন। বুঝি অল্প হোক বেশি হোক ব্যবসায় সর্বোচ্চ লাভবান হওয়া যায়। বহু লোক অল্প পুঁজি দিয়ে ব্যবসায় করে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকে পরিণত হয়েছেন। আর যারা সুদের সাথে জড়িয়েছে বা সুধিকার বাড়ি করেছে তারা কেউ আজ টিকে নেই থাকতেও পারবেনা। আল্লাহ আমাদের মাফ করুক


প্রিয় প্রশ্নকারী আপনি কি লক্ষ্য করলেন যে উপরের আয়াতে কি এক ভয়াবহ কথা বলা আছে! আপনি কি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে চান? এত বড় দুঃসাহস কি আপনার আছে? আপনি হয়তো জানেন না সুদ গ্রহণ করলে আপনি প্রকারান্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করছেন। খবরদার আল্লাহর সাথে ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতি আপনি নিতে পারেন না।


প্রিয় প্রশ্নকারি আপনি কি না খেয়ে আছেন, এমন পরিস্থিতি কি তৈরি হয়েছে যে আপনি, আপনার স্ত্রী আপনার অবুঝ সন্তান ও আপনার বৃদ্ধ মা বাবার জন্য এক মুঠো খাবার কিনতে পারছেন না? আপনাকে সুদে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেই এক মুঠো খাবার জোগাড় করতে হবে। তা না হলে আপনারা অনাহারে মারা যাবেন। আপনি বুকে হাত দিয়ে বলুন তো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কিনা? যদি তা হয়ে থাকে তাহলে আপনি সুদে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন এতে আমার কোন আপত্তি থাকবে না। আপনি এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে দায়মুক্তিও পাবেন। কিন্তু আমি জানি আপনি এমন কোন সংকটে পড়েননি যে না খেয়ে মরে যাচ্ছেন। সুদ গ্রহণ না করে আপনি ধৈর্যের সাথে আপনার আর্থিক সংকট মোকাবেলা করুন। আমি জানি হয়তো আপনি ঋণগ্রস্ত হয়েছেন, সেই ঋণ পরিশোধ করতে নতুন করে আবার ঋণী হবেন সুধি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। না হয়তো আপনি ব্যবসায় বিনিয়োগ করার জন্য ঋণ নিতে চাচ্ছেন। অর্থাৎ আপনার আর্থিক মূলধন বাড়ানোর জন্য আপনি সুদ গ্রহণ করবেন বলে ভাবছেন। যদি আপনি ঋণগ্রস্ত হয়ে থাকেন তাহলে সেই মহাজন কারবারীকে আপনি অনুরোধ করেন। তার কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন। তাকে বলেন যে আপনি সুদে জড়াতে চাচ্ছেন না, তার টাকা আপনি সময়মত দিতে চেষ্টা করছেন। এভাবে অনুরোধ করলে নিশ্চয়ই আপনি সেখান থেকে কিছুটা সময় পাবেন। আবার যদি হয় আপনার ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন, তাহলে বলব সুদের মাধ্যমে টাকা নিয়ে সেটা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করলে পুরো ব্যবসার মুনাফা ও পুরো ব্যবসার প্রক্রিয়াটা হারাম হয়ে যাবে। আপনি আস্তে আস্তে করে টাকা সঞ্চয় করে সেটা বিনিয়োগ করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ব্যবসায় ভালো করার চেষ্টা করুন। কুরআনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাতারাতি ধনী হবার জন্য সুদি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা লোন নিবেন না। আপনাকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার ক্ষমতা আল্লাহর রয়েছে। আপনি ধৈর্য ধরে অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে চেষ্টা করতে থাকুন। কোরআনকে অস্বীকার করে রাতারাতি ধনী হবার চেষ্টা করবেন না। এটা কখনোই সম্ভব না বরং আপনি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আল্লাহ রাসুল বলেন, "সুদ যদিও দেখতে বেশি দেখা যায় তার পরিণতি কিন্তু ঘাটতির দিকেই’’। (হা’কিম : ২/৩৭ সাহীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৫৪২; ইব্নু মাজাহ্ ২৩০৯)। অর্থাৎ কারো পথেই সম্ভব নয় শুধু গ্রহণ করে আর্থিক সচ্ছলতা লাভ করা।


দেখুন উপরোক্ত অনুচ্ছেদে আমি বলেছি যে আপনি সুদ গ্রহণ করেও দায় মুক্তি পাবেন যদি না খেয়ে মরে যাবার উপক্রম হয়। এ কথাটা সাময়িকভাবে আমি কেন বলেছি জানেন? লক্ষ্য করুন মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি হারাম করেছেন মৃত জীবজন্তুর গোশত, প্রবাহমান রক্ত, শূকরের গোশত এবং সেইসব জন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। তবে কেউ নিরুপায় হয়ে নাফরমানী কিংবা সীমালঙ্ঘন না করে গ্রহণ করলে,, তার উপর কোনো গুনাহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু’ (আল-বাক্বারা, ২/১৭৩)। প্রিয় প্রশ্ন করি দেখুন যখন আপনি খুদার যন্ত্রণায় ছটফট করছেন ঠিক তখন কোন হালাল খাবার না পেলে মদ এবং শুকরের গোশত আপনার জন্য অল্প পরিমাণ আল্লাহ হালাল করেছেন। আপনি নিরুপায় হয়ে ও সীমালঙ্ঘন না করে যদি শুকরের গোশত গ্রহণ করেন তাহলে আল্লাহ বলেছেন যে আপনার কোন দোষ নেই। সুদের বেলায় যদি আসি আপনি কি নিরুপায় হয়ে সুদ গ্রহণ করছেন? আপনি কি ক্ষুধার যন্ত্রণায় মারা যাচ্ছেন ঠিক সেই মুহূর্তে সুদের দিকে পা বানাচ্ছেন? যদি এমন পরিস্থিতি না হয় তাহলে সুদ গ্রহণ আপনার জন্য কোনভাবেই বৈধ হবে না। আর আল্লাহ বিচক্ষণ, তিনি বলতে পারতেন তোমরা নিরুপায় হলে অভাবগ্রস্ত হলে সুদ গ্রহণ করো। তা কিন্তু কোরআনে বলেননি। শুকরের গোশতের বেলায় বলেছেন। শূকরের গোস্ত হারাম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তারপরও নিরুপায় হলে সেটা আপনার জন্য অল্প পরিমাণে জায়েজ আছে। কিন্তু নিরুপায় হলেও সুখ গ্রহণ আপনার জন্য জায়েজ নেই। যদি জায়েজ হতো তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তা কোরআনের মাধ্যমে বলে দিতেন। যেহেতু আল্লাহ কোনভাবেই সুদকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ হালাল করেননি তাই আমি যে আপনাকে না খেয়ে মরার বেলায় সুদ গ্রহণের দায়মুক্তি দিয়েছি সেটাও এক্ষণে বাদ দিলাম। অর্থাৎ এমন পরিস্থিতি আপনার হবে না যে আপনি অনাহারে মারা যাচ্ছেন।


প্রিয় প্রশ্নকারী আপনার জানা উচিত সুদের পাপ কতটা ভয়াবহ। সুদের পাপের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘সুদের (পাপের) ৭০টি স্তর রয়েছে। যার নি¤œতম স্তর হলো মায়ের সাথে জেনা করার পাপ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস-২২৭৪, সনদ সহিহ; মিশকাত হাদিস-২৮২৬)। প্রিয় ভাই আপনি কি আপনার নিজের মায়ের সাথে জেনা করার কথা কখনো কল্পনাও করতে পারেন? তা যদি না পারেন তাহলে সু দ গ্রহণ করা,, সুদ দেওয়া সুদি প্রতিষ্ঠানের সাথে যে কোন ভাবে জড়ানোর কথা আপনি আপনার কল্পনায়ও আনবেন না। এখনই তওবা করুন। আর্থিক সংকট আপনাকে ধ্বংস করে দিলেও আপনি সুরের দিকে পা বাড়াবেন না। মনে রাখবেন ধন সম্পদ দেবার মালিক আল্লাহ। অল্প পুজি নিয়ে কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে ধৈর্য ধরে চেষ্টা করুন, আল্লাহর কাছে আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি চান। দেখবেন আল্লাহ আপনাকে দুহাত ভরে দিবেন। আল্লাহ আপনাকে এমন ভাবে আপনার সংকট মোকাবেলা করে দিবেন যা কখনোই আপনার কল্পনায়ও আসেনি। আর নিজের মায়ের সাথে জেনা করার সমতুল্য পাপ করার মাধ্যমে ধনী হতে চেষ্টা করবেন না।


আর যদি সুদের মাধ্যমে ধনী হবার চেষ্টা করেন তাহলে হয়তো রাতারাতি ধনীও হতে পারবেন। কিন্তু তার ভিতরে কোন বরকত নেই। দেখা যাবে নানা ধরনের অশান্তি রোগ শোক দুঃখ দুর্দশা আপনার লেগেই থাকবে। নিশ্চয়ই জানেন আমাদের সমাজে যারা হারাম পথে উপার্জন করে তারা কখনোই শারীরিকভাবে মানসিকভাবে সুখে নেই। তাদের সন্তানেরা কখনোই মানুষ হতে পারে না। আপনার ছোট্ট সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে দেখুন। তার জন্য কত সুন্দর এক ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। তাকে আপনার মানুষ করতে হবে প্রকৃত ঈমানদার বানাতে হবে। আপনি যদি কোরআন লংঘন করে সুদের মাধ্যমে হারাম উপার্জন দিয়ে সন্তানকে বড় করার চেষ্টা করেন তাহলে পারবেন না। সুদ আপনাকে আর্থিক সচ্ছলাতে দিবে ভালো ভালো খাবার সন্তানের মুখে তুলে দিবেন পরি কাঠামো দ্বারা সন্তানকে পরিবেষ্টিত রাখবেন। কিন্তু আপনার এই সন্তান মানুষ হবে না যদি আপনি সুদ গ্রহণ করেন। কোন না কোন ভাবে আপনার স্ত্রী সন্তান ও যারাই সুদের অর্থ দ্বারা লাভবান হবে তারা সকলেই অমানুষ হয়ে যাবে। আপনি লিখে রাখুন আমার এ কথা। তাছাড়া সুদ হচ্ছে অপবিত্র জিনিস। আল্লাহ পবিত্র তিনি পবিত্র তাকে ভালোবাসেন। সুদের অর্থ দান করেও কোন পণ্য লাভ সম্ভব নয়। এই অর্থ মসজিদ মাদ্রাসায় দান করা যাবে না এ অর্থ দিয়ে সন্তান-সন্ততি মা-বাবাকে লালন-পালন করেও কোন ফায়দা নেই। কেননা আল্লাহ সুদকে গ্রহণ করেন না।


আপনি যদি সুদ নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের লেকচার শুনেন, ভালো ভালো আর্টিকেল পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন সুদের ভয়াবহতা কতটা কঠিন। দেখুন কোরআনের একটি আয়াত যদি আপনি অস্বীকার করেন, নিজের দুনিয়াবি স্বার্থ যদি কোরআনের একটি আয়াতকে আপনি স্থগিত করতে চান তাহলে নিশ্চিত আপনি ধ্বংস হয়ে যাবেন। এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে তওবা করে আবার নামাজ শুরু করলে আপনি মুক্তি পাবেন কিন্তু একবার যদি সুদ গ্রহণ করেন জেনে বুঝে, তাহলে এই সুদের পাপ থেকে আপনার মুক্তির কোন পথ নেই। কেননা শুধু আপনাকে সাময়িক আর্থিক সচ্ছলতা ও মুনাফা দেখিয়ে আপনাকে লোভের ঘোরে আটকে ফেলবে। সেই লোভ থেকে আপনি বের হয়ে আসতে পারবেন না। তখনই আপনার ধ্বংসনিবার্য। স্ত্রী সন্তান সহ আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সকলকে বোঝান যে সুদ হারাম। সুদ এর বিপরীতে আপনি আপনার পরিবার সকলেই ধৈর্য ধারণ করুন। প্রতিনিয়ত আল্লাহকে ডাকুন। অচিরেই আল্লাহ আপনাদের আর্থিক দুর্দশা দূর করে দিবেন।


তারপরও যদি আপনার প্রশ্ন থাকে যে, আপনি কোনভাবেই আর্থিক সংস্থান করতে পারছেন না। ধার কর্য করা ছাড়া আপনার কোন পথ নেই। তাহলে আমি বলবো সমাজের কোন ধনাঢ্য দানশীল ব্যক্তির শরণাপন্ন হতে পারেন। তার কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা তথা দান আপনাকে পুঁজি সংগ্রহে সহযোগিতা করতে পারে। আপনি তার কাছে সব খুলে বলে সহযোগিতা চান। যদি এমন লোক না পাওয়া যায় তাহলে কোন অবস্থাশীল আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবের কাছে ধার চাইতে পারেন। যদিও আজকাল এমন সহযোগিতা করার মতো লোকের বড়ই অভাব।


বিকল্প ও সর্বশেষ পন্থা হিসেবে আপনি ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার শরণাপন্ন হতে পারেন। যদি আমাদের দেশগুলোর সরকার ইসলামিক অর্থনীতির প্রতি উদাসীন থাকায় তারা ইসলামিক অর্থব্যবস্থা সম্প্রসারণে কাজ করছে না। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি সুদি কারবারীর উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ইসলামিক অর্থব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে ইসলামিক শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হয় কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এ অবস্থায় ইসলামিক স্ক্যালারগণের অভিমত হলো আপনি আপনার টাকা ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করতে পারেন। সেখানে লেনদেন করতে পারেন। যেহেতু সেখানে আলেম-ওলামার সমন্বয়ে শরিয়া বোর্ড রয়েছে। তবে কোন কোন ইসলামিক স্কলার প্রচলিত এইসব ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে নিষেধ করেছেন, যদিও এই ব্যাংকগুলো শরিয়া বোর্ড থাকার কথা বলছে, শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হয় বলছে। তারপরেও আমরা জানি তারা নানাভাবে সুদের সাথে জড়িত। কিছুদিন আগে খবর বেরিয়েছে বাংলাদেশের প্রথম সারির ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করেছে। যদিও তারা দীর্ঘদিন সুনামের সাথে ইসলামিক ব্যাংকিং পরিচালিত করছে ও শক্তিশালী ইসলামিক শরীয়া বোর্ড রয়েছে। আরো বহু ব্যাংক আমাদের দেশে রয়েছে। কিন্তু জনসাধারণের অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তাদের ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা দায়সারা ভাবে পরিচালিত হচ্ছে নাকি সত্যিই তারা ইসলামিক শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে, এক্ষেত্রে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তাই এইসব প্রতিষ্ঠান থেকে মুনাফা লাভের আশায় ব্যাংকিং করা যাবে না। একান্ত বাধ্যগত অবস্থায় টাকা জমা রাখা যেতে পারে।


প্রশ্নকারী ভারত থেকে প্রশ্ন করেছেন এবং তিনি জানালেন যে তার দেশে ইসলামিক অর্থ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। ইসলামিক ব্যাংকিং হাতের নাগালে নেই। এ অবস্থায় তিনি বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন পরিচিত কারো কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা ধার দান পাচ্ছেন না। তাই অনেকটা তিনি বাধ্য হয়ে যদি ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করতে চাচ্ছেন। জানালেন যে, আপনার ব্যবসায় অল্প পুঁজি রয়েছে। পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে ব্যবসায়ে টিকে থাকাও আপনার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। অবস্থায় প্রশ্নকারীর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, আপনার যেহেতু স্বল্প পুঁজি রয়েছে, এই পুঁজি নিয়েই আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ আস্থা রেখে আপনি ব্যবসা চালিয়ে যান। ইনশাআল্লাহ একদিন আপনি স্বল্প পুঁজির এই ব্যবসাকে সর্বোচ্চ পুঁজির ব্যবসায়ে রূপান্তরিত করতে পারবেন। যেহেতু আপনার পুঁজি সামান্য হলেও আছে তাই সুদি ব্যাংকিং ব্যবস্থার সহায়তা নেওয়া আপনার জন্য কোনোভাবেই হালাল হবে না। আপনি হারামকে পরিত্যাগ করে এগিয়ে গেলে নিশ্চয়ই আপনার ব্যবসায় এমন উন্নতি হবে যা সুদ গ্রহণের পরেও সম্ভব নয়। আল্লাহকে ভয় করেই সুদ থেকে নিজের ব্যবসাকে পবিত্র রাখুন। তা না হলে সুদের উপর প্রতিষ্ঠিত আপনার এই ব্যবসায় প্রকৃতপক্ষে অগ্রগতি লাভ সম্ভব নয়। সাময়িক অগ্রগতি দেখতে পেলেও তাতে ধস নেমে যেতে পারে। যেকোনো আকস্মিক বিপদ আপদ এর মাধ্যমে আপনার পুঁজির বিনাশ হতে পারে। তাই জেনে বুঝে সুদের পথে পা বাড়াবেন।


আশা করি আপনি আপনার উত্তর পেয়েছেন। ধৈর্য ধরে এত বড় প্রশ্নোত্তর পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


প্রশ্নকারীর পাশাপাশি যেকোনো পাঠকের কোনো সম্পূরক প্রশ্ন ও সমালোচনা থাকলে তা এই পোষ্টের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে করতে পারেন। আমি তারও উত্তর দিতে সচেষ্ট হবো। তাছাড়া এই WhatsApp এর মাধ্যমেও আপনি আপনার প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। আমি সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ্। প্রিয় পাঠক আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।


সার্চ কী: সুদ, সুদে জড়ানো, সুদ নেওয়া, সুদ দেওয়া, ইসলামে সুদ, সুদ জায়েজ কিনা, সুদ হারাম কেন, সুদ গ্রহণ বৈধ কিনা, সুদের ব্যাপারে ইসলাম, আর্থিক সংকটে সুদ, আর্থিক বিপদে ইসলামি সমাধান, বিপদের সময় সুদ নেওয়া, সুদ ছাড়া ঋণের উপায়, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সুদ, সুদের বিকল্প, আর্থিক সংকটে করণীয়, দরিদ্র হলে সুদ নেওয়া যাবে কি, হালাল ইনকামের উপায়, সুদ ও রিবা একই কি, সুদের পাপ, সুদে টাকা নেওয়া কি গুনাহ, আর্থিক সংকটে পড়ে কি সুদ নেওয়া যায়, ইসলামে কি সুদ নেয়া সম্পূর্ণ হারাম, বিপদে পড়লে কি সুদ নেওয়া বৈধ, সুদের পরিবর্তে ইসলাম কী সমাধান দেয়, সুদ, আর্থিক কষ্ট, ইসলামে সুদ, সুদের হারাম হওয়া, সুদ ও ইসলাম


ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top