নিম্নগামী ও উর্ধগামী যোগাযোগের গুরুত্ব, সুবিধা ও সীমাবদ্ধতার বর্ণনা

Muhammad Al-Amin Khan, Editor in Chief of BA, BJN, BST
0



নিম্নগামী ও উর্ধগামী যোগাযোগের গুরুত্ব, সুবিধা ও সীমাবদ্ধতার বর্ণনা


নিম্নগামী (Downward Communication) ও ঊর্ধ্বগামী (Upward Communication) যোগাযোগ যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিক। কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও সংগঠন পরিচালনার জন্য এই দুই ধরনের যোগাযোগের ভূমিকা অপরিসীম।

 

নিম্নগামী যোগাযোগ (Downward Communication) এর সংজ্ঞা: নিম্নগামী যোগাযোগ হলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে অধস্তন কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা বা নির্দেশ পাঠানো। সাধারণত নীতি, আদেশ, নির্দেশনা, কর্মপদ্ধতি ও কাজের লক্ষ্যমাত্রা এই মাধ্যমে জানানো হয়।

 

নিম্নগামী যোগাযোগ (Downward Communication)

গুরুত্ব

  1. নির্দেশ ও আদেশ প্রেরণ: শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত, আদেশ ও নীতিমালা কার্যকরভাবে কর্মীদের কাছে পৌঁছে যায়।
  2. কর্মপদ্ধতির ব্যাখ্যা: কাজের ধরন, পদ্ধতি ও মানদণ্ড নির্ধারণ করে কর্মীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়।
  3. দায়িত্ব নির্ধারণ: কে কোন কাজ করবে, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দায়িত্ব ভাগ করা সহজ হয়।
  4. প্রেরণা ও নেতৃত্বের ভূমিকা: ঊর্ধ্বতনের কথায় কর্মীরা অনুপ্রাণিত হয়ে কাজের প্রতি আগ্রহী হয়।
  5. শৃঙ্খলা রক্ষা: নিয়ম ও নীতির অনুসরণ নিশ্চিত করে সংগঠনে শৃঙ্খলা বজায় রাখে।
  6. উৎপাদন ও দক্ষতা বৃদ্ধি: সঠিক ও সময়োপযোগী নির্দেশনা কর্মীদের উৎপাদনক্ষমতা বাড়ায়।
  7. দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতি গঠন: প্রতিষ্ঠানের মূলনীতি ও সংস্কৃতি প্রচারে সহায়ক হয়।

 

সুবিধা

  1. দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন: শীর্ষ সিদ্ধান্ত দ্রুত মাঠ পর্যায়ে কার্যকর করা যায়।
  2. সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়: নির্দেশনার মাধ্যমে পুরো সংস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
  3. কাজের মান বজায় থাকে: নিয়মিত নির্দেশনার ফলে মানসম্পন্ন কাজ নিশ্চিত হয়।
  4. নতুন কর্মীদের নির্দেশনা প্রদান: ট্রেনিং ছাড়াও নির্দেশনাতেই কাজ শেখানো সম্ভব হয়।
  5. সমন্বয় সাধনে সহায়ক: বিভিন্ন বিভাগ একক নির্দেশনায় কাজ করে।
  6. জবাবদিহিতার সুযোগ তৈরি: কর্মীরা জানে কর্তৃপক্ষ কী চায়, তাই কাজের হিসাব দিতে বাধ্য থাকে।
  7. উৎপাদন ও কর্মদক্ষতা উন্নয়ন: সুস্পষ্ট নির্দেশনা কর্মীর ভুল কমিয়ে দেয় এবং দক্ষতা বাড়ায়।

 

সীমাবদ্ধতা

  1. একমুখী যোগাযোগ: প্রতিক্রিয়ার সুযোগ না থাকায় কর্মীদের মতামত অগ্রাহ্য হয়।
  2. ভুল ব্যাখ্যার আশঙ্কা: বার্তা ভুলভাবে বুঝে কাজের ক্ষতি হতে পারে।
  3. নিচের পর্যায়ে অসন্তোষ: অভিমত না জানাতে পারায় কর্মীরা নিরুৎসাহিত হয়।
  4. অনুপ্রেরণার ঘাটতি: শুধুমাত্র আদেশ পেলে কর্মীরা উৎসাহী থাকে না।
  5. যোগাযোগ বিভ্রাট: বার্তা যত নিচে নামে, ততই বিকৃত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  6. সৃজনশীলতার অভাব: একমুখী আদেশে কর্মীদের উদ্ভাবনী চিন্তা দমন হয়।
  7. পরিবর্তন প্রতিরোধ: নিচের স্তরের কর্মীরা আদেশে অসন্তুষ্ট হয়ে প্রতিরোধমূলক মনোভাব নিতে পারে।

 

ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ (Upward Communication) এর সংজ্ঞা: ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ হলো অধস্তন কর্মী থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন, অভিযোগ, মতামত বা পরামর্শ প্রদান করা। এটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নিচের দিকের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে।

 

গুরুত্ব

  1. মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা জানা: প্রকৃত সমস্যা, পরিস্থিতি ও কর্মপরিবেশ সম্পর্কে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা ধারণা পায়।
  2. কর্মীদের মতামত ও অভিযোগ উপস্থাপন: কর্মীদের উদ্বেগ, পরামর্শ ও অভিযোগ কর্তৃপক্ষ জানতে পারে।
  3. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা: অধস্তনদের অভিজ্ঞতা ও তথ্য ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে।
  4. সতর্কতা প্রদান: আগাম বিপদের সংকেত বা সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
  5. দুইমুখী যোগাযোগ গড়ে ওঠে: একতরফা যোগাযোগের একঘেয়েমি কেটে যায়।
  6. কর্মীদের সম্পৃক্ততা বাড়ে: কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের অংশ মনে করে, অংশগ্রহণমূলক মনোভাব তৈরি হয়।
  7. উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ সহজ হয়: নিচের স্তরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে উন্নয়ন পরিকল্পনা করা যায়।

 

সুবিধা

  1. সাহস ও আস্থা তৈরি করে: অধস্তন কর্মীরা মত প্রকাশের সুযোগ পেলে সাহসী হয়।
  2. নেতৃত্ব উন্নয়ন হয়: ঊর্ধ্বতনরা কর্মীদের চাহিদা ও সমস্যা বুঝে মানবিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারে।
  3. ইনোভেশন ও সৃজনশীলতা উৎসাহিত হয়: কর্মীরা নতুন ধারণা বা উদ্ভাবনী মতামত দিতে পারে।
  4. সমস্যা দ্রুত শনাক্ত হয়: ছোট ছোট সমস্যা বড় হওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
  5. দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয়: মতামত বা প্রতিবেদন দেওয়ার সুযোগ থাকলে কর্মীরা দায়িত্বশীল হয়।
  6. প্রতিষ্ঠানে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে: কর্মীরা বিশ্বাস করে যে তাদের কথা শোনা হয়।
  7. বিরূপ প্রতিক্রিয়া কমে: সময়মতো মতামত দেওয়ার সুযোগ পেলে অসন্তোষ কম হয়।

 

সীমাবদ্ধতা

  1. ভয় বা দ্বিধা: অনেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কিছু বলতে সংকোচ বোধ করে।
  2. তথ্য গোপন রাখার প্রবণতা: ভুল বা সমস্যা চেপে যেতে চায় অনেকে, যাতে নিজের বিপদ না হয়।
  3. তথ্যের বিকৃতি: মধ্যস্থ স্তরে তথ্য পরিবর্তিত হয়ে ঊর্ধ্বতনে পৌঁছায়।
  4. ধীরগতি: তথ্য ঊর্ধ্বতনদের কাছে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে।
  5. নেতিবাচক মানসিকতা: কিছু কর্মী ভুলভাবে মন্তব্য করে, যা সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
  6. যোগাযোগের ভাঙন: অসংগঠিত যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হারিয়ে যায়।
  7. নিয়ন্ত্রণে জটিলতা: অতিরিক্ত তথ্য বা অভিযোগ ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তোলে।

 

উপসংহার: নিম্নগামী ও ঊর্ধ্বগামী উভয় যোগাযোগ একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা ও সুশাসনের জন্য অপরিহার্য। এই দুই ধারার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারলে কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবেশ, দক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং উন্নয়ন সম্ভব হয়।

 

বিকল্প উত্তর:

নিম্নগামী ও উর্ধগামী যোগাযোগের গুরুত্ব, সুবিধা ও সীমাবদ্ধতার বর্ণনা

নিম্নগামী (Downward Communication) ও ঊর্ধ্বগামী (Upward Communication) যোগাযোগ যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিক। কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও সংগঠন পরিচালনার জন্য এই দুই ধরনের যোগাযোগের ভূমিকা অপরিসীম।

 

নিম্নগামী যোগাযোগ (Downward Communication) এর সংজ্ঞা: নিম্নগামী যোগাযোগ হলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে অধস্তন কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা বা নির্দেশ পাঠানো। সাধারণত নীতিআদেশনির্দেশনাকর্মপদ্ধতি ও কাজের লক্ষ্যমাত্রা এই মাধ্যমে জানানো হয়।


গুরুত্ব

১. নির্দেশ ও আদেশ প্রেরণ: উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে সংগঠনের কর্মীদের উদ্দেশ্যে যেসব সিদ্ধান্ত, নীতিমালা ও আদেশ জারি করা হয়, সেগুলো নিম্নগামী যোগাযোগের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে পৌঁছানো সম্ভব হয়। এতে কর্মীরা প্রতিষ্ঠান কী চায় তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে।

 

২. কর্মপদ্ধতির ব্যাখ্যা: প্রতিটি কাজ কীভাবে করতে হবে, তার নিয়ম, ধাপ এবং মানদণ্ড কী হবে—এসব বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে নিম্নগামী যোগাযোগ। ফলে কর্মীরা কাজের যথার্থ পদ্ধতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পায়।

 

৩. দায়িত্ব নির্ধারণ: একেকজন কর্মীর দায়িত্ব কী হবে, তা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে নিম্নগামী যোগাযোগ অপরিহার্য। এ ধরনের যোগাযোগের মাধ্যমে কাজের সুনির্দিষ্ট বণ্টন সম্ভব হয় এবং দ্বন্দ্বের আশঙ্কা কমে।

 

৪. প্রেরণা ও নেতৃত্বের ভূমিকা: উর্ধ্বতনরা যখন স্পষ্ট ও ইতিবাচকভাবে নির্দেশনা দেন, তখন অধস্তন কর্মীরা উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হয়। এতে তাদের কাজে আগ্রহ বাড়ে এবং দলীয় কাজের গতি ত্বরান্বিত হয়।

 

৫. শৃঙ্খলা রক্ষা: নিয়মিত নির্দেশনা ও আদেশ কর্মীদের মাঝে একটি নির্দিষ্ট নিয়মের প্রতি আনুগত্য গড়ে তোলে। এটি প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

 

৬. উৎপাদন ও দক্ষতা বৃদ্ধি: যখন কর্মীরা সঠিক নির্দেশনা পায়, তখন ভুল করার সম্ভাবনা কমে এবং সময় সাশ্রয় হয়। এর ফলে কর্মীদের কাজের গতি ও দক্ষতা উভয়ই বাড়ে।

 

৭. দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতি গঠন: প্রতিষ্ঠানের আদর্শ, মূল্যবোধ ও সাংগঠনিক সংস্কৃতি নিম্নগামী যোগাযোগের মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের একক দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব গড়ে ওঠে।

 

সুবিধা

১. দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন: নিম্নগামী যোগাযোগের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতনদের সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ে দ্রুত পৌঁছায় এবং কার্যকর হয়, ফলে দেরি হয় না।

 

২. সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়: উপরের পর্যায় থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক নির্দেশনা কর্মীদের মধ্যে সরাসরি পৌঁছায়, ফলে গোটা প্রতিষ্ঠানকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।

 

৩. কাজের মান বজায় থাকে: সুনির্দিষ্ট ও নিয়মিত নির্দেশনার ফলে কর্মীরা কাজের গুণগত মান বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়।

 

৪. নতুন কর্মীদের নির্দেশনা প্রদান: প্রশিক্ষণ ছাড়াও, পরিষ্কার ও কাঠামোবদ্ধ নির্দেশনার মাধ্যমে নতুন কর্মীরা সহজেই কাজ বুঝতে ও শিখতে পারে।

 

৫. সমন্বয় সাধনে সহায়ক: যখন একাধিক বিভাগ একই নির্দেশনা অনুসরণ করে, তখন প্রতিষ্ঠানজুড়ে কার্যকর সমন্বয় সৃষ্টি হয়।

 

৬. জবাবদিহিতার সুযোগ তৈরি: নির্দেশনা যখন স্পষ্ট হয়, তখন কর্মীরা জানে কোন কাজ তাদের দায়িত্বে, ফলে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।

 

৭. উৎপাদন ও কর্মদক্ষতা উন্নয়ন: সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করলে ভুল কম হয় এবং সময়মতো কাজ শেষ হয়, যার ফলে সামগ্রিক দক্ষতা বাড়ে।

 

সীমাবদ্ধতা

১. একমুখী যোগাযোগ: এই ধরনের যোগাযোগ একতরফাভাবে চলে; শুধুমাত্র আদেশ প্রদান হয়, কর্মীরা মতামত দেওয়ার সুযোগ পায় না।

 

২. ভুল ব্যাখ্যার আশঙ্কা: বার্তা যদি অস্পষ্ট বা ধোঁয়াটে হয়, তাহলে অধস্তনরা সেটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে, যার ফলে কাজে গণ্ডগোল হয়।

 

৩. নিচের পর্যায়ে অসন্তোষ: কর্মীরা যদি নিজের কথা প্রকাশ করতে না পারে, তাহলে তারা মনঃক্ষুণ্ন হয় এবং কাজের প্রতি আগ্রহ হারাতে পারে।

৪. অনুপ্রেরণার ঘাটতি: শুধু আদেশপ্রদানের মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বা উদ্যম গড়ে ওঠে না; তারা নিছক নির্দেশনা পালনকারী হয়ে ওঠে।

 

৫. যোগাযোগ বিভ্রাট: যত বেশি ধাপে নির্দেশনা নিচে নামে, তত বার্তার বিকৃতি বা অপব্যাখ্যার ঝুঁকি বাড়ে।

 

৬. সৃজনশীলতার অভাব: একমুখী নির্দেশনার ফলে কর্মীদের নতুন কিছু ভাবার সুযোগ থাকে না, ফলে তাদের সৃজনশীলতা বাধাগ্রস্ত হয়।

 

৭. পরিবর্তন প্রতিরোধ: নিচের স্তরের কর্মীরা অনেক সময় শীর্ষ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতি অস্বস্তি বা বিরোধিতা করে, যা পরিবর্তনের প্রয়াসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।


এইভাবে নিম্নগামী যোগাযোগের প্রতিটি দিক বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এটি যেমন প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যাবশ্যক, তেমনি কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তাই এর পাশাপাশি দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থাও গুরুত্ব দেওয়া উচিত যাতে কর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হয়।

 

ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ (Upward Communication) এর সংজ্ঞা: ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে অধস্তন কর্মীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট প্রতিবেদন, অভিযোগ, মতামত, বা পরামর্শ পাঠায়। এই যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ের বাস্তব অবস্থা, কর্মীদের অনুভূতি এবং কর্মপরিবেশ সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। এটি প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

গুরুত্ব

১. মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা জানা: উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অফিস কক্ষে বসে সব সময় বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে পারে না। অধস্তন কর্মীদের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তারা বাস্তব সমস্যা, সীমাবদ্ধতা, সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পায়।


২. কর্মীদের মতামত ও অভিযোগ উপস্থাপন: কর্মীরা তাদের সমস্যার কথা, অসন্তোষ বা পরামর্শ কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারে। এতে কর্মীদের কণ্ঠস্বর প্রতিষ্ঠানে মূল্যায়িত হয় এবং সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি হয়।


৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা: উপরের স্তরের কর্মকর্তারা অধস্তনদের পাঠানো তথ্য, প্রতিবেদন ও মতামতের ভিত্তিতে অধিক যুক্তিসংগত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এতে সিদ্ধান্তের গুণগত মান বাড়ে।


৪. সতর্কতা প্রদান: অনেক সময় অধস্তনরা আগাম বিপদ, সম্ভাব্য দুর্ঘটনা বা অনিয়ম সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়। এ ধরনের সতর্কতা সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণে সাহায্য করে।


৫. দুইমুখী যোগাযোগ গড়ে ওঠে: একমুখী আদেশ-নির্দেশের পরিবর্তে প্রতিক্রিয়ার সুযোগ তৈরি হলে যোগাযোগ প্রাণবন্ত ও কার্যকর হয়। এতে কর্মীরা অনুভব করে যে তারা প্রতিষ্ঠানটির অংশ।


৬. কর্মীদের সম্পৃক্ততা বাড়ে: যখন কর্মীরা নিজেদের মতামত জানাতে পারে, তখন তারা প্রতিষ্ঠানে নিজের ভূমিকা নিয়ে সচেতন হয়। এতে দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণতা তৈরি হয়।


৭. উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ সহজ হয়: নিচের স্তরের কর্মীদের সমস্যাগুলো সরাসরি জানা গেলে, সেগুলো সমাধানে যথাযথ উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা নেওয়া যায়। এটি প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির পথে সহায়ক।

 

সুবিধা

১. সাহস ও আস্থা তৈরি করে: যখন অধস্তনরা জানে তাদের কথা শোনা হয়, তখন তারা নির্ভয়ে সমস্যা জানাতে পারে। এটি তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতা তৈরি করে।


২. নেতৃত্ব উন্নয়ন হয়: উর্ধ্বতনরা কর্মীদের চাহিদা, সমস্যার ধরন ও মনোভাব বুঝে মানবিকভাবে নেতৃত্ব দিতে শেখে। ফলে নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।


৩. ইনোভেশন ও সৃজনশীলতা উৎসাহিত হয়: যখন কর্মীদের মতামত গ্রহণ করা হয়, তখন তারা নতুন নতুন আইডিয়া বা পদ্ধতির কথা জানাতে আগ্রহী হয়। এটি উদ্ভাবনী চিন্তাকে উৎসাহিত করে।


৪. সমস্যা দ্রুত শনাক্ত হয়: নিম্নস্তরের কর্মীরা সমস্যার সূচনালগ্নেই তা বুঝতে পারে এবং জানালে তা দ্রুত সমাধানযোগ্য হয়। এতে বড় ক্ষতির ঝুঁকি কমে।


৫. দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয়: মতামত, পরামর্শ বা প্রতিবেদন দেওয়ার সুযোগ থাকলে কর্মীরা কাজের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হয় এবং নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়।


৬. প্রতিষ্ঠানে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে: যখন কর্মীরা দেখে যে কর্তৃপক্ষ তাদের কথা গুরুত্ব দেয়, তখন প্রতিষ্ঠান নিয়ে তাদের আস্থা বাড়ে। এটি দীর্ঘমেয়াদে একটি ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তোলে।


৭. বিরূপ প্রতিক্রিয়া কমে: কর্মীদের মনের চাপ বা অসন্তোষ যদি মতামতের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, তাহলে তা নেতিবাচক আচরণে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

 

সীমাবদ্ধতা

১. ভয় বা দ্বিধা: অনেক সময় অধস্তন কর্মীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কিছু বলতে ভয় পায় বা সংকোচ বোধ করে। এতে তারা প্রয়োজনীয় তথ্য গোপন রাখে বা ভুল ধারণা দেয়।

 

২. তথ্য গোপন রাখার প্রবণতা: কর্মীরা নিজের ভুল বা দোষ ধামাচাপা দিতে চায়। ফলে তারা প্রয়োজনীয় বা সত্য তথ্য লুকিয়ে রাখে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

 

৩. তথ্যের বিকৃতি: মাঝখানের পর্যায়ে যাঁরা তথ্য প্রক্রিয়াজাত করেন, তারা অনেক সময় বার্তা বিকৃত করে উপস্থাপন করে। এতে মূল তথ্য পরিবর্তিত হয়ে যায়।

 

৪. ধীরগতি: অধস্তনদের তথ্য ধাপে ধাপে ঊর্ধ্বতনে পৌঁছায়, ফলে যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় দেরি হয়। এতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হয়।

 

৫. নেতিবাচক মানসিকতা: কিছু কর্মী অকারণে সমালোচনা করে বা বিরূপ মন্তব্য করে, যা ঊর্ধ্বতনদের মানসিকতা ও সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

 

৬. যোগাযোগের ভাঙন: যদি প্রতিষ্ঠানে একটি সুশৃঙ্খল যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা মাঝপথে হারিয়ে যেতে পারে বা গুরুত্ব হারাতে পারে।

 

৭. নিয়ন্ত্রণে জটিলতা: যখন অনেক কর্মী একসাথে বিভিন্ন প্রতিবেদন, অভিযোগ বা পরামর্শ দেয়, তখন সেগুলো বিশ্লেষণ, যাচাই ও সমাধান করা প্রশাসনের জন্য জটিল হয়ে পড়ে।

 

এইভাবে ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ, উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যদিও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠা সম্ভব।


সার্চ কী: নিম্নগামী যোগাযোগ, ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগ, ডাউনওয়ার্ড কমিউনিকেশন, আপওয়ার্ড কমিউনিকেশন, যোগাযোগের প্রকারভেদ, অফিস যোগাযোগ, সরকারি অফিসে যোগাযোগ, নিম্নগামী যোগাযোগের গুরুত্ব, ঊর্ধ্বগামী যোগাযোগের সুবিধা, অফিস ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা, ম্যানেজমেন্ট কমিউনিকেশন, কমিউনিকেশনের সীমাবদ্ধতা, যোগাযোগ নীতি, প্রশাসনিক যোগাযোগ


ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Articles এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Articles এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Articles

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top